তিন্নি আর মামমাম
তিন্নি আর মামমাম


তিন্নি ওর মামমাম কে নিয়ে আর পারে না। মামমাম হল ওর ঠাম্মির মা। তার নিরানব্বুই বছর বয়স। তিনি থাকেন এক গণ্ড গ্রামের আশ্রমে। এই কিছুদিন হল ওনাদের আশ্রমে ইলেকট্রিক কানেকশন এসেছে। ওনার শরীর খারাপ তাই চিকিৎসার জন্য তিন্নির বাবা ওনাকে জোর করে কিছুদিনের জন্য ওদের বাড়ী নিয়ে এসেছে। উনি একটা আলাদা ঘরে থাকেন। একটা কাঠকয়লার উনুনে নিজে রান্না করে খান।
তিন্নি এখন নার্সারিতে পড়ে। প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে ও ওর মামমামের ঘরে গিয়ে বসে গল্প করে। মামমাম টা কিছুই জানেনা। ও যাই বলে ওর মামমাম চোখ গোল গোল করে শোনে আর খালি বলে ,” ওমা তাই নাকি দিদি?”
সেদিন সোনালির বার্থ ডে ছিল, তাই ও ক্লাসে চকোলেট বিলি করেছিল। তিন্নি সেই চকোলেট টা এনে মামমামকে দিয়েছিল। মামমাম প্রথমে সেটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে ওকে জিজ্ঞাসা করলো,” এটা কি দিদি?”
তিন্নি হেসে গড়িয়ে পড়লো ,” এটা তো চকোলেট। তুমি জানো না ? এটা মিষ্টি খেতে। খাও।“
মামমাম তার থেকে একটা ছোটো টুকরো ভেঙে নিয়ে বাকিটা তিন্নির হাতে দিয়ে বলল,” তাহলে আমরা ভাগাভাগি করে খাই দিদি?”
তিন্নি ঢক করে ঘাড় নেড়ে ওর হাত থেকে টুকরো টা নিয়ে নিল। তারপর দুজনে একসঙ্গে মুখে দিল চকোলেট। তারপর মামমাম ফোকলা দাঁতে একগাল হেসে বলল,” বাহ দিদি বেশ খেতে তো? আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন পাওয়া যেত লাবেঞ্চুস। তা সে এতো ভালো খেতে ছিল না।“
তিন্নি আবার হেসে গড়িয়ে পড়লো,” কি বললে? কি চুস? ”
ওকে হাসতে দেখে ওর মামমাম হাসতে লাগলো। তারপর বলল,” আমি কি আর অত জানি দিদি। তা তোমার বন্ধু তোমাকে এই মিষ্টি টা কেন দিল?”
“ ওর বার্থ ডে, মানে জন্মদিন ছিল, তাই। “
“ ও জন্মদিনে বুঝি ল্যাবেঞ্চুস দিতে হয় বন্ধুদের?”
“হুম”
“ তুমি দাও?”
“হুম । তোমার জন্মদিন কবে মামমাম?”
“ আমার? সে কি আর মনে আছে দিদি?”
“ না না সে সব বললে চলবে না। মনে কর শিগগির।“ বোকে উঠলো তিন্নি।
“ আচ্ছা বাবা আচ্ছা...... দাঁড়াও যতদূর মনে পড়ছে আমার মা বলেছিলেন, জন্মাষ্টমীর দু হপ্তা পরে আমি হয়ে ছিলাম।“
“ সেটা কত তারিখ?”
“ তা তো জানিনা দিদি।“
কপালে হাতের চাপড় মেরে তিন্নি বলে উঠলো,” উফ তোমাকে নিয়ে তো আর পারা যাচ্ছে না।“
তারপর ছুটল ওর সব মুশকিলের আসান ওর মায়ের কাছে।
“ মা মা মামমামের জন্মদিনটা কবে হবে বল তো?”
“ হিসাব মত সামনের সপ্তাহে ।“ বলল মা।
“ মা তাহলে আমরা মামমামের জন্মদিন পালন করব না?”
“ নিশ্চয়ই!”
শুরু হল প্ল্যানিং। এগ-লেস কেক আনা হবে। পায়েস বানানো হবে। বেলুন দিয়ে বাড়ী সাজানো হবে।
জন্মদিনে মামমামকে কি দেবে? সেই নিয়ে তিন্নির চিন্তা শুরু। অনেক ভেবে ঠিক করলো একটা বার্থডে কার্ড বানিয়ে দেওয়া যাক। সাদা খাতার পাতা ছিঁড়ে সুন্দর করে তার পরিষ্কার অংশে নানান রঙের ফুল আর পাতা আঁকলো তিন্নি। ভেতরে লিখল হ্যাপি বার্থডে মামমাম। জন্মদিনের দিন অনেক আদর করে সেই কার্ড মামমামকে দিল তিন্নি। মামমাম সেই কার্ড পেয়ে খুব খুশি। এদিক ওদিক ওপর-নিচে করে দেখে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না, ওটা কি।
“তিন্নি এটা কি রে?” জিজ্ঞাসা করল মামমাম।
“এটা হচ্ছে একটা বার্থডে কার্ড। তোমার জন্মদিনের জন্য আমি তৈরি করেছি নিজের হাতে। এতে লেখা আছে শুভ জন্মদিন।“
মামমামের আর আনন্দ ধরে না। বললেন,” বাহ বেশ হয়েছে। তা দিদি এটা দিয়ে কি করে?”
তিন্নি বেশ মুশকিলে পড়লো। সত্যিই তো কার্ড দিয়ে কি করে? খানিকক্ষণ ভেবে সে বলল,” রেখে দেয়। যত্ন করে। যেমন ছবি রেখে দেয় সে রকম।“
“ বুঝেছি। “ মামমাম খুব আদর করে নিজের ট্রাঙ্কের মধ্যে কার্ডটা গুছিয়ে রেখে দিল ।