STORYMIRROR

প্রসেনজিৎ ঘোষ

Romance Fantasy Others

3  

প্রসেনজিৎ ঘোষ

Romance Fantasy Others

রিগ্রেটস...

রিগ্রেটস...

3 mins
131


হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো শোভনার। এর আগে কখনো তার এমনটা হয়নি। নাহ, বছর তিনেক আগেও নয়, যেদিন প্রীতমের সাথে সামান্য ঝগড়ার পরেই একদিন হটাৎ করেই সব সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলো সে। প্রীতম অনেকবার ফিরে আসতে বলেছিল, অনুনয় বিনয় সবই করেছিল, কিন্তু শোভনা ফেরেনি। দীর্ঘ দিনের প্রেম ভালোবাসা করার পর বিয়ে করে শোভনার মনে হয়েছিল, সে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজের ডিসিশন এ নিজেরই রিগ্রেটস ফিল হত তার। মনে হয়েছিল বেরিয়ে যাওয়াটাই সবচাইতে সহজ সমাধান। সেদিন সে সেটাই করেছিল যেটা সে ঠিক মনে করেছিল। কারো কথা শোনেনি। কিন্তু আজ অঞ্জলীর সাথে দেখা হবার পর কেনো জানি মনে হলো কোথাও কি সে ভুল ছিল? সত্যিই কি আর রিগ্রেটস হয় আর? 


অফিস থেকে ফেরার পথে আজ অঞ্জলীর সাথে দেখা। হুইচেয়ারে বসে সাথে একজন সমবয়সী লোক, সম্ভবত গাড়ির অপেক্ষায়। অঞ্জলি আর শোভনা একই কলেজের ব্যাচমেট। কলেজ শেষের আগেই অঞ্জলি কলেজে আশা বন্ধ করে দিয়েছিল। দ্বিতীয় ইয়ার এর পর আর ওদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। সবাই বলেছিল, অঞ্জলী বিয়ে করে চলে গেছে। আজ এতদিন পরে কলেজের দুই প্রক্তনীর মধ্যে দেখা হতেই অঞ্জলী জোর করে শোভনা কে তার বাড়ি নিয়ে এসেছে। কথায় কথায় শোভনা জানতে পারে , দ্বিতীয় ইয়ার এর পর একটা অ্যাকসিডেন্টে অঞ্জলীর নিচের অংশ অকেজো হয়ে যায়। পড়াশুনা বন্ধ হয় ওই বছর ই। অনেক চেষ্টা করেও সেরে ওটা হয়নি আর। অঞ্জলী কলেজেই একজনকে ভালোবাসতো। সুজন। দু বছরের বড়ো। প্যারালাইজ হয়ে যাওয়ার পর সুজনকে সে বলেছিল নতুন করে ভাবনা চিন্তা করতে। নতুন সম্পর্কে যেতে। বিয়ে করতে । কিন্তু সুজন সে সব শোনেনি। সুজন একটাই কথা বলেছিল, সে বিয়ে করলে তাকেই করবে নচেৎ নয়। তারা বিয়ে করেছিল। কিন্তু ভাগ্য বোধ হয় বেশিদিন সুখভোগ করার সুযোগ দেননি অঞ্জলিকে। বছর পাঁচেক পর সুজন মারা যায়। অঞ্জলি জানতো সুজন বেশিদিন থাকবে না তার কাছে। সুজনও হয়তো বুঝতো। তাইতো, সুজনের চলে যাওয়ার দুদিন আগেও সে বলেছিল - যদি আমার কিছু হয়ে যায়। তুমি আবার নতুন করে সব শুরু করো।কিন্তু অঞ্জলী শোনেনি। আজও সে বদ্ধ ঘরে সুজনের স্মৃতির সাথে ঘর করে । যেন কত কাছাকাছি ওরা। 


শোভনার মন হটাৎ করে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টির মতো খারাপ হয়ে এসেছিল। গলা শুকিয়ে এসেছিল।। না চাইতেই একটা প্রশ্ন সে অঞ্জলীকে করেছিল , এভাবে থাকার মানে কি? কেনই বা এমন সিদ্ধান্ত? যেখানে সবটাই অন্ধকার , অনিশ্চিত। কষ্ট হয় না? রিগ্রেটস হয় না নিজের এমন সিদ্ধান্তে? অঞ্জলী একটা দারুন উত্তর দিয়েছিল - পুরো এই পৃথিবীতে দু ধরনের মানুষ হয়, একদল যারা আগে থেকে সব কিছু দেখে , বোঝে , ভালো খারাপ বোঝে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়, আর একদল থাকে যারা আগে একটা সিদ্ধান্ত নেয় , তার পর সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক করার জন্য বাকি সবকিছু পরিবর্তন করে নেয়। আমি আর সুজন এই দ্বিতীয় দলের। আমরা একদিন ঠিক করে ছিলাম যে যাই হোক একসাথেই থাকবো। তাই আজ আর কোনো কষ্ট হয়না। 


অঞ্জলীর বাড়ি থেকে ফেরার পথে শোভনা আর কোথাও দাঁড়ায়নি। অন্ধকার ঘরে ও যেনো অনেকটা আলো চোখ জুড়ে আসছিল। রিগ্রেটস হয় কি সত্যিই? প্রীতম তো থাকতেই চেয়েছিল। চোখ ভিজে আসে নিজের সিদ্ধান্তে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance