স্মৃতির ধূসর রং
স্মৃতির ধূসর রং
একজন বালক ছিল, যে চিত্রাঙ্কনে গভীর আনন্দ লাভ করিত। সে ছিল পরিবারের নয়নমণি, প্রতিভাবান ও সৃজনশীল। তাহার আঁকা চিত্রগুলি পরিবারের নিকট অমূল্য সম্পদস্বরূপ ছিল। হঠাৎ একদিন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাহার জীবনপ্রদীপ নিভিয়া যায়। তাহার স্মৃতিস্বরূপ আঁকা চিত্রগুলি সংরক্ষিত হইয়াছিল, এবং তাহার অঙ্কিত একটি ছবি পরিবারের প্রিয় কোনায় প্রাচীরে টাঙানো হইল।
তবে তাহার ব্যবহৃত কক্ষটি তালাবদ্ধ রাখিয়া দেওয়া হয়, যেন তাহার স্মৃতির স্পর্শ অক্ষুণ্ণ থাকে। বহুদিন পর একদিন ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেল, আর পরিবারের কেউ লক্ষ্য করিল না যে, সেই বন্ধ কক্ষের বারান্দার দ্বার অর্ধউন্মুক্ত রহিয়াছে। প্রবল বাতাসে একটি ছবি খসে পড়িল মেঝেতে, কিন্তু কেহই উহা তুলিবার জন্য উদ্যোগী হইল না। বাতাসের প্রবাহে উহা ধীরে ধীরে খাটের নিচে প্রবেশ করিল, ধূলি ও আবর্জনায় ঢাকিয়া গেল তাহার প্রিয় চিত্রকর্ম।
তিন বৎসর অতিবাহিত হইল। অবশেষে পরিবার সিদ্ধান্ত লইল সেই কক্ষ পুনরায় পরিচ্ছন্ন করিবার। তালা খোলা হইল, এবং পরিচ্ছন্নতার সময় ঝাড়ু দিতে গিয়া তাহারা সেই পুরাতন, ধূলিমলিন চিত্রখানি প্রত্যক্ষ করিল। কিন্তু কেহই উহাতে গুরুত্ব দিল না। এক অশুচি বস্তুর ন্যায় তাহা ঝাড়ু দ্বারা বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইল।
সেই স্থানে ধূলির আস্তরণে একটি চারকোণা ছাপ রহিয়া গেল— ঠিক যেমন করিয়া সময়ের স্রোতে তাহার অস্তিত্ব পরিবারের মন হইতে মুছিয়া গিয়াছে। একদিন তাহার আঁকা ছবিগুলির স্থান অন্যের শখের বস্তু দখল করিবে, নতুন স্বপ্নের আবির্ভাব ঘটিবে। আর সে? সে হারাইয়া যাইবে কুয়াশার মতো— স্মৃতির গভীরে, অতীতের অন্তরালে…
