STORYMIRROR

সারোওয়ারে জুলফিকার

Abstract Romance Tragedy

3  

সারোওয়ারে জুলফিকার

Abstract Romance Tragedy

সরি ৯১৩

সরি ৯১৩

3 mins
78


গল্পটা রবিন নামে কোন একজন মানুষের। তখন সে সবে মাত্র ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। ওর বাবা খুশি হয়ে ওকে একটা সেলফোন কেনার জন্য গ্রাম থেকে টাকা পাঠিয়েছিল। ফোনটা কিনেও ফেলল। সে সময় নোকিয়া ফোনের বেশ কদর ছিল। দামও ছিল বেশ। সপ্তাহ খানেক ক্লাস করার পর সে ভার্সিটিতে একদিন তার ফোনটা হারিয়ে ফেলে। ওদের আর্থিক অবস্থাও এত বেশি ভাল ছিল না যে ওকে আরেকটা ফোনের টাকা পাঠাবে। ক্লাসের প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করা থেকে পরিচিত সব জায়গায় খুঁজেছে। কিন্তু যা চলে যাবার তাতো চলেই গেছে।

তখন ছিল বৃষ্টির দিন। প্রায় আট দিন পর। রবিনের নামে ওর মেসে একটা পার্সেল আসে। পার্সেলটা খুলতেই পেয়ে যায় ওর সখের ফোন। ফোন ফিরে পেয়ে রবিন সেকি আনন্দ। অবাক ব্যাপার হল খামের গায়ে প্রেরক অংশে লেখা ছিল “প্রেরক 913”। 


প্রায় এক মাস পর। টিউশনি করে সবে মাত্র বাসায় ফিরছিল রবিন। হঠাৎ প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তা পানিতে ভরে গেল। একটা কার এসে ওর কাপড়ের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে চলে গেল। মেজাজটা গরম হয়ে গেল। এরমধ্যেই একটা মিস্টি কন্ঠে মিস্টি মেয়ের কল। 

ঃহ্যলো, কে বলছেন?

ঃআমি 913

ঃএই ভর সন্ধে বেলা ইয়ার্কি মারছেন? নাম বলুন না হয় ফোন ছাড়ছি

ঃসত্যি আমি 913 বলছি

রবিন বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিল। ঘন্টার কাটা পেরুবার পর রবিনের মনে পরল 913র পার্সেল। তাকে তো ধন্যবাদ জানানো হয় নি। তড়িঘড়ি করে রবিন মোবাইলটা নিয়ে ওই নাম্বারে কল দেয়। অবাক ব্যাপার হল 913র ফোন বন্ধ ছিল। 


এক সপ্তাহ গত হবার পর 913র কল। 

রবিনঃ অবশেষে আপনাকে পাওয়া গেল

913ঃ যাক চিনতে পেরেছেন তবে

রবিনঃ গাণিতিক সংখ্যার ধাঁধাঁয় ফেলেছেন। ভোলা যায়?

913ঃ হা হা...। তাই বুঝি?

রবিনঃ আপনার নামটা কি বলুন তো? 

913ঃ কোন নামটা? 

রবিনঃ যেটা আপনার বাবা মার দেয়া?

913ঃ নাম তো একটা দেয়াই যায়। আপাতত 913 থাকুক। 

রবিনঃ বন্ধু হচ্ছি তাহলে?

913ঃ আমি কি না বলেছি?

রবিনঃ হা হা হা...

এভাবেই ওদের বন্ধুত্ব চলতে থাকে। প্রতি সপ্তাহের শেষ দিনটায় ওদের মন বাক্সে জমা হওয়া গল্পগুলো এলে অপরকে শোনায়। এরমাঝেই অনেকটা চেনা হয়ে গেছে একে অপরকে। ক্যালেন্ডার থেকে চলে গেছে ৩৬ টি মাস।৩ বছর।অনেক সময় চোখ বন্ধ করলেই একটা মিস্টি মেয়ের ছবি চোখে আসে রবিনের। ওদের বন্ধুত্তের প্রথম শর্তই ছিল ওরা কখনো দেখা করবে না। তবে জল যত গড়াচ্ছে রবিনের মন তত আটকাচ্ছে 913র রহস্যের মায়ায়। প্রেমে পড়ি পড়ি অবস্থা।

পুরো একটা সপ্তাহ ব্যস্ত রবিন। 913’ও গায়েব।

একটার পর একটা চাকুরীর ভাইভা দিয়েই চলছে রবিন। ভাইভা বোর্ডের আজব সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে কখন যে নিজের অস্তিত্বে টান পড়েছে বুঝতে পারেনি রবিন। ওর বন্ধু আদিল। দুজনেই রাতের বেলা প্রথমবারের মত চুমুক দিয়েছে অ্যালকোহলের গ্লাসে। নেশা চেপে গেছে রবিনের। ইতিমধ্যে নেশার চাপে ভাইভা বোর্ডের বাপের চৌদ্দ গোষ্ঠী তুলে বাংলা অভিধানের সব গালি শেষ করে ফেলেছে। এর মধ্যেই কল। 

ঃআমি 913

ঃতুমি যদি 913 হলে আমি ... 

(রবিনঃএ আদিল ৯১৩ র ডাবল কত রে?

 আদিল হিসাব করতে থাকে। ৯ এক কে ৯। ৯ দ্বিগুণে ১০।

রবিনঃ ওই ব্যাটা। ভুল বলস ক্যান? ৯ দ্বিগুণে ৮। 

আদিলঃ আচ্ছে যা ৮ই সই।)

ফোনের কন্ঠটা কাদতে থাকে আর কি যেন বলতে থাকে। রবিন ফোনটা কানে নিয়ে বলতে থাকে, দুঃখিত জনাব। ৯ এর ঘরের নামতা মনে পড়লে আপনাকে ডাবল শুনিয়ে দেব। নেশাগ্রস্থ রবিন একজন নেশাপ্রেমিককে বিরক্ত করার অপরাধে ফোন ছুড়ে মারে রুমের এক কোনে। 

পরদিন অনেক বেলা করে ঘুম ভাঙ্গে রবিনের। ফোনের অবস্থা দেখে বুঝতে পারে রাতে অনেক কিছুই ঘটেছে যা কোনটাই ওর মনে নেই। ফোন খুলতেই 913 অনেক কয়টা মিসড কল। রবিন কল ব্যাক দেয়। অবাক ব্যাপার হল 913র ফোন বন্ধ ছিল। 

একটা ম্যাসেজ জমে ছিল ইনবক্সে। ‘’৯১৩ঃ আজ আমার বিয়ে। শেষ কথাটা বলতে চেয়েও পারলাম না। ভাল থেকো’’। 

এবছরের প্রথম বৃষ্টি’র নামল সন্ধায় । ঝুম বৃষ্টি। রবিন ভিজতে থাকে নিঃশব্দে



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract