সীমন্তিনী
সীমন্তিনী
শূন্য কলেজের মাঠে শিমুল গাছের নীচে একা বসে আছে সৈকত। শিমুল গাছ বসন্তের ছোঁয়ায় নিজেকে রঙিন করে তুলেছে। দূরে জীর্নকায় শরীরে দাঁড়িয়ে আছে আরও কিছু গাছ যাদের সমস্ত পাতা ঝরে গেছে। সৈকতের অবস্থা ঠিক ঐ গাছগুলোর মত! জীবনে বসন্তের রঙ লেগেও যেন জীবন রঙিন হয়ে উঠতে পারলোনা! বরং কষ্টের জালে জড়িয়ে পড়লো!
কলেজের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে প্রায় এক মাসের কাছাকাছি! সবাই যে. যার মত ছুটি কাটাতে বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু সৈকত যেতে পারেনি!!!! কারন সে. যে.. আজও অপেক্ষায় আছে কারোর আসার!! সৈকত যে কথা দিয়েছিল তার সীমন্তিনী কেসে এখানেই অপেক্ষা করে থাকবে তার ফিরে... আসা অবধি!!!! সৈকত দূর দিগন্ত বিস্তৃত শূন্য মাঠের দিকে তাকিয়ে একমনে ভেবে চলেছে তার সীমন্তিনীর কথা। একমাস পার হয়ে গেছে সীমন্তিনী এখনও ফিরে আসতে পারেনি! কোনো যোগাযোগ করতেও পারেনি!
সৈকত শুধু এইটুকু জানতে পেরেছি আর এক সপ্তাহ পর সীমন্তিনীর বিয়ে!কথাটা শোনার পর থেকে সৈকত নিজের চোখের জলকে ধরে রাখতে পারছেনা. সে. অবিরত ধারায় ঝড়ে চলেছে। সীমন্তিনী জন্ম জন্মান্তের জন্য অন্. কারোর বন্ধনে আটকা পড়ে যাবে!!! কথাটা ভাবলেই সৈকতের মনটা ডুকরে কেঁদে উঠছে। গগন ভেদী চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে. সৈকতের না.এটা হতে পারেনা! সীমন্তিনী কখনও অন্য কারোর বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেনা! আমার ভালোবাসা এত ঠুনকো নয়! সীমন্তিনী আমার ছিল. আছে... আর থাকবে.... জন্ম জন্মান্তর ধরে!!!
সীমন্তিনী সেইদিন জলভরা চোখে চেয়েছিল সৈকতের চোখের দিকে, মুখে কোন কথা বলতে পারেনি!!!! কারন কান্না গুলো দলাপাকিয়ে তার কথা কে.... বন্ধ করে দিয়ে ছিল। অবিরত বুকের মধ্যে যেন কেউ জোড়ে জোড়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত কর চলেছিল সীমন্তিনীর। কারন সীমন্তিনী আদৌও জানেনা সে.... ফিরে আসতে পারবে কিনা!!!! সৈকতের পাশে বসে আবার পশ্চিম আকাশের কোলে সূর্যাস্ত দেখতে পারবে কিনা!!!! সীমন্তিনী যে..... নিরুপায় তার বাবা যে.....তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে!!!! কোন এক বড় চাকরি করা ছেলের সাথে!!! সীমন্তিনী সবকিছু জেনেও.... চিৎকার করে বাবার মুখের ওপর বলতে পাড়েনি...... বড় চাকরি টাকা পয়সা কি.... সব!!! একটা বিয়ের জন্য!!!! ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই!!!! যে...... মানুষটাকে আমি ভালোবাসিনা!!! এবং কোনদিন ভালোবাসতে পারবনা!!! কারন আমি যে...... ভালোবেসে ফেলেছি!!! তাহলে সেই মানুষটার সঙ্গে সারা জীবন কাটাবো কি.... করে??? আমি এই বিয়ে করতে পারবনা????? বলতে পাড়েনি সীমন্তিনী!!! কিন্তু তার প্রতি সৈকতের অগাধ বিশ্বাস এবং ভরসা দেখে সীমন্তিনী নিজেকে আটকে রাখতে পাড়েনি হাউ হাউ করে কেঁদে সৈকতের বুক ভিজিয়ে ছিল।
-------------সৈকত সীমন্তিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিল এইভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা সীমন্তিনী!!!! আমাদের যে.... একসাথে সারা জীবন চলতে হবে!!! তাই লড়তে হবে, হাল ছাড়লে হবেনা!!! আর আমি জানি আমার সীমন্তিনী ঠিক জিতবে।
----------------সীমন্তিনী কান্নাভেজা গলায় বলে উঠেছিল চলোনা আমরা পালিয়ে যাই....!!! দূরে কোথাও যেখানে আমাদের কেউ চেনেনা!!! আমরা কাউকে চিনিনা!!! নতুন করে নতুন ভাবে আমাদের স্বপ্নের নীড় গড়ে তুলি।
--------------সৈকত বলেছিল এইভাবে সবাই কে.... কষ্ট দিয়ে আমাদের স্বপ্নের নীড় গড়তে চাইনা আমি সীমন্তিনী। সবার আর্শিবাদ নিয়ে ভালোবাসায় ভরা স্বপ্ন সুখের খেলাঘর সাজাতে চাই। আর আমার বিশ্বাস আমাদের দেখা স্বপ্ন পূরন হবেই। স্বপ্ন পূরনের পথটা মসৃন হবে না....!!! অনেক কষ্ট করতে হবে!!! কিন্তু স্বপ্ন পূরন হবেই!!!
সীমন্তিনী আর কোন কথা বলেনি!!! জলভরা চোখে কষ্টকে সঙ্গী করে সৈকতের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল। সীমন্তিনী যখন একটু একটু করে রাস্তার হাজার মানুষের ভীড়ে মিশে যাচ্ছিল, সৈকত তখনও সেইদিকেই এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল যতখন পর্যন্ত দেখা যায় সীমন্তিনীকে সেই আশায় । সূর্য তখন পশ্চিম আকাশের কোনে নিজেকে মিলিয়ে দিয়ে ছিল।
*****************************************
আজও সৈকত সেই একই জায়গায় বসে আছে!!! তবে..... সেইদিন সীমন্তিনীর ফিরে আসার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা বা.... আশা ছিল সৈকতের মনে কিন্তু.... আজ তার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই!!!!! এই.... এক সপ্তাহ যে..... সৈকত কি.....ভাবে কাটিয়েছে সেটা শুধুমাত্র সৈকত জানে!!! প্রত্যেক রাতে শুধু নীরবে বালিশ ভিজিয়েছে, আর প্রতিক্ষায় থেকেছে তার সীমন্তিনীর!!!! কিন্তু.... একটা একটা করে দিন পেরিয়ে গেছে!!! সীমন্তিনী ফিরতে পারেনি!!!
আজ সীমন্তিনীর বিয়ে সন্ধ্যা লগ্নে। সীমন্তিনীর বান্ধবী পূজার কাছ থেকে জানতে পেরেছে সৈকত। এও.... জানতে পেরেছে সীমন্তিনী অনেক চেষ্টা করেছে সবকিছু ঠিক করার.... কিন্তু পারেনি!!! সত্যি এক এক সময় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়!!!!! তখন মুখ বুজে সবকিছু মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা আমাদের হাতে!!! সৈকতের পুরো জগৎটা আজকে শূন্য লাগছে!!! সৈকত দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশও নিজেকে শিমুল ফুলের রঙে রাঙিয়ে নিয়েছে। সূর্য অস্ত যেতে শুরু করেছে আর কিছুক্ষনের অপেক্ষা পুরোপুরি ঘুমের দেশে ঢলে পড়তে। পাখিরাও আপনজনের টানে আপন আপন নীড়ে ফিরছে। সৈকত শুধু ভগ্ন হৃদয়ে একা একা বসে আছে!!!!
সৈকত হঠাৎ শুকনো পাতার ওপর দিয়ে কারোর হেঁটে আসার আওয়াজ শুনতে পেল!!!! পিছনে ফিরে চেয়ে দেখল তার সীমন্তিনী বাসন্তি রঙের শাড়ি পড়ে হাসিহাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পড়ন্ত সূর্যের মৃদু আলোয় অপরূপ লাগছে...... তার সীমন্তিনীকে...। সৈকত ছুটে গিয়ে সীমন্তিনীকে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে নিল। দুজনের চোখে তখন শ্রাবনের প্রবল বর্ষন তবে.... এই বর্ষন কষ্টের নয়... ফিরে পাওয়ার আনন্দের।
------------সীমন্তিনী সৈকতের চোখে চোখ রেখে বলল, আমি পেড়েছি সৈকত!!! আমাদের ভালোবাসা জিতেছে। এবার শুধু একসাথে মিলে আমাদের স্বপ্ন পূরন করার পালা!!!!
সৈকত সীমন্তিনীর হাত ধরে শিমুল গাছের নীচে বসল। বাতাস আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওদের ওপর দিয়ে বয়ে গেল। দু...চারটে শিমুল ফুল ঝড়ে পড়ল হাওয়ার তালে তালে। সূর্যও যেন দুটো প্রেমিক হৃদয়ের মিলনে সাক্ষী থেকে হাসিমুখে বিদায়ের পথে আরো এক পা.... বাড়ালো।
------------সীমন্তিনী বলে উঠল ভাবিনি এইভাবে আবার আমরা.... একসাথে সূর্যাস্ত.... দেখব।
---------সৈকত মনের আনন্দে ভ্রমরের মত গুনগুনিয়ে উঠল..........
"সূর্য ডোবার পালা আসে..... যদি
আসুক.... বেশ..... তো......
গোধূলির রঙে হবে.... এ ধরণী.....
স্বপ্নের দেশ....... তো......
বেশ..... তো..., বেশ..... তো....।"

