পদ্মার জীবন চরিত
পদ্মার জীবন চরিত
এক গ্রামে বাস করিত এক কন্যা, নাম তাহার পদ্মা। সে রূপে ছিল অপূর্ব, গুণে ছিল অতুলনীয়। তাহার পিতা শেখর দত্ত গ্রামবাসীর নিকট ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়, আর মাতার নাম ছিল শ্রীমতী চন্দ্রকলা। কিন্তু বিধাতার বিধি অমোঘ। এক কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হইয়া চন্দ্রকলা অকালেই মৃত্যুবরণ করিলেন। পদ্মা তখন খুবই কনিষ্ঠা।
শেখর দত্ত চিন্তিত হইলেন, একাকী কন্যাকে লালন-পালন করা তাহার পক্ষে দুরূহ। অতএব, তিনি পুনরায় বিবাহ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলেন। নবপরিণীতা স্ত্রীর নাম ছিল তারা। তারার স্বভাব ছিল বড়ই কোমল। তিনি পদ্মাকে প্রথম হতেই আপন কন্যার ন্যায় স্নেহ করিতে লাগিলেন।
(তারার মায়ের আগমন)
কিন্তু সুখের দিন চিরস্থায়ী হয় না। তারার জননী বাড়িতে আসিয়া পদ্মাকে ভালোভাবে গ্রহণ করিতে পারিলেন না। তিনি বারংবার তারাকে বলিতে লাগিলেন যে পদ্মা তাহাদের গৃহের বোঝা। কিন্তু তারা তাহার মায়ের কথায় কান দিলেন না। তিনি দৃঢ়চিত্তে পদ্মাকে রক্ষা করিতে লাগিলেন।
(সময়ের পরিবর্তন)
দুই বৎসর পর তারার মাতা আবার গৃহে আসিলেন এবং পূর্বের ন্যায় কটূকথা বলিতে লাগিলেন। এক পর্যায়ে তারা রাগান্বিত হইয়া তাহার মাতাকে গৃহ হইতে বহিষ্কার করিলেন। তাহার বলিলেন, “পদ্মা আমার কন্যা। তাহাকে কেহ অন্যায় বলিতে পারিবে না।”
এরপর পদ্মা এবং তারা সুখে বসবাস করিতে লাগিলেন। তাহাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হইল।
(পদ্মার যৌবন)
বহু বর্ষ অতিবাহিত হইল। পদ্মা যৌবনে পদার্পণ করিল। তাহার পিতা শেখর দত্ত বার্ধক্যে পরলোকগমন করিলেন, এবং তারা অতি বৃদ্ধা হইলেন। একদিন পদ্মা পুকুর পাড়ে ভ্রমণ করিতে গিয়া এক রাজার দৃষ্টি আকর্ষণ করিলেন।
রাজা পদ্মার রূপে মুগ্ধ হইলেন। তিনি রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করিয়া দূত প্রেরণ করিলেন এবং তারার নিকট পদ্মার বিবাহের প্রস্তাব পাঠাইলেন।
(বিবাহ ও সাফল্য)
তারা কন্যার সম্মতি লইবার জন্য প্রস্তাব গ্রহণে বিলম্ব করিলেন। পদ্মা প্রস্তাবে সম্মত হইলে তাহাদের বিবাহ মহা ধুমধামে সম্পন্ন হইল। পদ্মা রানী হইয়া রাজ্য শাসনে মনোনিবেশ করিলেন।
(পাঠ রানী ও মাতৃত্ব)
দুই বৎসর পর পদ্মা রাজ্যের পাঠ রানী হইলেন। তাহার সুশাসনে প্রজারা আনন্দে দিন কাটাইতে লাগিল। পাঠ রানী হওয়ার এক বৎসর পর তিনি গর্ভবতী হইলেন। কিছু দিন পর একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম হইল। কন্যার নাম রাখা হইল কিরণমালা।
(উপসংহার)
পদ্মার জীবনগ্রন্থে সুখ ও দুঃখের কাহিনি মিলিয়া এক অপূর্ব রূপ ধারণ করিল। তাহার ত্যাগ, সাহসিকতা এবং মাতৃত্ব আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে প্রকৃত ভালোবাসা ও ন্যায়পরায়ণতা জীবনের সকল বাধা অতিক্রম করিতে পারে। কিরণমালা তাহার মাতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া ভবিষ্যতে রাজ্যের একটি মহান নেত্রী হইল।
