STORYMIRROR

Siddhartha Singha

Abstract Others

3  

Siddhartha Singha

Abstract Others

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত : একান্ত ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণাবুদ্ধদেব দাশগুপ্ত একান্ত ব্

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত : একান্ত ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণাবুদ্ধদেব দাশগুপ্ত একান্ত ব্

3 mins
285



সালটা ঠিক মনে নেই। তবে আমি আনন্দবাজারে ঢোকার অনেক অনেক আগে, তখন বোধহয় কলেজে-টলেজে পড়ি। সে সময় ষাট দশকের বিশিষ্ট কবি অভী সেনগুপ্তের মা মারা যান।

অভীদা তখন নিয়মিত আসতেন দেশপ্রিয় পার্কের উল্টো দিকের ছোট্ট রেস্টুরেন্ট--- সুতৃপ্তিতে। রবিবারের আড্ডায়। সেখানেই প্রথম শুনেছিলাম তাঁর মায়ের প্রয়াণের কথা।

মায়ের শ্রাদ্ধে প্রচুর লোককে নেমন্তন্ন করেছিলেন তিনি। সুতৃপ্তিতে যাঁদের সঙ্গে আড্ডা মারতেন, তাদের প্রত্যেককেই বলেছিলেন। নিমন্ত্রিত ছিলাম আমিও।

কিন্তু শ্রাদ্ধটা কোথায় হচ্ছে আমি জানতাম না। তখন পবিত্রদা, মানে ষাট দশকের আরেক কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় আমাকে বলেছিলেন, যে বাড়িটা ভাড়া নিয়েছে সেটা আমি চিনি। আমি তোমাকে নিয়ে যাব। আমি গিয়েছিলাম।

প্যান্ডেলের বাইরে আরও অনেকের সঙ্গে আমরা যখন গোল করে চেয়ার পেতে আড্ডা মারছি, তখনই কে যেন আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন একজনের। তাঁর নাম--- বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। আলাপ করানোর সময় এটাও বলে দিলেন যে, ইনি শুধু কবি নন কিন্তু, সিনেমাও বানান।

তত দিনে তিনি নাকি চার-চারটে ছায়াছবি বানিয়ে ফেলেছেন। বলেই, পর পর নামগুলো মুখস্ত বলে গিয়েছিলেন--- 'সময়ের কাছে', 'দূরত্ব', 'নিম অন্নপূর্ণা' এবং 'গৃহযুদ্ধ'।

গৃহযুদ্ধ! নামটা শুনেই আমি চমকে উঠেছিলাম। বলেছিলাম, গৃহযুদ্ধ? আমি দেখেছি তো... দারুণ সিনেমা। দারুণ দারুণ দারুণ। আপনি যদি এই ভাবে চালিয়ে যেতে পারেন, আপনার কিন্তু হবে।


উনি আমার মুখের দিকে অনেকক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে ছিলেন। পরে শুনেছিলাম, পবিত্রদার সঙ্গে যখনই তাঁর কথা হত, তিনি নাকি তখনই আমার কথা জিজ্ঞেস করতেন! কেন করতেন, আমি জানি না।

পরে আমি আর রবিশংকর, মানে তরুণ গল্পকার রবিশংকর বল যখন পবিত্রদার সম্পাদিত 'কবিপত্র' পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হলাম, তখন তাঁর কবিতা আনার জন্য আমরা বেশ কয়েক বার বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ঢাকুরিয়া অঞ্চলের ‌গড়িয়াহাট রোডের থ্রি-এ'র ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম।


প্রথম যে দিন গিয়েছিলাম উনি আমাকে দেখেই চিনতে পেরেছিলেন এবং এমন খাতির-যত্ন করেছিলেন যে, নানান কাজে পরবর্তীকালে ওঁর বাড়িতে যাওয়ার দরকার হলেও আমি ইতস্তত করতাম। কিন্তু আর পাঁচজনের মতো আমি তাঁকে কোনও দিনই বুদ্ধদা বলে ডাকিনি।

কারণ, তার বহু আগে থেকেই আমি আর একজনকে বুদ্ধদা বলে ডাকতাম। যিনি পরে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী হয়ে

ছিলেন, মন্ত্রী হয়েই আমার প্রথম বই প্রকাশ করার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর থেকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এবং তারও পরে হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে আমি তাঁকে পুরো নাম ধরেই বুদ্ধদেবদা বলতাম।

সেই বুদ্ধদেবদা, আজ ১০ জুন, বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে ৭৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।


দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। ডায়ালিসিসও চলছিল। সঙ্গে ছিল বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যা।

গত কাল, বুধবার রাতে এই কবি-চিত্রপরিচালকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ঘুম থেকে ওঠার জন্য তাঁকে ডাকতে যান। তখন কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে আঁতকে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 


১৯৪৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ন’জন ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা তারাকান্ত দাশগুপ্ত পেশায় ছিলেন রেলের চিকিৎসক। তাই বাবার বদলির সুবাদে একাধিক জায়গায় ঘুরে ফিরে বড় হয়েছেন তিনি।


মাত্র ১২ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন। হাওড়ার দীনবন্ধু স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় তাঁর। অর্থনীতি নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজেও পড়াশোনা করেছেন তিনি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ শ্যামসুন্দর কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবেও অধ্যাপনা করেছেন বেশ কিছুদিন।


এর পর সিনেমা তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরির মধ্যে দিয়ে চিত্রপরিচালনায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। তার পর একের পর এক ‘দূরত্ব’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান', 'ফেরা', 'উত্তরা', ‘স্বপ্নের দিন’, ‘উড়োজাহাজ’-এর মতো ছবি করেছেন তিনি।


তাঁর বহু ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘কালপুরুষ’-সহ একাধিক ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বিনোদন দুনিয়ার পাশাপাশি সাহিত্য জগতেও যথেষ্ট অবদান রয়েছে তাঁর।

তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল--- ‘রোবটের গান’, ‘ছাতা কাহিনি’ এবং ‘গভীর আড়ালে’।

বুদ্ধদেবদা, মানে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মৃত্যুতে শিল্প ও সংস্কৃতি জগতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract