Kumar Archita

Romance Classics Fantasy

4.7  

Kumar Archita

Romance Classics Fantasy

সিঁদুর খেলা - শারদ সংখ্যা

সিঁদুর খেলা - শারদ সংখ্যা

10 mins
543


ক্লিক....!! ক্লিক....!! ক্লিক....!!ক্লিক....!!

 এইযে শুনুন?

 হ্যাঁ,আপনি....

 আপনি আপনাকে বলছি...?

 পনেরো মিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ঝাঁকড়া চুল ওয়ালা লোকটা চোখে একটা কালো সানগ্লাস পরা ধীরগতিতে তার দিকে এগিয়ে এলো হাতে তার একটা বেশ বড় ক্যানন এর ক্যামেরা।

 আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি ফটোগ্রাফার আপনি এখানে কেন দাঁড়িয়ে আমার ছবি তুলছেন।

আপনি ভেতরে যেতে পারেন ভেতরে বিজয় দশমী সিঁদুর খেলা হচ্ছে আপনি সেখানে গিয়ে ছবি তুলুন আপনি আমার ছবি কেন তুলেছন।

 ঝাঁকড়া চুল ওয়ালা লোকটি কিছুক্ষণ তাকে তাকিয়ে দেখল।

 মহিলাটা লাল পারওয়ালা সাদা শাড়ি পড়ে আছে গোটা গায়ে সোনায় ঢাকা মনে হচ্ছে নতুন বিয়ে হয়েছে গোটা মাথায় কপালে গালে সিঁদুর ভর্তি। লোকটা মহিলাটা কে জিজ্ঞেস করল...


 আপনি কি এইসবে সিঁদুর খেলে এলেন?

 মহিলাটা বললো হ্যাঁ...

কিন্তু আমার এখনো খেলা শেষ হয়নি ।লোকটা মহিলাটাকে আবার অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলো আর বলল...

আপনি কি বলছেন!!

আপনার খেলা এখনো শেষ হয়নি, পুরো তো সিঁদুরে ভর্তি হয়ে আছেন...

 আপনি আবার গিয়ে কি খেলবেন...

 হ্যাঁ,খেলব তাতে আপনার কি মশাই এটা আমাদের বাড়ির পুজো বুঝলেন....।

 এ বলে মহিলাটা একটা সরু গলি দিয়ে ঠাকুরদালানের ওপাশ কার ঘরে যেতে লাগলো তখনই লোকটি'ও মহিলাটাকে একটু চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

আপনার কি নতুন বিয়ে হয়েছে....?


 মহিলা হকচকিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখল...

 এই মরেছে!...মনে হচ্ছে খুব কোন ভুল কথা জিজ্ঞেস করে ফেলেছি কিন্তু....

 সে হুরমুড়িয়ে দরজার দিকে পালাতে যাবে এমন সময় সে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল.....

ওপাশ থেকে যেন তার কানে এলো কেউ খুব জোরে হাসছে....

সে মাথা ঘোরাতে দেখল যে সেই লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা মহিলাটা মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে...

 আচ্ছা মহিলা তো আপনি একজন হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছে আর আপনি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছেন, এমা নানা তা হতে যাবে কেন তাহলে আপনি হাসছেন কেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

 যেভাবে আপনি ধর মরিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন এটা দেখে আমার হাসি পেয়ে গেল আর আমি হাসি থামাতে পারলাম না.....।

 ঠিক আছে এখন অনেক হয়েছে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি হাত জোর করে।


 উফ ! মাগো বাবাগো .....মনে হচ্ছে পাটা মচকে গেছে.....

 আপনি কিছু বললেন না....

 না না মনে হচ্ছে যে আমার পাটা মচকে গেছে।

 এমা কি সর্বনাশ এর ব্যাপার,আপনার কি খুব লাগছে নাকি.....।

নানা আমার খুব মজা হচ্ছে....।

আরে মশাই!আপনি কি পাগল টাগল নাকি দেখে তো মনে হচ্ছে সুস্থ আমি কি জিজ্ঞেস করলাম আপনাকে আপনার লাগছে নাকি..?


 আপনি বলুন যদি কারো পা মচকে যায় তা কি রকম হতে পারে অবশ্যই তার খুব ব্যথা লাগবে যেমন এখন আমার লাগছে দেখুন পা টা কতটা মোটা হয়ে ফুলে উঠেছে।

 ঠিক আছে আমার ঘাট হয়েছে আপনি একটু আস্তে করে উঠতে পারবেন তো নাকি আমি সাহায্য করবো। আমাকে সাহায্য করতে হবে না আমি আসতে করে উঠতে পারব।


 উফ!...মাগো কেন কেন যে আমি পালাতে গেলাম তার ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটলো...।

 আচ্ছা এখন ওসব কথা থাক,যা ঘটে গেছে তা ঘটে গেছে, আপনি বরং আমার সঙ্গে ওইপাশ কার ঘরে চলুন ওটা আমাদের বসার সেখানে গিয়ে একটু বসুন। আমি আপনার জন্য একটা মলম আর জল পাঠাচ্ছি এই বলে মহিলাটি চলতে গিয়ে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়ে পিছন ঘুরে বললো....আপনি কি ঘর অব্দি যেতে পারবেন নাকি কাউকে ডাকবো..?


 না না... কাউকে ডাকতে হবে না আমি নিজেই যেতে পারবো আর এরকম অনেকবার আমার চোট লেগেছে যখন আমি বিদেশে থাকতাম।

আচ্ছা তো আপনি আমার পিছনে পিছনে চলে আসুন....।


বসার ঘরের দরজাটা খোলাই ছিল। বসার ঘরে ঢুকতেই দেখলাম ঘরটা খুব সাজানো, ঘর দামি সোফা সেট সোফা সেটের দুটো পাশে বড় বড় ফুলদানি। দুটো ফুলদানিতেই রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে সাজানো। ঘরের ছাদ থেকে ঝুলছে বিশাল বড় ঝাড়বাতি। ঘরের দেওয়ালে বড় বড় পেন্টিং ঝুলছে, দেখে তো মনে হচ্ছে কোন বড় শিল্পীর আঁকা এই ছবিগুলি। এই যে আপনি এখানে চুপটি করে বসুন... মহিলাটি বললেন, আমি শম্ভুদা কে বলছি আপনাকে জল আর মলম দিয়ে যেতে। আপনি পায়ে লাগিয়ে নেব। যদি সেরকম ব‍্যাথ‍্যা করছে মনে হয় বলবেন তাহলে ডাক্তার ডাকব।অনেক কাজ পড়ে আছে আমার, এখনো মায়ের বিসর্জন হয়নি। আমি চললাম আপনি এখানে বসুন আমি এক্ষুনি শম্ভুদাকে পাঠাচ্ছি। মহিলা কিছুদূর গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে আবার পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করল, আপনার নামটা তো জিজ্ঞেস করা হলো না....?


 তখন লোকটা বলল.... আমি অনেকক্ষণ ধরে ভাবছিলাম আপনার নামটা জিজ্ঞেস করবো আমার নাম হচ্ছে আর্য ব্যানার্জি,আমি ফ্লোরিডায়ে কাজ সূত্রে থাকি তবে আমার জন্ম এইখানে কলকাতাতেই হয়েছে।


 আচ্ছা আমার নাম নলিনি রায় চৌধুরী, আমি এই বাড়ীর বড় বউ আর আমার স্বামী তীর্থংকর রায় চৌধুরী বিরাট বড় শাড়ির ব্যবসায়ী।আমার দুটো বড় মেয়ে আছে একজনের নাম হিয়া আর একজনের নাম কেয়া।ওরা দুজনেই আশুতোষ কলেজে পড়ে কেয়া সাইন্স নিয়ে পড়ে আর হিয়া আর্টস নিয়ে পরে। দেখুন আপনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমি পুরোপুরি ভুলে গিয়েছি আমার যে ঢের কাজ পড়ে আছে ,আমি চললাম আপনি বসুন বলে নলিনী ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

 নলিনী ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই আর্য নিজের চোখ দুটো ঘুরিয়ে ঘরের পরিদর্শন করছিল তখনই আর্যের কানে এলো একটা ফ‍্যাস ফ‍্যাসে গলার আওয়াজ, সে চোখ দুটো উপরে উঠাতে দেখল একটা বেঁটেখাটো ধুতি আর নীল রঙের ফতুয়া পাঞ্জাবি পড়া লোক দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা বিরাট বড় ট্রে নিয়ে। ওই ট্রেটিতে আছে কাঁচের থালা ভর্তি মিষ্টি, জল, লেবুর শরবত আর পায়ে লাগানোর জন্য মলম।ওই বেঁটেখাটো লোকটি হল শম্ভু যার কথা একটু আগে নলিনী বলে গেল। আর্য ট্রে থেকে মলম আর খাবারগুলো নামাতে গেলে শম্ভু বাধা দিয়ে বলল, "আপনি বসুন, আপনি আমাদের অতিথি আপনি বসুন"।


"আমি সব খাবার গুলো আর মলমটা নামিয়ে দিচ্ছি "....।

 আর্য শম্ভুকে জিজ্ঞেস করল,

" আচ্ছা আপনি কি এখানে কাজ করেন..?

 শম্ভু বলল, হ্যাঁ...বাবু সাহেব "আমি এখানে দিনরাতের কাজ করি থাকি ও খাই"।

 সে কোন ছোটবেলায় সে মায়ের সঙ্গে এই বাড়িতে এসেছিল। শম্ভুর মা এই বাড়ীতে কাজ করতো, শম্ভুর মা খুব বাতের ব্যথায় ভুক্ত.... তাই সে একটু মাকে কাজে সাহায্য করে দিতো। মায়ের মারা যাওয়ার পর থেকে এই বাড়ীর সব কাজের ভার শম্ভু নিজের দুই হাতে নেয়। সে বলল, বড় বাবু মানেই বাড়ির বড়কর্তা তার মতো অধমকে এই বাড়িতে রেখে দিয়েছে খেতে দিচ্ছে পরতে দিচ্ছি এটাই তার কাছে বড় জিনিস। বড় কর্তা শুধু তাকে এইটুকু বলেছিল যে সে যেন গিন্নিমা আর বাড়ির বউদের একটু হাতে হাতে কাজ করে দেয়। তাহলেই হবে। শম্ভু বড় কর্তার কথামত কাজ করে দেয়।

 "তা বাবু সাহেব.....আপনার পায়ে কী করে লাগলো ...."


আর্য বলল..... যে সে বাড়ির ছবিগুলো তুলছিলো তাই খেয়াল করেনি, যে ওখানে একটা বড় ইট পড়ে আছে আর সেই ইটে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে। ও কিছু সেরাম হয়নি আপনি চিন্তা করবেন না।আচ্ছা শম্ভুদা এই মিষ্টিগুলো এখান থেকে নিয়ে যাও, আমি এত কিছু খেতে পারব না.... আর্য বলল। 

না না বাবু সাহেব.... আপনাকে এসব খেতে হবে বড় বউ দিদিমণি তো পাঠিয়ে দিয়েছে না খেলে সে রাগ করবে আর এই বাড়ির ও অমঙ্গল হবে ।

আপনার বউ দিদিমণি এত পাঠাতে গেলো কেনো আমি এতো খাই না তাই খেতে পারব না... 

 শম্ভু একটু রেগে গিয়ে বলল, না... আপনাকে খেতেই হবে না হলে কিন্তু আমি রাগ করবো এই বলে সে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।

কোন রাস্তা নেই দেখে আর্য খেতে শুরু করল।


ইতিমধ্যে নলিনীর স্বামী ও শ্বশুর মশাই তরুণ কুমার রায়চৌধুরী এসে পড়েছেন বসার ঘরে।নলিনীর স্বামী তীর্থঙ্কর নলিনির কাছে শুনেছে আর্যের ছবি তোলার কথা থেকে আর্যর পড়ে যাওয়া পযর্ন্ত, তাই নলিনির স্বামী তীর্থঙ্কর একটু আগেভাগেই রেগে যাওয়ার ভঙ্গিমায় আর্য কে জিজ্ঞেস করল যে,"কি মশাই কি ব্যাপার... আপনি যে খুব আমার বউয়ের ছবি তুলছিলেন কেন ভাই আমার বউকে কি আপনার খুব পছন্দ হয়েছে...।


আর্য থতমত খেয়ে গেছে ততক্ষনে, সে বললো না মানে না আমি তো ফটোগ্রাফার আর এই বছরে পুজোর ম্যাগাজিনের জন্য, সে সাবেকি বাড়ির পুজোর ছবি তুলতে এখানে এসেছিল, সে অনেক জায়গায় খুঁজেছে তখনই সে তরুণ কুমার রায়চৌধুরীর বাড়ির ঠিকানাটা পায়, সে শুনেছে যে রায়চ‍ৌধুরীদের বাড়ির পুজো সেই রাজাদের আমল থেকে বেশ ধুমধাম করে দুর্গা পুজো করা হয়।তাই সে এখানে এসেছিল। রায়চৌধুরী বাড়ি আর বাড়ির পুজোর ছবি তুলতে, সে ছবি তুলতে তুলতে কখন যে সে তীর্থংকর রায়ের স্ত্রী নলিনীর ছবি তুলে ফেলেছে সে বুঝতে পারেননি। আর্য বলল সে সত্যি খেয়াল করেনি, কিছু মনে করবেন না। সে এও বলল যদি আপনারা বলেন তো আপনার বাড়ির বউয়ের ছবি গুলো ডিলিট করে দিতে পারি ।


 হুম মমমমম..... বুঝলাম বলেন তীর্থঙ্কর বাবু.....। শ্বশুরমশাই তরুণকুমার একটু বেশি গম্ভীরভাবেই হুকো টানতে টানতে সামনের সবুজ রঙের সোফাটার উপর বসলেন, তার বসাটা দেখলেই বোঝা যায় যে উনি জমিদার হলেও সাহেবি কেতা তিনি ছাড়েননি,একটা পায়ের ওপর আর একটা পা তুলে বসলেন জমিদার তরুণকুমার রায়চৌধুরী। উনি বললেন তিনি ও বৌমার কাছ থেকে শুনেছেন আর্যর কথা। তিনি বললেন আর্যকে, "আপনি ফ্লোরিডায় থাকেন মানে বিদেশে তো ওখানে তো বেশ সুন্দর সুন্দর মহিলারা খুব ছোট কাপড় জামা পড়ে ছবি তোলে তো আমার বউমা সোনার গয়নায় মোড়া লাল পাড় শাড়ি পড়ে ছবিটা যে তুললেন সেই ছবিটি আপনার ভালো লাগলো কেন....? আর্য বলল ভাল লাগবে না আমার কারণ বাঙালি মহিলাদের এইরূপেই তো সবথেকে বেশি সুন্দরী লাগে সে কলকাতা হোক আর অন্য কোন জায়গায়,বিদেশে অনেক বাঙালি মহিলা আছে যাদেরকে সে দেখছে তারা পুজোর চারদিন লাল পাড় শাড়ি পড়ে গলায় হাতের গয়না পরে পুজো দিতে যায়। এটাই তো হলো বাঙালি মহিলার আসল সৌন্দর্য......।


 তীর্থঙ্কর বাবু বলে আর একটু গম্ভীর হয়ে বলল আর্যকে তাহলে, " আমি কি আমার বউয়ের ছবি গুলো কি দেখতে পারি"....


 অবশ্যই দেখতে পারেন বলে তার ক্যামেরাটা তীর্থঙ্কর বাবু হাতে দিয়ে দিল। ছবিগুলো উল্টেপাল্টে দেখছিেলন তিনি। দেখতে দেখতে তীর্থঙ্কর বাবু বলল ঠিক আছে খুব ভালো হয়েছে ছবিগুলো এই নিন আপনার ক্যামেরা। আর্য বুঝতে পারেনি তীর্থঙ্কর বাবু এখনো রেগে আছেন কিনা। সে তরুণ কুমার বাবুর নলিনী শশুর মশাই কে জিজ্ঞেস করলেন যে এই ছবিগুলো কি আমি...... 


একটা অট্টহাসির মধ্যে আর্যের সব কথা গুলিয়ে গেল, সে বুঝতে পারল না যে তীর্থঙ্কর বাবু হঠাৎ করে এমন জোরে হাসলেন কেন...?

 তীর্থঙ্কর বাবু বললেন, "ভাই আর্য তোমার সঙ্গে মজা করছিলাম...."


 "আমি একটু রেগে নেই,আমি বরং খুব খুশি হয়েছি যে আমাদের বাড়ির সাবেকি পুজো একটা বড় ম্যাগাজিনে ছাপতে চলেছে, আর আমার বউয়ের ছবি তোলা সে তো আমি নিজেই অনেকবার পূজার সময় তুলেছি সে যদিও বেশি ছবি তুলতে ভালবাসে না। কিন্তু তাও আমি অনেক লুকিয়ে-চুরিয়ে তুলি আর এখন যখন এরাম ভাবে ছবিটা উঠে এসেছে তখন আমি চাই যে তুমি তোমার ম্যাগাজিনে পুজোর একটা আলাদা কোন সেকশন করে যেখানে পুজোতে বাঙালি মহিলা কেমন সাজে সেজে ওঠে সেই কলামের নিচে আমার বউয়ের ছবিটা দাও তাহলে ঠিক আছে কিন্তু আপনার শ্বশুর মশাই......


তখন ওপাশ থেকে হুকো টানতে টানতে তরুণ কুমার বলে উঠলেন "আমার বাড়ি বড় বউমার ম্যাগাজিনে ছবি উঠছে তাতে আমার কোনো অসুবিধে নেই কিন্তু..... যেটা সবথেকে বড় প্রবলেম হবে সেটা হচ্ছে আমার বউ মানে নলিনীর শাশুড়ি মা দেবী রানী রায় চৌধুরী। আমার বউ খুব আদ‍্যিকালের মানুষ, মানেই সে এই ছবি তোলা বা বাড়ির বউ ছবির কোন পর পুরুষে ছবি তুলবে একদম পছন্দ করেন না, উনি একটু সেকেলে টাইপের বুঝতে পারলে বাবা। আমি বলছি তোমার মাকে মানে আমার বউয়ের সামনে এই কথাটা পেরে দেখি সে কি বলে তারপরে তোমরা নয় এনাকে বলে দিও..... আর্য বলে উঠল,কোন প্রবলেম নেই আঙ্কেল। নলিনীর শশুর মশাই আযাকে বলল বাবা.... তুমি এইখানেই থেকে যাও,তোমার পায়ে তো অনেক চোট লেগেছে তাই তুমি এখানেই থাকো। আমাদের অতিথি হয়ে আর আমাদের অতিথি আপ্যায়নের একটু সুযোগ দাও। আর্য তবে একটু না না করছিল.... কিন্তু ওর স্বামী উঠে গিয়ে আর্যর হাত ধরে জোর করে বলল, না তুমি এখানেই থাকো তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো তাই বড় ভাইয়ের কথা শুনতে হয় তুমি এখানেই থাকবে। তখন আর্য আর কি করে, সে অনাচ্ছাকৃত ওই বাড়িতে থাকতে রাজী হল।তার সুটকেস ব্যাগগুলো অতিথিশালায় রাখতে বলল হরিহর কে দিয়ে। দুদিন হল আর্য এই বাড়িতে বেশ মহানন্দে খুব ভালো অতিথি আপ্যায়নের সঙ্গে দিন কাটাছে।ইতিমধ্যেই হিয়া আর কেয়ার সঙ্গে আর্যর বেশ ভালই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সময় থাকতে থাকতে তরুণকুমার তার বউ দেবীরানীকে কে নলিনীর ছবি বিদেশি পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত করার জন্য রাজি করে নিলেন।তবে দেবীরানী আর্যর কাছে একটা শর্ত রাখল যে এরপরের পুজো সংখ্যায় যেন শুধু নলিনীর ছবি নয় তার ও ছবি যেন একসাথে ছাপা হয়, আর্য দেবী রাণীর কথা মেনে গেল, সে একটু হেসে বলল ঠিক আছে আণ্টি। আর্যের যাওয়ার ঠিক আগের সন্ধ্যেবেলায় নলিনী কে ডেকে তাকে একটা শাড়ি উপহার দেয়। নলিনি প্রথমে উপরহারটা সে নিতে চাইনি। সে বলল এসবের দরকার নেই আর তাছাড়া অতিথিদের কাছ থেকে কেউ কি কোনদিনও উপহার নিয়েছে না নেয়।তখন আর্য বলল, আপনারা এতদিন আমাকে এতো যত্নে রেখেছিলেন,সেই যত্নের পরিবর্তে আমি উপহারটা আপনাকে দিচ্ছি, নলিনী তখন রেগে গিয়ে বলে উঠলো যত্নের কোনো মূল্য হয় না তাই আপনাকে যত্ন করেছি সেটা মূল্যহীন তাই এই উপহারটা আপনার কাছে রেখে দিন।আর্য বলল, আচ্ছা! ধরুন এই শাড়িটা যদি আপনার স্বামী তীর্থংকর বাবু আপনাকে উপহার হিসেবে দিতেন তাহলে কি আপনি সেটাকে ফিরিয়ে দিতে পারতেন....., অবশ্যই না তো আপনি ভাবুন যে এই শাড়িটা আপনার স্বামী আপনাকে দিয়েছে .....

এ কথা শুনেই নলিনী কিছুক্ষন চুপ হয়ে রইল......।


নলিনীর ফ্যাকাশে মুখ দেখে আর্য হা হা করে হাসতে লাগলো। 

"আমি মজা করছি ম্যাডাম....."

 ততক্ষণে নলিনী একটু স্বাভাবিক হয়েছে সে বলে উঠল আপনি ও কিরকম ধরনের মানুষ এরকম কেউ রসিকতা করে।

হ্যাঁ.... ম্যাডাম আমি করি...., বলে উঠলো আর্য। ম্যাডাম...আমি ঘুমাতে চললাম....., টা টা.....।


অদ্ভুত ছেলে বটে একটা......।

 আর্য চলে যাবার দিনে সবার খুব মন খারাপ হয়ে গেছিল স্পেশালি হিয়া আর কেয়া আর শম্ভু দার।সে নলিনী কে আর তীর্থঙ্কর বাবুকে বারবার বলে গেছিল যে তার বাড়িতে একবার ঘুরতে যেতে পারেন ফ্লোরিডায়, নলিনি ও তাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে তারা ঘুরতে যাবে গরমের ছুটিতে।

 ম্যাগাজিন বেরোবার পর তার বাড়িতে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিয়েছিল আর্য।

 রাত্রিবেলা সব কাজ শেষে যখন নলিনি ম্যাগাজিন খুলল তার ভেতর থেকে সে একটা চিঠি আর গোলাপ ফুল রাখা ছিল সেইটা পেল, গোলাপ ফুলটা শুকিয়ে গেছে কারন অনেকদিন আগে তো আর্য ম‍্যাগাজিনটা পাঠিয়েছে আর বিদেশ থেকে কুরিয়ারে আসতে অনেক সময় লাগে তাই ফুলটার এরকম হাল হয়েছে। নলিনি চিঠিটা খুলে পরতে গিয়ে খেয়াল করলো চিঠিটার শুরুতে আর্য লিখেছে ননী কিন্তু তার নাম তো নলিনী তবে সে ননী কেন লিখেছে?,


 প্রিয় ননী, 

 প্রথম দেখাতেই আমার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছিল লাল সিঁদুরে তোমার গালদুটো ঢাকা ,কপালে সিঁদুর ভর্তি মুখটা আমাকে এমন ভাবে আকৃষ্ট করেছিল যে আমি তোমাকে আমার মন থেকে মুছতে পারিনি।জানি তুমি বিবাহিতা তোমার দুটো কন্যা সন্তান আছে তবুও আমি আমার মনকে অনেক বুঝিয়েছিলাম কিন্তু এই অবলা মন তোমাকে ভুলতে চাই নি আর পারেওনি। আমি চাইনা যে তোমার এই সুখের দাম্পত্য জীবনের মধ্যে আমি কোন প্রকারের বাধা হয়ে দাঁড়াই,তাই আমি তোমায় আমার মনের কথা বুঝতে দিইনি আর বলিও নি। আমি চুপ করে এখানে চলে এসেছি কিন্তু আমি তোমাকে একটা কথা বলে দিতে পারি যে আমি জীবনে কোনদিনও তোকে ভুলতে পারবো না আমার পক্ষে তোমাকে ভোলা সম্ভব নয়। আমি তোমার সেই সিঁদুর ভর্তি মুখের ছবি আমার হৃদয় থেকে যাবে একটা না পাওয়া ভালোবাসা হয়ে।

 ভালো থেকো,

 ইতি তোমার আর্য।


 চিঠিতে যে কথাগুলো লেখা আছে নলিনির মনে ঘুরে বেড়াতে লাগল,তবে সেই উপহারটা কি ওর প্রেমের প্রতিরূপ ছিল সেটা আমি বুঝতে পারিনি আর যেটাকে আর্য মজা করে উড়িয়ে দিয়েছিল।



Rate this content
Log in