Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sayantani Palmal

Inspirational

5.0  

Sayantani Palmal

Inspirational

স্পোর্টস ডে

স্পোর্টস ডে

9 mins
792



  “ এই ইমরান তুই হান্ড্রেড মিটারে নাম দিবি তো?”

“ হুম, হান্ড্রেড মিটার, লং জাম্প আর অঙ্ক দৌড়। দুশ মিটার টানতে পারবো না।”

“, জিমন্যাস্টিকে কে কে নাম দিচ্ছে রে?”

“ জানি না রে। পরশু থেকে নাম দেওয়া শুরু হবে।”

“ ক্লাস নাইনের মিঠুনদা এবার প্যারেডে লিড করবে।”

“ ও, মিঠুনদা তো আগেরবার চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য চ্যাম্পিয়নস হয়েছিল।”

“ এবার মেয়েদের মধ্যে রুমেলা দি হবেই। ও তো স্টেট লেভেলে খেলতে গেছল।”

ভূগোল স্যারের আসতে দেরী হচ্ছিল সেই ফাঁকে ক্লাশ এইটের ছাত্রছাত্রীরা আসন্ন স্পোর্টস ডে উপলক্ষ্যে আলোচনায় মেতে উঠেছে। এই স্কুলে খেলাধুলার ওপর খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং স্কুলের অনুয়াল স্পোর্টস খুব আড়ম্বরের সাথে পালন করা হয়। প্যারেড, বিভিন্ন ধরনের খেলা, বিভিন্ন ক্লাসের পিরামিড শো আরও অনেক কিছু মিলিয়ে জমজমাট ব্যাপার। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে নামী খেলোয়াড়রা আসেন। বেশ কিছু দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় স্কুলে। চিঠি দিয়ে স্পোর্টস ডে তে আসার জন্য অভিভাবকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। আকাশের চোখে জল জমতে শুরু করেছে। যেকোনোও মুহুর্তে ঝরে পড়বে। কান দুটোতে হাত চাপা দিতে ইচ্ছে করছে তার। এইসব আলোচনায় তার বুকের মধ্যে ক্রমশ একটা যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ পুরো ক্লাস চুপ হয়ে হয়ে গেল। ভূগোল স্যার ঢুকছেন। আকাশ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এবার পড়াশোনা হবে। স্পোর্টস ডের আলোচনা বন্ধ। একবছর আগেও অবস্থাটা অন্যরকম ছিল। আকাশও এসব আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতো। স্পোর্টস ডে তে তারও কমপক্ষে তিনটে-চারটে প্রাইজ বাঁধা ছিল। বেশ ভালো খেলত সে কিন্তু আজ সব কিছু অন্যরকম হয়ে গেছে। 



    চারটের সময় স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। হৈ হৈ করতে করতে ছেলেরা বেরোচ্ছে গেট দিয়ে। আকাশ দেখলো বিনয় কাকু এগিয়ে আসছে ।

“ চলো আকাশ বাবা।” আকাশের পিঠ থেকে ব্যাগটা খুলে নিল বিনয়। বিনয় কাকুর টোটোতে চড়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আকাশ দেখলো সারণ, অগ্নি, বিকাশ সবাই দল বেঁধে সাইকেল নিয়ে গল্প করতে করতে চলেছে। আকাশ চোখ নামিয়ে টোটোর মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার সাইকেলটা ধূলো মেখে পড়ে আছে সিঁড়ির নীচে। তিয়াস দাদার দিকে তাকালো। দাদার কষ্টটা তাকেও ছুঁয়ে গেল। কিছু না বলে উদাস হয়ে বাইরের দিকে দেখতে লাগলো সে।


   “ কি দিদিভাই, স্পোর্টস ডে তে কি কি ইভেন্টে নামবে?” 

“ আমি স্পোর্টসে নাম দেব না দাদু।” মুখ নীচু করে বলল তিয়াস।

“ কেন রে দিদিভাই?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন অমিয়বাবু।

“ দাদা, তো স্পোর্টসে নামতে পারবে না।” শেষের কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে এল। তিয়াসের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরে পড়ছে। একটু দূরে দাঁড়ানো তিয়াসের মা কান্না লুকোতে রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন আর ঠাম্মি সবজি কাটতে কাটতে চোখে আঁচল চাপা দিলেন। পুরো ঘরটাই নিস্তব্ধ। শুধু চাপা কান্নার আওয়াজ ঘরের দেওয়ালে নিঃশব্দে গুমরে মরছে। অমিয়বাবুও নিজে খুব অসহায় বোধ করছেন। স্ত্রী লতা, ছেলে অমল, পুত্রবধূ নিভা আর ফুটফুটে প্রাণোচ্ছল দুই নাতি-নাতনি আকাশ আর তিয়াসকে নিয়ে হাসি-আনন্দে ভরপুর সংসার ছিল তাঁর কিন্তু আট মাস আগের একটা দুর্ঘটনা সবকিছু তছনছ করে দিল। সাইকেল চালিয়ে পাশের পাড়ার আঁকার স্কুল থেকে ফিরছিল আকাশ। এক বেপরোয়া মোটরসাইকেল আরোহী ফোনে কথা বলতে বলতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে আকাশের সাইকেলে। মোটর সাইকেলের চাকা আকাশের পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। সেই ছেলেটিও ছিটকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আকাশকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পর আকাশের বাকি সব চোট সেরে গেলেও আকাশের পা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাঁটার ক্ষমতা হারায় আকাশ। এখন সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য দুটো ক্র্যাচ তার ভরসা। যদিও এখনও তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা আশা দিয়েছেন চিকিৎসা চালিয়ে গেলে আকাশ আবার দাঁড়াতে পারবে কিন্তু সেসব এখন ভবিষ্যতের গর্ভে। তাছাড়া আকাশ নিজে মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছে না সে। আগে যে ছেলেটার বকবকানিতে সারা বাড়ি গমগম করত এখন তার মুখ থেকে প্রয়োজন ছাড়া একটা অতিরিক্ত শব্দও বের হয় না। বাড়ির সবাই নিজেদের মনখারাপ, চিন্তা সব লুকিয়ে রেখে আকাশের সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেন। আকাশকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ক্লাস সিক্সে পড়া ছোট্ট তিয়াসও নিজের সাধ্যমত সেই প্রচেষ্টায় যোগ দেয় কিন্তু তাতেও খুব একটা ফল হয় না। আকাশ নিজেকে যেন একটা খোলসের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়েছে। সেই প্রাচীর ভেঙ্গে তার মনের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। কিন্তু ডাক্তার বলে দিয়েছেন আবার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আকাশের নিজের মনের জোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাদা খেলতে পারবে না বলে তিয়াসও স্কুলের স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করবে না ঠিক করেছে। আকাশ রান আর লংজাম্পে খুব ভালো ছিল। বরাবর ফাস্ট প্রাইজ পেত। 



 

“ দাদুভাই, স্কুলে যাবে না? তৈরি হয়ে নাও।” লতাদেবী তাড়া লাগান আকাশকে।

“ আমি আজ স্কুলে গিয়ে কি করবো?” মৃদু স্বরে উত্তর দেয় আকাশ। 

“ খেলা কি শুধু খেলোয়াড়দের জন্য? দর্শকদের জন্য নয়?” নাতির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন অমিয়বাবু। দাদুর প্রশ্নের অর্থ বোধগম্য হয় না আকাশের। দাদুর মুখের দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে। অমিয়বাবু এগিয়ে এসে নাতির কাঁধে হাত রাখেন, “ দ্যাখো, দাদুভাই তুমি খেলবে না বলে তিয়াসও যেতে চাইছিল না। তুমি তো দেখলে তাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন তুমি যদি না যাও বোনের কত কষ্ট হবে বলত।” আকাশ ভেবে দেখলো দাদু সত্যি কথাই বলেছেন। বনু তাকে খুব ভালোবাসে সে যদি না যায় হয়ত খেলতে নামবেই না অথচ তার মত বনুও ভালো খেলে। আকাশ চটপট তৈরি হয়ে নিল। বনুকে নিয়ে মা অনেক আগেই চলে গেছে। প্রতিযোগীদের একটু আগেই যাওয়ার নির্দেশ ছিল। আকাশ এমনি একটা জামা পরে নিয়েছিল। আসলে আজ তো সে স্কুলের ছাত্র আকাশ সান্যাল হিসেবে যাচ্ছে না। সে আজকে শুধুই তিয়াস সান্যালের বাড়ির লোক হিসেবে খেলা দেখতে যাচ্ছে। 

“ আমি রেডি।”

“ এ কী জামা পরেছ দাদুভাই! যাও স্কুলের ইউনিফর্ম পরে এস। বোনের খেলা দেখতে গেলেও তুমি যে ওই স্কুলের একজন রানিং স্টুডেন্ট সেটা ভুলে গেলে চলবে না। যাও চেঞ্জ করে এস।” দাদুর কড়া গলার নির্দেশ অমান্য করার সাহস পেল না আকাশ। অমিয়বাবু প্রায় সাইত্রিশ বছর স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার মধ্যে পঁচিশ বছর আবার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এইসব ব্যাপারে তিনি যে খুব নিয়মনিষ্ঠ সেটা আকাশ ভালো করেই জানে। 




  দাদু-ঠাম্মির সঙ্গে আকাশ যখন স্কুলের বিশাল মাঠটায় পৌঁছল তখন প্যারেড শুরু হয়ে গেছে। দ্রিম দ্রিম ড্রামের শব্দের তালে এগিয়ে চলেছে ছেলেমেয়েরা। গতবছরও আকাশ ওদের মধ্যেই ছিল। বুকের মধ্যে মন খারাপের মেঘটাকে লুকিয়ে রেখে আকাশের চোখ বনুকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এবছর বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে এসেছেন সদ্য খেলা ছাড়া প্রাক্তন ফুটবলার লিম্বা ছেত্রী এবং এশিয়াড সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জয়ী অথেলিট সুমনা দত্ত। খেলা শুরু হলো। তিয়াস ইতিমধ্যে একশ মিটার দৌড়ে প্রথম ও চকোলেট দৌড়ে দ্বিতীয় হয়েছে। আকাশদের ক্লাসের রান রেসগুলোও হয়ে গেল। এবার অঙ্ক দৌড়ের প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়েছে।

বন্ধুদের নামের মাঝে যখন “ আকাশ স্যান্যাল” নামটা শুনল চমকে উঠল আকাশ। স্যারেরা বোধহয় ভুল করে….।

“ কি রে যা। রেস শুরু হবে।” দাদুর কথায় হতবাক হয়ে গেল আকাশ।

“দাদু!”

“ অবাক হওয়ার কিছু নেই। তোর নামটা স্যারের কাছে আমিই দিয়ে গিয়েছিলাম। তোদের গেমস টিচার সুদেশবাবু তো খুব খুশি তোর নাম পেয়ে। তোকে সরাসরি ফাইনাল স্পোর্টসে নিয়েছেন। তোর ক্লাসের বন্ধুরাও সব জানে। তারা কেউ আপত্তি করেনি তোকে সরাসরি ফাইনালে সুযোগ দেওয়ায়।”

“ দাদু আমি আর নিজের পায়ে হাঁটতে পারি না।” কিছুটা চেঁচিয়েই বলল আকাশ।

“ অঙ্ক তো করতে পারিস ক্লাসের সবার চেয়ে ভালো আর শুয়ে তো থাকিস না ক্র্যাচ নিয়ে তো হাঁটিস। স্পোর্টস ম্যানরা কখনও পারবো না বলে না। যদি মনে করিস আমার আর তোর স্যারের সম্মান রাখার প্রয়োজন আছে, বন্ধুদের ভালোবাসার মর্যাদা দেয়ার দরকার আছে তাহলে তুই অংশগ্রহণ করবি।”

“ দাদুভাই, আমিও চাই তুমি খেলায় নাম। খেললেই জিততে হবে কে বলেছে? খেলার আনন্দে তুমি খেল।” নাতির মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললেন লতাদেবী। দাদু-ঠাম্মির মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আকাশ এগিয়ে গেল। স্টার্টিং লাইনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো গেমস টিচার ওর দিকে তাকিয়ে থামস আপ করলেন শুধু তাই নয় ওদের ক্লাসের বাকি ছেলেরা আর মেয়েরা সবাই “ আকাশ, চিয়ার আপ”, “ আকাশ ফাটিয়ে”। এসব বলে চিৎকার করছে। অনেক দিন পরে মেঘলা আকাশে এক চিলতে রোদ উঁকি দিচ্ছে মনে হলো। যথাসময়ে খেলা শুরু হলো। অন্যবছর মাটিতেই অঙ্কের কাগজ রাখা থাকে কিন্তু এবছর বোধহয় আকাশের কথা ভেবেই উঁচু একটা করে টুলের ওপর কাগজ রাখা আছে। আকাশ স্বাভাবিক ভাবেই সবার পরে পৌঁছল। দুটো অঙ্ক আছে। আকাশ বরাবর অংকে ক্লাসের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পায়। সবার আগে অঙ্ক দুটো কষে ফেলল সে। ফিনিশিং পয়েন্টের দিকে এগোলো আকাশ কিন্তু কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই বাকি সব প্রতিযোগী তাকে ছড়িয়ে এগিয়ে গেল। আকাশ একবার ভাবলো আর এগোবে না কিন্তু তারপরেই দাদুর মুখটা মনে ভেসে উঠতে সে থামালো না। ফিনিশিং পয়েন্টে পৌঁছতেই গেমস টিচার সুদেশবাবু ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। শুধু তাই নয় সারা মাঠে হাততালির ঝড় বয়ে গেল। বহুদিন পর আকাশের মুখে এক আকাশ হাসি ছড়িয়ে পড়ল। হেরে গিয়েও তার একটুও খারাপ লাগছে না।




   দুপুর গড়িয়ে বিকেলের পথে। সমস্ত খেলা শেষ। এবার হবে স্পোর্টস ডের সর্ব শেষ আকর্ষণ যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। দুটো গ্রুপ, ফাইভ থেকে সেভেন আর এইট থেকে টেন। তিয়াস মা দুর্গা সাজার জন্য প্রস্তুত। প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণা হচ্ছে। আকাশের জন্য আবার একরাশ বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। গ্রুপ বিতে তার নাম ঘোষণা হলো। দাদু-ঠাম্মি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সেও হেসে বলল, “ কি সাজবো আমি? খোঁড়া ভিখিরি?”

“ এমন কথা বলে না দাদুভাই।” লতাদেবী মর্মাহত হন।

“ তোমার সাজের জিনিস আসছে ওই যে।”

আকাশ দেখল মস্ত বড় একটা ব্যাগ হাতে এক গাল হাসি নিয়ে বিনয় কাকু এগিয়ে আসছে। দাদুর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে আকাশ বলল, “ বিনয় কাকুও আছে এই ষড়যন্ত্রে!”


  সব ইভেন্ট শেষ। এবার প্রাইজ দেওয়া হবে। আকাশের বাবাও পৌঁছে গেছেন। একে একে প্রাইজ দেওয়া হচ্ছে। ক্লাস এইটের ছেলেদের অঙ্ক দৌড়ে প্রথম অম্লান, দ্বিতীয় বিভান, তৃতীয় সোমনাথ। এতদূর বলার পর ঘোষক ইংরেজির স্যার মহান বাবু ঘোষণা করলেন, “ এবছর একটা বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে । সেই পুরস্কারটি পাচ্ছে অঙ্ক দৌড়ে ষষ্ঠ স্থানাধিকারী আকাশ সান্যাল, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে রেস শেষ করার জন্য। আকাশ সবার পেছনে শেষ করলেও ওর আগের অনেক প্রতিযোগী অঙ্ক ভুল করেছিল তাই আকাশ ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে। আকাশের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেবেন মিস্টার ছেত্রী।” বন্ধুরা হৈ হৈ করে এসে আকাশকে স্টেজে উঠতে সাহায্য করল। পুরস্কার নিয়ে নেমে আকাশ দেখে বাড়ির সবার চোখে জল। আস্তে আস্তে সমস্ত প্রাইজ দেওয়া শেষ হয়ে গেল। এবার যেমন খুশি সাজ প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা হবে। ছাত্রছাত্রীদের উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। গ্রুপ এ তে দুর্গা রূপী তিয়াস দ্বিতীয় হলো। এবার গ্রুপ বির ফলাফল। মহান বাবু ঘোষনা করলেন, “ গ্রুপ বি তে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ‘ সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। এপ্রসঙ্গে বলি আকাশের এই বিষয় নির্বাচন একথায় অনবদ্য এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই প্রাসঙ্গিক। আকাশের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন সুমনা ম্যাডাম।” তুমুল হাততালির মধ্য দিয়ে আকাশ এগিয়ে গেল। বিনয় কাকুর সেই মস্ত থলির মধ্যে ছিল হেলমেট আর আরও কিছু আনুষঙ্গিক জিনিস যা দাদু আর বিনয় কাকু মিলে আকাশকে সাজানোর জন্য বানিয়ে ছিল।


  এবার প্রতীক্ষা এবছরের চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য চ্যাম্পিয়ন্স খেতাবের। রুমেলা আর মিঠুন পাবে বলেই সবার আশা। যথাসময়ে রুমেলার নাম ঘোষণা হলো। তারপর ছেলেদের নাম ঘোষণা হতেই সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। যুগ্ম বিজয়ী মিঠুন দাস আর আকাশ সান্যাল। এবার উঠে দাঁড়ালেন সুমনা দত্ত। মাইক হাতে নিয়ে বললেন, “ এই ফলাফলে আপনারা সবাই অবাক হয়েছেন জানি কিন্তু অনেক ভেবে চিন্তে আমি আর লিম্বা দা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একজন স্পোর্টস ম্যানের অন্যতম গুন কি জানেন? যেকোনোও পরিস্থিতিতে হার না মানা আর পরাজয়কেও শক্ত মনে স্বীকার করা। আকাশ খুব ভালো ভাবেই জানতো যে ওর পক্ষে পুরস্কার পাওয়া সম্ভব নয় কিন্তু পুরস্কারের কথা না ভেবে ও খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এটাই হলো স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট। ওর এই সাহস ও সিদ্ধান্তকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি স্যালুট করছি। আর “ গো আয়াজ ইউ লাইক” এ ওর বিষয় নির্বাচন তো চোখে জল এনে দিয়েছে আমাদের। স্যারদের কাছ থেকে আমরা শুনলাম যে ও কত ভালো খেলাধুলা করত কিন্তু একজনের বেপরোয়া বাইক চালানোর মাশুল আজ ওকে দিতে হচ্ছে। আমি আকাশের উদ্দেশ্যে বলতে চাই এই হার না মানা মনোভাবটা সারাজীবন নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখো তাহলে জীবন যুদ্ধে তোমার জয় নিশ্চিত। কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি ই তোমাকে হারাতে পারবে না।” সুমনার কথাগুলো এসে আকাশের বুকের মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে।

“ পরের বছর আমি নিজের পায়ে দৌড়ব। আমাকে পারতেই হবে। পারব আমি পারব।” অস্ফুটে নিজের মনে বিড়বিড় করছে আকাশ। অস্ত যাওয়ার আগে সূর্য তখন সারা আকাশ জুড়ে আবির ছড়িয়ে দিচ্ছে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sayantani Palmal

Similar bengali story from Inspirational