Sutapa Roy

Romance Classics

4  

Sutapa Roy

Romance Classics

তদস্তু

তদস্তু

3 mins
395



শিরোনাম-তদস্তু

কলমে-সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়)

শরতের কাশের দোলার আর পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভাসিয়ে প্রতিবার যেমন পূজো আসে সেবারও এসেছিল। কেনাকাটা শুরু হয়েছিল তারও দুমাস আগে। আদিমোহিনীমোহনের নতুন শাড়ির গন্ধ আর ভীড়ের চাপের মধ্যে শ্রী দিব‍্যি পৌঁছে গেছিল ওর পছন্দের শাড়ির কাছে। একটা ফোন এসে যাওয়ায় শাড়িটা ছেড়ে ফোন ধরতে ব‍্যস্ত হল। একটু পরে দেখে শাড়িটা নেই, ভাবুন একবার, মেয়েদের পছন্দের শাড়িতে কিরকম আবেগ জড়িয়ে থাকে, পড়ি কি মরি করে ছুটল বিলিং সেকসনে। দেখে শাড়িটার প‍্যাকিং শেষ, একজন সুপুরুষ যুবক সেটা হাত বাড়িয়ে নিচ্ছে, খপ করে প‍্যাকেটটা ধরে বলল-" এ শাড়ি আমার, আমি পছন্দ করে রেখেছিলাম, উনি ভুল করে তা নিয়ে এসেছেন।"-ওর টানা হ‍্যাঁচড়ার মাঝে ও প্রান্ত থেকেও কাতর আর্তনাদ শোনা গেল, তবে একটু অন্যরকম ভাবে-"দেবী, এই বাসন্তি রঙ আমার মাতৃদেবীর অতীব প্রিয়, আপনি অনুগ্রহপূর্বক ভিন্ন শাড়ি ক্রয় করুন।"- একে শাড়ি হারানোর কষ্ট, তায় অদ্ভুত সাধু বাংলা শুনে শ্রীয়ের মেজাজ সপ্তমে পৌঁছল, শাড়িটা ছোঁ মেরে নিয়ে বলল -" ইহা মোর"- আরো ধুন্ধুমার কান্ড বাঁধার আগে সেলস্ ম‍্যান এসে অবস্থা সামাল দিয়ে বলল-"ওটা দিয়ে দিন

ম‍্যাডাম, আরো এক পিস আছে, ওটা আমি আপনাকে দিচ্ছি।" যুদ্ধ জয়ের হাসি হেসে ছেলেটা প্রস্থান করল। শ্রী খানিকটা মিইয়ে গেলেও পছন্দের জিনিস পেয়ে যাওয়ায় ব‍্যাপারটা হজম করে নিল। প‍্যাকেট বগলদাবা করে বাড়ি এসে ওর পরাজয়ের দুঃখ বোন মিমির সঙ্গে শেয়ার করে জ্বালা জুড়োল। হইহই করে পূজো এসে গেল, ষষ্ঠীর দিন

পড়ল মায়ের নতুন একটা ছাপা শাড়ি, বান্ধবীদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে ফুচকা খেয়ে বাড়ি ঢুকল। ঘরে ঢুকতেই ওর মায়ের ফরমান জারি হল-

"অষ্টমীর দিন বাড়িতেই থেকো, কয়েকজন অতিথি

আসবে বাড়িতে, তবে নতুন শাড়ি ভাঙতে পার।"

মনটা তেতো হয়ে গেল, শ্রী ওর সবচেয়ে পছন্দের সেই বাসন্তী রঙের কাতানটা পরে বন্ধুদের সঙ্গে প‍্যান্ডিল হপিংয়ে যাবে ভেবেছিল। "ধ‍্যেৎ তেরি গা"-

বলে নিজের পড়ার ঘরে ও ঢুকে গেল। বোন মিমি

কানের কাছে গুনগুন করে গেল-"সখী ভাবনা কাহারে

বলে,সখী যাতনা কাহারে বলে।"- আজকে আর বোনের ফাজলামি শ্রীয়ের ভাল লাগল না। অষ্টমীর দুঃখটা সপ্তমীতে টইটই করে পুষিয়ে নিল। সারাদিনের ক্লান্তিতে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়েও পড়ল। পরদিন শ্রীয়ের ঘুমের ঘোর ভাঙল মায়ের চিৎকারে-"তোকে বলে রাখলাম বাড়িতে অনেকে আসবে আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস, ওঠ শিগগির ওঠ।"অগত‍্যা উঠে ফ্রেস হয়ে

মাকে কিছুটা সাহায্য করে, চান সেরে যখন বাসন্তী

কাতান পড়ল তখন ওর মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে

গেল। দরজায় কলিং বেল বাজতে মা বলল-"শ্রী দেখ ওরা বোধ হয় এলো।" দরজা খুলে তো শ্রী থ,

সামনে দাঁড়িয়ে আদিমোহিনীমোহনের সেই সুপুরুষ

সাধু বাংলা, আর পেছনে হুবহু শ্রীয়ের মতো সেই

বাসন্তী কাতান পরিহিতা সম্ভবত সাধু বাংলার মা।

ঘরে ঢুকেই মহিলা পড়লেন শ্রীকে নিয়ে-"ওমা কি মিষ্টি তুমি।" শ্রী মনে মনে ভাবছে এরা কেন অষ্টমীর

সকাল বরবাদ করতে এলো।ওর মাও দেখা যাচ্ছে আতিথেয়তায় কোন ত্রুটি রাখছে না। ডুব্লিকেট শাড়ির যন্ত্রণাটা ওর আবার চাগাড় দিয়ে উঠল। হঠাৎ

সাধু বাংলা বলে উঠল-"দেবী আপনি কোথাও যাইতেছিলেন? আপনার যাওয়ায় কি কোন বিঘ্ন

ঘটিল?" শ্রীয়ের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো-"হ‍্যাঁ জাহান্নামে।" মার চিমটি সাথে সাথে টের পেল।

কথায় কথায় শ্রী জানল সাধু বাংলার নাম সঞ্চয়ন,

থাকে বিদেশে। মনে মনে শ্রী ভাবল লোকের কেনা শাড়ি টেনে টেনে সঞ্চয় করে যে তার তো অমনি নামই হবে। এরপর যা আলোচনা হল তাতে তো শ্রীয়ের মাথা টলে গেল, আরে এরা এসেছে ওকে ওই সাধু বাংলার গলায় ঝোলাবে বলে। নিজেকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেই সময় ডোর বেল বেজে উঠল, মিমি দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকল শ্রীয়ের

প্রিয় মিতুনমাসি। ঢুকেই সাধু বাংলার দিকে তাকিয়ে বলল-"কি রে আমি কি আসতে খুব দেরী করলাম,

আরে জ‍্যামে আটকে গেছিলাম।" মিতুনমাসির সঙ্গে

এদের ভালই দোস্তি দেখা যাচ্ছে, তার মানে মিতুনমাসিই ঘটক। মিতুনমাসির বিশ্বাসঘাতকতায় শ্রীয়ের চোখে জল এসে গেল। সাধু বাংলা শ্রীকে চমকে দিয়ে বলে উঠল-" আন্টি শ্রী মনে হয় আমার ওপর খুব রেগে আছে।"মনে মনে শ্রী ভাবল-এ কি গুরুচন্ডালি। মিতুনমাসি শ্রীকে টেনে পাশে বসিয়ে বলল-"আরে রাগ করিস না, সঞ্চয়ন আমার স্টুডেন্ট ছিল, ইন্ডিয়ায় এলেই আমার কাছে আসে। তোর সঙ্গে আমার পিকনিকে তোলা ফটোটা দেখে সঞ্চয়নের খুব পছন্দ হয়ে যায় তোকে। আমার কাছ থেকেই তোর গতিবিধির খবর পেয়ে গিয়ে দোকানে তো তোর সঙ্গে ইচ্ছে করে মজা করেছিল। নাহলে কি বোকা বোকাভাবে বলত তোকে ওর ভাল লাগে।"- এদিকে তাকিয়ে সুপুরুষটি তখন হাসছেন। হঠাৎ মিমি সবাইকে চমকে দিয়ে বলে উঠল-"ইয়ে জ‍্যাম্বো, মাই ফেবারিট।" সবাই হো হো করে হেসে উঠল, সংখ‍্যা গরিষ্ঠের মতে আর শ্রীয়ের নিজের খানিক

ভাল লাগায় সেবার অষ্টমীতেই ওর বাকি জীবনের ভাগ‍্য নির্ধারণ হয়ে গেল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance