Suraj Mondal

Horror crime drama

3.4  

Suraj Mondal

Horror crime drama

শয়তানের উপাসক(শারদ সংখ্যা)

শয়তানের উপাসক(শারদ সংখ্যা)

12 mins
630


শয়তানের উপাসক

✍সুরজ মন্ডল

আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ সৌমেনের আসায় সুমন বেশ অবাকই হলো।

সৌমেন আর সুমন কলকাতার একই ব্যাংকে চাকুরীরত দুই কলিগ কাম বন্ধু। সব ঠিকঠাকই চলছিল তবে আজ প্রায় একমাস হলো সৌমেন কাজে আসে নি, যেন ছেলেটা একেবারে হটাৎ করেই ভ্যানিশ হয়ে গেল। অনেক বার ফোন করেছিল সুমন কিন্তু রিসিভ করে নি। গুরুতর অসুস্থতার কথা ভেবে সুমন কয়েক বার দেখাও করতে গেছিল কিন্তু তার ফ্ল্যাট লকড ছিল। ওদের এপার্টমেন্টের সিকিউরিটি কেও জিজ্ঞাসা করেছিল সুমন। তবে সে বলেছে প্রায় 1মাস ধরে নাকি সৌমেন কে সে দেখেনি।

আজও বাকি দিনেরমতোই ব্যাংক থেকে ফিরে ফ্রেস হওয়ায় জন্য সুমন টয়লেট এ ঢুকছিল আর তখনই শুনতে পেল ডোর বেলের আওয়াজ টা।

বেশ বিরক্ত হয়েই টাওয়েল টা গায়ে জড়িয়ে দরজাটা খোলে আর খুলতেই অবাক।

সামনে সৌমেন দাঁড়িয়ে।

আরো অবাক হয় সৌমেনের মুখ চোখের অবস্থা দেখে। তার চোখ গুলো যেন উদ্ভ্রান্তের মতো চারিদিকে কিছু খুঁজছে। চোখের নীচে কালি পরেছে, দৃষ্টিও ঘোলাটে, মুখটাও যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, এই রাতেও মাথায় একটা রুমাল জাতীয় কিছু জড়িয়ে আছে। সুমন কোনো কিছু বলার আগেই

―আগে একটু জল দে

এই বলেই ঘরের ভিতরে ঢুকে দরজা টা নিজেই লাগিয়ে দিয়ে সোফায় বসে পরলো সৌমেন।

সুমন তাড়াতাড়ি এক গ্লাস জল এনে সৌমেন কে দিল। এক নিমেষে গ্লাস টা খালি করে সেটা সামনের টেবিলে নামিয়ে রেখে সেই ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো সুমনের মুখের দিকে।

নাহ! ঠিক মুখের দিকে নয় যেন নির্দিষ্ট একটি অংশ, কপালের দিকে। সেদিকে চেয়ে যেন কিছু পরখ করে নিতে চাইছে।

সেই ভাবে তাকিয়ে থেকেই একটা প্রশ্ন করলো সৌমেন।

―আচ্ছা ইলুমিনাটি কথা টা কখনো শুনেছিস?

―নাহ শুনি নি, কি বস্তু সেটা? খাই না গায়ে মাখে? আর কি অবোল তাবোল বকছিস? আগে বল এত দিন ছিলি টা কোথায়? এত দিন ধরে কোনো পাত্তাই নেই।

কথা গুলো যেন শুনতেই পেল না সৌমেন।

সে বললে

―আমার দিন ফুরিয়ে এসেছে বুঝলি,তবে তার আগে আমি....

কথা শেষ হওয়ার আগেই সুমন বললো

―দিন ফুরিয়েছে মানে? কি হয়েছে একটু পরিষ্কার করে বলবি? তা না তখন থেকে হেঁয়ালি করে যাচ্ছিস। আর চেহারার এ কি অবস্থা করেছিস!

সৌমেনের মুখ যেন আগেরমতোই ভাবলেশহীন।

―বেশ যখন শুনতে চাইছিস তাহলে বলছি শোন।

সৌমেন বলতে শুরু করলো

―আমি আর আমার এক স্কুল ফ্রেন্ড বিমল, তিন সপ্তাহ আগে বিহার একটা জায়গায় ঘুরতে গেছিলাম। এই ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপার টাও খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। একদিন ব্যাংক থেকে বাড়ি ফিরে সবে টিভিটা খুলে বসতে যাবো ওমনি বেলটা বেজে উঠলো। কিছু টা বিরক্তই হলাম সারা দিন হার ভাঙা খাটুনির পরেও কি একটু শান্তি তে রেস্ট ও নিতে পারবো না? আবার কিছু টা অবাকও হলাম এই রাতে  আবার কার আমার প্রয়োজন পড়লো, আমার এই শহরে কোনো অত্মীয়ও নেই। বাবা-মাও গ্রামে থাকে। কিছু টা বিরক্ত ও সন্দেহের বসেই দরজা টা খুললাম।

বাইরে একজন দাঁড়িয়ে মাথায় চুল নেই। পরনে একটা ফুল হাত ব্ল্যাক শার্ট। হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তবে সে হাসি স্বাভাবিক নয়, মানে যেন বিষণ্ণ, কৃত্রিম, বা অন্য কিছু ঠিক না দেখলে বুঝতে পারবি না। আমি স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করলাম।

―কে আপনি?

লোকটা সেই মুখের হাসিটা আরো একটু চওড়া করে পরিষ্কার বাংলায় বললো।

―সে কি চিনতে পারলি না? অবশ্য তোর দোষ নেই, প্রায় 15 বছর পর দেখা। পনেরোটা বছর তো আর কম সময় না।

আমি তো শুনে অবাক। ভাবলাম এটা আবার কেমন অভদ্রতা, একজন অচেনা লোককে ডাইরেক্ট তুই-তাকারি করছে।

আমার মুখের অবাক ভাব দেখেই বুঝি এবার হাসিটা শুধু মুখেই লেগে থাকলো না কিবহুতা খিক খিক আওয়াজও নির্গত হলো।

―আমি বিমল।

―কোন বিমল?

―তোর স্কুলের বন্ধু বিমল মনে পড়ছে না?

এবার হটাৎই মনে পরে গেল বহু বছর আগের পরিচিত একটা মুখ, সেই স্কুল জীবনের এক বন্ধুর কথা। যদিও বিমল যে আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল তা নয় আর তাই এত দিন পর নাম টা শুনে মনে না পরারই কথা।

আমি এবার কিছু তা অস্বস্তির সাথেই বললাম

―হ্যাঁ ভাই মনে পড়েছে, তা এত দিন পর এখানে হটাৎ কি মনে করে? আর তুই আমার বাড়ির ঠিকানায় বা কোথায় পেলি?

কথা গুলো শুনে আবার বিমল সেই খিক খিক শব্দে হেসে উঠলো। মুখের ভাব ভঙ্গিও বেশ অস্বস্তিকর। যেন সে সবই জানে। তার হাঁসি তে যেন আন্তরিকতা নেই আছে একটা অবজ্ঞা মেশানো সবজান্তা ভাব।

―আসলে আমি কিছু কাজে এখানে এসেছি। আর তারপর একদিন এখানকার এক ব্যাংকে তোকে দেখলাম যদিও তুই আমাকে দেখিস নি।

আর তারপর তোর ব্যাংকের এক কলিগের কাছ থেকেই তোর ঠিকানা পায়, কিন্তু তখন একটা দরকারি কাজ থাকায় তোর সাথে আর দেখা করার সময় হয় ওঠেনি। কিন্তু এতদিন পর সেই পুরোনো বন্ধু কে দেখলাম তাই একবার দেখা না করে চলে যেতে মন সাই দিলো না।

―ও আচ্ছা তাই বল।

―কিরে ঘরে ঢুকতে দিবি না? তখন থেকে তো বাইরে দাঁড়িয়েই জেরা করে চলেছিস।

এই কথা শোনার পর লজ্জায় যে কি বলবো আর ভেবে পেলাম না। আসলে এইরকম হটাৎ আগমনে বিহ্বল ভাবটা কাটিয়ে উঠে যে বন্ধু কে সৌজন্যতা বসত ঘরের ভিতরে নিয়ে এসে বসাতে হবে সেটা মাথা থেকে একেবারে বেরিয়ে গেছিল।

―এই দেখেছিস, তোর এমন হটাৎ আগমনে…। যায় হোক আই আই ভিতরে আই।

বিমলকর ভিতরের ঘরে বসিয়ে দুকাপ চা আর টোস্ট নিয়ে ঘরে ঢুকলাম।

এর পর শুরু হলো গল্প।

স্কুল জীবনের স্মৃতি, রাজনীতি, বর্তমান দুর্যোগ, দেশের বর্তমান অবস্থা এই সব নিয়েই এগোচ্ছিল। গল্পের মাঝেই জানতে পারলাম বিমল অবিবাহিত, বিহারের হোসিয়ারপুর নামের এক আধা শহরে কর্মরত। কিন্তু কাজ টা কি তা জিজ্ঞাসা করে উত্তর পেলাম না।

যখনই জিজ্ঞাসা করি বলে

―সেটা সারপ্রাইজ। সেটা গিয়েই জানবি।

―মানে! কোথায় যাবো?

―আমার বাড়ি।

―তোর বাড়ি! কিন্তু ঠিক বুঝলাম না। মানে কেন, তোর বাড়ি এখন কেন যাবো?

―এই যেমন ভাবে তোর বাড়ি এলাম, মানে ওই ঘুরতে। এতদিন পর পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা একবার তো তোকে যেতে হবেই আমার সাথে।

তারপর কি কথা হলো তা তেমন প্রাসঙ্গিক না হওয়ায় আর বলছি না তবে আমি রাজি হয়েছিলাম।

এমনিতেও অনেক দিন হলো কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি। তাই বিমলের প্রস্তাবে প্রথম নিমরাজী হলেও পরে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়।

―তা কবে যাচ্ছি?

―এক উইকের মধ্যে সব ব্যাবস্থা করে নে।

এর পর পূর্বপরিকল্পিত সময়ই হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে রওনা দিলাম হোসিয়ারপুরের উদ্যেশে। যাওয়ার সময় বা ট্রেনের মধ্যে বিশেষ কিছু ঘটে নি। যা ঘটলো স্টেশনে পৌঁছে।

হোসিয়ারপুর স্টেশনে নেমে দেখলাম স্টেশনটা খুন একটা বড়ো নয়, দুটো প্লাটফর্ম তেমন লোকজনও নেই কয়েকটা দোকান আছে বটে স্টেশনের বাইরেই তবে তাও প্রায় ফাঁকাই, খদ্দের নেই বললেই চলে।

স্টেশনের বাইরে বেরোতেই এক জন লোক এসে হাজির। লোকটা খুবই অদ্ভুত তাকে ঠিক সাধারণ মানুই না বলে এক অদ্ভুত কদাকার প্রাণী বললে মনে হয় বেশি মামানসই হবে। এমন অদ্ভুত দর্শন লোক আগে আমি কখনো দেখিনি।

তার পরনে এই গরমে দুপুরের রোদেও আলখাল্লার মতো একরকম কালো জামা। কিন্তু যেটা সব থেকে ভয়ঙ্কর ছিল তা হলো তার মুখের নীচের দিক টা যেন একদম শুকিয়ে গেছে কিন্তু কপাল টা অত্যন্ত বড়ো তার ওপর নাকে লাগানো বড়ো গোলাকার অলংকারটা বড়োই বেমানান লাগছিল। কপালটা দেখে মনে হয় সেই শীর্ণ মুখে যেন বড়ো কোনো আঘাত লেগে ফুলে উঠেছে।

বিমলের কাছে জানলাম সে বিমলের ড্রাইভার।

আমি আর কিছু বললাম না গাড়ীতে উঠে বসলাম। যাওয়ার পথে বিমল ও আমি কথা বললেও লোকটি কিন্তু একবারও মুখ খুলল না।

শুধু গাড়ি তে না ট্রেন থেকে নামার পর থেকেই একটাও কথা বলে নি।

আর আমিও কোনো চেষ্টা করি নি এমনিতেই মুখটা এমন অদ্ভুত আর তা ছাড়া একজন ড্রাইভারের সাথে তো আর গলায় গলায় বন্ধুত্ব করতে যাবো না।

বিমলের বাড়ি টা স্টেশন থেকে প্রায় দশকিলোমিটার দূরে শহরের কিছুটা তফাতে। বাড়ির আশেপাশে আর কোনো বাড়িও চোখে পড়লো না। সবচেয়ে নিকটবর্তী বাড়িটাও বিমলের বাড়ির সামনে থেকে দেখা যায় না। দুপাশে তাকালে শুধুই ফাঁকা জায়গা আর মাঝে মাঝে কিছু ঝোঁপ ঝাড়। বাড়ির ভিতরটা বেশ সুন্দর পরিপাটি করে গোছানো দোতলা বাড়ি। প্রথমে ঢুকেই একটা ছোট্ট উঠান তার পর সামনে তিনখানি ঘর। বিমল আমাকে তারই একটাই বসালো। ততক্ষনে দেখলাম সেই ড্রাইভার আমাদের মালপত্র গুলো বাড়ির ভিতরে এনে রাখছে।

তবে তার শরীর দেখে যা ভেবেছিলাম একেবারেই তা নয় দেখলাম সে যথেষ্ট শক্তি রাখে শরীরে।

বিমল ওই লোক টা কে জন্য জল আনতে বলে বললো

―এখন রেস্ট নে বিকালে সব বলবো, এই চণ্ডীদাস, বাবু কো উনকা ঘর দিখা দো যারা।

―তোর কোনো দরকার হলে চণ্ডীদাস কে ডাকিস সেই সব ব্যাবস্থা করে দেবে।

এই বলে বিমল ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

―আইয়ে বাবু সাহেব।

হটাৎ কথা টা শুনে চমকে উঠলাম, দেখলাম চণ্ডী তাকে ডাকছে। এত ভারী আর কর্কশ গলা! এটা কি কোনো মানুষের গলার স্বর?

আমি উঠে চন্ডীর পিছু পিছু গিয়ে দেখলাম চন্ডী দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠেই প্রথম ঘরটির তালা খুলছে। ওপর টা বেশ অন্ধকার এই দুপুরেও। যদিও সেটা করিডরে একটাও জানালা না থাকার জন্য সেটা বেশ বুঝলাম।

ঘর টা খুলে দিয়েই আর কোনো কথা না বলেই সে চলে গেল ঘরের লাইট টা পর্যন্ত জ্বেলে দিলো না।

যায় হোক আমি সুইচবোর্ড টা খুঁজে লাইট টা অন করতে গিয়ে কোথাও খুঁজে পেলামনা। কিছুক্ষন এদিক ওদিক হাতরানোর পর লক্ষ্য করলাম টেবিলে একটা মোমবাতি আর দেশলাই রাখা আছে।

আচ্ছা মুশকিল তো,বাড়িতে কি ইলেক্ট্রিসিটিও নেই নাকি?

এটা ভাবতেই বেশ একটু অবাক হলাম। খুব যে একটা খুশি হলাম তাও না। একেতে এই শহর থেকে দূরে নির্জন এলাকা তার ওপর এই গরমে রাতে বাড়িতে একটা ফ্যান বা লাইটও নেই!

মোমবাতি টা জ্বালানোর পর দেখলাম

ঘরটা খুব একটা বড়ো না। একটা খাট আর একটা টেবিল চেয়ার ছাড়া তেমন কিছু নেই। যদিও আমার একার জন্য এটা যথেষ্টই হতো যদি না এই কারেন্টের ঝামেলা টা না থাকতো। আর ঘরে মাত্র একটাই জানালা তাও কিছুটা ওপরে আর ছোটো। চেয়ারের ওপর না দাঁড়িয়ে জানালার বাইরে কিছু দেখাও যায় না।

এবার বেশ অসস্তি হতে লাগলো।

খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার টা বাড়ি ঢোকার আগেই শহরের একটা হোটেলে সেরে নিয়েছিলাম তাই সে নিয়ে আর কোনো ঝামেলা নেই।

খাটের ওপরে শুতে যেতেই এই মোমবাতির আলো আঁধারী তে খাতের দিকে তাকাতেই যা দেখলাম তাতে প্রাণ পাখি বেড়িয়ে যাওয়ার সামিল।

বিছানার চাদরে একদম মাঝে এক অদ্ভুত অবয়ব।

নাহ ঠিক অবয়ব না যেন কোনো মানুষের একটা মাথার খুলির চিত্র যার কপালে একটা অদ্ভূত চিহ্ন আমি আগে তা কখনো দেখেছি বলে মনে পড়লো না।

মোমবাতি টা এগিয়ে নিয়ে সেটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করতেই বুঝলাম একটা ত্রিভুজ আকৃতির একটা চিহ্ন যার মাঝে একটা চোখ।

―এটা আবার কি?

যায় হোক চাদর টা তুলে নীচে ফেলে রেখে শুয়ে পড়লাম।

প্রায় পুরো দিন তা ট্রেন এর জার্নি জন্য বেশ ক্লান্ত ছিল। তাই ঘুম টাও চলে এলো তাড়াতাড়ি।

ঘুম ভাঙলো বিমলের ডাকে। চোখ খুলে কিছুই দেখতে পেলাম না। যেন অন্ধ হয়ে গেছি চারিদিক সব কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত। যেন কেও আমাকে কৃষ্ণগহ্বরে এনে নিক্ষেপ করেছে।

একটু ধাতস্থ হতেই বুঝলাম মোমবাতি ততক্ষনে জ্বলে জ্বলে কখন নিভে গেছে। কিন্তু তাও এত টা তো অন্ধকার হওয়ার কথা নয়।

তাহলে কি সন্ধে হয়ে গেল?

ফোন টা পাশে থেকে হাতে নিয়ে দেখলাম চার্জ শেষ। খাট থেকে নেমে মোমবাতি তা খুঁজে পেতে কিছুক্ষণ সময় লাগলো। মোমবাতি জ্বলতেই যা দেখলাম তাতে আমার সমস্ত শরীর এই গরমেও কাঁপতে লাগলো। এক অজানা ভয়ে ছিটকে কিছুটা পিছনে সরে এলাম।

সেই চাদর টা বিছানায় পাতা!

এটা কি করে সম্ভব, আমি তা ফেলে দিয়েছিলাম

এবার বেশ ভয় পেয়ে পেলাম।

আর আমি যে বিমলের ডাকে উঠলাম সেইবা কই? তাকেও তো কোথাও দেখছি না।

তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম বিমল কে খোঁজার জন্য।

বিমলের নাম ধরে হাঁক দিলাম

―বিমল..বিমল…বিমল কোথায় আছিস? চণ্ডীদাস…। গেল কোথায় সব!

নীচে নেমে দেখলাম পুরবাড়ি অন্ধকার, সন্ধাপূর্বের এক আলোআঁধারী খেলা করছে সামনের উঠোনে।

কোথায় যেন একটা ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পেলম। কে বা কারা যেন কথা বলছে।

আওয়াজ তা ওপর থেকে আসছে ভাবতেই আবার ছুটলাম ওপরের দিকে।

ওপরে উঠেই দেখলাম করিডরের একদম শেষ ঘর থেকে একটা ক্ষীণ আলো আসছে। এতক্ষনে আওয়াজ টা কিছু তা বেড়ে গেছে। আর এটা ভালোই বুঝলাম যে আওয়াজের উৎসও সেই ঘরই। কিন্তু এখনো কথা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম আলোর উৎস লক্ষ করে।

যতই এগোয় ততই আওয়াজ তীব্র হয়।

নাহ কারো কথা বলার আওয়াজ তো নয়।

মনে হচ্ছে কারা যেন খুব তাড়াতাড়ি কোনো মন্ত্র উচ্চারণ করছে। কিন্তু কিছু তেই কথা গুলো বোঝা যাচ্ছে না এত টাই জোরে সে গুলো উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কি কারো পক্ষে মন্ত্র আওড়ানো সম্ভব?

তবে এটা বুঝতে পারলাম মন্ত্রের ভাষা এর আগে কখনো শুনি নি।

যখন ঘরের বন্ধ দরজার সামনে এসে পৌছালাম তখন মন্ত্র উচ্চারণ এত টাই তীব্র যে নিজের দুই কান হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।

সেই অবস্থা তেই দরজার যে ফাঁক দিয়ে আলো বেরোচ্ছিলো সেখানে চোখ রাখলাম।

দেখলাম ভিতরে ঘরের মাঝে পাঁচ জন বসে রয়েছে বৃত্তাকারে তাদের কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না সকলেই আপাদমস্তক কোনো বিচিত্র কালো পোশাক পরে আছে। এবং তাদের সকলের মুখ থেকেই নিঃসৃত হচ্ছে সেই অজানা ভাষার মন্ত্র। আর সেই বৃত্তের মাঝে বসে আছে আর একজন তার চেহারা বেশ বড়ো বসে থাকা অবস্থাতেই যা মনে হচ্ছে তার উচ্চতা 7 ফুটের কম হবে না। তারও একই বস্ত্র শুধু সেটা কালো না লাল। আর তার মাথায় কোনো কিছু দিয়ে আবৃত নেই।

স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার মাথা একদম ফাঁকা কোনো চুল নেই। আর সে যেটার ওপর বসে আছে সেটা যেন খুবই ধীরে ধীরে ঘুরছে। এত টাই আস্তে যে এক মুহূর্ত দেখলে বোঝা যায় না। যদিও এই মুহূর্তে সেই ব্যাক্তির মুখ উল্টো দিকে আছে তাই দেখা যাচ্ছে না। তবে এটা দেখে বেশ অবাক হলাম যে ঘরে কোথাও কোনো আলো জ্বলে নি তাও পুরো ঘর এক হলুদ আভায় ভোরে আছে। কি যে তার উৎস তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। এরই মধ্যে যেন একটা ঘোর চলে এসেছিল প্রায় 15-20 মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পর সেই বিরাটআকার ব্যক্তির মুখ আমার দিকে ঘুরতেই  যা দেখলাম তা জীবনের কখনোই ভুলবার নয়। সেই ব্যাক্তি আর কেও নয় আমার সেই স্কুলের বন্ধু বিমল!

কিন্তু সে অত বিরাট আকার কি ভাবে ধারণ করলো আর এই সব কি হচ্ছেই বা কি? এত লোকই বা কোথাথেকে এলো? এই সব হাজারো প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরছে ঠিক সেই মুহূর্তেই আবারো এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য।

এতক্ষণ এই আলোআঁধারী আর হাজারো প্রশ্নের মাঝে খেয়ালই করি নি বিমলের কপালে যেন কিছু একটা আঁকা আছে যেটা খুবই চেনা চেনা লাগলো। হ্যাঁ ঠিকই চেনাই বটে।

এবার মনে পরে গেল সেই বিছানার চাদরের অদ্ভুত সেই চিহ্নের কথা। সেই ত্রিভুজ আর একটি চোখ।

কিন্তু এক্ষেত্রে বিমলের মাথার চোখ টি যেন মনে হচ্ছে খুবই জ্যান্ত। যেন সেটি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আর বিমলের মুখের সেই হাসি হাসি ভাবে মনে হচ্ছে সে যেন সবই জানে। কি হচ্ছে কি হবে এমনকি আমি যে দরজার বাইরে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে এই সব দেখছি তাও যেন তার অজানা নয়। ওই চোখ দিয়ে যেন সে সবই দেখতে পাই। কোনোকিছুই তার আড়ালে নেই।

এই সবই ভাবছিলাম হঠাৎ দরজা টা খুলে গেল। সেই গোল হয়ে বসে থাকা লোক গুলো উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ফিরলো। তারা নিজেদের মাথার হুড সরাতেই আবারো এক নতুন ভয়ে আর বিস্ময়ে কেঁপে উঠলাম।

সকলের মুখ চন্ডীর মতো। নিচে টা খুবই সরু আর কপাল টা অত্যাধিক মোটা।ধীরে ধীরে তারা আমার দিকে এগোতে লাগলো। তবে আমার স্নায়ু এমনিতেই বেশ শক্ত তাই বুঝলাম এখানে আর এক মুহূর্ত থাকাও আমার পক্ষে সুবিধার নয়। কিন্তু পালানোর জন্য পিছনে ঘুরতেই এবার ভয়ে আঁতকে উঠলাম। আর বোধহয় কোনো রাস্তা নেই। কারণ খেয়ালই করি নি এতক্ষনে আমার পিছনেও কিছু লোক এসে দাঁড়িয়েছে।

সবারই সেই একই মুখ।

দেখলাম বিমলের কনো পরিবর্তন নেই যেমন ছিল ঠিক তেমনি শুধু আর ঘুরছে না একদম সোজাসুজি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

মুখে সেই হাসি।

তার পর হটাৎ একটা গগনভেদী শব্দ। কিসের শব্দ তা আমি বলতে পারবোনা। কিন্তু তার পরেই ঘুমটা ভেঙে গেল।

আমি হাঁপাচ্ছিলাম কপাল ঘামে ভিজে গেছে, পাশে আমার ঘড়ি তে তাকিয়ে দেখলাম 6:30 বাজে মানে এখনো পুরোপুরি সন্ধে হয় নি। তার মানে এতক্ষন যা হলো তা একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। নিজের মনেই এই রকম এক আজগুবি স্বপ্নে ভয়ে পেয়েযাওয়ার জন্য হাসলাম। খাট থেকে উঠে পাশে রাখা বোতল টা নিয়ে জলটা মুখে ঢালতে যাবো, হটাৎ চোখ পরলো বিছানার দিকে আর সঙ্গে সঙ্গে বোতল টা অজান্তেই হাত থেকে পরে গেল।

স্পষ্ট মনে আছে চাদোর তা ফেলে দিয়েছিলাম ঘুমানোর আগে। তাহলে?

এতক্ষন যা হলো তা একটা নিছক খারাপ স্বপ্ন ভেবে আমার মনে যে ভয় টা চলে গেছিল তা আবার নিমেষেই ফিরে এল। বালিশের পাস থেকে ফোন টা তুলে নিতেই দেখলাম চার্জ শেষ। পাওয়ারব্যাংক ও আনা হয়নি কারেন্ট ও নেই।

বাইরে গিয়ে সন্ধ্যার মৃদু আলোয় দেখে মনে হলো এ আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?

দুপুরে যা দেখেছিল এটা কি সেই বাড়ি! হ্যাঁ বাড়ি টা এক কিন্তু!

কিন্তু, বাড়ির অবস্থা তো এক নেই আর। অনেক বছর এখানে কেও এসেছে বলে তো মনে হচ্ছে না। থাকা তো দূরের কথা।

কি মনে হতে  ছুটে ঘরে ঢুকেই আমার শরীর ভয়ে হিম হয়ে গেল। এ কি কোথায় সেই খাট কোথায় চেয়ার টেবিল কোথায় বিছানা। শুধু একটা খাটের মতো কাঠের কাঠামো পরে আছে দেখে মনে হচ্ছে অনেক কাল আগে হয়ত এটা একটা খাট ছিল। তবে আগের মতো কিছুই নেই বললে ভুল হবে হ্যাঁ একটা জিনিস আছে সেই চাদর টা।

তার পর আর সেখানে একমুহূর্তও দাঁড়ানোর সাহস হয় নি। ছুটে নীচে নেমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে আসতেই শুনতে পেয়েছিলাম সেই মন্ত্রের আওয়াজ। ততক্ষনে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে।

আর কিছু না ভেবে ছুটতে লাগলাম। কতক্ষন ছুটেছি জানি না। রাস্তা যেন আর শেষই হয় না। কোথায় যাচ্ছি জানি না প্রায় 2-3 মাইল মতো ছোটার পরেও কোনো বাড়ি ঘর তো দূরের কথা একটা আলোও চোখে পড়লো না।

আর শক্তি নেই।

হাঁপাতে হাঁপাতে রাস্তার মধ্যেই বসে পড়লাম। কখন যে জ্ঞানহারিয়েছিল মনে নেই।

সূর্যের তির্যক আলো চোখে পড়তে জ্ঞান ফিরলো। আর তার পর পাশে ফিরে তাকাতেই এই দিনের বেলাতেও এক অজানা ভয়ে কেঁপে উঠল আমার গোটা শরীর। আমি শুইয়ে আছি সেই বাড়ির সামনেই। না আসলে এটা আমার দুপুরে দেখা সেই বাড়ি নয় যেন মনে হচ্ছে এটা সেই বাড়িরই অস্থিসার।

এতক্ষন বলে সৌমেন টেবিলে রাখা বোতল থেকে 1 ঢোক জল খেল।

সুমন অধীর ভাবে বললে

―তার পর? তুই ফিরে এলি কি ভাবে?

একটা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে আবার বলতে শুরু করলো।

―হুম ঠিকই ফিরে এলাম, কিন্তু সত্যিই কি ফিরতে পারলাম?

―মানে?

বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলো সুমন।

―নাহ ও কিছু না। তারপর আর একমুহূর্তও সেখানে না থেকে যে দিকে কাল এসেছিলাম সে দিকেই হাঁটা দিলাম প্রায় এক ঘন্টার বেশি হাঁটার পরে হোসিয়ারপুর পৌছালাম।

বাড়ি আসার আগে সেখানকার থানায় গিয়ে আমার সাথে ঘটা সমস্তকিছু জানালাম আর পুলিশের কাছেই জানতে পারলাম ওটা নাকি 'ইলুমিনাতি' নামের এক নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর ডেরা ছিল। পরে পুলিশ জানতে পারে সেখানে কালজাদু টাইপের কিছু নিষিদ্ধ কাজকর্ম করা হয়। তার পরেই তাদের পুলিশ গ্রেফতার করে।

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার তাদের নাকি জেলের ভিতরেই কোনো এক অজানা কারণে সকলকেই পরের দিন মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর তাদের হাতে আর ঘাড়ের কাছে এক অদ্ভুত চোখের ছবি আঁকা ত্রিভুজ। শুনেই কাল যা দেখেছি আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এটা প্রায় 5 বছর আগের ঘটনা তখন থেকেই পরে আছে বাড়ি টা। এরপর সেখানে থেকে কলকাতা না ফিরে গেলাম গ্রাম, বিমলের বাড়ি ছিল আমাদের পাশের গ্রামে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানলাম বিমল নাকি কয়েক বছর ধরেই নিরুদ্দেশ। কেও তাকে তার পর আর দেখে নি কোনো কিছুই জানে না বাড়ির লোক।

সেখান থেকে কলকাতা ফিরেই 2 দিন কাটালাম লাইব্রেরী তে। ইলুমিনাতি সম্পর্কে বই আর ইন্টারনেট থেকে বেশ কিছু তথ্য জানলাম। যা জানতে পারলাম তা হলো

এই ইলুমিনাতি একটি গুপ্ত সংগঠন। ১৭৭৬ সালের ১ মে ব্যাভারিয়া তে অ্যাডাম ওয়েইশপ্ট এই সংগঠন টি প্রতিষ্ঠা করেন। ইলুমিনাতি শব্দের অর্থ 'শয়তানের উপাসক'

আর সেই ত্রিভুজের মধ্যের চোখই হলো  শয়তানের চোখ।

তার পর থেকেই শুরু হলো....

কথা শেষ না করেই হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো সৌমেন

―না...না...আবার আবার শুরু হচ্ছে। এবার যেতে হবে আমাকে।

হঠাৎই কথা টা শেষ না করেই ভয় আর উদ্বেগ মেশানো কণ্ঠে চিৎকার করে সোফা থেকে লাফিয়ে উঠেই সৌমেন দরজা খুলে ছুটে বেরিয়ে গেল।

এই সব দেখে সুমন হতভম্ব। এতক্ষন যা শুনলো তা কি সত্যিই নাকি সৌমেনের কোনো মাথার ব্যামো? না না এসব ভাবার এখন সময় নেই।

বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে সেও ছুটলো সৌমেনের পিছনে।

কিন্তু এ কি!

সামনের রাস্তায় যত দূর দেখা যায় কেও নেই।

সুমন বেশ দ্বিধার সাথেই বাইক টা বার করে সৌমেনের ফ্ল্যাটের দিকে রওনা দিলো।

রাস্তায় যাওয়ার পথেই যেন তার কিছু একটা খটকা লাগলো কিন্তু সেটা কি তার কিছু তেই মনে পড়ছে না।

সৌমেনের ফ্ল্যাটের সামনে যখন পৌছালো তখলন প্রায় 10:30 বাজে।

বেল বাজালো সুমন কিন্তু 5 মিনিট হওয়ার পরেও কেও খুললোনা দেখে দরজায় হাত দিতেই নিঃশব্দে খুলে গেল দরজাটা।

বেশ অবাক হলো এতে সুমন।

ভিতর টা খুবই অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

সুমন তার ফোন বার করতে গিয়েই দেখলো তাড়াহুড়োতে অনায় হয় নি। তখনই সে হঠাৎ তার খটকার কারণ টা মনে পরে গেল, সৌমেন যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তখনই সে  দেখেছিল তার ঘাড়ে যেন একটা ত্রিভুজ আকৃতির কিছু আঁকা!

ততক্ষনে বেশ কিছু টা ভিতরের দিকে এগিয়ে গেছে সে।

আর সেই মুহূর্তে হঠাৎ করেই পিছনে একটা জোর শব্দে বন্ধ হয়ে গেল দরজা টা।

4মাস পর....

অনিমেষ প্রতিদিনের মতো আজও দোকানে একাই বসে আছে।

খদ্দের নেই আপাতত। আর এই বৃষ্টি তে কেও আসবে বলেও মনে হয় না। তাই ভাবছিল আজকের মতো দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরবে। তখনই চোখ পড়লো রাস্তার উপর কে যেন এগিয়ে আসছে ছাতা নিয়ে। কাছে আসতেই চিনতে পারলো।

―সুমন তুই! এত দিন পর? এ কি অবস্থা তোর মাথাভর্তি ঘন কোঁকড়ানো চুলের জায়গায় এমন গরের মাঠ কেন?”

কোনো উত্তর দিল না আগন্তুক। মুখে এক চওড়া হাসি।

..............................সমাপ্ত...............................



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror