Abhishek Chanda

Horror Action Others

3  

Abhishek Chanda

Horror Action Others

সত্যি কি ও ডেকেছিল?

সত্যি কি ও ডেকেছিল?

4 mins
209


সর্বপ্রথমে পাঠকদের কাছে অনুরোধ জানাবো আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার।

"ভূতে বিশ্বাস করেন কি?"

উত্তর হ্যাঁ বা না যাই হোক না কেন, সেই উত্তরের যথার্থতা জানাটা আমার জরুরী। আর যদি এরকম জাতীয় কোনও ঘটনা ব্যক্ত করেন তাহলে তো আরও ভালো।


এবার গল্পে আসা যাক।

গল্প ঠিক বলব না, এখানে একটি সত্য ঘটনাকে গল্পের রূপ দেওয়া হয়েছে।


আগেই বলে রাখি যে আমি ওই হাউ মাউ কাউ ভূত বা ওই রক্তমাখা, স্কন্ধকাটা, বড় বড় হাত পা জাতীয় ভূতে বিশ্বাস করি না। তবে হ্যাঁ আমি ভূত বলতে একটা অশরীরী অনুভূতি, অতৃপ্ত মায়া বা invisible spirit (অদৃশ্য আত্মা) কে বুঝি। যেটা দেখা যায় না তবে অনুভব করা যায়।

অনেকে আবার ভূতে বিশ্বাস করেন না, তবে কথায় আছে "যা কিছু রটে কিছু তো বটে।"


আমার ঘরের পূর্বে এবং উত্তরে বড় বড় দুটো জানালা আর আমি বেশিরভাগ সময় পূর্বদিকে পা রেখেই শুই।


আট বছর আগের কথা।

১১ই মে, ২০১৪।


তখন রাত সাড়ে ১১টা হবে, ঘরের লাইটটাও জ্বলছে।

মা-বাবা পাশের ঘরে বসে টিভি দেখছে।

আসলে মনটা কারোরই ভালো নেই, আমি আর বাবা সবেমাত্র শ্মশান থেকে ফিরেছি।

স্নান করে একটু শুলাম।

ডানদিক ফিরে (পিছনে উত্তরের জানালা) শুয়ে ফোনটা ঘাটছি। হঠাৎ শুনতে পেলাম ও যেন আমায় খুব ক্ষীণস্বরে কানে কানে বললো "টুবাই"

মনে মনে বললাম না না এটা অসম্ভব।

দ্বিতীয়বার আবার একইভাবে বললো "ওই টুবাই"

এবার যেন আগের থেকে একটু জোড়ে।

তবে এবার আর ভুল বলে মনে হয়নি কারণ কানে কানে যদি কেউ কথা বলে তাহলে মুখ থেকে নির্গত বায়ুর ধাক্কা কানে অনুভূত হবেই, আমিও কানে শুধু শব্দের আওয়াজ নয় মুখ থেকে বের হওয়া হাওয়ার ধাক্কা অনুভব করেছি।

এবার মনে মনে বললাম জানলা দিয়ে আমাকে ডাকা অসম্ভব কারণ আমি তিনতলায় থাকি আর সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার যে ও তো আর নেই আমাদের মাঝে, একটু আগেই তো ওকে দাহ করা হলো দেখে এলাম।

তবুও ভাবলাম বাঁদিকে একবার ঘুরেই দেখি না ও কিনা, আমি বাঁদিক পুরো ঘুরতেও পারিনি, সবে মাত্র একটু পাশ ফিরেছি আর তাকাতে যাবো তখনই ও একটা বিকট চিৎকার করে ডাকলো "ওই টুবাই"।


১০ই মে, ২০১৪।


তখন বিকেল পাঁচটা বাজে।

প্রচণ্ড গরম পড়ায় আবার স্নান করছি আর ভাবছি যে শরীরটা আর দিচ্ছে না, আজ আর যাবো না ওর বাড়ি।

পাঁচটা নাগাদ আমার যাওয়ার কথা ছিল।

হঠাৎ ল্যান্ডফোনে ফোন করে মা বললো তোর না যাওয়ার কথা ছিল ওর বাড়ি?

মাকে বললাম যে শরীরটা ভালো লাগছে না তাই যাইনি।

মা বললো "তুই শিগগিরি ওর বাড়ি যা, মনে হয় কিছু একটা হয়েছে কারণ ওর ভাই ফোন করে অনেকগুলো কথা বললো।

মনটা খুবই খারাপ।

শেষবারের মতোন ওকে বিদায় জানালাম।

ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে ওকে যখন ঢোকাবো, আমি ওকে প্রথম এবং শেষবারের মতো কোলে নিয়ে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়েছিলাম।

তখনও জানতাম না যে ও মৃত, সত্যি বলতে ওই মূহুর্তটা এমনই ছিল যে ওর ওই শক্ত হয়ে যাওয়া হিমশীতল নিথর দেহটা পাঁজা করে কোলে নিয়েও বুঝে উঠতে পারিনি যে ও আর নেই।

কিছুক্ষণ পর একজনের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট দেখে চমকে উঠেছিলাম, জিজ্ঞেস করাতে যখন বললো ও মৃত খুব ভেঙে পড়েছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ও আর নেই, মানে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

সুইসাইড করেছিল ও তাই ওর মৃতদেহটা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পোস্টমর্টেমের জন্য।


১১ই মে, ২০১৪।


দুপুর ২টো কি আড়াইটা হবে, ওর মৃতদেহ আনা হলো।

কখনও অভিজ্ঞতা ছিল না আগে যে পোস্টমর্টেম করার পর মুখটা কেমন দেখতে লাগে।

ফুলের মালাটা ওকে পড়ানোর জন্য যখন গাড়িতে উঠলাম, আমি ওর মাথার চারপাশের সেলাই বা ওর মুখটা দেখে আমি আর পড়াতেই পারিনি মালাটা, কোনোভাবে মালাটা রেখেই বেরিয়ে এসেছিলাম।

নিয়ে যাওয়া হলো শ্মশানে দাহ করার জন্য, সবরকম কাজ সম্পন্ন করে একরাশ হতাশা নিয়ে আমি আর বাবা ফিরেছিলাম একসাথে।

আজও একটাই কথা ভেবে খুব হতাশ হই আর নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করি যে কেন সেদিন গেলাম না ওর বাড়ী।

সেদিন হয়তো গেলে কথা হতো বা একটু ইয়ার্কি হতো, তাতে ওর মনটা হয়তো একটু ভালো লাগতো।

হয়তো সেদিন তাহলে ও সুইসাইড করতো না।


১১ই মে, ২০১৪।

রাত সাড়ে এগারোটা।


(প্রথম পর্বের সেই হাড় হিম করা ঘটনা ঘটে যাওয়র পর)


আমায় যখন তৃতীয়বার ওই বিকট চিৎকার করে ডাকলো "টুবাই" বলে, আমি মনে হয় জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলাম।

মনে হয় এই কারণে বলছি কারণ একটু ভেবে দেখবেন কখনও যদি কোনো দুর্ঘটনা আপনার সাথে ঘটে তাহলে দেখবেন কয়েক মূহুর্তের জন্য আপনি জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়বেন, ঠিক সেরকমটাই মনে হয় ঘটেছিল।


আমি হঠাৎ বুঝলাম আমি নীচে কোনোভাবে বসে আছি।

আমি আজও জানি না আমি ছিটকে পড়েছিলাম নাকি আমি নিজে নেমেছিলাম কারণ ওই কয়েক মূহুর্তের বা কয়েকটা সেকেন্ডের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনে নেই।

শুধুমাত্র অনুভব করলাম যে হাড় হিম করা একটা হিমশীতল স্রোত আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাচ্ছে এবং আমি প্রচন্ড ঘেমে গেছি আর গলা শুকিয়ে গেছে, আমি যে কাউকে ডাকবো সেই জোড়টাই পাচ্ছিলাম না।

মে মাসের ওই প্রচন্ড দাবদাহে নাকি আমার শরীর ফ্যানের হাওয়ায় কাপুনি দিচ্ছে।

আমি আর পিছনে তাকাইনি, ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপছিলাম শুধু।

বাবা আমায় দেখেই বুঝেছিল ব্যাপারটা, তারপর একটু সময় নিয়ে সবটা খুলে বললাম।

শুতে পারিনি একা প্রায় একটা সপ্তাহ।


খুব ঠাণ্ডা মাথায় কটা দিন বাদে যখন ভাবছিলাম এই ব্যাপারটা নিয়ে, তখন মাথায় হঠাৎ একটা কথা খোঁচা দিল।


আমার ছাদের উচ্চতা থেকে একটা ভয় কাজ করে বা আমি ঘুমাচ্ছি বা মন দিয়ে কোনো কাজ করছি, তখন একটু আচমকা ডাকলে বা গায়ে হাত দিয়ে ডাকলে বা একটু জোড়ে ডাকলে একটা ভয় কাজ করে।

আর ওর এই অভ্যেসটা ছিল, মানে হঠাৎ করে পিছন থেকে গিয়ে টুবাই বলে ডাকা বা হঠাৎ কানের কাছে এসে আচমকা চেঁচিয়ে ডাকা।

বুঝতে অসুবিধে হয়নি ওটা ওই ছিল।


*** আমি "ও" সম্বোধন করে কার কথা বলেছি,

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।


বললে অনেকে বিশ্বাস করবেন, আবার অনেকে বিশ্বাস করবেন না যে গত ১১ই মে, ২০২২ রাত ওই দেড়টা-দুটোর দিকেও আমি কিছু একটা অনুভব করেছি।

এবার কি অনুভব করেছি সেটা বোঝানো মুশকিল, তবে আমার ফোনের ওপারে যে ব্যক্তিটি ছিলেন সে কিছু একটা বুঝতে পেরেই আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন যে,

"কি হয়েছে?"

আমি তাকেও কিছু বুঝিয়ে বলতে পারিনি।

সারারাত আলো নিভাতে পারিনি শুধু এইটুকই বলতে পারি।


       


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror