শুভ পরিণয়
শুভ পরিণয়
গল্পের নাম শুভ পরিণয় বলে ভাববেন না এটা আমার পরিণয়ের গল্প লিখছি। এই গল্পের নামটাতো আমি সেই মেয়েটার জন্য দিলাম যার আজ পরিণয় সম্পন্ন হচ্ছে আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে। অন্ততঃ আমারতো পরিণয় হল না ওর টাই না হয় শুভ হোক।
এবার গল্পে আসা যাক, ক্লাস তখন টেনে পড়ি পাড়ারই বন্ধু বিক্রম বয়সে আমার থেকে ২-৩ বছরের বড়, ওর তখন টুয়েলভ। খুব একটা কেউ কারোর বাড়ি যাতায়াত হয়না ওই খেলার মাঠেই খেলা, কথা অতটুকুই। বর্ষাকাল মাঠে কাদা, তো কয়েকদিন আমার বাড়ির ছাদেই খেলা হল। তারই মধ্যে একদিন সবাই বাড়ি চলে গেছে কিন্তু বিক্রম বাবু তখনও যাননি তিনি নাকি আরেকটু খেলবেন, তার যে কি খেলার ইচ্ছে ছিল প্রথমটায় ঠিক বুঝিনি। যখন বুঝলাম বেশ ভালো লেগেছিল, কৈশোরের গন্ডিতে পা দিয়েই তো এই মজাটাই তো উপভোগ করতে চেয়েছিলাম।
তখনও কিন্তু প্রেম ভালোবাসা ঘরবাঁধা এসবের কথা মাথায়ও ছিলনা ভাবিনি একবারও। এই স্বপ্নটাও বীর বিক্রমই দেখিয়েছিলেন আমায়। দেখতে শুনতে তিনি বেশ ছিলেন লম্বা ফর্সা চেহারাটাও বেশ লোভনীয়, পাড়ার প্রায় সব মেয়েদেরই বলা যায় ক্রাস। পাড়ার সব মেয়েদের ছেড়ে আমার সাথে বেশ গর্ব হত আমার। সামনে মাধ্যমিক পড়াশোনায় খুব ব্যস্ত আমি। তারই মধ্যে এলো ১৪ই ফেব্রুয়ারি বাবু ডাক পাঠালেন গেলামও আমি, গিয়ে দেখি এলাহী ব্যপার হাতে কার্ড গিফট নিয়ে রেডি আমায় দেখা মাত্র হাটু গিড়ে বসে প্রোপোজ করলেন।এতোদিন জানতাম ছেলে ছেলেতে হয়তো মজাটাই হয় প্রেমটাও যে হয় সেই মূহুর্তে বুঝলাম। যে মজাটা খেলার শেষে করতাম ওরই এখন নাম হল প্রেম।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ ওর ও টুয়েলভ শেষ। চুটিয়ে প্রেম করছি দুজনে। ওর দু চাকার রথ মানে ওর সাইকেলে চেপে এ গলি ও গলি ঘুরে বেড়াতাম। আমার শহরেও যে এতো অজানা সব রাস্তা আছে ওই মানুষটার জন্যই হয়তো আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম। সেই সাইকেল করে যেতে ও বলতো আমরা গোয়ার সী বীচের ধারে ঘর বানাবো একসাথে দুজনে সারা জীবন সেখানে থাকব। মজা থেকে প্রেম প্রেম থেকে ঘরবাঁধার স্বপ্ন সব সে মানুষটাই দেখিয়ে গেছে আমিতো জস্ট তার সাথে দেখে গেছি।
ক্লাস ইলেভেনে ভর্তি হওয়ার পর বাংলা পড়তে যেতাম বাড়ি থেকে একটু দূরে। বিক্রম বাবুই নিয়ে আসতেন এবং দিয়ে আসতেন তার রথে চেপে আমায়। যে দিদির কাছে পড়তে যেতাম দিদি বাংলাটা ভালোই পড়াতো কিন্তু আমাদের পড়া হয়ে গেলে আমার কয়েকটা বন্ধুকে আবার বায়োলজির ক্লাস দিতো। বিক্রমকেও কয়েকবার বলেছিলাম দিদির এই স্বভাবটার কথা ও যেন কেমন না শোনার ভান করে কাটিয়ে দিয়েছিল। এরই কয়েকমাস পর একদিন দেখছি ওই দিদি আমাকে ডাকতে এসেছে, খানিকটা অবাক লাগলো। তো দিদির সামনে যাওয়া মাত্র দিদি বলা শুরু করল দেখ ভাই তুইতো সবই জানিস আমার ব্যপারে তাই তোকে বলতে কোনো লজ্জা নেই আমার, তোর ওই বন্ধু আছেনা বিক্রম ওর সাথে কয়েকমাস ধরেই না আমার একটা সম্পর্ক চলছে, এবার আমার বর মনে হয় ব্যপারটা বুঝতে পেরে গেছে এই নিয়ে বাড়িতে অশান্তি করছে তো তুই ওকে একটু ডেকে দিবি তালে আমি বলে দিতাম এই সম্পর্কটা রাখা আর সম্ভব হবে না। তখন মনে হচ্ছিল বীচের ধারে আমরা যে বাড়িটা বানিয়ে ছিলাম সেটা হয়তো বালির ছিল তাইতো সমুদ্রের স্রোত এসে সহজেই ভেঙে দিলো।
না তারপর আর বিক্রমের সাথে পথ চলা হয়নি আর না হওয়াটাই স্বাভাবিক। ওর কোনো সাফাইও শুনিনি আর ইচ্ছেটুকুও ছিলনা। তো সেই বিক্রমেরই আজ শুভ পরিণয়, আমার সাথে বীচের ধারে যে ঘর তৈরি করার স্বপ্ন দেখে ছিল আজ ওই মেয়েটার সাথে যেন পূর্ণ হোক তারই শুভেচ্ছা রইল।