Sutapa Roy

Romance

3  

Sutapa Roy

Romance

শকুন্তলার আংটি

শকুন্তলার আংটি

4 mins
406



তিতিরদের তিনতলা বাড়িটা বেশ বড় আর পুরোনো।


ঘরের ভেতর দিয়ে ঘোরানো সিঁড়ি ছাদ অব্দি উঠে গ‍্যাছে; ছাদে একটা চিলেকোঠা ঘর, সেখানে ফেলা


ছড়া জিনিস সব ডাঁই করা থাকে। তিতিরের দাদার বিয়ে, সে উপলক্ষ্যে ঘর রঙ করা শুরু হয়েছে। একতলায় পুট্টি লাগানোর কাজ চলছে, যাবতীয় জিনিস দোতলায় ডাঁই করা। এর-ই মধ্যে বিয়ের কেনাকাটার কাজ-ও চলছে সমান তালে।


দাদার নিজের পছন্দের বিয়ে, পাত্রি কলেজে ওর ক্লাসমেট ছিল। হবু বর ফোনেতেই বেশী ব‍্যস্ত। মা-কে সব কাজে সাহায্য তিতির-ই করছে। পুরোনো ছবিও সব খোলা হয়েছে দেওয়াল থেকে, তিতির যত্ন নিয়ে ধুলো ঝাড়ছে, পাছে ছবিগুলো ভেঙে নষ্ট হয়। ছোট থেকে দেখে আসছে ছবিগুলো দেওয়ালে ঝোলানো আছে, কাছ থেকে কখনও বিশেষ দ‍েখে নি। কৌতূহলবশত একটা গ্রুপ ফটো মা-র কাছে নিয়ে গিয়ে দ‍েখাল, "মা এরা কারা?"মা রান্নার ফাঁকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, "ওগুলো তোমার দাদু, ঠাম্মার অল্প বয়সের ছবি আর সাথে ঐ কিশোরী, দাদুর এক বোন, বাবার পরিপিসিমা।"


তিতির মন দিয়ে দেখতে লাগল পরিপিসিমাকে, কি সুন্দর দেখতে, কি সুন্দর মায়াবী চোখ। বাবা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল-" বাড়িতে এতসব কাজ বাকি পড়ে আছে, কিসব আজেবাজে কাজে সময় কাটাচ্ছ?"


তিতির সব ছবি এক জায়গায় জড়ো করে রেখে রান্নাঘরে মা-র সাহায্যে লেগে পড়ল; কিন্তু মনের মধ্যে 'পরিপিসির' চেহারা গেঁথে গেল।



বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হতেই তিতির দৌড়ল ছাদে, শুকনো জামাকাপড় তুলতে; কাপড়গুলো তুলে সিঁড়ির হাতলে রেখে, কি মনে হোতে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকল। ঠিকে ঝি বুলবুল ও ওকেই একদিন ঘরটা পরিস্কার করতে হবে। দেরাজ ভর্তি বাবার বই, কবেকার কলেজের বই এখনো রয়ে গ‍্যাছে। এটা, ওটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে তিতির অনেক পুরোনো একটা ট্রাঙ্ক দেখতে পেল। ট্রাঙ্কটায় পুরু ধুলো জমে আছে, এ ঘরে বিশেষ কেউ আসে না, তাই নাড়াঘাঁটাও হয় না। পরিবারের যত পুরোনো জিনিস এখানে জমা হয়ে আছে, দ‍েখবার-ফেলবার লোক নেই। ট্রাঙ্কটায়ে টান মারতেই একটা টিকটিকি লাফিয়ে পড়ল, তিতির টিকটিকিকে খুব ভয় পায়। আজ আর ঘাঁটাঘাঁটিতে কাজ নেই। তিতির ট্রাঙ্কটা আর খুলল না।



নীচে নেমে এসে দেখল, মা-র রান্না সারা হয়ে গ‍েছে,বাবা স্নান করে খাওয়ার জন্য রেডি, দাদাভাই যথারীতি ফোনে। তিতির-ও তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নিল, আজ আবার রিঙ্কুর আসার কথা, তিতির দু-দিনকলেজ যেতে পারে নি তাই কলেজ নোটস্ দিতে আসবে। খেতে বসে বার বার বাবার মুখটা দেখছে,আজ যেন বাবাকে একটু বেশী গম্ভীর লাগছে। তিতির মনে মনে ঠিক করল, রিঙ্কু এলে, ও-কে সঙ্গে নিয়ে ছাদের চিলেকোঠায় যাবে, মনটা কেন যে খচখচ করছে।খেয়েদেয়ে তিতির দোতলার বারান্দায় রিঙ্কুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। আরে, ওই তো ওদের চাঁপাগাছটারতলা দিয়ে রিঙ্কু ঢুকছে, তাড়াতাড়ি ছুটল নীচে দরজা খুলতে। রিঙ্কু ঢুকতেই ওর হাত থেকে নোটসগুলো নিয়ে রেখেই দুজনে ছুটল ছাদে। সকালের সবকিছু পরিপিসির কথা, বাবার গম্ভীর হয়ে যাওয়ার কথা,


আরও আশ্চর্য ওনার কোন বেশী বয়সের ছবি তিতির খুঁজে পায় নি। রিঙ্কু ওই পুরোনো ট্রাঙ্কটা বের করতে ও খুলতে সাহায্য করল। ট্রাঙ্ক খুলতেই দুজনে হুমড়ি খেয়ে পড়ল দ‍েখার জন্য। ট্রাঙ্ক ভর্তি নতুন বউ-এর বেনারসি, ওড়না। সবেরই মলিন, ধূসর অবস্থা একদম তলায় একটা বাক্স, কৌতূহলে তিতিরের দম বন্ধ হয়ে আসছে; বাক্সটা খুলতেই বেরিয়ে এল কতকগুলো পুরোনো পোষ্টকার্ড, আর একদম তলায় একটা কৌটো। কৌটোটা খুলতে যাবে, এ সময় সিঁড়িতে ধুপধাপ পায়ের শব্দ, মা ওদের ডাকছে, ট্রাঙ্কটা লাগানোর আর সুযোগ পেল না, তার আগেই মা ঢুকেগেল ঘরে। তাড়াতাড়ি ওকে সবকিছু রেখে দিতে বলল। তিতিরেরও জেদ চেপে গেল, "আমি দেখব-ই


কৌটোয় কি আছে"-বলে একটানে খুলে ফেলল কৌটোটা, ওর ভেতর থেকে একটা আংটি বেরিয়ে এলো। মা বলল-" রেখে দে, ও অভিশপ্ত আংটি, ওতে অনেক দু:খের ইতিহাস লুকিয়ে আছে, আর এই সমস্ত ঐ পরিপিসির জিনিস।" এক ডাক্তারী পড়ুয়ার সঙ্গে পরিপিসির বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সবাই জানত, পিসিকে একান্তে ঐ আংটিটা পরিয়ে দিয়েছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য মানুষটা বিলেত গেল, প্রথম প্রথম চিঠি লিখত, তাতে অনেক ভালবাসার কথা থাকত,পিসি খুশিতে মেতে থাকত, তারপর চিঠি আসা কমতে কমতে একদিন বন্ধ হয়ে গেল। খোঁজ খবরনিয়ে জানা গেল, ও দেশে মেম বিয়ে করে নিয়েছে,আর কখনোই ফিরবে না। পরিপিসি এ সমস্ত জিনিস নিয়ে ওর প্রেমাস্পদের জন্য অপেক্ষা করত, বিশেষ করে ঐ আংটিটা ছিল সবচেয়ে প্রিয়, ওর বিশ্বাস ছিল ঐ আংটিটাই একদিন মানুষটাকে ফিরিয়ে নিয়েআসবে। নতুন করে বিয়ের চেষ্টা শুরু হয়, কিন্তু শেষপর্যন্ত পরিপিসি প্রতারণা, প্রত‍্যাখ‍্যান মেনে নিতেপারে নি। সবার অগোচরে বাড়ির পুকুরে ডুবে মরে।এসব জিনিস তারপর থেকে এভাবেই পড়ে আছে,তোর বাবাও এই শুনেই বড় হয়েছে।তবে খোলাখুলিএসব নিয়ে কেউ আলোচনা করে না। কবেকার কিঘটনার জন্য তুই-ও মনখারাপ করিস না।তিতির বসে আছে স্থির হয়ে, ওর চোখে জল, হাতেআংটির কৌটো, ও যেন দেখতে পাচ্ছে দুষ্মন্তের শকুন্তলাকে। এ কেমন পরিণতি যেখানে শকুন্তলা তার দুষ্মন্তকে পেল-ই না। বেঁচে রইল একরাশ দু:খ যা এতদিন পরে তিতিরের কাছে এসে পৌঁছল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance