স্কুলের ক্লাস
স্কুলের ক্লাস


সেকেন্ড পিরিয়ড এর ঘন্টা পড়লো। মালিনী ক্লাসে ঢুকলো। ক্লাস ট্রি, সেকসান বি। মালিনী বাংলার শিক্ষিকা।স্টুডেন্টরা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, গুড মর্নিং ...ম্যাম.. । মালিনী সবাইকে বসতে বললো আর বললো আজ তোমরা রচনা লিখে দেখাও। বোর্ড এ লিখলো ,পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার অথবা তোমার প্রিয় লেখক। ক্লাসের থার্ড বেঞ্চে বসে আছে গার্গী । ও ওর পাশে বসা শাঁওলীকে বললো, তুই কোনটা লিখবি রে ।শাঁওলী তখন বললো, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার। গার্গী বললো, আমি না ওটাই লিখবো। ওটাই সহজ।মালিনী সবাই কে লেখা শুরু করতে বললো। কিছুক্ষন পর অর্ঘ্য বলে উঠলো, ম্যাম... দেখো রেহান আমার দেখে লিখছে। মালিনী বললো, কি হলো রেহান? তুমি পড়ে আসোনি ? রেহান বললো, না ম্যাম আমি তো প্রিয় লেখক লিখছি ও তো পরিবেশ দূষণ লিখছে । অর্ঘ্য বলে উঠলো, কি ....মিথ্যে কথা , জানতো ম্যাম এখন খাতার পেজটা পাল্টে নিয়েছে। মালিনী বললো, রেহান তুমি সরে বসো আর অর্ঘ্য চাপা দিয়ে লেখো। শাঁওলী ফিসফিস করে গার্গীকে বললো, জানিস তো! রেহান না খুব কপি করে। আগের বার এগজামের সময় আমি দেখেছি। গার্গী ও মাথা নেড়ে বললো, আমি ও, আমিও দেখেছি।
ও দিকে ক্লাস ওয়ানে দীপ্তি ম্যাথ ক্লাস নিচ্ছিল হঠাৎ ক্লাসে ঝামেলা শুরু হলো। ডালিয়া আর আশা দুজনের ঝগড়া করছে একটা পেন্সিল নিয়ে। দীপ্তি চেয়ার থেকে উঠে ওদের কাছে গিয়ে বললো, অংকগুলো না করে তোমরা ঝগড়া করছো। দুজনকেই আমি ক্লাস থেকে বের করে দেবো কিন্তু। আশা বললো, না ম্যাম... প্লিজ, আমি কিছু করিনি ।ওই তো আমার পেন্সিল টা চুরি করেছে। ডালিয়া বলে উঠলো, না ম্যাম না.. ওটা আমার পেন্সিল। ও ..নিয়েছে। এই নিয়ে কিছুক্ষন কথা চললো। তারপর জানা গেলো পেন্সিল টা আশার । দীপ্তি ডালিয়াকে বকলো মিথ্যে কথা বলার জন্যে।
টিফিন এর ঘন্টা পড়লো। স্টুডেন্টদের হৈচৈ এর শব্দ শুরু হলো । টির্চাস রুমে সাহানা বলে উঠলো, আচ্ছা অনিন্দিতাদি পেরেন্টস টিচার মিটিং কবে হচ্ছে গো? অনিন্দিতা তখন বললো, কি জানি ম্যাডাম তো কিছুই বলেন নি এখনো। লীনা রুমে ঢুকলো। ঢুকেই বললো ক্লাস টু-এর উর্মি কে দেখেছো? দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। সাহানা বললো, হ্যাঁ মেয়েটি তো ফার্স্ট হয় । পড়াশোনায় খুবই ভালো কিন্তু এবারের রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছে। অনিন্দিতা বলে উঠলো, দেখো হয়তো বাড়িতে ঠিকমতো গাইড করেনি, বাচ্চাদের মন কখন কিরকম থাকে। লীনা বললো, না অনিন্দিতা দি... মেয়েটা না কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকে আজকাল। তারপর ওদের নিজেদের মধ্যে অনেকক্ষন কথোপকথন চললো। দেখতে দেখতে টিফিন শেষের বেল পড়লো। সাহানা বললো, আমার আবার ক্লাস ট্রিতে আছে উঠি বুঝলে। অনিন্দিতা বললো আমকেও তো ফোরে যেতে, হ্যাঁ চল..।
ক্লাস ট্রি সেকসান এ । ক্লাসে মেহেক, পায়েলের দিকে তাকিয়ে বললো, এই তুই সাইন্স প্রজেক্ট খাতা এনেছিস ?সাহানা ম্যাম তো আজ চেক করবে বলেছিলো। সেঁজুতি পিছনের বেঞ্চ থেকে বললো, এই মেহেক তোর প্রোজেক্টটা একবার দেখাবি রে.. , কেমন হয়েছে দেখবো। মেহেক বললো, দাঁড়া দেখাচ্ছি।ওদিকে সৌর আর চয়ন এর মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে গেল। ক্লাসের বাকি ওদের থামতে বললো। দীপ্ত চিৎকার করে বললো, এই ম্যাম আসছে রে। সাহানা ক্লাসে ঢুকেই ওদের মারামারি করতে দেখে দুজকেই ডাকলো, এদিকে এসো কি করছো তোমরা ? দুজনকেই বকলো। তারপর বললো কি ব্যাপার টিফিন তো অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে তোমরা বেঞ্চ থেকে বেরিয়ে কি করছিলে? কি হলো বলো..? চয়ন কাঁদতে কাঁদতে বললো , সৌর আমাকে মেরেছে। সৌর বলে উঠলো, না ম্যাম ..ও আমার ব্যাগ ফেলে দিয়েছিলো আমি তুলে দিতে বলেছিলাম ও মুখ ভেংচিয়ে ছিলো। সাহানা কড়া গলায় বললো, যাও ....ক্লাসের বাইরে যাও। কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো বাইরে। দিন দিন তোমরা অসভ্য হয়ে উঠছো। কোনো ম্যানার্স শিখছো না। যাও ক্লাসের বাইরে গিয়ে দাড়াও। দুজনেই কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো আর হবে ম্যাম আর করবো । সাহানা ঠিক বলছো তো।ওরা বললো হ্যাঁ ম্যাম। সাহানা বললো, যা সিটে গিয়ে বোসো। সেঁজুতি মেহেকের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বললো, ম্যাম খুব রেগে গেছে আজ। পায়েল বললো তখন, ওদের জন্য হয়েছে সব। মেহেক বললো, হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। সাহানা এবার ক্লাস নিতে শুরু করলো....
পরেরদিন সেকেন্ড পিরিয়ড, লীনা ক্লাস নিচ্ছে ইংলিশ ,ক্লাস টুতে । ইংলিশ এর টেক্সট থেকে বোর্ড এ কিছু প্রশ্ন দিলো আর বললো আনসার লিখে দেখাও। কিছুক্ষন পর লীনা খেয়াল করলো উর্মি না লিখে কেমন যেন ভয় পেয়ে বসে আছে। লীনা উর্মি কে ডাকলো । উর্মির কাছে জানতে চাইলো কেন সে এরকম আচরন করছে । কি হয়েছে তার । কি সমস্যা। লীনা উর্মির কাছ থেকে জানতে পারলো ও বাড়িতে যে প্রাইভেট টিউটর এর কাছে পড়ে সেই স্যার ওর সাথে বাজে আচরণ করেছে। উর্মি বললো, আমাকে বাজে স্পর্শ করেছে। লীনা বললো, তুমি তোমার মা বাবা কে বলো নি? উর্মি বললো, আমার পাপা,মা দুজনেই চাকরি করে ব্যস্ত থাকে। আমার কথা কেউ শোনে না। আমার খুব ভয় করে ,বলেই কাঁদতে শুরু করলো। লীনা উর্মিকে বললো, তুমি জায়গায় গিয়ে বসো। লীনা ক্লাস থেকে বেরিয়ে হেডমিসট্রেস এর রুমে গেল এবং ওনাকে সবটা জানালো। স্কুল থেকে উর্মির পেরেন্টস কে ডাকা হলো। উর্মির মা এলেন , স্কুল ওনা এই পুরো ঘটনাটা জানালো। উর্মির মা বললেন, আমি তো সত্যি বুঝতে পারেনি , থ্যাংকিউ আপনাদের। উর্মির এতটা খেয়াল করার জন্য। হেডমিসট্রেস বললেন, আপনি ইমিডিয়েট ওই টিউটারের ব্যপারে স্টেপ নিন আমরা সবাই আপনার সঙ্গে আছি। আর মেয়েকে অবশ্যই সময় দেবেন যতই চাকরি করুন না কেন।
টিফিন টাইম টিচার্স রুমে বসে মালিনী বললো, কি বিশ্রী ইনসিডেন্ট বলো তো। লীনা না জিগাসা করলে ওই বাচ্চাটির সঙ্গে আরো খারাপ কিছু হতে পারতো। অনিন্দিতা বললো, ওর বাবা ,মা তো কিছু জানতই না। দীপ্তি বললো, আরে না ওতো ভয়েই বলেনি কাউকে। সাহানা বলে উঠলো, আচ্ছা আমরা বাচ্চা দের নিয়ে "গুড টাচ্ আর ব্যাড টাচ্ "একটা প্রোগ্রাম করতে পারি না? সবাই বলে উঠলো, হ্যাঁ হ্যাঁ করা উচিত, এটা ভীষণ জরুরী । সব বাচ্চার জানা উচিত । সাবধান হওয়া উচিত। লীনা বললো, তাহলে ম্যাডাম কে প্রস্তাবটা জানাতে হবে আমাদের।
পরেরদিন আবার নতুন সকাল । টাই, সু, আইডি, ইউনিফর্ম আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে এক এক করে সব স্টুডেন্টরা ঢুকলো স্কুলের গেট দিয়ে। আর নির্দিষ্ট সময় প্রার্থনার ঘন্টা পড়লো সবাই লাইন করে দাঁড়িয়ে পড়লো তারপর গেয়ে উঠলো প্রার্থনা সংগীত ।গোটা স্কুল সংগীতের শব্দে উদ্ভাসিত হয়ে হলো। আবার শুরু হয়ে নতুন ক্লাস.....