তিন্নি (পর্ব ৩)
তিন্নি (পর্ব ৩)
কেম্পেগৌড়া এয়ারপোর্ট থেকে নিজের সুটকেস টা টানতে টানতে তিন্নি যখন ওলার স্ট্যান্ডের দিকে এগোচ্ছিল তখন একটা সিরসিরে হাওয়া এসে ওর গায়ে লাগলো। বেশ শীত শীত করছে। বাবা ঠিকই বলেছিল এখানে সারা বছরই হাল্কা ঠাণ্ডা। ওলা স্ট্যান্ডে পৌঁছে ওর বাড়ির ঠিকানা বলতেই চালক ,”ওকে ম্যাডাম “ বলে ইঞ্জিন চালু করে দিল। ট্যাক্সির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে তিন্নির চোখ ভরে গেল। কি সুন্দর সাজানো শহর! কলকাতা থেকে রওনা হবার সময় যে ভয়টা মনের মধ্যে ছিল, এখন সেটা কেটে গিয়ে ভালোলাগায় ভরে গেছে মনটা।
প্রায় ঘণ্টা খানেক বাদে তিন্নি পৌঁছল ওর গন্তব্যে। রাস্তায় একদম ট্র্যাফিক ছিল না তাই এত তাড়াতাড়ি পৌছনো গেলো। না হলে এই রাস্তা আসতে তিন ঘণ্টাও লেগে যায় কোন কোন দিন, বলল গাড়ির চালক। ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে তিন্নি গেট খুলে বিল্ডিঙের ভিতরে ঢুকল। মেন গেটের সামনের রাস্তাটা খুব একটা চওড়া নয়। তার ওপর ভর্তি হকার, ছোট ছোট দোকান, হাজার লোকের ভিড়। সব কিছু বাঁচিয়ে গেটের ভিতর ঢুকে তিন্নি একেবারে অবাক হয়ে গেল। গেটের সামনের চওড়া পিচে বাঁধানো রাস্তার দু দিকে কেয়ারি করা ফুলের বাগান আর সবুজ লন। লনে কয়েকটা বাচ্ছা খেলছে। তার পরে বেশ খানিকটা বাঁধানো খোলা গ্যারাজ। তার পরে বিল্ডিঙের সারি।
সামনের সিকিউরিটি গার্ড জানতে চাইল, ও কোথায় যাবে। তিন্নি ফ্ল্যাটের নম্বরটা বলতে ওরা ইন্টারকমে ফোন করে কথা বলে ওকে রাস্তা দেখিয়ে দিল।
ওর থাকার জায়গা বারো তলায়। ডোরবেল বাজাতেই ওর বয়সী একটি মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল। ছিপছিপে রোগা। একটা টিশার্ট আর হট প্যান্ট পরে আছে মেয়েটি। মাথার চুল লাল-সোনালী রঙ করা। খোলা চুলটা এক হাত দিকে টেনে নিয়ে মাথাটা ঝাঁকিয়ে সে বলে উঠলো, “হাই ! আই অ্যাম মৃগনয়নী। ইউ ক্যান কল মি মৃগ। প্লিজ কম ইন।“
“ হাই! আই অ্যাম সুতানুকা। ইউ ক্যান কল মি তিন্নি।“
“ তিন্নি? সুইট নেম।“
নিজের জিনিষপত্র সামলে একটা হাল্কা হাসি হেসে তিন্নি ওর দেখানো ঘরে প্রবেশ করলো। ব্যবস্থা বেশ ভালো। তিনটি ঘর, একটি ডাইনিং কাম ড্রয়িং । প্রত্যেক ঘরের সঙ্গে অ্যাটাচ টয়লেট। ঘরে খাট , আলমারি, টেবিল , চেয়ার। প্রত্যেক ঘরে এক একজন করে মেয়ে থাকে। একজন কাজের লোক আছে সে এসে ঘরদোর পরিষ্কার করে , রান্না বান্না ইত্যাদি করে দিয়ে যায়। কেউ যদি নিজের পছন্দ মত কিছু খেতে চায় সে নিজে বানিয়ে ও নিতে পারে।
জামা ছেড়ে , স্নান করে তিন্নি যখন বাইরের ঘরের সোফাতে এসে বসলো, দেখল মৃগ দু কাপ কফি বানিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটির এই আন্তরিকতায় মুগ্ধ হল তিন্নি।
“ আজ আমার ছুটি। তুমি নিশ্চয়ই কফি খাও। আমি খাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোমার জন্যেও বানাই।“ কথা হচ্ছিল হিন্দি ইংরাজি মিলিয়ে।
“ থ্যাংক ইউ। এক কাপ কফির সত্যি খুব দরকার ছিল।“ কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল তিন্নি।
“ তোমার জয়নিং কবে?”
“ কাল।“
“ আমাদের থার্ড ফ্ল্যাট মেট ফিরবে রাত আটটা নাগাদ, রোজানা। ও খ্রিস্টান। ও আছে অ্যাকাউন্টসে। আমি মার্কেটিং এ। তুমি?”
“ আমি আই টি তে।“
“ হুম টেকিস......। লক্ষ্মী আম্মা দিনে একবার আসে। দু বেলার খাবার বানিয়ে দিয়ে চলে যায় । তোমার যদি কিছু কাচবার থাকে তো তুমি ঘরের কোনে রেখে যেও। আজকের খাবার তো বানানো হয়ে গেছে। তোমাকে ওতেই ম্যানেজ করতে হবে।“
“ ইট স ওকে।“ বলতে বলতে তিন্নির হাই উঠলো।
“ তোমার নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত লাগছে। তুমি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়। যখন ইচ্ছা হবে উঠে লাঞ্চ করে নিও। আমার জন্য ওয়েট কর না। এখানে এটাই নিয়ম। তুমি ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। “ বলে হেসে নিজের ঘরে চলে গেল মৃগ।
তিন্নিও নিজের ঘরের দিকে রওনা হল। ঘরে ঢুকতেই ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো। ফোনটা তুলতেই ওপার থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো, “ কি রে কিছু খেয়েছিস? ওখানকার ব্যবস্থা সব কেমন?”
তিন্নি মুচকি হেসে বলল, “ দাঁড়াও ভিডিও কল লাগাই।“
তারপর মাকে আর বাবাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজের ঘর, বাইরের ঘর, রান্নাঘর সব দেখাল। ব্যবস্থা দেখে ওরা খুব খুশি। তারপর অনেকক্ষণ কথা হল মায়ের সঙ্গে।
“ এবার আমি ঘুমবো মা। রাখি?”
“ হ্যাঁ হ্যাঁ তুই ঘুমো। “ ফোন রেখে দিল মা।
( ক্রমশ...)

