শৃঙ্খল মোচন
শৃঙ্খল মোচন
"মা প্যান্ট পয়সা দেয় না, লজেন্স খাবো"। বছরের ছোট বীর বায়না করে মিয়ার কাছের পাঁচায়সার জন্য। মা ছাড়া বায়না করার কেউ নেই তার। "আমি পয়সা পাবো বাবা, কে নেতা? তোমার বাবা নেই" - আমি এই কথাটি পাঁচ বছরের ছেলেটি বোঝে তার মা কতটা পরের অধিকারী৷ একান্নবর্তী পরিবারে মুখ বুজে দিন দিন কায়িক শ্রমিক একাধারে মা-ছেলে মুখ ভাতের মুখের সমস্যা। পয়সায় মিলিমুখে যে ফুটে কষ্ট দিতে পারে না তা ছোট বীরনে নজর এড়ায়নি। আর কোনোদিন শুধু পয়সা কেন, সাধারণের জন্য কিছু বায়না করেনি সে মিউ কাছে। সেমাতাছে তার ভিডিও হাত-পা নিয়মবদ্ধ। বড় বড় নারীর সাথে বীরেন মনে সর্বদা মন্ড শৃঙ্খল মোচন করার উপায় খুঁজতে থাকে।
মধ্যবর্তী সময়ে আবার দেশ তখন জোরদার স্বাধীনতা আন্দোলন। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের দেশ থেকে তাড়াবার জন্য পরিকর দেশের মানুষ। ছোট ছোট ছেলেটাও ঝাঁপিয়ে ধরতে দেশ। ১২ বছর বীরেনও মিল হল সে। মাত্র ১২ বছর, যদিও অনেক মনে হবে ১৬/১৭ বছর বয়স। যোগ দেয় বীরেন তাদের সঙ্গে গোপনে। বোমা বাঁধার সহায়তা করতে পারে সে। বাড়ির কেউ তা জানতে পারে না। দেশ গোপনীয়তা অবলম্বন করতে হয় তা সে মান্য। জানাজানি হল যখন বোমা বার্স্ট করে বীরেনের বাঁ দেখ আরদানহাতেতে তিন আঙ্গুল উড়ে গেল। মহিলা অন্ধের যষ্টি, মহিলার এমনটি বারেবারে মুর্ছা যেতে মা। ছেলেকে ভাগাকল কলকাতায়। মফস্বলে চিকিৎসা সম্ভব নয়। ছ'মাস প্যাডেল দীর্ঘমেগ চিকিৎসাধীন থেকে, টানাটানির পর ফিরল বীরেন বিকলাঙ্গ হওয়া। মিউ অক্লান্ত সেবা-শুশ্রুষায় সেরে উঠল সে শেষ।
কয়েক বছর পর দেশ স্বাধীন, কিন্তু বীরনেনের মাও পরাধীন। অ্যাক্সিডেন্টে তার জীবন একটা বছর নষ্ট হয়ে গেছে। মনের অহরহ তার অশান্তির আগুন, কী করে, কবে তার দাসত্ব শৃঙ্খল মোচন করা যায়।
স্বাধীন-নিরাপত্তা কে বাঁচাতে চান হে
কে বাঁচতে চায়?
দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে হে
কে পরিবে?
কবিতার এই লাইনগুলো বড় সত্য, আর বীরেনও তার মিত্র শৃঙ্খল মোচন করতে পরিকর।
বীরেন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকে। মিউ কষ্ট পিড়া দেয়, তার কঠিন তার-ক্লিস্ট মুখটা বুকে বড় বাজে।
দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের ভারতছাড়ো আন্দোলন সফল হয়েছে। পিতৃস্নেহে বঞ্চিত বীরেন আই.এ পাস করে স্বাধীন দেশ, পাকিস্তান অফিসে অফিস পায়। প্রথমটা মাইনে আমার হাতে লেখা আমার জল, ছেলের হাসি। "তোমার যেমন দাম কোরে মা, স্বাধীনভাবে কেউ তোমার কাছে হিসেব না।" মা ছেলেকে বুকে ধরলেন।
