Siddhartha Singha

Abstract Classics Inspirational

4  

Siddhartha Singha

Abstract Classics Inspirational

ষষ্ঠী থেকে জামাইষষ্ঠী

ষষ্ঠী থেকে জামাইষষ্ঠী

7 mins
221



জামাইষষ্ঠীর দিনে জামাইদের যে একটু অতিরিক্ত আদরযত্ন হবে এতে আর‌ আশ্চর্যের কী! আগেকার দিনে শ্বশুরমশাইরা এ দিন‌ দরাজ হাতে খরচ করতেন। তখন তো আবার একটি দু'টি নয়, ঘরে ঘরে বারো-চোদ্দোটি করে বাচ্চা। তার মধ্যে অন্তত পাঁচ-ছ'টি মেয়ে।

ফলে তাদের বিয়ের পরে অতগুলো জামাইকে সামলাতে হত শাশুড়িমায়েদের। ছোট জামাইটি যদি অভিমানী হয়, মেজো জামাইটি তবে নির্ঘাত গোঁয়ার। সব দিক সামলানো কী চাট্টিখানি কথা!

তখন‌ জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে প্রতি ঘরে ঘরে যেন উৎসবের আমেজ। প্রাক বর্ষার ভ্যাপসা গরমকে তুচ্ছ করে লোডশেডিংয়ের চোখরাঙানিকে থোড়াই কেয়ার করে জামাইরা বউকে বগলদাবা করে শ্বশুরবাড়ি যাবেনই।

এই ক্ষেত্রে পাতি অফিসের কেরানি থেকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সি ই ও, সবাই এক।

মাগ্গিগণ্ডার বাজারেও শ্বশুর-শাশুড়ির তরফ থেকে যে আপ্যায়নের ত্রুটি থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। শ্যালক-শ্যালিকারা তো জামাইবাবুদের কোনও রকম অযত্ন হতেই দেবে না। তাদের নজর সব দিকে। বলা যায় না, পান থেকে চুন খসলেই কি কাণ্ড হবে!

কিন্তু এই জামাইষষ্ঠীর রীতিটা ঠিক কতটা প্রাচীন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। 'হিন্দুর আচার-অনুষ্ঠান' বইটিতে প্রখ্যাত গবেষক চিন্তাহরণ চক্রবর্তী লিখেছেন, 'কোনও ধর্মানুষ্ঠানের সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ বা ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ নেই।' একটি অনতিপ্রাচীন লোকাচারের সঙ্গে নাকি এর যোগসূত্র আছে।

লোকাচার বললে প্রথমেই আসে অরণ্যষষ্ঠীর নাম। অন্যান্য আর পাঁচটা ব্রতের মতোই মেয়েরা এটি অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে পালন করে। ‌বাঙালি হিন্দুসমাজে এ উৎসবের সামাজিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশেষত যে পরিবারে সদ্য বিবাহিতা মেয়ে রয়েছে সেই পরিবারে এই পার্বণটি ঘটা করে পালন করা হতো এবং এখনও হয়।

পুজোর সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য পৃথক মালসার মধ্যে নতুন বস্ত্র, ফলফলাদি, পান-সুপারি, ধান-দূর্বা ও তালপাতার হাতপাখা রাখা হয়। ভক্তরা উপোস করে বিন্ধ্যবাসিনী ষষ্ঠীদেবীকে পুজো করেন। মালসা থেকে নতুন বস্ত্র পরিধান করে ফলফলাদি খেতে হয়।

মূলত সন্তান-সন্ততির মঙ্গলের জন্য বা সন্তান লাভের জন্যই এই মা ষষ্ঠীর ব্রত করা হয়।

আগেকার দিনে মহিলারা বনে বা জঙ্গলে গিয়ে এই পুজো করতেন। এখন আর সে সবের বালাই নেই। বাড়ির মধ্যে বটের ডাল পুঁতে তার তলায় পিটুলি, হলুদবাটা আর ভুষো কালি দিয়ে ষষ্ঠী দেবী, তার বাচ্চাকাচ্চা আর বাহন বিড়ালের মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয়।

পুজো শেষে ব্রতকারিণীরা বটপাতার উপরে রাখা ষষ্ঠীদেবীর সন্তান-সন্ততির মূর্তিগুলো হাতে নিয়ে একমনে ব্রতকথা শোনেন।

ব্রতকথাটির মূল আখ্যান হল--- সমুদ্রসেন নামক এক সওদাগর আর তার সর্বাঙ্গসুন্দরী কন্যা সুমনার কাহিনি। হিরণ্যরাজের পুত্রের হাতে পড়ে তার কী অবস্থা হয়েছিল, তারই বিবরণ।

অনেক বাড়িতেই অবশ্য এই জামাইষষ্ঠী পালনের রেওয়াজ নেই। অনেক ধনী পরিবারেও দেখেছি এটা। অথচ তাঁরা ইচ্ছে করলেই দশটা জামাইকে ডেকে এনে বাড়িতে রেখে বছরভর চার বেলা রাজসিক খাবার খাওয়াতে পারেন। কিন্তু তাঁরা জামাইষষ্ঠীটাই করেন না।

'কেন পালন করেন না জামাইষষ্ঠী? জিজ্ঞেস করলেই হয় বলবেন কোন সুদূর অতীতে এই বিশেষ দিনে ঘটা কোনও নিকটাত্মীয়ের ‌জীবনহানি কিংবা বড় ধরনের কোনও অঘটনের গল্প।

পূর্ববঙ্গে এই প্রথা খুব ঘটা করে পালন করা হলেও, সেখানেও অনেক বাড়িতে নাকি এ দিন জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হয় না। মেয়েদেরই শুধু ডাকা হয়। কিন্তু কেন? খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেছে, অশোক মুখোপাধ্যায়ের সমার্থ শব্দকোষে‌ লেখা রয়েছে 'জামি' শব্দের অর্থ সধবা বধূ, কুলবধূ বা এয়োস্ত্রী।

তা হলে কি আদতে অনুষ্ঠানটি 'জামিষষ্ঠী' বা 'জাময়ষষ্ঠী' ছিল? জামির বহুবচন তো জাময়ঃ। 

এখনকার মতো তখনকার দিনে জামাই বাবাজীবনদের ভূরিভোজের আয়োজন করা হত না। মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপে পড়ে‌ প্রাচীন এই লোকাচারটি ধীরে ধীরে নাম বদলে হয়ে যায় জামাইষষ্ঠী। 

এই জামাইদের নিমন্ত্রণ করার পেছনেও কিন্তু একটা কারণ আছে। দু'-তিনশো বছর আগে পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। তখন বউয়ের পক্ষে গ্রামের রাস্তায় বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে একা একা বাপের বাড়ি যাওয়া খুব কঠিন ছিল। ফলে‌ স্বামীটিকেও সঙ্গে যেতে হতো।

বেচারা স্বামী তো আর 'আমার ব্রত নয়' বলে বউকে শ্বশুরবাড়িতে ‌পৌঁছে দিয়েই বাড়ি চলে আসতে পারত না! তাই জামাইয়ের জন্য যত রকম পদ রান্না করা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হতো শ্বশুরবাড়ির লোকেদের। আস্তে আস্তে এটাই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়াল। আমূল বদলে গেল কালচার-লোকাচারের ব্যাখ্যাটি।

এখন অবশ্য জামাইদের কদর অন্য ভাবে করছেন হালফিলের শহুরে শাশুড়িঠাকরুণরা। কলকাতার বুকে গজিয়ে ওঠা জমকালো ঝাঁ-চকচকে রেস্তোঁরাগুলোতে এই বিশেষ দিনটিতে যতই টেবিল পাওয়ার অসুবিধে থাকুক না কেন, একটি দুটি টেবিল ঠিকই জোগাড় করে নেন তাঁরা।

এটার একটা ভাল দিক হল, এই ভ্যাপসা গরমে বাড়ির মেয়ে-বউদের রান্নাঘরে গিয়ে আর কাহিল হতে হয় না। পকেটে রেস্ত থাকলেই হল। মেয়ে-জামাই খুশি। শ্বশুর-শাশুড়িও খুশি।

যে সব বাড়ির শ্বশুর-শাশুড়িরা এখনও পুরনো পন্থী, এই নিয়মে রপ্ত হতে পারেননি, এ দিন সকাল থেকেই দেখা যায়, সেই শ্বশুরমশাই থলে নিয়ে এ বাজারে ও বাজারে ঢু মারছেন ভাল ভেটকি মাছ, মিষ্টি আর দই কেনার জন্য। শাশুড়িও সকাল থেকে পড়ে আছেন রান্নাঘরে। শুধুমাত্র জামাইকে ভাল-মন্দ খাওয়াবেন বলে। এ বছর অবশ্য অতিমারির কারণে সেই উৎসবে অনেকটাই ভাটা পড়েছে।

হিন্দু পুরাণে ষষ্ঠীদেবী থেকে শুরু করে জামাইষষ্ঠী বা শুধু ষষ্ঠীর মাহাত্ম্য নিয়ে দুই বাংলার নানা লোকায়ত প্রথা নিয়ে প্রচুর প্রবন্ধের বই আছে। সেখানেই পড়েছি, কোনও পুরাণে বা তত্ত্বে ষষ্ঠী ঠাকরুণের সঙ্গে জামাইদের কোনও সম্পর্ক নেই। 

তবু সেই ষষ্ঠী পুজোই অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়া থেকে ‘জামাইষষ্ঠী’ হিসেবে বাংলার ঘরে ঘরে প্রাধান্য পেতে থাকে, বিশেষত পদ্মার এপারে। পণ্ডিতদের মতে, এর কারণ একটাই--- তৎকালীন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ এবং সতীদাহের যুগে জামাইয়ের দীর্ঘজীবনের প্রার্থনা, যাতে মেয়েকে বাল্যবৈধব্যের বা সতীদাহের নামে আগুনে পুড়ে মরার অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে না হয়।

দ্বিতীয় আর একটি কারণেরও উল্লেখ আছে কোথাও কোথাও। জামাই যাতে মেয়েকে কোনও রকম ‘কষ্ট’ না দেয়, তাই জামাইকে এই বিশেষ দিনে একটু বেশি বেশি করে খুশি করার চেষ্টা করা হয়।

বছরের অন্যান্য দিনে নিয়মমাফিক যত্নআত্তি, আর এই দিনটিতে গলা পর্যন্ত ঠেসে খাইয়ে, জামাকাপড় উপঢৌকন দিয়ে বিশেষ রকমের তোয়াজ করার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। মোদ্দা কথা, মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনেক রকম চেষ্টার মধ্যে এটাও একটি অন্যতম প্রয়াস মাত্র।

এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক জামাইষষ্ঠী এলেই আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে। আর সেটা হল--- জামাইষষ্ঠী যদি পালন হতে পারে তা হলে 'বউমাষষ্ঠী' হবে না কেন? বউমাকে আলাদা করে খুশি করার কোনও প্রথা চালু নেই কেন?

মেয়ে বিয়ে হবার পরে যে বাড়িতে গিয়ে থাকে, সেই বাড়ির ছেলেকে খুশি রাখার জন্যই কি এই ব্যবস্থা? যদি উল্টোটা হত? যদি বিয়ে হবার পরে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে থাকতে হত, তা হলে কি আর জামাইষষ্ঠী নয়, যে বাড়িতে ছেলে গিয়ে থাকত, সেই বাড়ির মেয়ের মন পাওয়ার জন্য ছেলের বাড়ির লোকেরা বউমাষষ্ঠী করত? পঞ্চব্যঞ্জনে তাঁর সামনে সাজিয়ে দেওয়া হত খাবার থালা? দেওয়া হত আম, কাঁঠাল, লিচু আর নতুন নতুন মিষ্টি? দেওয়া হত শাড়ি, গয়না?

মিষ্টির সঙ্গে জামাইদের বহুকালের সম্পর্ক। দ্বারকানাথ বিদ্যারত্ন তাঁর কবিতাকুসুমাঞ্জলি বইয়ের প্রথম খণ্ডে লিখেছেন, বিয়েতে কে কী চায়? তাতে বলা হচ্ছে,‌ কন্যা চায় বরের রূপ, মাতা চান জামাইয়ের ধন, পিতা চান পাত্রের জ্ঞান, বান্ধবরা দেখেন পাত্রের কুল আর জনগণ মিষ্টি পেলেই খুশি, মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ।

এই জামাইষষ্ঠীর দিনে জামাইকে ঠকানোর জন্যেই কিন্তু ‌একদিন আবিষ্কার হয়েছিল জিভে জল আনা বাংলার মিষ্টি--- জলভরা সন্দেশ। 

সেটা ১৮১৮ সাল। বাংলায় তখন পুরোদমে ইংরেজ শাসন চালু থাকলেও আনাচে-কানাচে দু'-চারটে জমিদারি তখনও টিকে আছে বহাল তবিয়তে। আয় যেমনই হোক, আদবকায়দায়, ঠাটেবাটে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার সে কি আপ্রাণ চেষ্টা।

এমনই এক জমিদার ছিলেন ভদ্রেশ্বরের তেলিনীপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। বিয়ের পরে প্রথমবার জামাইষষ্ঠীতে মেয়ে-জামাই এসেছে সেই বাড়িতে। তখন আবার জামাই ঠকানো বা বউ ঠকানোর অনেক প্রথা চালু ছিল। এখন সেগুলো বোকা বোকা মনে হলেও তখন এই সব প্রথাই রমরম করে চলত।

সে যাই হোক, জামাইকে ঠকাতে হবে। কি করা যায়? ঠকানোও হল আবার জামাই বাবাজীবন রাগও করতে পারবেন না, এমন কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

অনেক ভেবে তেলিনীপাড়ার জমিদারবাড়িতে তলব করা হল এলাকার নামকরা ময়রা সূর্যকুমার মোদককে। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হল, এমন একটা মিষ্টি বানাতে হবে, যা দিয়ে জামাই ঠকানো যাবে অথচ তাঁর মানসম্মান যেন কোনও ভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয়।

বহু ভাবনাচিন্তা করার পরে মোদক মহাশয় একটা বিশাল আকারের মিষ্টি বানালেন, যার ভেতরে জল ভরা, অথচ বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই। সেই মিষ্টি দেওয়া হল জামাইয়ের পাতে।

জামাই সেই মিষ্টি হাতে নিয়ে দিলেন বিশাল এক কামড়। আর যেই না কামড়ানো, মিষ্টির ভেতরের লুকোনো জল বেরিয়ে এসে ভিজিয়ে দিল জামাইয়ের সাধের গরদের পাঞ্জাবি। জামাই অপ্রস্তুত। হো হো করে হেসে উঠলেন শালা-শালিরা। ঘোমটার আড়ালে হাসিতে ভরে উঠল শাশুড়ির মুখ আর জমিদারবাবু গোঁফে দিলেন তা।

জামাইষষ্ঠীকে কেন্দ্র করে এই ভাবেই বাংলার বুকে ‌জন্ম নিল নতুন এক ধরনের মিষ্টি--- জলভরা সন্দেশ।

সন্দেশ যেমন তৈরি হয়েছিল, প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্রও কিন্তু তৈরি হয়েছিল এই জামাইষষ্ঠীকে নিয়েই। সিনেমাটির নামও ছিল--- ‘জামাইষষ্ঠী’।

শুধু ভারতে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এক সময় নিয়ম ছিল, বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পরে মেয়ে যত কন্যা সন্তানেরই জন্ম দিক না কেন, যত দিন না তার পুত্র সন্তান হচ্ছে, তত দিন মেয়ের বাবা বা মা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পা রাখতে পারবেন না৷

এই নিয়মের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল--- পুত্রসন্তান ধারণে সমস্যা হলে বা পুত্রসন্তান জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে মারা গেলে, এখানে বলে রাখা ভাল, তখন কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থা এত ভাল ছিল না। ফলে প্রচুর শিশুমৃত্যু‌ হত। সুতরাং যত দিন না মেয়ের কোল আলো করে পুত্রসন্তান জন্মাত, তত দিন মেয়ের বাবা-মাকে অপেক্ষা করতে হত মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মেয়ের মুখ এক ঝলক দেখার জন্য৷

এ সব ক্ষেত্রে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়ের মুখ বছরের পর বছর না দেখেই থাকতে হতো তখনকার বাবা মায়েদের। সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই সমাজের বিধানদাতারা জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে বেছে নিলেন জামাইষষ্ঠী হিসাবে৷

যেখানে মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করে সমাদর করা হবে আর এই ফাঁকে মেয়ের মুখও দর্শন করা যাবে৷ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সেই বিধান একটু এদিক ওদিক করে এখনও সমানে চলছে একই ভাবে। এখন যার গাল ভরা পোশাকি নাম--- জামাইষষ্ঠী।

কথিত রয়েছে, একবার এক গৃহবধূ স্বামীর ঘরে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে দোষ দিয়েছিলেন বিড়ালের নামে। ফলে তাঁর সন্তান হারিয়ে যায়। তাঁর মাছ চুরি করে খেয়ে বিড়ালের নামে দোষ দেওয়ার ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর মনে হয়। তখন সেই মহিলা বনে গিয়ে ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা শুরু করেন৷ 

ষষ্ঠীদেবী দ্বিভুজা, দু'নয়না, গৌরবর্ণা, দিব্যবসনা, সর্বসুলক্ষণা ও জগদ্ধাত্রী শুভপ্রদা। তিনি মাতৃত্বের প্রতীক। মূলত সন্তানের কল্যাণ ও সংসারের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করাই এই পুজোর উদ্দেশ্য। বিড়াল তাঁর বাহন।

সেই বাহনের নামে এ রকম মিথ্যা অপবাদ! তবু সেই মহিলার পুজোয় তুষ্ট হন দেবী৷ ফলে বনের মধ্যেই তিনি নিজের সন্তানকে ফিরে পান। এই জন্যই ষষ্ঠীদেবীর অপর নাম অরণ্যষষ্ঠী। 

নাতিকে পাওয়া গেলেও মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই পুত্রবধূর বাপেরবাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় মেয়েকে দীর্ঘদিন না দেখার ফলে, শুধুমাত্র একবার চোখের দেখা দেখার জন্য ওই ব্যাকুল মা-বাবা একবার ষষ্ঠীপুজোর দিন জামাইকে সাদরে নিমন্ত্রণ করেন।

ষষ্ঠী পুজোর দিনে মেয়েকে নিয়ে জামাই ‌উপস্থিত হওয়ায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় সেই বাড়িতে। এবং সে দিন থেকেই ষষ্ঠীপুজো রূপান্তরিত হয় জামাইষষ্ঠীতে।


-------------------


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract