থমকে থাকা রেলের চাকা
থমকে থাকা রেলের চাকা
সেদিন বিকেলে একটা কাজের সুত্রে গেছিলাম আমাদের রেলগেট ক্রসিংয়ের কাছে, ফেরার পথে চোখ পরে গেলো ৬নং প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে থাকা একটা লোকাল ট্রেনের ওপর। তার হুইসেলের ঝঙ্কারে ট্রেনলাইন কাঁপেনি বেশ কয়েকমাস হয়ে গেলো। ব্যাপারটা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছিলাম। বাধ সাধলো তখনই যখন ট্রেনটার জানলার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, পড়ন্ত বিকেলের রোদ ট্রেনের ফাঁকা সিটগুলোয় পড়ছে। গলার ভেতর একটা কষ্টের দলা আর চোখের সামনে একরাশ স্মৃতি ভিড় করে এলো। সাইকেল থেকে নেমে কিছুক্ষন থমকে দাঁড়ালাম ট্রেনলাইনের ধারে, আমার চেনা মহিলা কণ্ঠস্বরও আমায় সতর্ক করলো না নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে।
সে এক সময় ছিল, এরকম বিকেলগুলো ট্রেনে কাটাতাম। ধানের ক্ষেত, গঙ্গার ধার পার করে যেতাম একের পর এক। হেডফোনে প্রিয় গানটা রিপিটে বাজতে থাকতো। ভুলে থাকতাম কিছুক্ষন যে একটা ভারী লাগেজ বয়ে নিয়ে যাবার আছে। দিগন্তের শেষ প্রান্তে যেখানটায় মেঘদের বেশ ঘন লাগতো, সেখানে তাকিয়ে থাকতাম। আর মন হলে ঘুগনি, ঝালমুড়ি তো ছিলই, মাঝে মাঝেই তাঁদের "কাকু!" বলে জোর হাঁক পেড়ে ডাকতে হতো। কে জানে তারা এখন কোথায়? কিভাবে দিন কাটছে তাদের...? সবাই যেখানেই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। আবার একদিন ট্রেনের লাইন তার চেনা কম্পন ফেরত পাবে। বিকেলের রোদ মেখে ট্রেনের চাকাগুলো চলবে, গঙ্গার বাঁকের ধারের কাশফুল গুলোর ছবি তুলবো আমিও ট্রেনের জানলার ফাঁক দিয়ে।
ঘড়ির কাঁটার সূত্র মেনে রোদের ঔজ্জ্বল্য কমে আসে, পশ্চিমগামী পাখিদের সংখ্যা কমে আসে। ঝাপসা হয়ে আসা চশমা মুছে নিয়ে ঠিক করে নি নেমে যাওয়া মাস্কটা। তালু ভরা স্যানিটাইজার গোটা হাতে বুলিয়ে নিয়ে উঠে পড়ি সাইকেলে। রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে, ফেলে স্মৃতির কাছে ফেরত আসার কথা দিয়ে।
