তিন্নি (পর্ব ৭)
তিন্নি (পর্ব ৭)
সেদিন তিন্নি রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারলো না। শুভমের কথার ফাঁকে ফাঁকে মৃগের কাছ থেকে রোজির সম্বন্ধে অনেক কথাই ও জানতে পেরেছে। আর সেই সব কথা গুলো জানতে পেরে ও খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছে। ওর মৃগকে দেখে খুব অবাক লাগছে। রোজির সম্বন্ধে এত কথা জানে অথচ ওর কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তিন্নি কি অস্বাভাবিক? ও কি পুরোনো পন্থী? রাতে মায়ের ফন এসেছিল। চাকরি র প্রথম দিন কেমন গেল জানতে। ও মায়ের সঙ্গে তেমন ভাবে ভালো করে কথাও বলতে পারলো না। মায়ের কথার যাহোক করে জবাব দিয়ে ঘুম পেয়েছে বলে শুয়ে পড়লো। কিন্তু শোবার পরে মাথার মধ্যে রোজি আর ওর বয় ফ্রেন্ডের কথাই ঘুরতে লাগলো। এই সব চিন্তা করতে করতে ও কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল ও জানে না। ঘুম ভাঙলো বেশ বেলায়।
ওর ঘরটা পূর্ব দিকে। জানালা দিয়ে সূর্যের আলো সোজা ওর মুখে এসে পড়ে। তাই ওকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়তে হয়। কিন্তু আজ আকাশ বেশ মেঘলা। তাই ওর চোখে রোদ এসে পড়ে নি। ব্যাঙ্গালুরু তে নাকি এরকম মাঝে মাঝেই হয়। আবহাওয়া ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আর ভিজে ভিজে। একটু গরম পড়লেই বৃষ্টি হয়ে আবহাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
আলসেমি করে তিন্নি বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল। কালকে মৃগের কথাগুলো ওর মাথায় ঘুরছিল । শুভম সত্যিই হ্যান্ডসাম। কাল সারাদিন শুভম ওর সাথে ছিল। শুভমের পারফিউমের গন্ধটা ওর নাকে লেগে আছে এখনও। চোখটা হঠাৎ চলে গেল মোবাইলের দিকে। পৌনে আটটা বাজছে। মুহূর্তে সমস্ত সুখ স্বপ্নের ইতি। তিন লাফে তিন্নি টয়লেটে ঢুকে গেল।
ছুটতে ছুটতে যখন তিন্নি অফিস পৌঁছল তখন শুভম নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে মিটিং রুমের দিকে যাচ্ছে। ওকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে ঢুকতে দেখে শুভম গম্ভীর মুখে নিজের ঘড়িটা একবার দেখল। তারপর মিটিং রুমের দিকে চলে গেল। তিন্নির মাথা থেকে পা অবধি একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। এ যেন এক অন্য শুভম। কালকের সেই হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল লোকটার কোন চিহ্নই ওর মধ্যে নেই। নিজের ডেস্কে ব্যাগটা রেখে কোন রকমে মিটিং রুমে গিয়ে ঢুকল তিন্নি।
একটা নতুন ধরণের কাজ ওরা করতে যাচ্ছে। অরগানিক ফারমিং এ ব্যবহার করার জন্য একটা অ্যাপ ডেভেলপ করবে ওরা। একটা বিদেশী কোম্পানি এই নতুন কনসেপ্ট টা নিয়ে এসেছে। খুবই সম্মানজনক এই প্রোজেক্ট টা। ওদের অর্গানাইজেসন শুভমের টিমকে এই প্রোজেক্ট এর দায়িত্ব দিয়েছে।
হলে ঢুকে তিন্নি দেখল অনেক লোক। কাল যে দলটার সাথে আলাপ হয়েছিল এখন তারা ছাড়াও আরো অনেকে রয়েছে। ও আরও অবাক হল মৃগ আর রোজি কে হলের দু দিকে ওদের টিমের সাথে বসে থাকতে দেখে।
শুভম যখন বলতে উঠলো সারা মিটিং হল নিমেষে শান্ত হয়ে গেল। ওর কথা শুনে তিন্নি বুঝতে পারলো যে ডিজাইনিং, ডেভেলপমেন্ট, প্রাইসিং, মার্কেটিং সবটাই ওদের কোম্পানি কে করতে হবে। তাই অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের লোকজনও এবার ওদের সঙ্গে কাজ করবে।
মিটিং চলল সারা দিন। মিটিং শেষ হবার পর যখন ওরা সবাই মিটিং হল থেকে বেরিয়ে আসছে তখন তিন্নি খেয়াল করলো একদল মেয়ে ‘স্যার স্যার’ করতে করতে শুভমের পিছন পিছন বেরিয়ে গেল। মৃগ ভিড় ঠেলে এসে তিন্নির হাত ধরল।
“ চল একসাথে বাড়ি যাই।“
“ রোজি যাবে না আমাদের সাথে?” জিজ্ঞাসা করলো তিন্নি।
“ জিজ্ঞাসা করে দেখছি। কিন্তু মনে হয় না যাবে। ওর নিশ্চয়ই কোন অন্য প্ল্যান আছে।“ ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল মৃগ।
সত্যিই তাই। ওরা যখন রোজি কে জিজ্ঞাসা করলো ও বাঁকা হেসে জবাব দিল,” সরি ফোকস, আমি জনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ..... আমি আজ লেটে ফিরব।“
ওরা দুজন অটো স্ট্যান্ডের দিকে রওনা হল।
তিন্নি জিজ্ঞাসা করলো,” এই জনটি আবার কে?”
মৃগ ঠোঁট ওলটালো ।
(ক্রমশ...)

