সঙ্গী:-
সঙ্গী:-
নিরঞ্জন বাবুর অভ্যাস ছিল প্রতিদিন দিন সকাল সন্ধ্যা হাটতে যাওয়ার। সঙ্গী সাথীও ছিল অনেক নিরঞ্জন বাবুর। প্রত্যেকের সঙ্গে বেশ জমিয়ে আড্ডা মেরে, ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরতেন তিনি। কিন্তু করোনার কারণে যখন বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ তখন সারাদিন বাড়ি বসে বসে তিতিবিরক্ত হয়ে আছেন তিনি। নিরঞ্জন বাবুর স্ত্রী গত হয়েছেন হয়ে গেলো অনেক বছর। ওনার চলে যাওয়ার পরপরই হাটতে যাওয়ার অভ্যাস শুরু করেন আর ওই সময়টায় বন্ধুদের সান্নিধ্য উপভোগ করতেন অনেক বেশি। লক ডাউনের কারনে বাড়িতে এখন সবাই উপস্থিত। দুইছেলে এখন বাড়িতেই থাকছে সারাক্ষণ, সেই সঙ্গে দুই বৌমা সহ নাতি-নাতনীরাও। কিন্তু তবুও কোথাও যেনো অসহ্য লাগে নিরঞ্জন বাবুর এভাবে ঘরে বসে থাকা। বারবার চোখ চলে যায় হাটতে যাওয়ার সঙ্গী লাঠিটার দিকে আর বাড়ির গেইটের দিকে। সেদিন সকালেও এভাবেই মনখারাপ করে সারা বারান্দা জুড়ে পায়চারি করছিলেন তিনি।
ছোটছেলে দেখতে পেয়ে কাছে এগিয়ে আসলো নিরঞ্জন বাবুর।
- কি রে ছোট খোকা! তুইও বিরক্ত হচ্ছিস অফিস ছেড়ে ঘরে বসে থাকতে?
- না তো বাবা!
- সে কি! তোর বিরক্তি লাগছে না?
- না, কেনো লাগবে বাবা? এই প্রথম সমগ্র পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছি। সবাই একসাথে আসছি, বিরক্ত হবো কেনো?তাছাড়া, এখন তো বাড়িতে থেকেই ভালো থাকবো আমরা তাই না বাবা? বুঝতে পারি তোমার খুব অসহ্য লাগে এই বন্দীদশা কিন্তু এটা তো আমার, তোমার, সকলের ভালোর জন্যেই হচ্ছে তাই না বাবা? বাড়িতে থাকলে সুস্থ থাকবো বাবা। বাইরে গেলেই সমূহ বিপদ। চলো বাবা, ভেতরে গিয়ে বসি। বৌদি চা নিয়ে এলোই বোধ হয়। একসাথে বসে চা খাবো আমরা।
ছোট খোকা এই বলে ভেতরে চলে গেলে নিরঞ্জন বাবু একটু অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন। ঠিকই বলেছে খোকা। এই প্রথম ছেলে, বৌমা, বাচ্চাগুলো সবাই একত্রে একসাথে বাড়িতে। উনি ভাবছেন এই ব্যাপারটা এভাবে ভেবে দেখেননি তো! শুধু ভেবেছেন বাইরে যেতে পারছেন না, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারছেন না। কিন্তু তার বদলে যে ওনার গোটা পরিবার ওনাকে সঙ্গ দিতে বাড়িতে আছে সেটাতো খেয়াল করলেন না।
না না এই ভুলটা তো শোধরাতে হবে। নিরঞ্জন বাবু পায়চারি ছেড়ে চললেন ঘরের ভেতর। ঘরে তখন সবাই কথা বলছে, বাচ্চা গুলো খেলছে। নিরঞ্জন বাবু হাঁক দিলেন
- এই যে বৌমারা, আজকে সন্ধ্যায় তোমরা আমাকে একটু রান্নাঘরটা ছেড়ে দিয়ো তো! আমি আজকে তোমাদের সকলের জন্য গরম গরম পেঁয়াজি বানাবো। কি? খাবে তো তোমরা সকলে?
বড়ো খোকা আর ছোট খোকা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,
- ইয়াপ্পি! বাবার হাতের তৈরি পেঁয়াজি খাবো আমরা। জমে যাবে তো পুরো ব্যাপারটাটা।
ওদিকে বৌমাদের আর নাতি নাতনিদের যে আর আনন্দ ধরে না। নিরঞ্জন বাবু তাদের হাসিমুখ দেখে বুঝলেন যে না এই সংসার এখনও ওনার, এখনও তিনি এই সংসারের প্রমুখ। তিনি ফেলনা নন। সকলে অনেক ভালোবাসে এখনও ওনাকে।