arijit bhattacharya

Romance

5.0  

arijit bhattacharya

Romance

শ্রাবণের শ্রাবণী

শ্রাবণের শ্রাবণী

3 mins
659


প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের উপস্থিতি ক্ষণকালের জন্য হলেও চিরকালের জন্য তারা মনে এক রেখা অঙ্কিত করে যায়।পরে তারা অনুপস্থিত থাকলেও তাদের কথা মনে করে লেখক লেখে কাহিনী,কবিরা লেখে কবিতা আর আমার মতো সাধারণ ছেলেরা রচনা করে ডায়েরী। সেই ডায়েরীর পাতায় পাতায় থাকে তারই নাম,তারই কথা,তারই কাহিনী।আর সেই লেখা পড়ে তারই চিন্তায় চিন্তায় কাটে আমার বর্ষাযামিনী!তারই কথা ভেবে ভেবে উবে যায় রাতের ঘুম,সে হাজার মাইল দূরে থাকলেও কোনো এক আবেগের মুহূর্তে গভীরভাবে মনে পড়ে তাকে। প্রায়ই একান্ত মুহূর্তে শুধু নিজের করে পেতে ইচ্ছা করে তাকে। আমার জীবনেও আছে তেমন একজন । তার নাম শ্রাবণী!


শ্রাবণীর সাথে আমার যখন পরিচয় হয়,তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।সদুদার কোচিংএ যখন ওর সাথে আমার আলাপ হয়,সেদিনও ছিল শ্রাবণমাসের কোনো এক সকাল। আকাশ ছিল ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন,আর মাঝে মাঝে সেই আঁধারের বুকে আলোর রেখা এঁকে চমকে উঠছিল উজ্জ্বল ক্ষণপ্রভা।বইছিল মন মাতাল করা সোঁদা মাটির গন্ধযুক্ত বাদলা বাতাস।ভেসে আসছিল জুঁই ফুল আর হাসনুহানার গন্ধ।মনকে উদ্বেল করা সুবাস। আর তখন সেই চরম মুহূর্তে আমার দু'চোখ মিলেছিল শ্রাবণীর চোখের সাথে।আর তখনই প্রকৃতির কোন খেয়ালে মনের ভেতর বেজে উঠেছিল এক অজানা জলতরঙ্গ!শরীরে জেগে উঠেছিল এক নতুন শিহরণ।


প্রথমেই মনে এক অদম্য ইচ্ছা জেগে উঠেছিল যে,এই মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করলে কেমন হয়। একটু কথা বলার সৌভাগ্য কি আমার হবে!একটু কিছু মনের ফিলিংস কি শেয়ার করতে পারব!ও কি আমায় পাত্তা দেবে!


প্রথম প্রথম শ্রাবণীকে মনে হত অহঙ্কারী।যেন ভৌতবিজ্ঞানের নিউটনের গতিসূত্র আর গণিতের ত্রিকোণমিতির হাইট অ্যান্ড ডিসট্যান্সের জটিল ধাঁধার বাইরে কিছুই বুঝতে চায় না। কেমন যেন কৃত্রিমতায় পরিপূর্ণ!তারপর ধীরে ধীরে ভুল ধারণা আমার ভাঙল। আমার হৃদয়হারিণী এই কিশোরীর মধ্যেই আছে চশমার আড়ালে টানা টানা এমন দুই চোখ যা যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ছেলের মন চুরি করে নিতে পারে। আর আছে এক স্ফীত প্রেমপরিপূর্ণ হৃদয় ,যা অপরকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে সক্ষম। আর এই উপলব্ধি যেদিন আমার হয়েছিল,সেদিনই ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমার উদ্ভিন্নযৌবনা প্রেমাস্পদাকে।এইভাবেই ক্ষণিকের দেখায় 'ক্ষণিকের অতিথি' হয়েই আমার মন চুরি করল শ্রাবণী।


আজ মনে পড়ে যাচ্ছে প্রথম প্রেমের সেই মুহূর্ত যখন পেন দেবার অছিলায় ছুঁতে পেরেছিলাম শ্রাবণীর হাতের নরম আঙুল।সেদিন যেন বিদ্যুৎ খেলে গেছিল সারা দেহে। ধীরে ধীরে আমার কোচিংয়ে যাবার মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠল শ্রাবণী। ওকে দেখার জন্য,ওর সাথে কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকতাম সারাক্ষণ,সারাটা দিন। ওর কথাতেই বাজত আমার মনে বিণ!যেদিন শ্রাবণী আসত না,আমার সারাটা ক্লাস বিরক্ত লাগত। কেন জানি মনে হত,দিনটা বৃথাই কাটল।


ক্লাস ইলেভেনে পড়ার সময় আমার প্রথম কবিতাটা আমি শ্রাবণীকে নিয়েই লিখেছিলাম। হিন্দি কবিতা ছিল,'তুমহারী মোহব্বত'।ঈশ্বরের আশীর্বাদে সেই কবিতা শ্রাবণীকে শোনানোর সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। কবিতা শুনে ওর প্রশংসায় হৃদয় দুলে উঠেছিল,কিন্তু বলতে পারি নি যে,কবিতাটা ওকে নিয়েই লেখা। সাহস পাই নি মনে নিজের ভালোবাসাকে প্রকাশ করার।


এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার সময় কাছাকাছিই পড়েছিল দুজনের সিট। পরীক্ষা দিতে যাবার সময় এবং ফিরবার পথে দেখা হত শ্রাবণীর সঙ্গে। ওর মুখে চাঁদের জ্যোৎস্নার মতো হাসি ছিল আমার জন্য আলাদা মোটিভেশন। ও ছিল তখন আমার অ্যাবসলিউট ফ্যাসিনেশন।


যাই হোক,কলেজে পড়ার সময় আমরা দূরে চলে গেলাম। ফেসবুকে কথা হত। ওর পাঠানো এক একটা মেসেজ,এক একটা স্মাইলি এক নিমেষে আমার মন খারাপকে দূর করে দিত,মনকে এক অবর্ণনীয় ভালো লাগায় পরিপূর্ণ করে দিত। কোনো পরীক্ষার ভালো রেজাল্ট যখন ফেসবুকে শেয়ার করতাম আর ও যখন কমেন্টে অভিনন্দন জানাত,তখন আলাদা ছিল তার মর্ম,আলাদা ছিল তার স্বাদ।এক নিমেষে মন হয়ে যেত উদ্বেল,এক পবিত্র আনন্দে পরিপূর্ণ। অনুভব করতাম পজিটিভ এনার্জি। বেড়ে যেত মোটিভেশন!


কতো রাতে নদীসৈকতে রোম্যান্টিক চন্দ্রমার মধ্যে সময় কাটিয়েছি শ্রাবণীর কথা ভেবে,বর্ষার দিনে বৃষ্টির মধ্যে ভিজেছি,সন্ধ্যায় গিটার বাজিয়েছি শ্রাবণীকে অনুভব করে।কতো প্রেম-বিরহের কবিতা লিখেছি শ্রাবণীকে মনে করে!


যে কারণেই হোক আজ আর শ্রাবণী আমার কাছে নেই। দূরে,অনেক দূরে। কথা আর হয় না আজ। তাও আজও গিটারে সুর তুলি ওর কথা মনে করে,কবিতা লিখি ওকে কল্পনা করে,গল্প লিখি ওকে অনুভব করে।


আমার এই জীবনপ্রবাহে 'ক্ষণিকের অতিথি'হয়ে আজও রয়ে গেছে শ্রাবণী!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance