প্রসেনজিৎ ঘোষ

Romance Tragedy Crime

3  

প্রসেনজিৎ ঘোষ

Romance Tragedy Crime

সঙ্ঘমিত্রা তোমাকে..

সঙ্ঘমিত্রা তোমাকে..

3 mins
169



অতঃপর বেঁচে আছি....

ঠিক যেভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম

সেভাবে কিনা জানিনা - তবে আছি।

আর পাঁচটা সহবন্দির মতই।

এই স্যাঁতস্যাঁতে , অন্ধকার ছোট্ট কুঠুরির ভিতর।

যেখানে দিনের আলো তো আসে ঠিকই

কিন্তু সে আলোয় রবির কিরণের কোনো কোমলতা নেই।

অনর্গল শব্দ আসে, কাঁচা খিস্তি , গোঙানি ...

সব আছে,

কিন্তু সরল শিশুটার খেলার মাঠের সে হাসিটা আর নেই।

নদীর কলকল, বৃষ্টির ছলছল, ফুলের দলদল,

ট্রেনের দমদম, নূপুরের ছম ছম,

হাট বাজার মাঠ লোক মানুষ গাড়ি ঘোড়া

আত্মীয়-স্বজন , ভালো লাগা মন্দ লাগা রাগ অভিমান প্রেম বিচ্ছেদ,

না! না ! কিচ্ছু কিচ্ছু নেই এখানে।

এখানে শুধু আমি একা

আর আছে আমার নিস্তব্ধতা আমার একাকীত্ব

দুচোখ ভেজা কান্না মন খারাপের গল্প

রক্তে ভেজা গোড়ালি হাতের আঙুল

দাঁত ভাঙ্গা ঠোঁট কাটা ঝাপসা বৃষ্টি

নিদ্রাহীন রাত অকথ্য অত্যাচার

আর আছে- ধারা তিনশো দুই।

হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই শুনেছ

ধারা তিনশো দুই।

এখন আমি জেলে।

খুনের আসামি।

জং ধরা একটা বিচার ব্যবস্থায় আজ আমি জেল খাটি।

কদিন পরেই ওরা আমায় ফাঁসি দেবে।

আয়োজন সব কমপ্লিট

শুনেছি ফাসুরে নেই, ধার করে আনা হচ্ছে কবর থেকে।

কিন্তু বিশ্বাস কর

খুনটা আমি করিনি।

আমি তো তোমাকে ভালবেসে ছিলাম

ভীষণ রকমের ভালো। যতটা ভালো

কেউ কাউকে বাসতে পারে তার চেয়েও বেশি।

তোমার জন্য তো আমি নিজের কিডনি বিক্রি করতে

ভেলোর পর্যন্ত যেতেও রাজি ছিলাম।

এসব কথা আর কেউ জানুক বা না জানুক

অন্তত তুমি তো জানো।

যখন প্রথম তোমার হাত ধরেছিলাম

প্রথম বৃষ্টির ফোটার মতো

যেদিন তুমি নিজেকে আমার কাছে সপে ছিলে,

ঝরে পড়েছিলে, যেভাবে শিউলি ঝড়ে

আমার বুকের ওপর।

প্রথম যখন মুখোমুখি বসে

তোমায় দুচোখ ভরে দেখেছিল। কিংবা

সিনেমার অন্ধকারে বিদ্যুতের ঝলকানিতে

নিঃসংকোচে যখন তুমি আমার হাত অথবা শরীরে জড়িয়ে ধরেছিলে,

সেই স্পর্শ সেই দৃষ্টি সেই বিশ্বাসে

কোন অকৃত্রিমতা কিংবা অভিসন্ধি ছিল না।

যেভাবে একটা গাছ একটা ফুলের জন্ম দেয়

আমরাও আমাদের ভালোবাসার জন্ম দিয়েছিলাম।

কিন্তু ওরা বোঝেনি।

সবাই শুধু আমাদের বাইরে টাই দেখেছিল

আমাদের ঝগড়া মনোমালিন্য বিয়ের পর আলাদা থাকাটা,

কানে কানে গুঞ্জন রটিয়ে, ওরা তোমাকেও এটা বুঝিয়েছিল- আমি মানুষটা খারাপ দুশ্চরিত্র লম্পট।

আমি জানি তুমি বিশ্বাস করতে আমায়

তুমি ছাড়া আমি অন্য কোন মেয়ে মানুষ স্পর্শ তো দূর কোনদিনও মদ কিংবা সিগারেট ছুঁইনি।

যেদিন তোমার অসুস্থতার প্রথম খবর পাই

সেদিন আমি কবিতা লিখছিলাম

প্রেমের কবিতা।

এ শহরেতে কেউ আর প্রেমের কবিতা লেখে না

সবাই এখন ব্যবসায়ী।

আমার কবিতায় তোমার অসুখ সেরেছে বহুবার।

কবিতা নিয়ে আমি ছুটে তোমার কাছেই প্রথম যেতে চেয়েছিলাম।

যেতে পারিনি ,আসলে দেয়নি।

বৃহদন্ত উঁচিয়ে থাকা মানুষগুলো নজর ছিল তোমার প্রতি

তোমার শরীরের প্রতি, তোমার সম্পদের প্রতি।

বিচ্ছেদের পর প্রতিটা রাতে আমি একা কুঁকড়ে শুয়ে থাকতাম শুধু এই ভয়েই।

ভোররাতে আমার ভীষণ জ্বরে কাঁপুনি দিত

তুমি জানতে আমি একা থাকতে পারিনা।

পোস্টমর্টেমে তোমার শরীরে ঘুমের ওষুধ পাওয়া গেছে অত্যাধিক।

আমি জানি

আমার হাতে কিংবা বুকের ওপর মাথা না দিলে তোমার ঘুম হয় না।

কত রাত যে তোমার অনিদ্রায় কেটেছে

চোখের তলার কালশিটে দাগে আমি তা আগেই বুঝেছিলাম।

আমি গরিব হতে পারি,

কিন্তু কাপুরুষ নয়।

বুকের ভিতর রক্ত আমারও জ্বলে উঠতো।

একটা হিংস্র জানোয়ার শৃংখল হীনতায়

ভেতর ভেতরেই বেড়ে উঠেছিল দীর্ঘদিন।

কলম ছেড়ে একবার হাতে অস্ত্র তুললেই

আদিম হিংস্রতা ছিঁড়ে খাবে বৃহদন্তি জানোয়ারদের।

তুমি যতদিন ছিলে আমি কবিতা লেখা ছাড়িনি।

কিন্তু ওরা যেদিন তোমাকেও আমার থেকে কেড়ে নিল

আমি কলমের নিব ভেঙেছিলাম সেই রাতেই।

আমাদের কবিতা আমাদের ভালোবাসার পান্ডুলিপি

জ্বলেছিল চোখের সামনে।

রক্তিম লেলিহান সে আগুনের শিখায়

আমার ভেতরে জানোয়ারটা সমস্তটা তছনছ করেছিল এক লহমায়।

সকালে তোমার খুনের দায়ে

আমি জেলবন্দী হলাম।

সকলে জানলো স্ত্রী খুনে স্বামীর জেল।

কিন্তু আমি জানি

খুন একটা নয়

আরো সাড়ে সতেরোটা খুন হয়েছিল সেই রাত্রে।

সতেরো টা খুন আমি নিজে করেছিলাম

আর অর্ধেকটা আমার নিজের।

মনুষ্যত্ব খুন না করলে মানুষ খুন করা যায় না।

ওদের খুন ওরা নিজেই করেছে তোমায় মেরে,

আমি তো কেবল নিমিত্ত মাত্র।

আজ আমার দুঃখ নেই কষ্ট নেই

আফসোস ও নেই।

কদিন পরেই তোমার সাথে আবার দেখা হবে।

অপেক্ষা করো।

যে পৃথিবীতে প্রতিদিনই একটি ভালবাসার খুন হয়

সে পৃথিবী আর যাই হোক

আমার তোমার নয়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance