শেষ রাতের অতিথি
শেষ রাতের অতিথি
ক্রিং...ক্রিং...ক্রিং...ক্রিং...
ফোন টা বেজে উঠলো নিশার।
ঘুম চোখেই ফোন টা ধরলো
নিশা:“হ্যালো”
সৌরিক: “হ্যালো নিশা, আমি সৌরিক, হ্যালো হ্যালো…”
নিশা: “হ্যাঁ বল এত রাতে আবার কি হলো?”
সৌরিক: “নিশা আমি জানি না কি হচ্ছে। কিন্তু আমার ঘরে যেন কিছু একটা আছে।”
নিশা:“মানে! কি বলতে চাইছিস ঘরে আছে মানে কি আছে?”
সৌরিক: “আমি জানি না কি, কিন্তু কিছু একটা আছে আমি অনুভব করতে পারছি।”
নিশা: “হুম! বুঝেছি”
সৌরিক: “কি?”
নিশা: “কেন বাবু বুঝতে পারছো না তুমি মেরির ফাঁদে পড়েছ। হা হা হা”
বলেই বেশ জোরেই হাঁসতে লাগলো।
সৌরিক: “তুই হাসছিস?”
নিশা:“হুঁ তা হাসবো না? কত বার বললাম করিস না দেখলি তো বাজে স্বপ্ন দেখে ভয় পাচ্ছিস।
ভীতু, হা হা হা”
আবার হেসে উঠলো নিশা।
সৌরিক: “দেখ নিশা আমি ভীতু নয়।কিন্তু…”
নিশা: “কিন্তু কি বাবু? মেরি এসেছে বুঝি?
কিন্তু আমি থাকতে যেন কোনো মেরির সাথে কিছু না করা হয়। এই বলে দিলাম। নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।”
অপর দিক থেকে হটাৎ সৌরিকের এক ভয়ার্ত চিৎকার তারপরেই সব চুপ।
নিশা: “হ্যালো। হ্যালো। হ্যালো সৌরিক।
কি হলো? হ্যালো।।”
কেটে গেল ফোনটা।
(9153 * * * * * *)
নম্বর গুলো তাড়াতাড়ি টাইপ আবার ফোন ধরলো নিশা।
তার হাত কাঁপছে।
(আপনি যে নম্বরে ফোন করছেন সেটি এখন পরিষেবা সীমার বাইরে)
চার-পাঁচ বার করার পরেও সেই একই।
এবার কোনো কিছুর একটা ভয় যেন তাকেও গ্রাস করছে।
সৌরিক আর নিশা দুই বন্ধু।
আসলে বন্ধু বললে ঠিক বলা হবে না।
ওরা দুজন ভালোবাসে।
সৌরিকের কলেজের তৃতীয় বছর।
আর নিশার প্রথম।
সেই যেদিন নিশা প্রথম কলেজে ভর্তি হওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিল তখনই সৌরিক তার এডমিশনের ব্যবস্থাটা করে দেয়। আজ কাল একটু রাজনৈতিক হাত থাকলে যা হয় আরকি। যায় হোক তার পরেই বন্ধুত্ব আর প্রেম। সব ঠিকঠাকই চলছিল।
কিন্তু কিছু দিন হলো সৌরিকের ঝোঁক পড়েছে বিভিন্ন ডেমোনিক রিচুয়াল এর প্রতি।
ইন্টারনেট, আর লাইব্রেরি থেকে সে অনেক সব উদ্ভট রিচুয়াল শিখেছে। কিন্তু প্রায় সবই এমন যা করা খুব একটা সহজ না।
কিন্তু, কালই সে নিশা কে বলে সে নাকি এমন এক রিচুয়াল এর কথা জেনেছে যেটা বাড়িতেই করা যাবে।
নিশা প্রথমেই তাকে না বললেও। সৌরিকের জোরের কাছে তার না আর বেশিক্ষণ টেকে
নি।
অবশেষে ঠিক হয় আজ রাতেই তারা দুজন এই রিচুয়াল করবে।
রিচুয়াল টা এমন কিছু নয়।
রাত তিনটে বাজলে একটা মোমবাতি নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তিন বার
‘ব্লাডি মেরি’ নাম টা উচ্চারণ করতে হবে। আর তার পরেই আয়নার তাদের প্রতিচ্ছবির পরিবর্তে নাকি এক বীভৎস মহিলার ছবি ফুটে উঠবে।
সেই মতো তারা দুজনেই আজ রাত তিনটের সময় করলেও আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব ছাড়া আর কিছুই তারা দেখতে পাইনি।
কিছু না হওয়ায় নিশাই সৌরিক কে ফোন করে তার এই সব রিচুয়াল যে সব মধ্যযুগীয় গাঁজাখুরি গল্প ছাড়া কিছুই নয় তা বলার জন্য।
সৌরিক ও তাই মেনে নেই।
তার ঠিক 30 মিনট পর সৌরিকের ফোন।
এতক্ষনে নিশার শরীর ভয়ে অবস হয়ে গেছে।
কোনো রকমে গায়ের চাদর টা মাথামুরি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে কাঁপতে লাগলো নিশা।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
এই সবের মাঝে নিশা দেখতেই পেল না তার সামনের আয়নাই দাঁড়ানো অনাহুত এক অতিথি কে।