STORYMIRROR

Sipra Debnath

Romance Inspirational

3  

Sipra Debnath

Romance Inspirational

সুমি

সুমি

5 mins
298


সুমির মায়ের শরীরটা ধীরে ধীরে নরম হয়ে আসছে। ওর মায়ের পেটে বাচ্চা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান। সুমি সব বুঝতে পারে। ওকে আজকাল খুব খুশি খুশি দেখায়।ওর মা ও আজকাল ওকে আরো বেশি করে আদর করে কাছে কাছে রাখে। সুমির স্নান খাওয়া-দাওয়া পড়াশোনা সবকিছুর খেয়াল রাখে খুব যত্ন করে। তদারকি টা যেন দিনে দিনে বেড়েই চলছে। সুমিও মনে মনে খুব আনন্দ উপভোগ করে। সেদিন সুমিকে কাছে ডেকে নিজের কাছে বসিয়ে আদর করে ওর মা জিজ্ঞেস করল, বলতো দেখি তোর ভাই চাই কি বুনু চাই। সুমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল মা আমার তো একটা মিষ্টি বুনু চাই। দেখে নিও মা আমার একটা খুব সুন্দর ফুটফুটে বুনু হবে। সুমির মা খুশি হয়ে যায় বলে আমিও তোর মত আরেকটা মিষ্টি মেয়ে চাই। তারপর সুমিকে জড়িয়ে ধরে চোখে কপালে চুমু খায়। আর বলে তোর কথা যেন সত্যি হয় রে। সুমি ও মা কে জড়িয়ে ধরে আর মাকে খুশি করার জন্য বলে দেখে নিও মা বুনুই হবে।


 এমন সময় কোথা থেকে হঠাৎ সুমির বাবা এসে হাজির। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে মা মেয়েতে এত কি কথা কইতাছো শুনি? আমারে কইবা না?

 সুমির মা বলে না না এমনি সুখ দুঃখের টুকটাক কথা হচ্ছে। বিশেষ কিছু না। সুমির বাবা বলে আচ্ছা আচ্ছা কও কও যত্ত খুশি মা মাইয়ায় মিল্লা সুখ দুঃখের কথা কও। কও দেখি তোমার রান্দন বারণ হইছে নেগি। আমার খুব খিদা লাইগ্যা গেছে। দূগা খাওন দ্যাও। সুমির মা বলে বারোটাই তো বাজলোনা কি বলো তোমার খিদে পেয়ে গেছে! আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে তুমি স্নান করে এসো আমি তোমার জন্য ভাত বাড়ছি। সুমির বাবা বলে হ' যাই আর ইট্টুখানি কাম বাকি রইছে হেটুক সাইরা আহিগা। সুমির মা বলে বেশি খিদে পেলে খেয়ে যাওনা এক মুঠো, না হয় পরে স্নান করে আবার খেও। সুমির বাবা বলে না না এক্কেবারে ছান্ কইরাই খামু। একথা বলেই সুমির বাবা খেতের দিকে চলে গেল। পরেরদিন হাটবার। সবজিগুলো মাচা থেকে নামিয়ে হাটে নিয়ে যেতে হবে। কারণ এই দিয়েই ওদের সংসার চলে। 

 সুমির বাবা বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ওর মা বলল সুমি তুইএকটু পর খেতে গিয়ে তোর বাবাকে দেখে আয় কেমন? সুমি কিছু না বোঝার ভান করে বলে কেন মা? অবশ্য বাধ্য হয়ে কেননা সে নিজের পিঠ বাঁচাতে চায়। সে চায়না বড়দের কোন ঝামেলায় সে জড়ায়। কারো সাতে পাঁচে থাকতে সে পছন্দ করে না।


    এখন সুমির স্কুল বন্ধ। বছরের পরীক্ষা শেষ। সে ক্লাস সেভেনে পড়ে। পড়ার চাপ নেই এখন। আর পড়া ফাঁকি দিতে পারলে তো কোন কথাই নেই। এ যেন অনেকটা যুদ্ধ জয়ের মত অবস্থা। অবশ্য পড়াশোনা করাটাও একটা যুদ্ধের মতোই বটে। বাবা-মা দুজনেই পড়াশোনা নিয়েই প্রতিনিয়ত হইচই করে। তাই পড়াশোনায় ফাঁকি দেবার কোন জো নেই। বিশেষ করে মায়ের চোখে তো ফাঁকি দেওয়া চলেই না। মায়ের কথা মানে বিকাল বেলায় পড়তে যেতে হয় দূরসম্পর্কের এক মাসির কাছে। ওই মাসির বাড়ির কাছেই ওদের সবজি ক্ষেত।


    সুমি ওর মায়ের কথা মতো বাবাকে দেখতে যায় কাজ কতটা হলো। দূর থেকে সুমি দেখতে পায় ওর বাবা মাচা থেকে ঝিঙ্গে পারছে। তাই সে ক্ষেতের কাছে না গিয়ে দূরেই এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছিল। হঠাৎ সে দেখে তার দিদিমণি অর্থাৎ শিউলি মাসি সুমির বাবার জন্য থালায় বসিয়ে এক কাপ চা নিয়ে এসেছে। চায়ের কাপটা নিয়ে সে ওর বাবার গায়ে ঘেঁষে দাঁড়ায় আর ফিস্ ফিসি্য়ে কানে কানে যেন কি বলে। সুমি এখন বড় হচ্ছে সে অনেক কিছুই বুঝতে পারে। তবে সে না বোঝার ভান করেই থাকে। সুমির দুর থেকে ওদের কথা শুনতে পায় না। সে এসব ব্যাপারে নাক গলাতে ও চায় না। দূরত্ব বজায় রাখে। ওর মাসি কানে কানে কথা শেষ করে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে, সাথে ওর বাবাও। মনে মনে ওর খারাপ লাগে ‌। তাদের হাসির ঝনঝনানিতে প্রকৃতিও যেন খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। গাছ পাতা আকাশ বাতাস মাটি সব। সুমির মনে হয় পৃথিবী বুঝি এরকমই। মানুষ আর প্রকৃতি প্রেমের বাঁধনে সবাই খুশি হয়। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে। সে সামনে তাকায়। অ্যাঁ একি! মাচার নিচে তো বাবা-মাসি দুজনের কেউই নেই! তাহলে গেল কোথায়? সুমির বুঝতে আর অসুবিধা হয় না। তবুও সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় মাচার নিচের দিকে। কাছে এগিয়ে যায় কৌতূহল দমন করতে না পেরে। সেখানে গিয়ে দেখে সবজির ঝুড়ি পড়ে রয়েছে অথচ তারা দুজনই নেই। নিজের অজান্তেই সে শিউলি মাসির বাড়ির দিকে এগোয়।


    সুমিকে দেখেই শিউলির মা মেয়েকে শুনিয়ে উচ্চস্বরে বলে ওঠে আরে সুমি যে কেমন আছোছ্। আয় দেহি আয় ঘরে আয়। এই অসময়ে তুই দুপুইরা রইদের মধ্যে কি করতে আইছছ্! তর ব্যাপার খান কি ক দেহি। শিউলির মা উঠোনে কাজ করতে করতে সুমির সাথে এত কথা বলল। সুমির বাবা শিউলির ঘর থেকে বের হয়ে এল। সুমি মনে মনে প্রমাদ গুনছে সে নিজের মাকে ঘরে গিয়ে কি জবাব দেবে। সে নিজেকে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি গিয়ে মাকে সে কিছু জানাবে না। যা যা দেখেছে কিচ্ছু না। সে বুঝতে পারে যে বাবার স্বভাব আর বদলাবে না। সে নিজের অবস্থানে তার মতই থাকবে। সুমি মনে মনে ভাবে ওর চোখে যা দৃষ্টিকটু সেটা হয়তো ওর বাবা আর মাসির কাছে নান্দনিক। সমি সব কথা গোপন করে। নিজের মাকে কিচ্ছুটি জানতে দেয় না।


    কিছুদিন পর ওর মায়ের ডেলিভারি হয়। সুন্দর একটা ফুটফুটে বোন হয় সুমির। দুই বোন আর মা নিজেদের মধ্যে খুশি থাকতে চেষ্টা করে।এখন সুমি বড় হয়েছে কলেজে পড়ে। প্রেম কি জিনিস সে অনুভব করতে পারে। পুরনো কথাগুলো মনে পড়ে। সে বিস্মিত হয়। অনেকবার সে সব ভেবে অভিভূত হয়ে পড়ে। সে জানতে চায় মনে মনে প্রেম কি? কেন প্রেম? নিজেকে অনেক প্রশ্ন করেও কোনো সদুত্তর পায় না। রোজ সে নতুন করে বিস্মিত হয়। তার মনের মানসে এখন মানস চৌধুরী। যেন একদলা চাঁদের জোছনা। বড় বড় টানা টানা এক জোড়া চোখ। তীরের ফলার মত একটা নাক। তার গাল কপাল ঠোঁট সব যেন একটা ঘোরের মত। সারাক্ষণ চোখে ভাসে দিনে কিংবা রাতে।কখন রাত ভোর হবে বেলা হলে কলেজে যাবে তাকে দেখতে পাবে সেই অপেক্ষা করে। যদিও তার সাথে এখনো প্রত্যক্ষ ভাবে কথা হয়নি।

    

    

    

  

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance