শব্দের বন্ধন
শব্দের বন্ধন
রিমির নতুন বিয়ে হয়েছে। প্রথম প্রথম কিছু মাস ঘুরতে যাওয়া বিভিন্ন আত্মীয় সজনদের বাড়ি যাওয়া বা তাদের বাড়িতে আশা এই সবের মাঝেই কেটে যায়। আস্তে আস্তে রোজকার নিয়মেই জীবন কাটে। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট বানানো ঘরের রান্না বান্না টুকটাক কাজ করে শুয়ে বসে দিন কাটানো। ওর বর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। সারাদিন ভীষণ পরিশ্রম করে। কত জাগায় ওদের ছুটতে হয়। রিমিকে ভীষণ ভালোবাসে। রিমির চুলের খোঁপা খুলে রিমিকে জড়িয়ে ওর চুলে মুখ গুঁজে থেকে তার যে সুখ হয় সেই সুখ পৃথিবীর আর কোনো কিছুতে নেই।
রিমি ভীষণ সুন্দর দেখতে। যে কেউ ওকে দেখলে প্রেমে পরে যাবে। তাই ওর বরের মাথায় সব সময় একটা ভয় আর চিন্তা। সত্যি যারা ভালোবাসে তাদের এই হারিয়ে ফেলার ভয় প্রথম দিন থেকেই থাকে। বউ কে চোখে চোখে রাখতে হবে। কিন্তু রিমি মেয়েটা ভীষণ সহজ সরল ভালো মেয়ে। ছুক ছুকানি স্বভাবটা ওর ভিতর নেই। বেচারি সারা দিন ঘরে একা কাজের ফাঁকে কি আর করবে ? বর কাজে বেরিয়ে গেলে ঘরে ওই একটা মোবাইল নিয়ে পরে থাকা। ফেইসবুক, ইন্সটা, ইউ টিউব, এই সবই তো আজ আর কাউকে একা থাকতে দেয় না।
বউ যখন বরের খুব আদরের হয়ে ওঠে তখন বরের খুব ছোট ছোট বকা বকি গুলো পাহাড়ের মতো কষ্ট অনুভব হয়। আর সহজ সরল মানুষ গুলো বোকার মতো সব কিছু সবাইকে বলতে থাকে। রিমির হয়েছে ঠিক সেই রকম। কাজের মধ্যেও বউকে নজর রাখতে রিমির বর সব সময় রিমির ফেইসবুক ইন্সটা তে চোখ রাখে। উপর থেকে চোখ রাখতে পারলেও, ভিতরে কি হচ্ছে সব সময় দেখাও যায় না বা অনেক সময় এতটা দেখতে গিয়ে বউয়ের নজরে খারাপ হয়ে যাবার ভয় দেখাও হয় না।
তবে রিমি সেলফি তুলে সুন্দর সুন্দর ছবি পোস্ট করে সুন্দর সুন্দর ক্যাপশন দিয়ে। আর সেখানে প্রচুর মানুষের ভিড়। সবার বিভিন্ন রকমের মন্তব্য
রিমির বরের চোখে পরে। যেগুলো তার ভালো লাগে না। তাই মাঝে মাঝে এই সব নিয়ে রিমিকে একটু বারণ করতে রিমির সাথে টুক টাক ঝামেলা শুরু হয়।
মেয়েদের একটা খুব বাজে দিক হলো খুব ভালো মেয়েরা এই ধরণের বারণ গুলো খুব অপমানে নিয়ে নেয়। ফলে ওদের জেদ বাড়তে থাকে। তাই যেটা বারণ করা হবে সেটাই বেশি করে করতে শুরু করে। আর কিছু মানুষ আছে যাদের অভিসন্ধি ভালো নয় তারা সুযোগ খোঁজে। আবার ভালো মানুষ ও তো আছে তারা কখনো চায় না কারোর ক্ষতি হোক। সব কিছু নির্ভর করে মানুষ আর মানুষের মেন্টালিটির উপর।
রিমি ওর বরকে বলেছে দেখো আমি পার্সোনালি কারোর সাথে কথা বলতে যাই না। আমার ইনবক্স দেখো কত মানুষ কত হায় হ্যালো করছে আমি একটা রেপ্লি করি নি। দেখো দেখো। রিমির বর সেদিকে না তাকিয়ে বললো আমার ওসব দেখার দরকার নেই। তুমি এসব কোরো না লোকের কমেন্টস আমার ভালো লাগে না।
রিমি বোঝাতে চেষ্টা করে অরে বাবা কে কি বলছে তাতে আমার কি তোমার কি বলুক না। রিমির বর মানবে না। ওর ভিতর টা জুড়ে শুধু রিমি থাকে ওর একদম পছন্দ না ওর এতো আদরের বউ কে নিয়ে অন্য মানুষ এমন সব কমেন্টস করুক বা রিমি এসব করুক। নাচ করে গান করে রীল বানিয়ে সেলফি তুলে পোস্ট করে লোকের মন্তব্য নেবার দরকার নেই।
সময় না কাটলে গান শোনো, বই পড়ো, সিনেমা দেখো, এসব কোরো না। কিন্তু যারা এই নেশায় মেতেছে তাদের কে আটকাবে। দুদিন তিনদিন রিমি নতুন কোনো পোস্ট করে নি। রিমির বরের মুখ ভার ঠিক হয়ে আবার সেই আদর হাসি ভালোবাসায় ভোরে উঠলো। কিন্তু কিছু দিন বাদেই রিমি আবার নতুন পোস্ট। এতো দিন বাদে পোস্ট পড়াতে ওর প্রোফাইলের নেকড়ে গুলো ঝাঁপিয়ে পড়লো অনেক লাইক কমেন্টস এ এমন কি কেউ কেউ তোমাকে ভীষণ মিস করছিলাম লিখেও দিলো।
কাজের ফাঁকে হটাৎ মোবাইল হাতে নিয়ে ওর বর যখন রিমির প্রোফাইল গেলো সব দেখে মাথা আগুন হয়ে গেলো। বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরে রিমির সাথে অশান্তি শুরু হলো। এবার রিমি বলেই দিলো তোমার আমার এই টুকু যখন মেনে নিতে পারছো না তুমি আমাকে ভালোবাসো না।
এ লড়াই কিন্তু ভালোবাসার লড়াই যারা দুজন লড়াই করছে তারা দুজনেই জানে যে কে কাকে কতটা ভালোবাসে তবুও যেহেতু এই লড়াই ভালোবাসার লড়াই এখানে কিন্তু কেউ জয়ী হয় না দুজনেই চূড়ান্ত হেরে যায়। আজ অবধি এমন ভালোবাসার লড়াইতে কেউ যেতে নি দুজনেই হেরে গিয়ে একা হয়ে যায়।
রিমি বুঝে গেলো ওর বর ওকে ভালোবাসে না ওর বড় একজন সাইকো বুঝতে চায় না। আর রিমির বড় জানে ওর জীবনে রিমি কতটা জুড়ে রিমি ছাড়া ও অসম্পূর্ণ। লড়াই শুরু ও ওর কাজ করবে আর ওর বর এটাকে মেনে নিতে পারবে না।
এবারের রিমির পোস্ট গুলো দুঃখ ভরা ভালোবাসা শুন্য মন খারাপের ক্যাপশন থাকে। সহজ সরল মানুষ হলে যা হয়। অনেকেই রিমিকে ইনবক্স এ ডাকা ডাকি করে রিমি কোনো রিপ্লাই করে না।
সুমন বলে একটি ছেলে রিমির দুঃখের পোস্টে এসে লিখলো নিজের অনুভূতি নিজের কাছে রাখুন। আপনার এসব দেখার জন্য এখানে কেউ বসে নেই। এগুলোকে নেকামো বলে। নিজের ভিতরে কষ্ট দুঃখ যা থাকবে নিজের ভিতর রাখুন পাবলিক করছেন কেন ? রিমির ভীষণ রাগ হয়। রিপ্লাই করে আপনাকে কে জ্ঞান দিতে বলেছে ? জ্ঞান অন্য জাগায় দিন।
এবার ছেলেটা রিমির ইনবক্সে ম্যাসেজ করে যেটা এই ছেলেটা আগে কোনো দিন করে নি। কিন্তু রিমি তো রেগে গেছে ও কি আর এই ছেলের সাথে কথা বলবে ? কখনোই না। আসলে সুমন রিমিকে কিছু বোঝাতে ইনবক্সে এসেছিলো যেটা রিমি পাত্তা দিলো না। ঠিক তার পর ই এক বয়স্ক ভদ্রলোক ইনবক্সে এসে লিখলেন মা আমি জানি তুমি আমার সাথে কথা বলবে না একটু যদি আমার সাথে কথা বলো তাহলে আমি তোমাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারি।
রিমি দেখলো মা ডেকেছে এতো সুন্দর করে কথা বলেছে ওনার সাথে কথা বলাই যায়। রিমি রিপ্লাই দিলো হা বলুন কি বলবেন। উনি জিজ্ঞেস করলেন তোমার কি হয়েছে ? রিমি রিপ্লাই দিলো না না সেরকম কিছু না। ভদ্রলোক বললেন আমাকে বলতে পারো তোমার কোনো ক্ষতি হবে না।
রিমি কিছুটা বললো।
কথা বলার নেসা আর যারা ভালো কথার জালে জড়াতে জানে তাদের সাথে কথা বলা শুরু করলে সময় কখন পার হয়ে যাবে বোঝাই যাবে না। কথা থামবে না চলতেই থাকবে। আর হলো সেটাই, রিমির সব হারির খবর না জানতে পারলেও লোকটা কিছুটা জেনে নিয়ে বেশ মনে জাগা বানিয়ে নিলো। উনি বুদ্ধি দিলেন তুমি সকাল সন্ধে গবিন্দের নাম সরণ করে গোবিন্দ কে ডাকবে তোমার সব সমস্যা উনি দূর করবেন। রিমির বেশ ভালো লাগলো।
দুনিয়াতে সবাই খারাপ না কত ভালো মানুষ ও আছে তাই না ? সবাই কি খারাপ নাকি ? ভদ্র লোকের সাথে কথা বলে রিমির কেমন একটা আপন আপন মনে হতে লাগলো। যাক একজন ভালো মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। নিয়ম করে গুড নাইট গুড মর্নিং মিষ্টি মিষ্টি কথা বিভিন্ন শব্দ মালয়
রিমি সজ্জিত বেশ ভালো লাগে। আগের মতো ছবি পোস্ট রীল বানানো আর হয় না। কাজের শেষে ফেইসবুক ওন করলেই যখন ওনার সাথে কথা শুরু হয় সময় এমনিই কেটে যায়। সাথে সকাল সন্ধ্যে ওনার কথা মতন গোবিন্দ নাম।
রিমির বর এখন রিমি কে ফেসবুকে আর সেরকম দেখতে পায় না। বেচারা ভীষণ খুশি সে তার রিমি কে ফিরে পেয়েছে। বাড়ি ফিরে বেশ সুন্দর ভাবে বউকে কাছে টেনে লম্বা চুলের খোঁপা খুলে দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে আদর আর আদর। রিমিও বরের আদর খেয়ে বেজায় খুশি। কারণ রিমি তো খারাপ মেয়ে না। রিমি ও তো তার বরকেই ভালোবাসে। দুজন দুজনকেই ভীষণ ভালোবাসে। শুধু একজন আর একজনের চাওয়া কে মেনে নিতে পারে না।
রিমির বরের চাওয়া টা কি ভুল ? না ভুল কখনোই না। রিমি কি খুব অপরাধ করছে না কখনোই না। তাহলে রিমির বরের এমন চাওয়া কেন ? কি হয়েছে ফেইসবুক এ একটিভ থাকলে বা পোস্ট করলে ? যাক গোবিন্দ সব ঠিক করে দিয়েছে। অশান্তি নেই ঝামেলা নেই শুধু আদর আর ভালোবাসা।
বেশ চলছিল। মাঝে মাঝে দু একটা ছবি পোস্ট এটা ওর বর মেনে নিয়েছে সেই আগের মতো কমেন্টস আর কমেন্টসের রিপ্লাই আর নেই। অন্যরা কমেন্টস করলেও রিমির রিপ্লাই থাকেনা এটা দেখে রিমির বর বুঝে গেছে রিমি এসব কমেন্টস কে আর পাত্তা দিচ্ছে না। আর দেবেই বা কি করে নিজের সময় কেটে যাচ্ছে তো সেই ভদ্রলোকের সাথে গল্প করে কথা বলে। লোকটা এতো ওকে ভালোবাসে উনি এতো সুন্দর সুন্দর কথা বলে রিমি আর অন্য কোনো দিকে যায় না।
একদিন ভদ্রলোক বললেন কি করছো এখন ? রিমি উত্তর দিলো এই তো লাঞ্চ সেরে একটু শুলাম। আর এই যে আপনার সাথে কথা বলছি। ভদ্রলোক বললেন অনেক দিন আমরা কথা বলছি। তুমি এখন কেমন আছো তোমার সেই আগের সমস্যা গুলো মিটেছে ? রিমি এবার একটু থমকে ভেবে দেখলো সত্যি তো ও তো এখন বেশ ভালো আছে। ওর বড় ওকে আর আগের মতন বকা বকি করে না। কি অদ্ভুত তাই তো....একটু সময় ভেবে নিয়েই রিমি বললো অকেন অনেক থাঙ্কস আপনাকে। আপনি আমার জীবনে না এলে আমার প্রেম আমার ভালোবাসা চোটকে গিয়েছিলো প্রায়।
আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব সত্যি ভেবে পাচ্ছি না। ভদ্রলোক বললেন তবে আমার তো একটা গিফট পাওয়ার অধিকার আছে তাই না। রিমি বললো ঠিক তাই। আপনি আপনার এড্রেস টা দিন আমি আপনার গিফট পাঠিয়ে দেব। ভদ্রলোক বললেন না না আমি মজা করছি আমার কোনো গিফট লাগবে না। তবে যার সাথে আমি রোজ কথা বলি তাকে সামনে থেকে দেখতে বড় ইচ্ছে করে। রিমি বলে আমি আপনার সেই ইচ্ছে ও পূরণ করতে পারি। ভদ্রলোক বললেন কি ভাবে। রিমি বললো আপনাকে ভিডিও কল করতে পারি। আপনাকেও আমার দেখা হয়ে যাবে। জানেন অনেকেই ভিডিও কল করে দেয় আমি রিসিভ করি না। তবে আপনাকে করা যায়।
ভদ্রলোক বললেন না না আমিও ওই ভিডিও কল বা নাম্বার নিয়ে কথা বলা পছন্দ করি না। যদি গোবিন্দ চায় একদিন ঠিক সামনা সামনি আমাদের দেখা হয়ে যাবে। রিমি ভাবলো সত্যি কি ভালো মানুষ আমার মানুষ চিনতে ভুল হয় না। ভদ্রলোক বললেন তোমাদের ওখানে একটা পার্ক আছে না?
রিমি বললো আমার বাড়ির কাছে না একটু দূর। উনি বললেন কত দূর ? তোমার বাড়ি থেকে যেতে কত সময় লাগবে। রিমি বললো পায় হেটে গেলে ৩০ মিনিট টোটো করে গেলে ১৫ ২০ মিনিট মতন।
ভদ্রলোক বললে আমি কিন্তু চলে যেতে পারি যদি তুমি আসতে চাও আমাদের দেখা হয়ে যাবে বলো আসবো ? তাহলে আমি এখন বেরোতে পারি।
রিমি একটু ভেবে নিলো বাড়িতে শুয়ে আছি ওর ফিরতে সেই সন্ধে ৭ টা, ১ ঘন্টা ২ ঘন্টা বেরোনোই যায়। রিমি বললো ঠিক আছে আপনি আসুন পৌঁছনোর আগে আমাকে জানাবেন। একটা মানুষই তো, আর এতো ভালো মানুষ যে ওর জীবনটাই সুন্দর করে দিয়েছে তার সাথে একটু সময় কাটানো যায়। যেমন কথা তেমন কাজ। ওরা দেখা করলো সেই পার্কে।
সেদিন রিমির বর একটু তারা তারি বাড়ি ফিরছিলো রাস্তা দিয়ে বাইকে ফিরতে পার্কের দিকে চোখ পড়তেই ওর বাইরে ভিতরের সব কিছু জ্বলে পুড়ে শুকিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থা হয়ে গেলো। এ কি এটা আমি কি দেখছি আমার রিমি পার্কে কার সাথে বসে এতো হেসে আনন্দে কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে ওদের অনেক দিনের সম্পর্ক। ও আর তাকাতে পারলো না ওদিকে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হচ্ছিলো ও ওর জীবনটাই শেষ করে ফেলবে।
ভালোবাসা তাও আবার পশু পাখি নয় অনেক রাস্তার কুকুর বেড়াল একে অন্যের গা চেটে দেয় কিন্তু এটা মানুষের ভালোভাসা এখানে কোনো ভাগ চলবে না। কে ওই লোকটা কোথা থেকে এলো ? এতো মাখা মাখি কিসের ? আত্মীয় সজন নয় এমন কি পাশের বাড়ির ও কেউ নয়। যাকে রিমির বর জানেই না চেনেই না কোনো দিন দেখে নি তার সাথে এতো সুন্দর সম্পর্ক কবে থেকে ? বাড়ি না ফিরে উল্টো দিকে গিয়ে একটা হাইওয়ের ধারে চায়ের দোকানে বসে একের পর একটা সিগারেট ধরিয়ে অনেক প্রশ্ন মনে ঘুরছে।
আমার রিমি আমার জীবন আমার সব কিছু যে সে আমার পিছনে কত কি না করে চলেছে। বাড়ি ফিরলো ঠিক যেমন রোজ ফেরে সেই সময়। দরজার বেল বাজতেই মনে অনেক খুশি নিয়ে দৌড়ে দরজা খুলতে গেলো রিমি। আজ আর ওর বর ওর দিকে ফিরে তাকালো না। আজ আর খাটে ব্যাগ টা ছুড়ে দিয়ে রিমিকে কোলে তুলে নিলো না। রোজ যে ভাবে ওর চুলের খোঁপা খুলে পাগলের মতন চুলে মুখ গুঁজে আদর করতে থাকে সেটা আজ আর নেই। সোজা সোফায় বসে জুতোর ফিতে খুলতে লাগলো। রিমি ভাবলো আজ হয়তো কাজের বড় কোনো সমস্যা হয়েছে। ও কাছে এগিয়ে গেলো। মুখটা দু হাত দিয়ে নিজের দিকে তুলে জিজ্ঞেস করলো এই কি হয়েছে ?
রিমির এই গভীর ভালোভাসা আর অনুভূতি রিমির বরের কাছে হ্যান্ড গ্রেনেড এর পিন খোলার মতন হলো আর বীভৎস ভাবে ফেটে গেলো। একটা চিৎকারে খাটের স্ট্যান্ড টা ভেঙে ফেললো। যে খাটে ওদের ফুলশয্যা হয়েছিল। রিমি এই রূপ আগে দেখেনি। ভীষণ ভয় পেয়ে ও দূরে সরে গেলো
ওর বর আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলো পার্কে কার সাথে ছিলে। রিমি তোতলাতে তোতলাতে বললো উনি ভীষণ ভালো মানুষ। রিমির বর চিৎকার করে বলে উঠলো নিকুচি করেছি ভালো মানুষের। উনি কে ? রিমি বললো বিশ্বাস করো উনি আমার কেউ না। আমার ফেইসবুক থেকে পরিচয়।
রিমির বর বললো বিশ্বাস করবো তোমাকে ? যে আমার বিশ্বাসের খুন করেছে তাকে বিশ্বাস করবো ? কি ভাবে ? চোখ পড়লো রিমির ফোনের দিকে
ফোন টা হাতে নিয়ে ফেইসবুক ওপেন করে ইনবক্স চেক করে দেখলো এ তো অনেক দিনের সম্পর্ক কত গল্প কত কথা। আর সব কথাতেই সুন্দর ভাবে রিমিকে খুশি আনন্দ দেওয়া ছাড়া আর কিছু নেই। রিমিকে গ্রাস করা ছাড়া ছাড়া আর কিছু নেই। ওর সুন্দরের তারিফ করা ছাড়া ওর ঠোঁট ওর চুল ওর সমস্ত কিছুর সুন্দর নৈসর্গিক বর্ণনা কবিতা গানের লাইন দিয়ে ওকে বেঁধে রাখা ছাড়া আর কিছু নেই।
সব দেখে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এলো। রিমি জুবু থুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা চোখে খুব শান্ত ভাবে রিমির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার ফোনে ঢুকে লোকটার প্রোফাইল গেলো। গিয়ে দেখলো সে রিমির সাথে সেলফি নিয়ে তার পেজে পোস্ট ও করে ফেলেছে। রিমির বর পোস্টে গিয়ে লিখলো ছবি গুলো ডিলিট করুন। সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো কেন ? রিমির বর আবার লিখলো আমি বলছি তাই। এক্ষুনি ডিলিট করুন। লোকটা ছবি গুলো ডিলিট করে দিলো।
রিমি বুঝতে পেরেছে এবার হয় তো কিছু একটা বড় কিছু ঘটবে তাই একটু আদর ভালোবাসা দিয়ে ওর বরকে বোঝাতে এলো। আর সাথে সাথে একটা ঠাসিয়ে চর রিমির গালে। যে মেয়ে কোনো দিন বাবা মায়ের হাতে মার খায় নি সে বাইরের একটা পুরুষ মানুষের হাতে চর খেলো। এতো বড় অপমান কোনো মেয়ে মেনে নেবে না।
ভালোবাসা ভীষণ মধুর কিন্তু ভালোবাসার টাইপ বড্ড জটিল। রিমি যেটা ভাবছে। রিমির বর ও সেটাই ভাবছে যে আমি আমার রিমিকে মারলাম ? ভালোবাসার এই যে লড়াই এটা বিশ্লেষণ করা বড্ড জটিল। রিমির কাছে ওর ভালোবাসা বিষাক্ত হয়ে গেলো এক কারণে। আর রিমির বরের কাছে ভালোবাসা বিষাক্ত হয়ে উঠলো আর এক কারণে। কিন্তু এই দুটো বিষাক্ত মন গত কাল রাতেই কত সুখে কাটিয়েছে।
চর টা মারার পর ওর বর ভিতরের কষ্টে অনুতাপে ঠান্ডা হয়ে গেলো। ঘটনা কিন্তু যার যার মনে ঘটে চলেছে। ভালোভাসার তলোয়ারে দুজনেই ধার দিচ্ছে কে কি ভাবে পরবর্তী স্টেপ নেবে। রিমি ভাবছে ওই ভদ্রলোককে কাল সব জানাবে। আর ওর বর ভাবছে এখুনি এর সমাধান করতে হবে কিন্তু কি ভাবে ? ডিভোর্স ? কি করে রিমিকে ছারা বেঁচে থাকবে ? সে যাই হোক এখানে ইতি না টানলে সামনে এর থেকেও আরো অনেক খারাপ কিছু হতে পারে। ভেবে রিমিকে জানিয়ে দিলো আমি তোমাকে নিয়ে আর এক ছাদের নিচে থাকতে পারবো না।
রিমি ভাবলো খুব রেগে আছে ও সব ঠিক করে দেবে। এখন আর ওর মুখের উপর কোনো কথা না বলে ওর খাবারের ব্যবস্থা করি। কিচেনে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করছে ঠিক কিন্তু ওর বর ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে। ওদের আর একটা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। রিমি অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারলো না বা ওই ঘর থেকে তাকে বের করতে পারলো না। ভীষণ ভাবে ভেঙে চুরে কোনো রকম ভাবে রাত টা দুজনের আলাদা আলাদা রুমে কাটলো। সকাল হতেই ওর বর কোনো কথা না বলে কিছু না খেয়ে কাজে বেরিয়ে গেলো।
রিমি ঘরের কাজ আর কি করবে ? ওর মন একদম ভালো নেই আজ ওই ভদ্রলোক আর গুড মর্নিং ম্যাসেজ করেন নি। ও অপেক্ষা করছে কখন উনি অনলাইন হবেন সব জানিয়ে একটা সমাধানের রাস্তা যদি উনি বলে দেন। বা যদি ওনাকে বাড়িতে ডেকে বরের সাথে পরিচয় করানো যায় অনেক কিছু ভাবছে। কিন্তু সে তো আর অনলাইন আসছেন না। কি করবে খুব কষ্টের একটা ছবি দিয়ে ক্যাপশন দিয়ে একটা পোস্ট করলো।
মানুষ মানুষের মন কি ভাবে শেষ হয়ে যায়। রিমি কিন্তু এখনো গভীরতা ভাবতেই পারেনি বিষয়টা ওর কাছে খুব হালকা তাই যেটা নিয়ে এতো কিছু হয়ে গেলো। মার খেলো ভালোবাসা বিষাক্ত মনে হচ্ছে কিন্তু ফেইসবুক বন্ধ হলো না বরং তাকেই খুঁজছে যার জন্য এগুলো হলো। সেই লোক টা অনলাইন এলোনা কিন্তু সেই সুমন ছেলেটা আজ আবার ইনবক্সে এসে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। এই ছেলেটাকে রিমি খুব বাজে ভাবে বলেছিলো জ্ঞান দেবেন না। আজ ওকে আর ইগনোর করতে পারলো না। বললো অনেক বড় ঝামেলায় পড়েছি।
সুমন বললো খুলে বলুন কি হয়েছে। রিমি সব খুলে বললো সুমন হুম হা তে রিপ্লাই দিলো। সব শুনে বললো ওই লোক আর আপনার সাথে কথা বলতে আসবে না। ও কাল রাতেই বুঝে গেছে যে কাল রাতে আপনি না আপনার বর ছবিতে কমেন্টস করেছে। আর উনি এটাও জানে আপনি ঝামেলায় পড়েছেন ওনাকে নিয়েই তাই উনিও কি বলবে কি করবে ভাবছে। দেখুন পরে হয় তো যোগ যোগ করবে। তবে ওটা একটা শব্দের ঢ্যামনা
ওনার উদ্দেশ্য ছিল আপনার মতন এমন একজন সুন্দরীর সাথে সময় কাটানো আর যদি একটু কাছে পায় তো ঘুরবে বেড়াবে ছবি উঠবে। সেটা ও করে নিয়েছে।
আপনার গোবিন্দ ডাকে আপনার শান্তি ছিল না। আপনি ওনার সাথে সময় কাটাতেন তাই বোঝা যেত না আসলে আপনি কি করছেন। আপনার হাসবেন্ড আপনাকে বিশ্বাস করতো ভাবতো আপনি ওনার কথা শুনেছেন । আজ তার বিশ্বাস খুন হয়েছে। তাই এর পর উনি যেটা ঠিক করবেন আপনার জীবন সেই দিকেই যাবে। ওই শব্দের ঢ্যামনা তার কাজ করে নিয়েছে। তার আর আপনাকে দরকার হবে না। সে দেখুন অন্য কারোর সাথে গল্পে মশগুল আছে।
রিমি বললো আমি আমার বরকেই ভালোবাসি আমার ওই সব আমি কি করে ওর বিশ্বাস খুন করলাম। এখন সে যদি সন্দেহ করে সেটাও তো মেনে নেওয়া যায় না। আমি খারাপ কি করেছি ? আমি কি ওনার সাথে প্রেম করতে গিয়েছিলাম ?
সুমন বললো দেখুন বিশ্বাস ভাঙতে কিছু করতে হয় না। আর আপনি যেটাকে প্রেম মনে করছেন না সেটা ওই লোকটার কাছে এক ধরণের প্রেম ই ওনার মনের ইচ্ছে পূরণ। আর আপনার বর কেও আপনি বোঝাতে পারবেন না যে এটা প্রেম নয়। আপনি ভালো মনের সেটা আমি বুঝতে পারছি কারণ আমি আপনাকে আমার জীবনের কোথাও কোনো ভাবনাতেও রাখি নি। কিন্তু আপনার বরের অনেক কিছু আপনি কেড়ে নিয়ে ওই লোকটাকে দিয়ে দিয়েছেন। আর এই ভাগ আপনার বর মেনে নেবে কেন ? কারণ তার যে আপনিই সব। এক বিন্দু ভাগ সে অন্য কাউকে দেবে না।
আপনি নিজে ভেবে দেখুন তো, যে সময় আপনি ওনার সাথে গল্প করতেন সেই সময় আপনি আপনার বর কে দুটো ম্যাসেজ বা কল করতে পারতেন। আপনি নিজে ভেবে দেখুন অনেক সময় আপনার মন একবার ও আপনার বরের কথা ভাবে নি। কারণ আপনার মনের অনেকটা সময় আপনি ওই লোকটাকে দিয়ে রেখেছেন। এতটা মনের ভাগ দিয়ে আপনি বলছে আপনি আপনার বরকে ভালোবাসেন। আসলে কি বলুন তো ভালোভাসা সমান হলে কোনো সমস্যা থাকে না।
যদি ধরুন দিনের বেশি সময় কাজের ফাঁকে আপনার বর অন্য কোনো মহিলার সাথে গল্প করতো তাহলে দাড়ি পাল্লায় আপনাদের দুজনের ভালোবাসা সমান থাকতো তাহলে আজ হয়তো আপনার বর এতটা রেগে যেত না। আপনার কথা শুনতো বুঝতো মেনেও নিতো বা ভীষণ ভাবে বলতো আর যেন কোনো দিন এটা কোরো না। কিন্তু না তার কাজের ফাঁকে যত টুকু সময় সে পেয়েছে আপনাকে মনে করেছে। হয়তো ভেবেছে ঘুমাচ্ছেন, গান শুনছেন বই পড়ছেন। আপনার ম্যাসেজ কল না পেলেও দাবি করেনি বলেন নি যে আমার কথা ভাব না খোঁজ নাও না। কারণ ভীষণ বিশ্বাস করতেন আপনাকে। আজ সেই বিশ্বাসের খুন হয়েছে। আপনাদের ভালোবাসার ব্যালেন্স নেই। একজন সবটা দিয়ে ভালোবাসে। আর একজন মনে মনে শুধু বলে আমিও ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু মনের ভাগ অন্যরা ও পায়। কি অদ্ভুত তাই না ? এটাকে ভালোবাসা বলে না প্রয়োজন বলে।
এই মুহূর্ত থেকে ভালোবাসায় ব্যালেন্স আনুন। আপনার বর আপনাকে হারিয়ে ফেলার ভয় পায় সেই ভয় টা আপনার ভিতরে আনুন। সে আপনাকে যতটা মন দেয় আপনিও সমান ভাবে দিন। না হলে ঈশ্বর নিজেই আপনাদের আলাদা করে দেবে। ওই গোবিন্দ আল্লা সিব এই পৃথিবীতে কিছু নেই। যেটা আছে সেটা হলো এনাৰ্জি এই এনাৰ্জি হলো প্রধান শক্তি। আপনার মনে কি চলছে তার থেকে তৈরী হয় এই এনাৰ্জি আর এই এনাৰ্জি জগৎ সংসারকে চালনা করে। তাই সংসার বাঁচাতে ভালোবাসায় ব্যালেন্স আনুন।
সময় কাটাতে গিয়ে যে কান্ড টা আপনি করে ফেলেছেন যদি ধরুন আপনার বর আপনার সাথে সংসার করতে না চায়, ডিভোর্স চায়, আপনি কি করবেন ? ওই লোকটা আপনাকে দেখবে ? বউ করে নিয়ে যাবে ? আর ধরুন যদি। তাও না হয় অন্য কেউ একজন ভালো মানুষ আসে আপনি কি ভাবছেন এই যে পাগলের মতন ভালোবাসা আবার পাবেন ? কোনো দিন স্বম্ভব না ঈশ্বর বা এনাৰ্জি সেটা কখনোই হতে দেবে না। হারিয়ে ফেলার ভয় রিয়েল ভালোবাসা জীবনে একবারই আসে। আবার কারোর কারোর জীবনে কোনোদিন ই আসে না।
আপনি একটা কাজ করুন আজ থেকে গোবিন্দর পাশে ওনার নামটা জুড়ে জপ করুন দেখুন কিছু হয় কি না। প্রথম দিন আপনার পোস্ট দেখে বারণ করে অপমানিত হয়েছিলাম। এখানে নেকালে যেটা হয় সেটাই হয়েছে ভালো থাকুন আমি আসি আমার কাজ আছে।
ওটা ছিল একটা শব্দের বন্ধন ।

