Dr. Arunima Das

Abstract Inspirational Others

3  

Dr. Arunima Das

Abstract Inspirational Others

শিরোনাম -সীমানা পেরিয়ে ✍️ ডা: অরুণিমা দাস

শিরোনাম -সীমানা পেরিয়ে ✍️ ডা: অরুণিমা দাস

3 mins
199



বৃদ্ধাশ্রমে আসার আগে ব্যাগ পত্র সব গোছাচ্ছিলেন সরমা দেবী। এই বাড়ীর প্রতিটা কোনায় অনেক অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ছেলে বিদেশ নিয়ে যেতে চেয়েছিল,কিন্তু স্বেচ্ছায় যেতে চাননি তিনি। বৃদ্ধাশ্রমে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর ওখান থেকেই বাড়ীটা দেখভাল করবেন। এই বাড়ি তার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। শ্বাশুড়ী মায়ের মুখে শুনেছিলেন কি ভাবে এই বাড়ি তৈরি হয়েছিলো। সরমা দেবীর শ্বাশুড়ি মায়ের শ্বাশুড়ি মা ছিলেন সৌদামিনী দেবী, মাত্র বারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে আসেন এই পরিবারে। তখন দুটো মাত্র ঘর আর লোক ছিল নজন। সৌদামিনী দেবীর স্বামী সুধাকর বাবু একটা দোকানে হিসেব রক্ষকের চাকরি করতেন। বিয়ের দশ বছর পর ওনাদের সন্তান মানে সরমা দেবীর শ্বশুর মশাই সনত বাবু জন্মান। গরীবের বাড়ী, খুব কষ্টেই মানুষ হচ্ছিলেন উনি। এর মধ্যে সুধাকর বাবুর শরীর খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর দোকানে কাজে যেতে পারতেন না। সৌদামিনী দেবী সন্তান,দেওর,ননদ, শ্বাশুড়ী সকলকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন। আর সেই সময় ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে আর সমাজের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে একটা মেয়ের পক্ষে কোনো কাজ করা সম্ভব ছিলনা। সৌদামিনী দেবী খুব ভালো রান্না করতেন বিশেষত বাঙালি পদ দুর্দান্ত রানা করতেন। সুধাকর বাবুর এক বন্ধুকে একদিন রান্না করে খাওয়ানোয় উনি বলেছিলেন বৌদি হোটেল খুলতে পারেন তো। শুনে সেদিন থেকে মনে একটা আবছা স্বপ্ন তৈরি হচ্ছিলো সৌদামিনী দেবীর। সংসারের অচলাবস্থা কাটাতে উনি সিদ্ধান্ত নেন লোকের বাড়িতে রান্না করে সংসার চালাবেন। দুটো বাড়িতে রান্নার কাজও নেন। এরকম করে বেশ কিছুদিন চলার পর ঠিক করেন রান্না করে বাড়ী বাড়ী ডেলিভারি দেবেন। যে বাড়িতে কাজ করতেন সেখানে গিন্নিমা কে জানাতে উনি বলেন এসব করা চলবেনা। সেই বাড়ীর কাজ ছেড়ে দেন সৌদামিনী দেবী। বাড়ী থেকে ছোটো দেওরের সাহায্যে দু একটা জায়গায় অর্ডার সাপ্লাই দেওয়ার কাজ চালাতেন। সুধাকর বাবুর মা জানতে পেরে মোটেও খুশী হন নি। ঝামেলা করেছিলেন খুব। সৌদামিনী দেবী দমে যান নি। বাড়ীর সামনে ত্রিপল খাটিয়ে দুটো বেঞ্চ আর টেবিল বসিয়ে একটা অস্থায়ী হোটেল মত খুলে ফেলেন। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে গিয়েও হেরে যাননি। বেশ কয়েক বছরের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে একটা ছোট খাটো পাইস হোটেল বানিয়ে ফেলেন। সেখান থেকে যা আয় হতো তাই দিয়ে বাচ্চাদের পড়াশোনা,সুধাকর বাবুর চিকিৎসা আর সংসার চলতো। সৌদামিনী দেবীর শ্বাশুড়িমা পরে হয়তো নিজের ভুল বুঝেছেন তাই আর কিছু বলেননি ওনাকে। আসতে আসতে ব্যবসা বাড়তে থাকায় বাড়ির সংস্কার কাজ শুরু করেন সৌদামিনী দেবী। তারপর অনেক বছর কেটে যায়। ছেলে সনতের বিয়ে দিয়ে বৌ নিয়ে আসেন। বৌমাকে কোনোদিন নিয়মের বেড়াজালে আটকে রাখেননি। মেয়ের মতোই ভালোবাসতেন। সনত বাবু পরে এই বাড়ি একতলা থেকে দোতলা বানান আর সনত বাবুর ছেলে মানে সরমা দেবীর স্বামী শরত বাবু বাড়িটাকে আরও কয়েক তলা বাড়ান। শ্বাশুড়ী মায়ের কাছে সৌদামিনী দেবী ছোটো ছোটো অনেক গল্প শুনেছিলেন তাই মনে মনে ঠিক করেছিলেন এই বাড়ি কোনোদিন কারোর হাতে দেবেননা,এই জন্যই হয়তো শ্বাশুড়িমা ছেলের নামে নয়,সৌদামিনী দেবীর নামে বাড়ি লিখে দিয়ে যান। বয়স হয়েছে তাই এখন আর সৌদামিনী দেবী এই বাড়ি একা দেখভাল করতে পারেন না,ছেলে অমিতও বিদেশ থেকে আসবেনা। আজকালকার ছেলেদের দেশের প্রতি টান নেই তেমন। ডায়েরীটা বন্ধ করে ব্যাগের মধ্যে ঢোকালেন। একাকীত্ব ঘোচাতেই বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া আর মাসে মাসে এসে এই বাড়ি দেখভাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। গাড়ি এসে গেছে,দরজা জানলা সব বন্ধ করে ব্যাগ পত্র নিয়ে গাড়ীতে উঠলেন সরমা দেবী,এক বুক স্মৃতিই আজ তার বড়ো সম্পদ। প্রথম কাজ হবে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে একটু গুছিয়ে নিয়ে ডায়েরীর লেখাটা ছাপতে দেওয়া,প্রকাশকের সাথে কথাও হয়ে গেছে তার। এতে যে তার পরিবারের গল্প লেখা রয়েছে,কিভাবে একজন মেয়ে চৌকাঠ পেরিয়ে এসে রান্নাকে পেশা করে সংসারকে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। আর সেই থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে কলম ধরার সাহস পান সরমা দেবী। তার ফলস্বরূপ কদিন পরে প্রকাশিত হতে চলেছে সরমা দেবীর একক বই "সীমানা পেরিয়ে"। সরমা দেবীকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের গাড়ী এগিয়ে চললো,পেছনে পড়ে রইলো "সৌদামিনী আবাস"।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract