Maheshwar Maji

Drama

3  

Maheshwar Maji

Drama

সফ্ট টার্গেট

সফ্ট টার্গেট

10 mins
1.8K


আসল নাম অজয় চক্রবর্তী।টলিউডের একজন জনপ্রিয় নায়ক।সবাই তাকে "বিল্লা" নামেই চেনে।

একজন নতুন পরিচালকের হাত ধরে প্রথম ছবিতে অভিনয় করতে নামে।

প্রথম ছবিই হিট।দুর্দান্ত বক্স অফিস কালেকশন।

তারপর থেকে বিল্লাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

গত দুবছরে অনেকগুলো হিট সিনেমা সে দিয়েছে।তার অরিজিনাল স্ট্যান্ট,কিং-ফু ফাইট আর জলজ্যান্ত অভিনয়ের গুনে বাংলা সিনেমা জগত আলাদা একটা মাত্রা পেল।

তার অভিনয়কে পর্দায় ফুটিয়ে দুজন পরিচালকও জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছেন।

অবশ্য আরো দুটো মূখ্য কারণ রয়েছে।বিল্লার এই আকাশ ছোঁয়া নাম,ডাকের পিছনে।

প্রথমটা তার স্ত্রী সুলক্ষ্মী।


বিল্লা যখন মুম্বাই-এ প্রথম মডেলিং করত।সুলক্ষ্মীর সঙ্গে পরিচয়টা সেইসময় হয়েছিল।

সুলক্ষ্মীর পেশা ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার।

একবার গোয়াতে বড় ধরণের ফ্যাশন শো হয়েছিল।সেখানে সুলক্ষ্মীর ডিজাইন করা পোশাকে বিল্লা রেম্পে হেঁটে ছিল।

সেই ছবিটা কয়েকদিন পর একটা বিখ্যাত ফিল্ম ম্যাগাজিনের কভার পেজ দখল করে বসে।

তার গ্রান্ড সাকসেস পার্টিতেই প্রথম তাদের পরিচয়।

আরব সমুদ্রের উত্তাল হাওয়ায় পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে পরস্পরের আঙুল হৃদয় ছুঁয়ে ফেলেছিল।তারপর সেই উত্তাপ কখন হোটেলের বিছানা গরম করে ফেলল।

কেউ বুঝে উঠতে পারেনি।

সিমটম ক্রিয়েট হতেই সুলক্ষ্মী অ্যাবরশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিল্লা তাতে বাধা দেয়।

সে সন্তান চায়।

সুলক্ষ্মী নিজেই বলেছিল,ম্যারেজে আমি বিশ্বাসী নই।লিভ ইনে থাকব দুজনে।বিল্লা রাজি হয়ে যায়।

বিল্লাও সেই সময় নিজের কাজ অনেক কমিয়ে দিয়েছিল।সুলক্ষ্মীর দেখাশুনো করার জন্য।

সুলক্ষ্মী কেরালার মেয়ে।ওর,মা,বাবা দুজনেই দিল্লীতে স্যাটেল্ড।

কাউকে কিচ্ছুটি জানায় নি।

তাদের বেবির যেদিন জন্ম হল সেদিনই বিল্লা নার্সিং হোম থেকে একজন বাংলা পরিচালকের ফোন পেল।

পরিচালক হিসেবে তিনিও নতুন।প্রোডিউসার সেরকম কেউ নেই। সুতরাং স্মল বাজেট সিনেমা।এই অবস্থায় নামী নায়ক,নায়িকাকে নিলে আউট ডোর স্যুট কমে আসবে।সিনেমার গল্প ফুটে উঠবে না।তাই বিল্লাকে ডাকা।

ওর বডি ফিটনেশ অ্যাট্রাকটিভ।সবথেকে বড় জিনিস হল।বিল্লার আই পাওয়ার ।সরলতা তার চোখে ভেসে ওঠে।

এটাই হল বিল্লার আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের দ্বিতীয় মূখ্য কারণ।

ফেসবুকের একজন নতুন লেখিকার গল্প অবলম্বনে পরিচালক নিজেই স্ক্রীপ্ট লিখেছিলেন।

সেটা হিট হওয়াতে একগুচ্ছ নতুন মুখ টলিউড ইন্ডাসট্রিতে রাতারাতি তারকা হয়ে উঠল।

সবথেকে উজ্বল তারকাটি হল।বিল্লা।প্রথম গল্পের নায়ক চরিত্রটায় তার পরিচয় হয়ে দাঁড়াল।

তারপরেই সুলক্ষ্মীকে নিয়ে এল কোলকাতায়।সাউথ সিটিতে নতুন ফ্ল্যাট সাজাল।

সুলক্ষ্মী ছোট্ট রণির দেখাশুনোতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখল সারাক্ষণ।আর একটার পর একটা হিট সিনেমা দিতে লাগল বিল্লা।

দুবছরের মধ্যেই বিল্লা তার পুরো পরিবারকে নিয়ে এল লেক ভিউর নতুন বাঙলো বাড়িতে।

একদম নিখূঁত,সাজানো,গোছানো বাড়ি।গার্ডেন,লন,জিম এমন কি ছোট্ট মত একটা সুইমিং পুল পর্যন্ত আছে সেখানে।

একজন নায়ক হিসেবে বিল্লা এখন সাকসেস।

..ইদানিং তাকে মুম্বই থেকে কয়েকজন প্রথম সারির পরিচালক প্রায় কল করছেন।

কোলকাতার মোহ ত্যাগ করতে বিল্লার মন চায়ছে না।তাই বিভিন্ন রকম বাহানা ক্রিয়েট করে,কাটিয়ে দিচ্ছে।

আজ হঠাৎ পরিচালক রাজমৌলীর ফোন পেয়ে বিল্লা আর থাকতে পারল না।

তিনি যে কতবড় একজন পরিচালক সেটা এ দেশ কেন বিশ্বের প্রায় সব সিনেমাপ্রেমীরাই জানেন।

কথাটা প্রথমে সুলক্ষ্মীও মানতে পারেনি।যখন পরিচালক নিজে মালয়লাম ভাষাতে তার সঙ্গে কথা বলে সুসংবাদ নিলেন।তখন গিয়ে বিশ্বাস হল।

ফ্যাইনালি বন্ড পেপার সাইন করার জন্য বিল্লা সপরিবারে উড়ে গেল মুম্বাই-এ।

এদিকে মি. জাভেদ ফোন করলেন মি. সানি চ্যাটার্জীকে।

ইংরেজিতে কথাবার্তা হচ্ছে।


মি.জাভেদ বলে উঠলেন,রাজমৌলী এবার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম তৈরির কাজে নামছে।হাজার কোটি টাকার বাজেট।

মি. সানি উৎফুল্লভাবে বলে উঠলেন,তাই নাকি!..খুব ভাল খবর।যাক এতদিন পর বলিউড তাহলে বিশ্বের ঘরে,ঘরে পৌঁছে যাবে।

মি. জাভেদ আক্ষেপ করে বলে উঠলেন, একটা সিক্রেট খবর আছে।

---কী?

---রাজমৌলী নায়ক,নায়িকার নাম আউট করবে না।এরকম খবর শোনা যাচ্ছে।সম্ভবত নতুন তারকাদের নিয়ে কাজটা সারবে ।...আমার কাছে খবর আছে আপনাদের বাংলা সিনেমার উঠতি নায়ক মি. অজয় চক্রবর্তী।যিনি বিল্লা নামে পরিচিত।তিনি মেন ক্যারেক্টার-এর রোল করছেন।

মি. সানির চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল,রাজমৌলী একটা বোকাছোদা ছাড়া কিচ্ছুটি নয়।ওই বেটা করবে এতবড় সিনেমার নায়কের চরিত্র!

ডুবে যাবে।

মি.জাভেদ ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে একটু হেসে বলে উঠলেন,রাজমৌলী একদম বোকা না।

আমি জানি আপনার সঙ্গে বিল্লার একটা ঠান্ডা লড়াই চলছে।আপনার শত অনুরোধেও বিল্লা আপনার কোন ফিল্মে কাজ করেনি।

আপনি কী চান তার উপযুক্ত জবাবটা ওকে ফিরিয়ে দিতে?..এই যেমন ধরুন আমি চাই।মি. রাজমৌলীকে যোগ্য একটা জবাব দিতে।

---কাজের কথা বলুন।

---আমিও সেটাই চাই।একটু বাদেই পুরো প্ল্যানটা ওয়াটস অ্যাপে লিখে পাঠাচ্ছি।সেইমত কাজ করবেন।

পরিচালক রাজমৌলী তার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মের জন্য প্রথম পর্যায়ের সেট তৈরি করে ফেলেছেন।

রাজস্থানের জয়শালমের জেলা থেকে একশো কিমি পশ্চিমে।

ধু ধু বালির উপর রাজকীয় সেট।

কোন রূপকথার দেশের থেকে কম না। সেইজন্যই তো পরিচালক হিসেবে তার আজ এত নাম।

...হঠাৎ মাঝে একটা মরু ঝড় এসে সুটিংটা বন্ধ করে দিল।সেটের অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।

সারাসারি করতে দিন সাতেক যাবে। এই ফাঁকে বিল্লা দুদিনের জন্য কোলকাতায় গিয়ে পরিবারের সাথে সময়টা কাটাল।

তারপর প্ল্যান করা হল।একবার দিল্লী যাবে। সুলক্ষ্মীর মা,বাবা তাদের সকলকে একবার দেখতে চান।

সেই মতো সকালের ফ্ল্যাইট ধরে চলে গেল।

সন্ধ্যের সময় টিভিতে বাংলা চ্যানেলগুলো ঘোরাতে গিয়ে সুলক্ষ্মীর চোখজোড়া এক জায়গায় চুম্বকের মত আটকে গেল।

তাদের প্রিয় বাঙলো বাড়ির সামনে শত,শত মানুষ জমা হয়েছেন।

সকলেই ইট,পাটকেল ছুঁড়ছে বাঙলোর দিকে।

....লাইভ নিউজে দেখানো হচ্ছে ।কয়েকটা দৃশ্য ।

দৃশ্যটা ঠিক এই রকম:

বিল্লা তাদের বাড়ির অবিবাহিতা সুন্দরী যুবতীকে একটা উঁচু টেবিল থেকে নামতে সাহায্য করছেন।

তার দুটো হাত যুবতীর দেহ বেষ্টন করে স্তনযুগলকে খামচে ধরে আছে।

দৃশ্যটি বার,বার স্লো মোশেন মুডে রিপিট করে কাস্ট করা হচ্ছে।

এছাড়া আর একটা দৃশ্যও দেখানো হচ্ছে।

বিল্লার সদর দরজায় এবং বাথরুমে তিনরঙা পাপোশ পড়ে আছে।

যেটা দেখতে ভারতের জাতীয় পতাকার মতই।এতবড় একজন অভিনেতা হয়ে এই সব কান্ড কারখানা করেন কিভাবে?

প্রশ্ন করা হচ্ছে।বার,বার।


মাঝে,মাঝে তার বিভিন্ন সিনেমার মন জয় করা ডাইলগ প্লে করা হচ্ছে।

-----এই হচ্ছে একজন অভিনেতার আসল রূপ।যিনি একজন বাড়ির পরিচালিকার সম্মান নিয়ে খেলা করেন।আর দেশকে পায়ের নিচে মাড়িয়ে চলেন।

এবার আসল বিচার জনগণ করবেন ।চলুন দেখি এ ব্যাপারে সাধারণ পাবলিকের কী প্রতিক্রিয়া?

     ভিডিওটি যিনি গোপনে স্যুট করেছেন।তিনি আসল পরিচয় জানাননি।

সুলক্ষ্মীর বুকটা ঢিবঢিব বেজে উঠল।সাথে,সাথেই বিল্লাকে ফোন করে বাড়িতে ডাকল।

খবরটা এক ঘন্টার মধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া আর টিভির মাধ্যমে সারা ভারতে এমনকী বিদেশে পর্যন্ত ভাইরাল হয়ে পড়ল।

বিল্লা অস্থির ভাবে বাড়ির ভেতর পায়চারি করছে।সুলক্ষ্মীর মা,বাবা তাদের মেয়ে,জামাই-এর আসন্ন বিপদ জেনে কান্নাকাটি করতে লাগলেন।

বিল্লা চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,সব ওই কাজের মেয়েটির চাল!

...সেদিন দীপামাসির বদলে হঠাৎ করে ভেতরে কাজ করতে দেখে একটু খটকা লেগেছিল।ভেতরে,ভেতরে এতবড় যে একটা ফন্দি এঁটেছে।কল্পনাও করতে পারিনি।

সুলক্ষ্মী উদ্বীগ্নভাবে বলে উঠল, মেয়েটা তো ঝুল ঝাঁড়তে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিল।তুমি ওভাবে তাড়াতাড়ি গিয়ে না ধরলে ওর হাত,পা ভেঙে যেত।আমি তো সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারজন্য ওকে কত বকলাম পর্যন্ত ।

এসব দৃশ্য সুটিং হল কিভাবে?

বিল্লা বলে উঠল, আমরা ওই রঙের পাপোশ কখনোই ব্যবহার করি না।

সব ফেক।

ওই মেয়েটাই ফাঁক তালে মেঝেয় পেতে স্যুট করেছে।

এর পিছনে একটা বড় ধরণের চক্রান্ত কাজ করছে।কেউ তো পিছন থেকে আমাকে টার্গেট করছে।আমার আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তাকে ধুলোয় মেশানোর গোপন অভিসন্ধি রচনা করেছে।

সুলক্ষ্মী কাঁদতে,কাঁদতে বলে উঠল,কী হবে এখন?...বাঙলোটা তো ওরা মনে হয় জ্বেলেই দেবে।

----প্রশাসন তা হতে দেবে না।

----তবে কী আমরা কোলকাতায় ফিরে যাব?

...এদিকে মি. রাজমৌলীর কল এল বিল্লার ফোনে।

---এসব কী শুনছি বিল্লা?

বিল্লা এবার কেঁদে ফেলল

---আমি জানি না স্যার।কিচ্ছু জানি না। কিভাবে কী হল...আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

সুলক্ষ্মী ফোনটা নিয়ে মালয়লাম ভাষায় সব ঘটনাটা রাজমৌলীকে জানাল।

সমস্ত ঘটনাটা শুনে তিনি বিল্লাকে বলে উঠলেন,চিন্তা করো না।তোমার পিছনে আমার পুরো টিম আছে।

এক কাজ করো।কোলকাতা যেও না। দিল্লী থেকে সোজা প্লেন বুক করে শিকাগোতে চলে যাও।ওখানে আমার লোক তোমাকে পিক আপ করে নেবে।

সবাইকে সাথে নিয়ে যাও। 

কোনরকম নিউজ চ্যানেল দেখবে না। ওখানে আমার গুরু স্বামী করুনানন্দম বেঙ্কটেশ্বরের যোগ প্রতিষ্ঠান আছে।ওখানে একমাস ওনার কথামত চলবে ।

মনের ভেতর কোনরকম দুশ্চিন্তা রাখবে না।

এটা একটা সফ্ট টার্গেট।তোমাকে শেষ করার।আর আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করার।আজকাল অনেক সেলিব্রেটিদের সাথে এসকল ঘটনা প্রায় ঘটছে।তুমি চিন্তা করো না।আমি ঠিক সময়ে তোমাকে সেটে ডেকো নেব।

আমার ফিল্ম থেকে তবু তোমাকে বাদ দেব না।চ্যালেঞ্জটা একা তোমার না।আমারো।

ভয় করলে মরণ নিশ্চিত।আর আমি জীবিত অবস্থায় কোনদিন মৃত থাকতে পারব না।

...পরিবেশটা কিছুদিন পর এমনই থিতিয়ে যাবে। আবেগটা মানুষের আগে দেখা যায়।বিশ্বাসটা পরে।তুমি যদি ঠিক হও।জনগণ একদিন তা জানতে পারবেই।তারজন্য স্থির হয়ে মনকে শান্ত রাখতে হবে।দুশ্চিন্তা হাবি হয়ে গেলে...তুমি ওখানেই শেষ।গুরুজীর কথা মত চলবে।তোমার মানসিক শক্তি অটুট থাকবে।

তুমি আমার হিরো।তুমি জিতলে তবে তো কাল সারা বিশ্বের হৃদয়কে জয় করবে।

গুভ বাই।


দশদিন পর মি.জাভেদ মিঞা পুনরায় মি. সানিকে ফোন লাগিয়ে বলে উঠলেন,কেসটা কী হল...বলুন তো?...বিল্লার তো কোন আতাপাতায় নেই। ওর বাঙলোকে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ ।আর ও শালা সপরিবারে কোন কুলে গিয়ে ডুব মেরে আছে।

মিডিয়া প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।জনগণ রাগ উগরে এখন তো শান্ত হয়ে পড়ল।

এখন ওরাই বলছে।ঘটনাটা মিথ্যে ।

ব্যাপারটা এরকম হবে জানা ছিল না তো।

মি.সানি চ্যাটার্জী চিন্তিতভাবে বলে উঠলেন,ব্যাপারটা সত্যিই আশ্চর্যজনক।এরকম সাধারণত দেখা যায় না।

মানে এর আগের টার্গেটগুলো প্রায় সাকসেস হয়ে গেছে। এটাই ফেলুওর হয়ে গেল।

...এবার শালা মেয়েটা না সকলের মাঝে মুখ খুলে দেয়!...শালি আরো পাঁচ লাখ টাকা দাবী করছে।না দিলে কিছু একটা করে দেবে ।মালটার জীব দিয়ে লালা ঝরেই যাচ্ছে ।

---জীবটা কেটে দিন।এতো সোজা ব্যাপার।

পাবলিক তো কেউ জানে না ভিডিওটা কে স্যুট করেছে।

---কোনদিন যদি কোর্ট জানতে চায়?

---প্রমাণ,সাক্ষীর অভাবে কেসটা মিথ্যে প্রমাণ হবে,তাই তো?...এমনই এখন জনগন বুঝে ফেলেছে।এটা বানানো কান্ড!..মেয়েটা বেঁচে থাকলে আপনি মাঝখান থেকে শেষ হয়ে যাবেন।

---দেখি কী করা যায়।...গুড বাই।

রাজিয়ার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল।মনে হল তার মাথায় কেউ বোধহয় দু মণ ওজনের একটা পাথর জাকা দিয়ে রেখেছে।

অল্প, অল্প ব্যথাও করছে। তখনি তার হঠাৎ মনে হল সে সম্পূর্ণ নিরাভরন।

বুকটা ধক্ করে উঠতেই সব কথাগুলো তার মনে পড়ে গেল।

মি. সানি চ্যাটার্জীর কথা মত সে টাকা নিতে এই হোটেলের একশো এক নাম্বার রুমে হাজির হয়ে ছিল।

টাকাটা সে পেয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে ছিল। তারপরই মি,সানি তাকে মুচকী হেসে ড্রিংক অফার করেছিলেন।

সে পরিস্কার না বলেছিল।

সেটা শুনে মি. সানি হো হো করে হেসে ডানহাতে জলের বোতলটা ধরিয়ে বলে উঠেছিলেন,...তাহলে জল খেয়ে নাও।আমি ততক্ষণ মদটা শেষ করি।আমার সাথে চলো।তোমাকে রাজা বাজারে ড্রপ করে দেব।

অন্য মনস্ক হয়েই সে জলটা খেয়ে একটু চিন্তিতভাবে সোফায় বসে পড়েছিল।

তারপর আর মনে নেই।

রোজিয়া হাত দিয়ে নিজের গাটা ছুঁয়ে বুঝে গেল।তার সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে।

আর কেঁদেও কিচ্ছুটি হবে না।


এ তো একদিন হওয়ারই ছিল।এমন আগুনে তো, সে জেনেশুনেই ঝাঁপ দিয়েছে।এখন ফোস্কা দেখে ভয় পেলে তো চলবে না।

তবু ভারী মাথাটা কোনরকমে তুলে মি. সানি চ্যাটার্জীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, কাজটা ঠিক করলেন না।

মি. চ্যাটার্জী এক মনে তার দামি মোবাইলটা দেখছিলেন।

এখন সেটা রোজিয়ার দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠলেন, একটু আগে ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা!..তোমাকে জম্পেশ লাগছে মাইরী!..পর্ণপ্রেমীরা চেটেপুটে খাবে।আর হ্যাঁ... টাকা তুমি আর পাবে না। বেশি চালাকী করলে ক্লিপটা কিন্তু নেটে ছেড়ে দেব।...তখন তুমি রাতারাতি ফেমাস হয়ে যাবে।

শান্ত বেবিটির মত চুপচাপ এখান থেকে চলে যাও।আর আগে,পরের সব কথা ভুলে যা করছিলে তাই গিয়ে করো।..আন্ডারস্ট্যান্ড?

চালাকী করেছ কী তুমি শেষ।

মি. সানি যে তার গোপনাঙ্গের সাথে কী বীভৎস রকম খেলাটা খেলেছে,সেটা রোজি যত সময় যাচ্ছে তত বুঝতে পারছে।

কোনরকমে টলতে,টলতে নিজের রুমের চাবিটা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল।

চার ঘন্টা হয়ে গেছে। ছেলেটা জল পর্যন্ত খেতে পারেনি। পারবে কী করে?

উঠতেই তো পারে না। জন্মের পর থেকেই তার ভাই এরকম।

তার আম্মি অনেকদিন আগেই মারা গেছেন।আব্বু কোনদিনও তার এই পঙ্গু সন্তানটিকে অল্পও ভালবাসতে পারেননি।রোজিয়া দায়িত্ব নিয়েছিল বলেই আজো সে পৃথিবীতে বেঁচে আছে।

দু বছর যেতে,না যেতেই নতুন আম্মিকে এনে বসলেন তার আব্বু।

সে তো আরো দজ্জাল!

রোজিয়া বাড়ি না থাকলে ভাইটিকে খেতেও পর্যন্ত দিতেন না।

একদিন তাকেও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন।

দীপামাসির সঙ্গে তার মেলভাব ছিল বলেই একটা আয়ার কাজ জুটিয়ে দিল।

একটা বস্তিতে ঘরও পেল।

কিছুদিন আগে ডাক্তার, তার ভাইকে দেখে বলে উঠেছিলেন,ওর একটা কিডনি ফেল হয়ে গেছে।... আর হার্টেও সমস্যা আছে। মোটামুটি চার,পাঁচ লাখ টাকা লাগবে ।সব ভাল করতে গেলে।

ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ করে তাদের বস্তির সামনে মি. সানি চ্যাটার্জী এসে দীপামাসির খোঁজ করছিলেন।দীপামাসি তখন ছিল না।

মি. সানি একবার রোজিয়াকে ভালো করে জরিপ করে বলে উঠেছিলেন, একটা কাজ করে দিতে পারবে?.. টাকা তুমি যা চাও তাই পাবে।তবে সাবধান ।কেউ যেন টেরটি না পায়।

সেই সময় রোজিয়ার দুচোখে তার ভায়ের অর্ধমৃত মুখটাই ভেসে উঠেছিল।তাই আর কোনরকম চিন্তা করেনি।সোজা হ্যাঁ বলে দিয়েছিল।

তারপর একদিন দীপামাসিকে বাহানা মেরে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে সে অভিনেতা বিল্লা স্যারের বাঙলোয় তৈরি হয়ে ঢুকে পড়ে।

মি. সানির কথা মত ঠিকঠাক জায়গায় মাইক্রো ক্যামেরা সেটিং করে ঘটে যাওয়া পুরো সুটিংটা ক্যাপচার করে নেয়।

কাজটা করতে রোজিয়ার মন চায়নি।বিল্লা স্যারের পরিবারটার দিকে তাকিয়ে একবার ঘুরে যাবে ভেবেও পারেনি।তার নিজের ভায়ের অসহায় মুখটা মনে পড়ে যায়।

  কাজটা হয়ে যাওয়ার পর মাত্র এক লাখ টাকা রোজিয়াকে মি.সানি দিয়েছিলেন।

অথচ প্রথমে বলেছিলেন।যত চায় তত দেবেন।তাই সে ডাক্তারের কথা মত আরো পাঁচ লাখ টাকা ডিমান্ড করেছিল।

সেই টাকা নিতে গিয়েই তার এই অবস্থা!!

একগ্লাস জল কোনরকমে কুঁজো থেকে গড়িয়ে তার ভাইকে জাগাতে গিয়ে চমকে উঠল।

সব শেষ।

হাত,পা কঠিন হয়ে গেছে। নিঃশ্বাস,প্রশ্বাস সব বন্ধ।


রোজিয়া হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল।সমস্ত কান্না বুকের কাছটাই দোলা পাঁকিয়ে তাকে অস্থির করে তুলল।

সে অনেক পাপ করেছে।তাই আল্লা তাকে এমন সাজা দিলেন।সে মনে,মনে প্রতিজ্ঞা করল।যেতে,যেতে সে অন্তত সত্যটা সবাইকে বলে যাবে। এমনই তার এই পৃথিবীতে বাঁচার কোন ইচ্ছে নেই। কার জন্য এখন সে বাঁচবে?

ভাইও শেষ আর নিজের শরীরও শেষ!!

---তুমি... তুমি করেছ এত বড় অপরাধটা রোজিয়া!..আমার এতদিনের বিশ্বাস মান,সম্মান সব যে ধূলোর সঙ্গে মিশিয়ে দিলে রোজিয়া।

----সেইজন্যই তো আমি আজ তোমার কাছে এসেছি।প্রায়শ্চিত্ত করতে মাসি।তুমি যেমন করেই হোক বিল্লাবাবুর ফোন নাম্বারটা আমাকে জোগাড় করে দাও।আমি সব কথা বলতে চাই।

---আমার কাছে তো সাহেবের নাম্বার নেই।তবে দিদিমণির নাম্বারটা আছে মনে হয়।দাঁড়াও দেখি।আবার পাওয়া যাবে কী জানি না।

দীপামাসি সারা ঘর তন্ন,তন্ন করে খুঁজে ফিরল।শেষমেষ একটা নাম্বার পাওয়া গেল। তাতে ফোন লাগল না।

দুজনেই হতাশ হয়ে পড়ল।

তখনি রোজিয়া দীপামাসির ফোনটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলে উঠল,মি. সানি চ্যাটার্জীই আমাকে যেতে,যেতে প্রায়শ্চিত্তের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।

তুমি চিন্তা করো না মাসি।আমার কাজ এখানে বসেই হবে।

মেডিটেশন জোন থেকে বেরিয়ে বিল্লা গেটের কাছে মোবাইলটা নিয়ে দেখল।রাজমৌলী স্যারের পর,পর কয়েকটা হয়াটস অ্যাপ মেসেজ।

একে,একে খুলে দেখল।

তাতে মিস রোজিয়ার ইউ টিউবে ছাড়া স্বীকারোক্তি ভিডিওটাও রয়েছে।

সে অকপটে স্বীকার করে নিয়েছে।কাজটা সে কেন এবং কার জন্য করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে আর একবার তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।

আনন্দে বিল্লার চোখদুটো ভিজে এল।

এসেই সুলক্ষ্মীকে খবরটা জানাল।

সুলক্ষ্মী দেওয়ালে টাঙানো বালাজীর ফটোটার দিকে দুবার প্রণাম করে বলে উঠল,আমি জানতাম।আমার পূর্ণ আস্থা ছিল।উনার উপর।...এখান থেকে এবার আমরা সোজা তিরুপতি যাব।ওখানে আমার বড় একটা কাজ আছে।সারতে হবে।

রোজিয়া নিজে আত্মহত্যা না করলেও মি. সানির হাত থেকে সে রক্ষা পেত না ঠিক।তবে সেক্ষেত্রে মি. সানির উপর কেসটা আরো পোক্ত হত।

মিস রোজিয়ার এই উইক পয়েন্টটাকে ফোকাস করে মি. সানির ভাড়া করা জাদরেল লয়ার কেসটাকে অনেকটা হাল্কা করে দিলেন।

ও যদি আত্মহত্যা না করত।তাহলে মি. সানি চ্যাটার্জীর অন্তত কয়েক বছরের হাজত বাসটা কিছুতেই ঠেকান যেত না।

তাই জরিমানা স্বরূপ কয়েক লাখ টাকা দিয়েই হাত ঝেড়ে বেরিয়ে আসতে পারলেন।

ভিডিওটা ভাইরাল হওয়ার তিনদিন পর বিল্লাকে প্রথম মিডিয়া ধরতে পারল।তাও কয়েক মিনিটের জন্য ।চেন্নাই বিমানবন্দরে।তাতে সবথেকে বড় পরিবর্তণ লক্ষ্য করা গেল,তার স্ত্রী সুলক্ষ্মীর।এখন গলায় মঙ্গলসূত্র ধারণ করেছে।তারমানে ওরা রিসেন্ট লিভ ইন থেকে বেরিয়ে রিলেশনটাকে বৈদিক বিবাহে নিয়ে গেছে।

সবথেকে বড় পরিবর্তণ ঠিক সেটাও নয়।সেটা হল, সুলক্ষ্মীর মাথায় একটাও চুল নেই। ন্যাড়া।যদিও চুনরীতে ঢেকে রেখেছে।

সে ব্যাপারেও মিডিয়ার অনেক রকম প্রশ্ন।


মাত্র একদিন কোলকাতা যাওয়ার অনুমতি বিল্লা পেয়েছিল।

রাজমৌলী স্যারের সেট এদিকে জয়শালমেরে বিল্লাকে স্বাগত করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে।

কোলকাতা বিমানবন্দর থেকে তার লেক ভিউ বাঙলো পর্যন্ত রাস্তাটা পুলিশ ফোর্স দিয়ে মুড়ে দেওয়া ছিল।কারণ ওর অগনিত ভক্তরা তাকে গোলাপ ফুল কেউ সরি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।এক ঝলক তাকে দেখার জন্য।

বিল্লা কালো চশ্মাটা বাঙলোয় পা রাখার আগে পর্যন্ত খুলতে পারেনি।কারণ চোখদুটো তখনো ভিজে ছিল।

আজ তার কানে রাজমৌলী স্যারের একটা কথায় বেজে উঠল,ব্যর্থতা ছাড়া জয়কে ঠিকমত উপভোগ করা যায় না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama