সেই রাত...!
সেই রাত...!
এক রাত্রে আমরা সকলে আনন্দে মগ্ন ছিলাম। রাত বেজে গেল বারোটা, অথচ পিতার ফিরার কোনো সংবাদ নেই। দশ-বারোবার ফোন করিলাম, কিন্তু তিনি ফোন ধরিলেন না। পরিশেষে, আর ফোন করিলাম না, কারণ রাগ করিবেন এই ভয়ে। হঠাৎ করিয়া বাড়ির বেল বেজে উঠিল। মনে হইল, পিতা ফিরিয়াছেন। মাতৃদেবী গিয়া দরজা খুলিলেন। কিন্তু দেখি, তিনি নন। আমাদের পাড়ার প্রধান, যিনি উঁচু মানের মানুষ বলিয়া পরিচিত, তিনি আসিলেন। তিনি পিতার খোঁজ করিলেন। মা তাঁহাকে সব জানাইলেন।
সেই রাত্রি কোনো মতে কেট গেল। সকাল হইল। পিতার জন্য শুরু হইল খোঁজাখুঁজি। বেলা বারোটা বাজিল, অথচ পিতার কোনো খোঁজ মিলিল না। পরে সন্ধ্যাবেলা পুলিশের সাহায্যে খোঁজ চলিল। হঠাৎ করিয়া সন্ধ্যা নাগাদ তাঁহার সন্ধান মিলিল। আমাদের বাড়ির ছাদের উপর তাঁহাকে পাওয়া গেল, কিন্তু গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায়।
তৎক্ষণাৎ দমকা হাওয়া বইতে লাগিল। আকাশ মেঘে ঢাকিয়া গেল। সকল দরজা জানালা বন্ধ করিয়া দেওয়া হইল। তাঁহাকে পোস্টমর্টেমের জন্য লইয়া যাওয়া হইল। শুক্রবার তাঁহার দেহ ফিরিয়া আসিল।
আমরা সবাই তাঁহার শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে উপস্থিত হইলাম। কাজ সমাপ্ত করিয়া নদীতে স্নান করিয়া গৃহে ফিরিয়া আসিলাম। তখন দেখিলাম, মাতৃদেবীর সিঁথিতে সিঁদুর রহিল না, হাতে শাঁখা-পলা রহিল না। লাল শাড়ির পরিবর্তে তাঁহার গায়ে সাদা ধবধবে শাড়ি। তাঁহার এমন রূপ দেখে মনে হইল, যেন তিনিই আর আমাদের চেনা মা নন।
সমাপ্ত।
