STORYMIRROR

Sandip Chakraborty

Romance Fantasy

3  

Sandip Chakraborty

Romance Fantasy

তুঁহু মম/২

তুঁহু মম/২

3 mins
243


রাখিগঢ়ি

হরিয়ানা

কুমুদিনী,

তোমার মেইল পেয়েছি। ভারী ভালো লেখো তুমি। পড়লে মনে হয় হাসি আর খুশিতে ভরা এক দিঘির কাছে এসে পৌঁছলাম। ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলেই টলটলে জল। তাতে রংবেরংয়ের ঢেউ। এই ঢেউ আমি চিনি। তোমার চোখে অনেকবার দেখেছি। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেই দিনটার কথাও মনে করিয়ে দিল তোমার লেখা শব্দগুলো।


সেদিন হঠাৎই আমাদের দেখা হয়ে গিয়েছিল গড়িয়াহাটে। তুমি কী যেন কিনতে এসেছিলে। আমি কেন গিয়েছিলাম, ভুলে গেছি। যাই হোক, দেখা হল। ফুটপাতে দাঁড়িয়েই আমরা কথা বললাম কিছুক্ষণ। তারপর তুমি বললে, 'চলো কোথাও বসি।' আকাশে তখন মেঘ। জলে ভেজা দমকা হাওয়া ক্ষণে ক্ষণে তোমার খোলা চুল উড়িয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে বৃষ্টি নামল বলে। একটা নিরিবিলি রেস্তোরাঁ খুঁজে নিয়ে আমরা বসলাম। কথা হল। কফিতে চিনি মেশাতে মেশাতে নীচু গলায় গান হল। সেই প্রথম নিয়নের ছলকে পড়া আলোয় ভালো করে দেখলাম তোমাকে। বৃষ্টি নামল একসময়। অঝোর অফুরান বৃষ্টি। আমাদের কফি শেষ হয়েছে ততক্ষণে। তুমি হঠাৎ বাচ্চা মেয়েদের মতো বললে, 'এখানে বসে থাকতে ভালো লাগছে না অর্জুনদা। চলো কোথাও যাই।'

আমি অবাক, 'এই বৃষ্টিতে কোথায় যাবে! আটটা বাজে। বাড়ি ফিরবে না?'

'ধ্যাৎ এখন কেউ ফেরে নাকি! এখন তো যাওয়ার সময়। আমি কখনও ব্রিজ থেকে বৃষ্টি দেখিনি। চলো না অর্জুনদা, আমরা সেকেন্ড হুগলী ব্রিজে যাই।'

আমার তখন অবাক হবার শক্তিও লোপ পেয়েছে। আমি শুধু ভাবছি কলকাতা শহরের একজন ব্যস্ততম সাইকিয়াট্রিস্ট কীকরে এমন ছেলেমানুষ হতে পারে? নাকি, বুকের মধ্যে চিরকালের এক ছেলেমানুষকে ধরে রাখার মধ্যেই রয়েছে সদানন্দে থাকার রহস্য? জানি না। জানি না। কিন্তু জানতে ইচ্ছে করে৷ তীব্র কৌতূহলই সেদিন আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। ভাগ্যিস নিয়ে গিয়েছিল। নয়তো তোমাকে আমার চেনাই হত না।

ব্রিজের ঠিক মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমি তোমাকে দেখছিলাম। আর তুমি দেখছিলে বৃষ্টি। জীবনের প্রথম প্রেমিকের আলিঙ্গনে ধরা দেওয়ার সময় মেয়েদের চোখে যে নরম ছায়া পড়ে, সেদিন তোমার চোখে ছিল সেই ঘোর। যেন বৃষ্টি নয়, জলে জলে ঝাপসা দৃশ্যপটে অপেক্ষা করছে অন্য কেউ। সে তোমার মনের রাজাধিরাজ। জলের দেওয়াল সরিয়ে এখনই সে আসবে। এসেই তোমাকে কেড়ে নেবে তোমার কাছ থেকে। আর তুমিও আদুরে পায়রার মতো গলা ফুলিয়ে একবার ডেকে সফল জীবনের ঘুলঘুলি ছেড়ে উড়ে যাবে সুদূর কোনও নক্ষত্রের দিকে।... সেদিন কেন জানি না একটু ঈর্ষাই হয়েছিল। আমার মতো ব্যর্থ মানুষের যা হয় আর কী! আমি চুপ করে বসেছিলাম। সংবিৎ ফিরল তোমার কথায়। তুমি বললে, 'আজকের দিনটা আমি কোনওদিন ভুলব না অর্জুনদা। তোমাকেও না। মনের মধ্যে যত অন্ধকার জমে ছিল সব আজ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল। খুব আনন্দ হচ্ছে জানো। মনে হচ্ছে যা হয়নি সব হবে। কিছুই ব্যর্থ হবে না।'


জানি তুমি ভাবছ, দু'বছরের পুরনো একটা দিনের কথা কেন আজ লিখছি? কারণ আমিও তোমার মতো আনন্দে থাকতে চাই। তোমার শক্তি চুরি করে আমার কাপুরষতাকে হারিয়ে দিতে চাই। আমার বড়ো সাধ একদিন আমিও সব অন্ধকার ধুয়েমুছে সাফ করে দেব। কিন্তু পারি কই! আমার মন আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেই ধূসর অতীতে। মাটি খুঁড়ে ইতিহাস খোঁজা এক পাগল সারারাত অতীত খুঁড়ে খুঁজে বেড়ায় কোথায় ভুল ছিল! কারই বা ভুল ছিল! জতুগৃহ পুড়ছে দেখেও যে মানুষ সেগুন কাঠের আলমারিতে থরে থরে সাজানো বেনারসি আর বালুচরির দিকে তাকিয়ে থাকে, সে কখনও সুখী হয়?


এর মধ্যে কোথা থেকে না-জানি উড়ে এসে জুড়ে বসেছে এক ভাইরাস। আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে লকডাউন। জানি না এই স্তব্ধতার শেষ কোথায়! মাঝে মাঝে ভয় করে। এই মৃত্যুহিম প্রান্তর পেরিয়ে কোনওদিন কি তোমার কাছে পৌঁছতে পারব, কুমুদিনী?

ভালো থেকো।

অর্জুনদা


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance