প্রসেনজিৎ ঘোষ

Thriller

4.2  

প্রসেনজিৎ ঘোষ

Thriller

শঙ্কর ও মরাচুরি

শঙ্কর ও মরাচুরি

3 mins
364


 " শঙ্কর ও মরাচুরি "

 © প্রসেনজিৎ ঘোষ



রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে গা টা একটু ছমছম করে উঠলো শঙ্করের।

এদিকটায় রাস্তা গুলো বড্ড বেশি নিরিবিলি। রাস্তার ধারেই একটা গেরস্তান, তারপর পরপর দুটো পুকুর, বাকিটা ফাঁকা প্রান্তর। একটু রাত হলেই আর এদিকে মানুষের আনাগোনা থাকে না। সন্ধ্যের পর সম্পূর্ণ এলাকাটা যেন জঙ্গলের রূপ ধারণ করে নেয়। পথে শুধু কয়েকটা নেড়ি কুকুর ছাড়া আর কারো দেখা মেলা ভার।

আজ অফিসে থেকে ফিরতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছিল শঙ্করের। বিপিও সেক্টরে কাজ করে শঙ্কর। তাই মাঝে মধ্যেই অনেক রাত অবধি কাজ করতে হয় ওকে। রাত বেশী হলে অফিসের গাড়ি এসে বড় রাস্তার মুখে নামিয়ে দিয়ে যায়। আজও তাই হয়েছে। 

বড় রাস্তা থেকে অনেকটা পথ হেঁটে তবে ওর বাড়ির রাস্তা পড়ে। আর এই রাস্তাটাতেই যত বিপত্তি। সরকারি আলোর ব্যাবস্থা থাকেলও এলাকার চোর ছ্যাচ্চোরদের উৎপাতে পোস্টের আলো গুলো ও আজ নিরাপত্তাহীন। সম্পূর্ণ রাস্তাটাই সন্ধ্যার পর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। যে কটা দোকানপাট সন্ধ্যায় খোলা থাকে একটু রাত্রির হলে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। মহিলা তো বটেই এমনকি অতি সাহসী পুরুষ মানুষেরও মন এই রকম অন্ধকারে ভয় পেতে বাধ্য।

অন্যান্য দিনের মতো আজও শঙ্কর মোবাইলের টর্চ টা জ্বালিয়ে হাটতে লাগলো। এই পরিস্থিতিতে সব চাইতে ভালো সঙ্গী হলো সিগারেট। শঙ্কর পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে সেটাই জ্বালিয়ে সুখটান দিতে দিতে এগোতে লাগলো। 

সারাদিন অফিসের পর ফোনের ব্যাটারি ও ক্লান্ত হয়ে

পড়ে , সেটা বোধ হয় শঙ্কর খেয়াল করেনি,একটু ক্ষন ফোনের টর্চটা জ্বলেই একসময় ফোনটাও বন্ধ হয়ে গেলো। সম্পূর্ণ অন্ধকারে শঙ্কর একা একা হাঁটছিল। এতক্ষণ কানে হেডফোন লাগানো থাকায় সে বাইরের আওয়াজ কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না, কিন্তু এবার যেন একটা গাঢ় অন্ধকারের সাথে সাথে একটা চরম নিরবতা মুহূর্তে ওকে গ্রাস করলো। 

দূরে ঝি ঝি পোকার একটানা একটা আওয়াজ আসছিল। এই রকম ভয়ঙ্কর নিরবতা সে আগে অনুভব করেনি। হঠাৎ শঙ্কর খেয়াল করলো খুব কাছের জিনিস ও যেন দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অন্ধকারের মধ্যে কোনো রকমে চোখ টেনে টেনে শঙ্কর চলতে লাগলো।

"একটু আগুন হবে?" - হটাৎ করেই প্রশ্ন টা শুনে শঙ্কর যেন একটু ঘাবড়ে গেলো। অপ্রত্যাসিত এমন প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে শঙ্কর কাঠ হয়ে গেলো। তারপর একটু সামলে নিয়ে দেখলো এক অপরিচিত ভদ্রলোক একটা বিড়ি টিপতে টিপতে ওর দিকে এগিয়ে এসেছে, ঠিক যেনো ওকে অনুসরণ করছিল এতক্ষণ। লোকটার চেহারা ও জমা কাপড় দেখে নিতান্তই সাধারণ মানের মনে হলো। শঙ্কর ঘাড় নেড়ে উত্তর করলো তারপর পকেট থেকে দেশলাই এর বাক্সটা বের করে এগিয়ে দিল লোকটার দিকে। 

ফস ফস করে ঘষা লেগে একটা কাঠিতে আগুন জ্বলে উঠতেই শঙ্কর এবার ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। 

একি! এ কে? একি মানুষ? নাকি.... শঙ্কর দেখলো একটা গলা পচা মানুষের দেহ, যেন ঠিক অনেকদিন মাটির তলায় কবরে থাকলে যেমন হয় ঠিক সেই রকম একটা লাশ , গায়ের থেকে মাংস খসে পড়ছে, মুখের কয়েক জায়গায় হাড় বেরিয়ে গেছে, দাঁত গুলো বেরিয়ে আছে, চোখ বিভৎস ,সাদা হয়ে ফুলে গেছে, এমন একটা জীবন্ত লাশ একটা আধপোড়া বিড়ি তে আগুন ধরাচ্ছে।

একটা হিম শীতল ঠান্ডা স্রোত যেনো শঙ্করের মজ্জার মধ্যে দিয়ে বয়ে যেতে লাগলো। দৃষ্টি ও বাক শূন্য হয়ে মুহূর্তে শঙ্কর জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। 

সে রাত্রে শঙ্কর কিভাবে বাড়ি ফিরেছিল, সেসব আর তার মনে নেই। সুস্থ হয়ে পরে সে খবরের কাগজে পড়েছিল, দুদিন আগে এলাকার কবরস্থানে করা যেন মাটি খুড়ে লাশ বের করে কোনো এক অপকর্ম করতে চাইছিল, কিন্তু ঠিক সেই সময়ই নাকি পুলিশের তাড়া খেয়ে তারা লাশ গুলোকে ওই ভাবেই ফেলে রেখে পালিয়েছে। সমস্ত লাশকে পরবর্তীতে যথাযথ ভাবে সমাধিস্থ করা গেলেও শুধু একটি লাশের খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তল্লাশি জারি রেখেছে। এ বিষয়ে কারো কোনো রকম ইনফরমেশন জানা থাকল সে যেন অবশ্যই ফোন করে উক্ত নাম্বারে ৯ ৮ ৭ ৬.......

শঙ্কর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাগজটাকে ভাজ করে উঠে পড়লো ....

                ~ সমাপ্ত ~


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller