Aparna Chaudhuri

Romance

3  

Aparna Chaudhuri

Romance

তিন্নি (পর্ব ৫)

তিন্নি (পর্ব ৫)

3 mins
289



ফুরফুরে মন নিয়ে অফিস থেকে ফিরল তিন্নি। আজ সারাদিন সেরকম কোন কাজ ছিল না। শুধু কি কাজ করতে হবে তা বুঝে নেওয়া। শুভম নিজে ওকে সব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে। দুপুরে লাঞ্চে ওদের টিমের সবার সঙ্গে আলাপ হল তিন্নির ক্যাফেটারিয়াতে। সবাই খুব ফ্রেন্ডলি । ওদের মধ্যে স্যার ম্যাডাম বলার চল নেই। সবাই সবার নাম ধরে ডাকে । এই দলের মধ্যেও তিন্নির সুতনুকা নাম চলল না। সবাই ওকে তিন্নি বলেই ডাকতে শুরু করল।

নিজের ডুপ্লিকেট চাবিটা দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলতে খুলতে তিন্নি গুন গুন করে একটা রবীন্দ্র সঙ্গীতের কলি গাইছিল। বাড়িতে ঢুকেই ও একটা সিগারেটের গন্ধ পেল। মৃগ বা রোজি কি সিগারেট খায়? হতেও পারে। একটা জলের বোতল নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেল তিন্নি। এখানে জুতো পরে নিজের ঘরে ঢুকতে হয়। হঠাৎ মনে পড়ে গেল মায়ের কথা, জুতো পরে ঘরে ঢুকলেই মায়ের বকুনি খেতে হত, “ সারা রাজ্য ঘুরে এসে ওই ময়লা জুতোটা পরে ঘরে ঢুকে এলেন মহারানী। শিগগির বাইরে জুতো খোল।“ মুখে একটা হাল্কা হাসি খেলে গেল তিন্নির। ঘরের এক কোনে জুতোটা খুলে ঘরের হাওয়াই চপ্পলটা পরে বাথ রুমে ফ্রেশ হতে গেল ও। 

বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিন্নি নিজের জন্য এক কাপ কফি বানানোর জন্য বাইরে এলো। রোজির ঘরের ভিতর থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। মনে হচ্ছে কেউ আছে রোজির ঘরে। রোজির কি আজ ছুটি? হবে বা। ফ্রিজ থেকে দুধের গামলা টা বার করতে গিয়ে তিন্নি পরিষ্কার শুনল একটি পুরুষ কণ্ঠ কথা বলছে। কি বলছে সেটা ও ধরতে পারলো না। মনে হয় দক্ষিণ ভারতীয় কোন ভাষা। তিন্নির হঠাৎ খুব ভয় করতে লাগলো। ও কোন রকমে নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে এলো। ওর হাত পা কাঁপছিল। এটা তো মেয়েদের থাকার জায়গা। তাহলে ছেলেরা কেন আসবে? পরে ওর মনে হল ও একটা স্কুলে পড়া বাচ্চার মত ব্যবহার করছে। ওর বয়সী একটা মেয়ের বয় ফ্রেন্ড থাকা অসম্ভব নয়। ওর নেই তা বলে কি কারো থাকবে না? কিন্তু ও এতো ভয় পেল কেন? এত ভয় পেলে তো আর একা থেকে কাজ করা যাবে না।

ঘণ্টা খানেক বাদে তিন্নি রোজির ঘরের দরজা খোলার শব্দ পেলো। কৌতূহল দমন করতে না পেরে তিন্নি নিজের ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখল। রোজির সঙ্গে একটি ছেলে। মাঝারি উচ্চতা, গায়ের রঙ বেশ কালো, মাথায় ঝাঁকড়া চুল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। দেখে মনে হয় দক্ষিণ ভারতীয়। দুজনের মধ্যে বিদায় সম্ভাষণ চলছে। বেরোনোর আগে আচমকা ছেলেটি রোজির কোমর ধরে ওকে সজোরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে একটা চুমু খেল। রোজির মুখে প্রশ্রয়ের হাসি,” নটি......”

তিন্নি নিজের দরজাটা বন্ধ করে নিল। ও এই মুহূর্তে রোজি র সামনা সামনি হতে চায় না। তাড়াতাড়ি নিজের বিছানায় গিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো ও। কি রকম একটা গা ঘিনঘিনে অনুভূতি হচ্ছিল ওর। নানা কথা মাথায় ঘুরছিল। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে ও ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই।

ঘুম ভাঙল দরজায় কারুর টোকা দেবার আওয়াজে। লাফিয়ে উঠে বসলো তিন্নি। কে দরজায় টোকা দিচ্ছে? মুহূর্তে সব মনে পড়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে বসে রইল ও। আবার টোকা। এবার উঠে গিয়ে ধীরে ধীরে দরজা খুলল তিন্নি। দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বাড়িয়ে দেখল মৃগ। মুহূর্তে ওর ভয় কেটে গিয়ে মনটা খুশীতে ভরে উঠলো।

“ক্যাসা গয়া পহলা দিন?”

“ এস ভিতরে এস। “ ওর হাত ধরে টেনে নিজের ঘরের মধ্যে ধুকিয়ে নিল তিন্নি।

(ক্রমশ...)

  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance