শোধ
শোধ
-'' সরি মিঃ রায়, আপনার হাত দুটো বাঁচাতে পারলাম না। যে ভাবে পচন ধরেছে ইমিডিয়েট কেটে বাদ না দিলে আরো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কবজি থেকে পোড়া হাত দুটো আপাতত বাদ দিতেই হবে। '' ডঃ গোয়েঙ্কার কথায় নিজের পোড়া হাত দুটো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে রথীন। কস গড়াচ্ছে ফাটা, গলা অংশ গুলো দিয়ে, প্রায় এক মাস ধরে এই নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে ওকে। পোড়ার যে এত জ্বালা ও কখনো টের পায়নি আগে।
রায়ার গায়ে কেরোসিন ছেটাতে গিয়ে ওর হাতেও লেগে গেছিল কিছুটা। জ্বলন্ত রায়ার শরীর থেকে কি করে যেনো ওর হাত দুটোও জ্বলে উঠেছিলো । অবশ্য হাত দুটো এভাবে পুড়ে যাওয়ায় পুলিশ বিশ্বাস করেছিল ওর কথা। ও যে রায়াকে বাঁঁচাতে গিয়েই হাত পুড়িয়েছে রায়ার মামা মামি ও বাকি সবাই বিশ্বাস করেছিল সেদিন। করবে নাই বা কেনো। বিয়ের ছয় মাস ধরে রায়াকে পাগলের মত ভালোবাসার যে অভিনয় ও করে এসেছে তাতে তো কোনো খুঁত ছিলো না। রায়া যে জেদি এক গুয়ে সবাই জানত। নতুন বদলি হয়ে চাঁপা ডাঙ্গায় এসে স্টোভেই রান্না করছিল রায়া। বাপ মা মরা মেয়েটার ঐ বিশাল সম্পত্তি এখন রথীনের নামেই। কিন্তু এই হাত দুটোই যদি না থাকে কি করবে রথীন?
ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে লোকের দয়ায় বেঁচে থাকতে হবে সারা জীবন !! অসহ্য!! পারমিতাকে বিয়ে করার যে স্বপ্ন নিয়ে রায়াকে পুড়িয়ে মারল সেই পারমিতাও আর দেখতে আসে না। সারাক্ষণ হাতের যন্ত্রণায় কাহিল রথীনের নিজে নিজে ফোন করার ও ক্ষমতা নেই। হাত ছাড়া পারমিতার ঐ সুন্দর শরীরটাকে ও আদর করবে কি করে !!
মনে পড়ে রায়ার শেষ কথা গুলো, ও বলেছিল -''আমায় এভাবে ঠকালে রথীন , তোমাকেও এর ফল ভোগ করতে হবে। বেঁচে থেকেই নরক যন্ত্রণা পাবে তুমি।"
ডঃগোয়েঙ্কা কলকাতার সব চেয়ে বড় প্লাষ্টিক সার্জেন। জীবনে এমন পোড়ার কেস দেখেননি উনি যে এক মাসেও হাত শুকাচ্ছে না। অথচ সুগার ও বাকি রিপোর্ট নর্মাল।
মাঝ রাতে একটা চাপা অস্বত্বিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় রথীনের। ঘরের মাঝে একটা চাপ চাপ ধোঁঁয়া, পোড়া গন্ধে ভরে গেছে ঘরটা। হাতটাও অসম্ভব জ্বালা করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ, অথচ এই হাতে জলের বোতল ধরার ও ক্ষমতা নেই ওর।
-''তোমার হাত দুটো যে আমার বড় প্রিয় রথীন। তাই ঐ দুটো আমার চাই। আমার জীবনের সাথে ঐ হাত দুটো জড়িত। তাই আজ নিতে এসেছি। ''
হাতের যন্ত্রণায় জ্ঞান হারাতে হারাতে কথা গুলো শুনতে পায় রথীন।