STORYMIRROR

Ahin Mukherjee

Romance Tragedy

2.6  

Ahin Mukherjee

Romance Tragedy

সময়

সময়

3 mins
144


গ্রামের বিস্তীর্ন সবুজ মাঠ অমল ও তার সহকর্মীরা বসে গল্প করছে। অমল কোম্পানির অ‍্যাকাউটেন্সির হেড অফিসার। কাজেই এক প্রোজেক্টের জন‍্য শহর থেকে অনেকটা দূরে এক গ্রামে যেতে হয়েছে। জমিটা ঠিক ঠাক ভাবে পরিমাপ ও লক্ষ‍্য নজর করে কোম্পানির প্রোজেক্টের কাজের জন‍্য রেজিস্ট্রি করানো তার কাজ। অমলরা প্রথমবার গ্রামে এসেছে। গ্রামের মুক্ত বাতাস শহরের লোকজনের একটি প্রিয় জিনিস। অমল মাঠের সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে রাতের আকাশে চাঁদ ও তারা দেখছে। হঠাৎ মনে হল বর্ষার কথা, পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ফোনের টাওয়ার নেই। কাউকেই ফোন করা যাবে না। এদিকে বর্ষা পাগলের মত অমলকে ফোন করে যাচ্ছে। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে একরাশ অভিমান নিয়ে ঘরের লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। অপরদিকে অমল বর্ষার কথা ভাবতে ভাবতে মাঠেই ঘুমিয়ে পড়ে। পরেরদিন অনুরূপভাবে আবার ফোন করে এবং Wattsapp, massenger...এ sms করেছে। অধীর আগ্রহে আছে কখন sms..এর reply আসবে। এদিকে জমির মালিকের মা মারা গিয়েছেন তাই আরও বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। অমলরা গ্রামের মধ‍্যে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করার জন‍্য সময় পায়। বর্ষাকে এইসব ঘটনা জানাবে বলে ফোনটা বের করে দেখে টাওয়ার একটুকুও নেই। গ্রামের এই একটি অসুবিধা। এখন তবু ইলেকট্রিক এসেছে না হলে তাদের কি অবস্থা হত তাই চিন্তা করে ঘুরতে ঘুরতে। এইভাবে দিন অতিক্রম হতে থাকে। বর্ষা প্রতিদিন ফোন এবং massage করে। পরের দিন অধীর আগ্রহে ফোনটা দেখে reply...এর আশায়। বর্ষা বুঝতে পারে অমল অনলাইনে আসেইনি তার sms..গুলো সিন...ই হয়নি। অমল হতাশ ও বিরক্তি প্রকাশ করে বর্ষার সাথে না কথা বলতে পেরে। এইভাবে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়তে থাকে। দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেচ্ছে। জমির কাজ আরম্ভ হয়ে গেচ্ছে। বর্ষা প্রতিদিনই ফোন ও sms করে। এইভাবে দুই মাস অতিক্রম হয়ে গেল।


অমল ও অমলের সঙ্গীরা গ্রামের অতীত সভ‍্যতার প্রতি বিরক্ত হয়ে শহরে ফিরে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু কাজ শেষ না করে যেতেও পারচ্ছে না। অবশেষে চারমাস পরে কাজ শেষ হল। অমলের খুশির বাঁধ ভেঙে যাবে শহরে যাবে বলে না বর্ষার সাথে

দেখা হবে তাই। গ্রামে থেকে অমলের মুখ ভর্তি দাঁড়ি, গোঁফ, মাথা ভর্তি চুল হয়ে গেছে । অমল বাড়ি পৌঁছেই ফোনটা বের করে। ফোনে টাওয়ার আসতেই massage আসতে থাকে। অমল massage...গুলো দেখে বুঝতে পার এই চারমাসে বর্ষা তাকে প্রায় হাজার বার ফোন করেছে। অমল বর্ষাকে ফোন করল। ফোনটা বেজে বেজে কেটে গেল। এইভাবে কয়েকবার চেষ্টা করার পর ফোনটা রেখে স্মান করতে গেল। অমল ভাবল বর্ষা তার উপর রাগ করে ফোনটা তুলেনি। অমল অবার চেষ্টা করল কিন্তু ফোন বেজে বেজেই বন্ধ হয়ে গেল। অমল বর্ষাকে না জানিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে surprise দেবে বলে স্থির করে। অমল আরেক বার কল করল এবার ফোনটা রিসিভ হল। অমল আন্দসহকারে বলল hello baby কেমন আছ? ফোনের বিপরীত দিক থেকে উওর এল কে বলছ বাবা। অমল কিছুটা ভয় পেয়ে বলল এটাকি বর্ষার ফোন। এবার উত্তর এল হুম। আমি বর্ষার মা। অমল ভয়ে এবং শ্রদ্ধাসহকারে বলল আন্টি বর্ষা কোথায়? উত্তর এল বর্ষা আমাদেরকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। অমল জিঙ্গাসা করল কবে ফিরবে? ফোনের বিপরীত থেকে কান্নার আওয়াজ এল। বর্ষার মা কাঁদতে কাঁদতে কাঁপা গলায় বলল, বর্ষা আর কখনোই আমাদের কাছে ফিরে আসবেনা। বর্ষা মারা গেছে। ওর ব্রেন টিউমার ছিল আগে আমরা বুঝতে পারিনি, আর যখন বুঝতে পারলাম তখন কিছুই আর করার নাই। ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন যে বর্ষা আর মাএ পনেরো থেকে কুঁড়ি দিন বাঁচবে। এই বলে কাঁদতে কাঁদতে ফোনটা রেখে দিলেন। এটা শোনার পর অমলের পায়ের তলায় মাটি সরে যায়। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে পড়ে যায়। যখন অমলের ঘুম ভাঙল তখন অন্ধকার। অমল ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ফোনের data অন করল। কিছুক্ষণ পর দেখল wattsapp ও massenger....এ প্রায় পাঁচহাজারের বেশি massage। অমল ধৈর্য্য সহকারে পড়তে থাকে। শেষের দিকে massage..গুলোয় লেখা ছিল যে, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আর তোমাকে দেখতে পাবনা। তোমার হাতটা ধরে ঘুরতে ইচ্ছা করছে, তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছা করছে। অন্তত একটা বার তোমার যদি আওয়াজটাও শুনতে পেতাম। শেষে লেখা ছিল, চললাম baby bye ভালো থাকবে। এগুলি পড়ে অমলের চোখ দিয়ে খরস্রতা নদীর মত চোখের জল পড়তে থাকে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance