Debdutta Banerjee

Drama Tragedy

3  

Debdutta Banerjee

Drama Tragedy

শেষ বিচার

শেষ বিচার

9 mins
2.3K


বাড়ি ফেরার পথে কিউই ফল গুলো কিনে নিলো স্পন্দন। মালিয়া খুব ভালোবাসে কিউই খেতে, আজকাল কিছুই খেতে চায় না মেয়েটা। অথচ এখন ওর সঠিক পুষ্টি দরকার।

একটু ডিম, দই আর দুধ কিনে নেয় স্পন্দন। মাছ মাংসর গন্ধ সহ্য হচ্ছে না মেয়েটার। এসময় নাকি এমন হয়, আর কয়েকটা মাস। তারপর মালিয়ার কোল জুরে আসবে ওদের ভালোবাসার পুতুল। স্পন্দনের মন বলে সে হবে মালিয়ার মতই কোঁকড়া চুল আর গোলগাল হাসিখুশি একটা মেয়ে। ওর নাম হবে সৌমি, তবে মালিয়া মাঝে মাঝে বলে যদি সে ছেলে হয়? ছেলে হলে নাম হবে সৌম , স্পন্দন মনে মনে ভাবলেও মুখে বলে -'ও মেয়েই হবে। দেখে নিও।'

আজকাল মালিয়াকে কোনও কাজ করতে দেয় না স্পন্দন, ভোরে উঠে বাড়ির সব কাজ নিজে হাতেই করে। ছোট্ট বাড়িটা তো এতদিন মালিয়া নিজেই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখত। টিলার উপর ওদের বাড়িটার সামনে মরশুমি ফুলের বাগান, সবুজ কাঠের বেড়ার ফাঁক দিয়ে নুড়ি বিছানো পথ গিয়ে মিলেছে ঐ পিচের রাস্তায়। একটু নিচেই জমজমাট শহর কুর্গ। এই বাংলোটা প্রথম দেখায় পছন্দ হয়ে গেছিল স্পন্দনের। ওর স্বপ্নের বাড়ি। বিয়ের পর মালিয়াকে নিয়ে এই বাড়িতেই এসেছিল ও। তারপর একটা বছর এই মেঘের কোলে ফুলের দেশে স্বপ্নের মত কেটেছিল ওদের। মালিয়া যা যা ভালোবাসে সে সব দিয়ে সাজিয়েছিল এই বাড়িটা স্পন্দন। ঘরের রঙ থেকে পর্দার কাপড়, সব মালিয়ার পছন্দের। অফিসের সময় টুকু বাদে ওরা দুজন দুজনকে চোখে হারাত সব সময়। অর্ধেক দিন মালিয়ার কোলে মাথা রেখে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করত স্পন্দন। সে সব দিন মালিয়াকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতে চাইত না ও। আর এই সুখবরটা পাওয়ার পর তো মালিয়াকে তুলোয় মুরে রেখেছে স্পন্দন। রান্না করে নিজের হাতে খাওয়ায়, ঘরের কুটোটা নাড়তে দেয় না। যত দিন যাচ্ছে চিন্তা বাড়ছে স্পন্দনের। একেক সময় মনে হয় চাকরীটা ছেড়ে দেবে আপাতত। আবার সব ঠিক হলে করবে না হয়।


বাড়ি ফিরেই মালিয়ার জন্য চকলেট মিল্ক বানিয়ে ওদের বেডরুমে যায় স্পন্দন। আজকাল মালিয়ার আলো ভালো লাগে না, সব সময় পর্দা টেনেই রাখে এ ঘরের স্পন্দন। ওদের বেড রুমের পূর্ব দিকটা কাচের , পাহাড়ের মাথায় সূর্যোদয় দেখা যেত বিছানায় শুয়েই। পশ্চিম দিকে রয়েছে বারান্দা, বিকেলের চা টা আগে ওখানে বসেই খেত ওরা। হাল্কা নীল আলোটা সব সময় জ্বলে এ ঘরে। এখনো ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা, ওর পাশে বসে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বোলায় স্পন্দন। চকলেট মিল্কটা সাইড টেবিলে রেখে ওর কপালে একটা চুমু খায় । আস্তে আস্তে চোখ খোলে মালিয়া, ওকে বসিয়ে দুধ টুকু খাইয়ে দরকারি ওষুধ গুলো খাইয়ে দেয় স্পন্দন।

-''কেমন আছিস আজ ? টাটকা কিউই এনেছি তোর জন্য। ''

-''এত যত্নে নিজেকে অসুস্থ মনে হয় । আমার সব ঠিক আছে। ''

-''জানি তো, তাই তো বাড়িতে রেখেই সেবা করছি সোনা। ''

-''আমায় একটু কাজ করতে দে। সবার বাচ্চা হয়, এভাবে কেউ শুয়ে থাকে না ঘরে ''

-''কিন্তু ডাক্তার বলেছে তোর রেস্টের প্রয়োজন আছে। প্লিজ মালিয়া, আমায় করতে দে। ''

 

রান্নাঘরে এসে চটপট দুপুরের রান্না চাপায় স্পন্দন। খিচুরি খেতে মালিয়া বরাবর ভালোবাসে, ওটাই বানিয়ে ফেলে চটপট। এক ফাঁকে ফল কেটে দিয়ে আসে ওর ঘরে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে ওরা দুজন বন্ধু। এক সাথে টিফিন ভাগ করে খাওয়া থেকে এক সাথে স্কুলে যাওয়া। কলেজের পর একটু ছাড়াছাড়ি হয়েছিল অবশ্য, তারপরেই মালিয়াকে নিয়ে সুদূর কর্ণাটকে উড়ে এসেছে স্পন্দন। মালিয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনও মেয়ের দিকে স্পন্দন তাকায়নি কখনো। ওকে ঘিরেই ওর পৃথিবী।

রাতের খাবার খাইয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় স্পন্দন। বাঁকা কাস্তের মত চাঁদ উঠেছে আকাশে, ছেড়া ছেড়া মেঘের দল ভেসে বেড়াচ্ছে। কুর্গের আকাশে যখন তখন বর্ষা নামে, মেঘের দল লুকোচুরি খেলে।

দূরে কোথাও চার্চের ঘড়িতে রাত বারোটার ঘণ্টা বাজে। স্পন্দনের চোখ জ্বলে ওঠে। শেষ হল আরেকটা দিন।

 

******

 

আজ খুব ভোরে বের হতে হবে মিঃ রেড্ডিকে। মাইসোর থেকে ফ্লাইটে দিল্লি যাওয়ার কথা, এখনো টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে, কুয়াশা আর মেঘের দল লুকোচুরি খেলছে। এত ভোরে ড্রাইভার আসবে না, মাইসোরে গাড়ি রেখেই চলে যাবে রেড্ডি, কাল ফিরে আবার গাড়ি নিয়েই কুর্গ ফিরবে। কুর্গে সকাল এমনিতেই দেরিতে হয়, এত সকালে কারো ঘুম ভাঙেনি, রাস্তায় লোক নেই বললেই চলে। প্রথম বাঁকটা নিয়েই দত্তাদের ছবির মত সুন্দর বাড়িটা পড়ল, এত ভোরে স্পন্দনকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাত নাড়ে রেড্ডি। বোকা ছেলে, বৌ বৌ করেই ভাল চাকরীটা ছাড়ল। আজ না হলে ওর দিল্লি যাওয়ার কথা ডিলটা ফাইনাল করতে। কাজটা হলেই প্রমোশন। আর ছেলেটা কাজটা ওকে ছেড়ে দিল। তবে বৌ টা সত্যি জব্বর চিজ... ঠোঁটটা চেটে নেয় রেড্ডি। সেই রাতটা মনে পড়ে, রেড্ডি আর আলম... উফ, স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল রেড্ডি, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠে আসা বড় ষোল চাকা গাড়িটা কাটাতে গিয়ে ও বুঝতে পারে ব্রেক কাজ করছে না, মুহূর্তের মধ্যে গাড়িটা সামনের খাদে নেমে যায়। পাথরে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায় পেট্রল ট্যাঙ্কে। একটা বড় বিস্ফোরণ। সব শেষ।

 

******

 

-''শুভ জন্মদিন, সোনা। '' মালিয়ার চোখের পাতায় আলতো চুমু খায় স্পন্দন। এক গোছা রঙ বেরঙের গোলাপ রাখে ওর মাথার কাছে ফুলদানিতে।  নিজের হাতে বানানো চকলেট কেকটা রাখে সামনে। লাল চেরি দিয়ে হার্ট আঁকা কেকের গায়ে। আর টিভিটা চালিয়ে দেয়।

নিউজে তখন দেখাচ্ছে.. একটা দুর্ঘটনা।

 

******

 

 -''সার, সব রিপোর্ট এসেছে। এটা দুর্ঘটনাই সার। কোনও অন্য ব‍্যপার নেই। ''

-''কিন্তু আমার মন বলছে অন্য কিছু, রেড্ডি ড্রাইভার না নিয়ে অত ভোরে একা ....''

-''সার, ইভেষ্টিগেশন মনের কথা শোনে না। প্রমাণ চায়। '' জুনিয়ার অফিসার রামনের কথায় দুঁদে পুলিশ অফিসার মনোহরণ বিরক্ত হয়। বলে -''আলম কোথায় ? খোঁজ নিয়েছ? ''

-''আলম  ঠিক আছে। আপাতত বোম্বেতে আছে। হঠাৎ ওর কথা কেন সার ? ''

জ্বলন্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মনোহরণ বলে -''ইউ বেটার নো অফিসার। তুমি সবটা জানো। ''

-''না সার, আমি প্রমাণ বুঝি শুধু। প্রমাণ থাকলে ঐ আলম আর রেড্ডি অনেক আগেই ....'' কথাটা শেষ না করেই বেরিয়ে যায় জুনিয়ার অফিসার।

শান্ত শিষ্ট জায়গা কুর্গ, কর্ণাটকের শৈল শহর, আজ পাঁচ বছর চাকরী করছে রামন। কিন্তু ছমাস আগে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনা ভুলতে পারে না আজও। ছোট জায়গা বলে সবাই সবাইকে প্রায় চেনে এ শহরে। দত্তাদের বহুবার দেখেছে রামন। মিষ্টি কাপল, দু জন দু জনকে চোখে হারায়। টিলার উপর ছবির মত সুন্দর বাংলোটায় থাকত ওরা। ছেলেটা একটা আইটি কোম্পানিতে রয়েছে।

 

ছ মাস আগের সেই জল ঝড়ের রাতে ফোনটা যখন থানায় এসেছিল রামন ছিল ডিউটিতে, পাগলের মত করছিল দত্তা, ওর সুন্দরী বৌটাকে ধর্ষণ করে খুন করে গেছে কেউ বা কারা, আর প্রমাণ লোপাটের জন্য বডিটায় পেট্রোল ঢেলে .... অফিসের কাজে মাইসোর গেছিল স্পন্দন দত্তা, বৃষ্টির জন্য ফিরতে রাত হচ্ছিল। বাড়ি এসে দেখে তখনো পুড়ছে ওর বৌ।

 

পাগলের মত হয়ে গেছিল ছেলেটা, বার বার বলছিল ওদের তেমন কোন শত্রু নেই।  কে করল ওর এমন সর্বনাশ !!

 

কয়েকদিন পর এসে বলেছিল ওর বস আলম আর ওর কলিগ রেড্ডির প্রতি সন্দেহর কথা। কিন্তু আলম আর রেড্ডি বলেছিল তারা সেদিন সিনেমা দেখতে গেছিল। রাতে হোটেলে খেয়ে ফিরেছে। সিনেমার টিকিট ও হোটেলের বিল ছিল ওদের কাছে। আর দত্তার অনুমান ছাড়া প্রমাণ ছিল না কিছু।

আইন কোনও সাহায্য করেনি দত্তাকে। চুপচাপ হয়ে গেছিল ছেলেটা, বলেছিল সে নিজেই হিসাব বুঝে নেবে। মালিয়া নিজে নাকি ওদের নাম বলেছে। মালিয়া নাকি বাড়িতেই আছে। আসলে বৌকে ওভাবে হারিয়ে মাথাটা বিগরে গেছিল ওর। তাই আজ মনোহরণ ওর কথা বলছিল।

 

*******

 

মালিয়াকে খাইয়ে হাল্কা মিউজিক চালিয়ে দেয় স্পন্দন।  আর কিছুদিনের ভেতর নতুন অতিথি এসে যাবে। পাশের ঘরটা বাচ্চার জন্য সাজাচ্ছে স্পন্দন, গোলাপি ঘরের দেওয়ালে কার্টুনের ছবি, ছাদে তারা চাঁদ সব জ্বলজ্বল করবে রাতের বেলায়। মাথার দিকের দেওয়াল সাগর নীল, মাছের ঝাঁক খেলে বেড়াচ্ছে সেখানে। দেওয়ালের তাকে কত সফট টয়স আর খেলনা। মালিয়াকে একবার এনে দেখাবে দু দিন পর। এখনো সারপ্রাইজ। দুদিন পর ওদের বিয়ের তারিখ। কার্টুন পর্দা গুলো জানালায় লাগাতে লাগাতে আলমের লাল গাড়িটা দেখতে পায় রাস্তায় স্পন্দন। রেড্ডির শোকে ছুটে এসেছে, একেই বলে কান টানলে মাথা আসা। স্পন্দন কয়েকদিন আগেই কাজটা ছেড়ে দিয়েছে। সেই আনন্দে রেড্ডি দিল্লি যেতে গিয়ে শেষ। বাধ্য হয়ে আলমকে কাজ গুছাতে কুর্গ ছুটে আসতে হয়েছে। অফিস গেস্ট হাউসটা কাছেই।

 

হোম মেড চকলেট দারুণ বানাত মালিয়া, আলম রেড্ডি সবাই খেয়ে ভালো বলেছিল। সেবার যখন স্পন্দনের প্রমোশন হল মালিয়াকে নিয়ে অফিস পার্টিতে গেছিল সে। ওখানেই আলম আর রেড্ডি ওকে দেখে। পরদিন ওদের বাড়িতে ইনভাইট করেছিল স্পন্দন। একটু বিরক্ত হয়েছিল মালিয়া। বলেছিল লোক দুটো বড্ড গায়ে পড়া, কেমন যেন। ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে স্পন্দন বলেছিল -''ওদের কি দোষ। আমার বৌটাই খুব মিষ্টি যে। ''

ঠিক তার দু দিন পর স্পন্দনকে  মাইসোর পাঠিয়েছিল আলম, আর ঘটে গেছিল সেই ঘটনা।

মালিয়া পরে বলেছিল ওদের কথা, বসার ঘরে আলমের পেনটা পেয়েছিল স্পন্দন। ও স্বীকার করেনি পেনটা দেখে। পুলিশ ও মানেনি। বাকি প্রমাণ ওরাই মুছে ফেলেছিল।

 

******

 

দূরে চার্চের ঘড়িতে ঢং ঢং করে বারোটা বাজল। ল‍্যাপিটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় আলম। রেড্ডিটা মরে গিয়ে ঝামেলা হয়ে গেছে। কুর্গের কাজটা বন্ধই করতে হবে মনে হচ্ছে। দত্তাটা আগেই ছেড়ে দিল কাজটা। অবশ্য ওকে ঝেরে ফেলতেই চাইছিল আলম। বৌটার শোকে পাগল হয়ে গেছিল। কি না জানি করে ফেলত। কাজ ছাড়ায় শান্তি পেয়েছিল ওরা।

কিন্তু রেড্ডির মৃত্যুটা চিন্তায় ফেলে দিল। কুর্গ আসতেই ভয় লাগছিল এবার। যাক, কাজটা মিটলেই ফিরে যাবে ।

ফ্রিজ খুলে রামের বোতলটা টেনে নেয় আলম, রাতে একটু না খেলে ঠিক... নিপুণ হাতে একটা লার্জ পেগ বানিয়ে নিজেকে চিয়ার করে একটা বড় চুমুক দেয়। টেবিলে কাবাবের প্লেট দিয়ে গেছে বহুক্ষণ আগে, বোধহয় শক্ত হয়ে গেলো। মাথাটা টলে ওঠে হঠাৎ। হাত থেকে ছিটকে পড়ে গ্লাস, কস বেয়ে নেমে আসে ফেনা। কয়েক সেকেন্ড এক মৃত্যু যন্ত্রণা।

 

******

 

-''রামের বোতলটা আলম নিজেই এনেছিল সার। ওতে নয়, বিষ ছিল গ্লাসের তলানিতে, প্রুসিক অ্যাসিড। এটা আত্মহত‍্যা সার। কেউ মেশায় নি। লোকটা একা ছিল। ''

-''তোমায় বলেছিলাম লক্ষ্য রাখতে, আলম কে সাবধান করতে।''

-''করেছিলাম, লোকটা পাত্তা দেয়নি আমায়। অথবা পুলিশ লক্ষ্য রাখছে সেই ভয়েই হয়ত ...''

-''গ্লাসটা যে রেখেছিল তাকে জেরা করলে ?"

-''বৃদ্ধ বেয়ারা সার। বহুদিন একাই এই গেষ্টহাউস সামলাচ্ছে। অন্য গ্লাসে কিছু ছিল না। এটায় আলম নিজেই মিশিয়েছিল ....''

-''বেয়ারাটা টাকার জন্য করতে পারে। ''  মনোহরণ চেঁচিয়ে ওঠে।

-''ওর তিন কুলে কেউ নেই, এই চাকরীটা করছে সারা জীবন। আর গ্লাসে বিষ দিলে একটায় দেবে কেন সার, কোন গ্লাসটা আলম নেবে বুঝবে কি করে ? আর প্রাণের ভয় বলেও তো একটা কথা আছে। আলম ওর বস। সন্ধ্যায় আমি নিজে গিয়ে আলমকে সাবধান করেছিলাম। বুড়োটা জানত পুলিশ লক্ষ্য রাখছে।  ''

-''প্রমাণ খোঁজ রামন, প্রমাণ, এসব ছেঁদো যুক্তি চলবে না। দত্তার এলিবাই কি? ''

-''দত্তা বাড়ি থেকে রাতে বার হয়নি। সারাক্ষণ লক্ষ্য রাখছে আমাদের লোক। ও সারা রাত বাড়িতেই ছিল। আর আলমের ঘড়িটা বারোটা নয়ে বন্ধ হয়েছে, পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেছিল সার। ওটাই মরার সময় । ''

-''গেস্ট হাউসের বুড়োটাকে তুলে দু ঘা দাও। সব বার হবে। ''

-''ওর মোটিভ নেই সার, যে কোনও উকিল ছাড়িয়ে নেবে ওকে। ''

-''চল, দত্তার বাড়ি ঘুরে আসি  একবার। '' টুপিটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মনোহরণ।

-''ও প্রেমিক সার, বৌ কে ভীষণ ভালোবাসতো। প্রেমিকরা খুব নরম মনের হয়, খুন করে না। চলুন তবু। ''

-''প্রেমিকরা প্রতিশোধ নেয় না বলছ?''

-''আপনি তো জানেন দত্তা এখনো বিশ্বাস করে ওর স্ত্রী জীবিত। একটা পুতুলকে স্ত্রীয়ের মত যত্ন করে, ওকে নিয়েই কল্পনার দুনিয়ায় থাকে, এক ধরনের রুগী। আমাদের লোক ওকে চোখ চোখেই রাখছে। ও প্রতিশোধ নেবে কেন?''

 

*******

 

 দ্বিতীয় পেগটা শেষ করে হল ঘরের বড় ছবিটার সামনে এসে দাঁড়ায় রামন। সীতা হাসছে, ফুলের মালাটা দুলছে। স্পন্দন ও হাসছিল। সার ভেবেছে ও পাগল।কিন্তু রামন জানে সত্যিকারের প্রেমিক। ভালোবাসতো বৌকে।

সীতার ছবিটার উপর হাত বুলায় রামন, ও যেন এখনি কথা বলে উঠবে। তিনবছর ধরে এভাবেই ছবি হয়ে রয়েছে সীতা। রামন পারেনি ওর খুনিদের শাস্তি দিতে। আইন শুধু প্রমাণ চায়, সীতার মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না কেউ। রামনের মাঝে মাঝে নিজের ওপর রাগ হয়। সেই রাগ থেকেই জাগে প্রতিশোধ স্পৃহা। কিন্তু সত্যিই রামন জানে না কারা কেরে নিয়েছিল সীতাকে। কি দোষ ছিল সীতার।কিন্তু স্পন্দন দত্তার কেসটা ও ঠিক বুঝেছিল। ছেলেটা ঐ আঘাতে কেমন পাগল হয়ে গেল। এখন ভাবে ওর বৌ রয়েছে, প্রেগন্যান্ট বৌয়ের জন্য চাকরী ছেড়ে ঘরে বসে রয়েছে। খুব ভাল ছেলে স্পন্দন, বৌটার রূপটাই কাল হল। সীতার জন্য যা করতে পারেনি রামন দত্তার জন্য ও করেছে, কেউ ভাবতেই পারবে না, রেড্ডির গাড়ির ব্রেকটা তো সেই খুলেছিল। আগের দিন সন্ধ্যায় রেড্ডি বলেছিল একাই মাইসোর হয়ে দিল্লি যাচ্ছে।

আর আলমের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সন্ধ্যায় বাকি কাজটা করে এসেছিল। অন্য গ্লাসটা নিজে জল খেয়ে নিচে নামিয়ে দিয়েছিল। রুমাল দিয়ে সযত্নে ছাপটুকুও মুছে দিয়েছিল। এবার ওরা ওপারে গিয়ে শেষ বিচারের জন্য তৈরি হোক। মনোহরণ প্রমাণ খুঁজুক, মোটিভ খুঁজুক।

সীতার ছবিটার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে ও, স্পন্দন তবু একটা পুতুল নিয়ে বেঁচে আছে, রামন কি নিয়ে থাকবে ভাবত এতদিন। তখনি সীতা একদিন ঘুমের মধ্যে কানে কানে বলেছিল অপরাধীদের আইন শাস্তি না দিলেও ও যেন শাস্তি দেয়, একজনকেও ছাড়তে না। সীতার কথা ভেবেই কাজটা করেছে, এভাবেই না হয় শান্তি পাক সীতারা।

  

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama