STORYMIRROR

Raj Nandi

Drama Romance Tragedy

4  

Raj Nandi

Drama Romance Tragedy

অবৈধ ভালোবাসা

অবৈধ ভালোবাসা

15 mins
47

আদি, বয়েস ২১, বাবা মা আদিকে বিয়ে দিয়ে দেয়। তাও সেই বিয়ের বৈধতা কতটা আছে তার বিচার কে করবে ? রাস্তার ধারে একটা বট গাছের নিচে হটাৎ গজিয়ে ওঠা মন্দিরে জবা ফুলের মালা গলায় দিয়ে ধরে আনা একটা পুরোহিত না চণ্ডাল না নাপিত তার ঠিক নেই এমন ভাবে অং বং চং শ্রাদ্ধের মন্ত্র না বিবাহের মন্ত্র সে সেই পুরোহিত ই জানে। আদির না হয়েছে কোনো ঘটা করে লোকজন ডেকে বিয়ে, না হয়েছে ফুলশয্যা, না হয়েছে বৌভাত। যাই হোক আদির বিয়ে এতো তারাতারি কেন হলো ? কি কারণেই বা হলো ? সে গল্প আজ না হয় থাক। আজ গল্পটা আদির ভালোবাসার। আদির অফুরন্ত ভালোবাসা আর নিঃস্বার্থ প্রেমের গল্প। বিয়ে তো হলো কিন্তু সেই বিয়ের পরিণীতি খুব মারাত্মক যন্ত্রনা হয়ে উঠলো। ২১ বছরের একটা মেয়ের যে বুদ্ধি বিবেচনা থাকে একটা ছেলের সেই বুদ্ধি হয় না। আদির বউ তখন ১৮ বছরের। আদি বেকার রোজগার করেনা। আদির বাবা ভেবেছিলো মেয়ের বাবার অনেক টাকা অনেক সম্পত্তি ছেলের ভবিষ্যৎ মেয়ের বাবাই সামলে নেবে। কিন্তু হলো পুরো উল্টো, আদিকে তারা না দিলো ভালোবাসা না দিলো সম্মান। আর দেবেই বা কেন। এমন একটা কাজ কে কোনো শিক্ষিত ফ্যামিলি সম্মান দেয় কি ? কিন্তু শেষ হয়ে গেলো আদির জীবনের দাম্পত্য সুখ শান্তি সমস্ত কিছু। ছেলেটা না পেলো সম্মান না পেলো ভালোভাসা না বুঝতে পারলো বিবাহিত জীবনের মাধুর্য। অপমান লাঞ্ছনা সব কিছু কে বুকের ভিতর নিয়ে শুরু করলো জীবনের লড়াই। শুরু করলো তার জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে। ধীরে ধীরে আদি তার রোজগার তার কর্ম কে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পেরেছে তখন সাল টা ২০০২ আদি একজন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার মাল্টিমিডিয়া জানা ভীষণ ট্যালেন্টেড মানুষ হয়ে উঠেছে। হাতে প্রচুর অর্থ ও আসতে শুরু হয়েছে। কিন্তু তার উপার্জিত অর্থ সে তার এই শিক্ষার পিছনেই খরচ করে ফেলে কারণ তাকে কোনোদিন কোনো কিছু দেবার কেউ ছিল না। সংসারের কিছু দায়িত্ব নিলেও বাবা মা বউ কেউ খুশি না। কারণ তারা কি আদিকে ভালোবাসে ? যদি ভালোবাসতো তাহলে এই ভাবে তার জীবনের এতো বড় ক্ষতি কিন্তু সেই সময় হতো না। তবে কি ছেলেটা প্রেম বা ভালোবাসা সম্মান পাবে না। পাবে, পাবে, অনেক প্রেম আসবে তার জীবনে এক এক করে কিন্তু দুঃখের বিষয় আদি কোনো প্রেমকেই সীকৃতি দিতে পারবে না। এ এক অদ্ভুত যন্ত্রনা। কারণ আদির জীবনে যে জড়িয়ে আছে সেই মেয়েটার কি হবে ? আদি ভীষণ সৎ ও ধার্মিক দয়ালু মানুষ। অপমান লাঞ্ছনা তিক্ততার সব গল্প এখানে বলতে গেলে এটা গল্প না উপন্যাস হয়ে যাবে। তাই থাক ওসব। সাল টা ২০০২ সোশ্যাল মিডিয়া বলতে তখন ছিল ইয়াহু ম্যাসেন্জার। কম্পিউটার তখন সব জাগায় খুব একটা ছিল না। মোবাইল সবে দু একজনের হাতে এসেছে। আদির মোবাইল ছিল "নোকিয়া ১১১০"। সন্ধ্যে বেলা আদি কম্পিউটার নিয়ে বসে আছে পাশে মোবাইলটা রাখা। হটাৎ একটা কল এলো। আন নোন নম্বর যেটা মোবাইলে সেভ ছিল না। আদি ফোনটা রিসিভ করলো ওপাশে একটা মিষ্টি মেয়ের গলার শব্দ। আপনি কে ? আদি গলার শব্দ শুনে বুঝতে পেরেছে একটা বাচ্চা মেয়ের গলার শব্দ। আদি উত্তর দিলো তুমি আমাকে চেনো না ফোন করেছো কেন ? মেয়েটি বললো আমার দাদার মোবাইল আমার মোবাইল নেই। আমি এমনি অনেক নম্বর বানিয়ে ফোন করে দেখছি কার সাথে পরিচয় হয়। আদি বললো বাহ্ বেশ বদমাশি বুদ্ধি তো তোমার। ওপাশ থেকে খিল খিল করে হাসি ভেসে এলো। আদি বললো রাখি তাহলে ? মেয়েটি বললো কেন একটু কথা বললে কি ক্ষতি হবে ? হতে পারে আমি না হয় চিনি না। আদি বললো আমি কাজ করছি ব্যাস্ত আছি নম্বর টা সেভ করে রাখো পরে কল কোরো কেমন। মেয়েটি বললো আচ্ছা আমার নাম রিমি আমি কলকাতায় খায়দায় থাকি ওকে টাটা পরে কথা হবে বলে ফোনটা কেটে দিলো। আদি কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে বসে ভাবতে লাগলো এটা আবার কি ? কে এই মেয়ে এতো সুন্দর গলার শব্দ এতো সহজ সরল কে এই মেয়ে। জানা সোনা কেউ বদমাশি করছে না তো ? যাই হোক আদি তার নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। সেদিন কেটে গেলেও পরের দিন আদির মাথায় মেয়েটির কোনো কিছুই মনে পড়েনি সে তার কাজেই ব্যাস্ত জীবনের সংগ্রামে। তিনদিন বাদে আবার সেই সময় ফোন। নম্বর টা মাথায় ছিল না আদির। আর সে সেটা সেভ করেও রাখেনি। ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ও পাস থেকে রিমির গলার শব্দ। আমি রিমি তুমি আমাকে ফোন করোনি কেন ? আদি বললো আমি তোমাকে ভুলেই গেছি আর যদি মনেও রাখতাম তাহলে কি করে ফোন করতাম। তুমি বলেছিলে দাদার ফোন থেকে বদমাশি করছো তোমার ফোন নয় এটা। আমি যদি ফোন করতাম তোমার দাদা ধরতো। রিমি বললো দাদা ধরে আমাকে দিতো তাতে কি হয়েছে ? আদি বললো দাদা সব সময় বাড়িতে তোমার পাশেই থাকবে তার তো কোনো মানে নেই। ওটা করা যায় না। রিমি বললো গুড বয়, এই জন্য তো আমি তোমাকে ফোন করলাম। জানো আমি এমন ভাবে ১০ টা ছেলের সাথে আর ৫ তা মতন লোকের সাথে কথা বলেছি। আর ৩ চারটে মেয়ের সাথেও কথা হয়েছে। মেয়ে গুলো ফোন করে নি কিন্তু লোক গুলো আর ছেলে গুলো অনেক বার কল করেছে দাদা আমাকে খুব বকেছে। আমি বলেছি কেটে দে বলে দে ও বাড়িতে নেই। একমাত্র তুমি কল করোনি আর তোমার নম্বরটা আমি আমার ইতিহাস বইয়ের পাতার উপরে লিখে রেখেছিলাম এখন পড়তে বসে নম্বর টা চোখে পড়তেই দাদার কাছে মোবাইল টা চেয়ে তোমাকে কল করছি। আদি বললো আচ্ছা রিমি তুমি কোন ক্লাসে ? রিমি জানালো ক্লাস ৯। আদি বুঝলো ভীষণ ছোট একটা মেয়ে। কিন্তু খুব বদমাস তো। আদি বললো মন দিয়ে পড়াশুনো কারো এমন দুষ্টুমি করতে নেই। রিমি বললো তুমি আমাকে বকছো ? আদি বললো না না বকছি না সামনে মাধ্যমিক এখন এসব করে সময় নষ্ট করো না। জীবনে অনেক সংগ্রাম, মানুষের জীবন তাকে নিজেকেই গড়তে হয়। রিমি বললো আমি পড়াশুনোয় একদম ভালো না তবে কোনো দিন ফেল করিনি। পাস করে যাই। বাবা খুব বকে দাদা ও খুব বকে শুধু মা ভালোবাসে। আদি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। একটু হেসে বললো বুঝলাম। বকবেই তো বোঝাই যাচ্ছে ভীষণ আদরের বাঁদর মেয়ে। রিমি বললো আমাকে বাঁদর বললে ? তুমিও পড়াশুনোয় ভালো না। লিঙ্গ জানো না। আদি ভাবছে এ কি দুষ্টু মেয়ে রে বাবা। আদি বললো মানলাম তুমি ঠিক বলেছো আমি পড়াশুনোয় ভালো না তবে এটা বুঝলাম আমার থেকে তুমি ভালো। রিমি খিল খিল করে হেসে উঠলো। ভীষণ ভালো লাগছিলো আদির। আজ আদি চাইছিলো না ফোনটা কেটে দিতে। কিন্তু রিমি বললো আজ রাখি তোমার কথা শুনবো মন দিয়ে পড়াশুনো করবো। আদি বললো গুড গার্ল রাখো পড়াশুনোয় মন দাও। রিমি ফোনটা কেটে দিলো। আজ আদি ভাবছে রিমি আবার ফোন করবে তো ? কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভতি আদিকে গ্রাস করে নিলো। আবারো ভাবলো মেয়েটা আবার ফোন করবে তো ? আর যদি না করে তাহলে আদির সাথে আর তো যোগ যোগ হবে না। কারণ আদি তো ফোন করতে পারবে না। ফোনটা তো রিমির না। কি হবে তাহলে ? এই সব ভাবতে ভাবতে আদির বর্তমান জীবন, তার সংসার, তার কাজ, সব ভুলে গেলো। একটা অদ্ভুত অনুভূতিতে ও নিজেকে হারিয়ে ফেললো। আদি নম্বরটা সেভ করে রাখলো। যদি আবার ফোন আসে তাহলে যাতে বুঝতে পারে রিমি ফোন করেছে। সাত দিন কেটে গেলো রিমির ফোন নেই। সাল ২০০২ আদি তখন সাংসারিক অনেক ঝামেলা অশান্তিতে জর্জরিত। প্রতিটা দিন লুকিয়ে চোখের জল ফেলতে হচ্ছে । জীবনটা কেমন যেন পুরো শেষ। এমন পরিস্থিতিতে কি করবে কিছুই বুঝে পাচ্ছে না। একদিন ভীষণ যন্ত্রনা নিয়ে বসে আছে কম্পিউটার এর সামনে। হটাৎ রিমির ফোন। আদি ফোনটা রিসিভ করেই বলে উঠলো রিমি তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে ? আমি তোমার ফোনের অপেক্ষা করছিলাম। রিমি বললো হুমম আমিও অনেক ভাবছিলাম। জানো আমার বন্ধুদের সবার বয়ফ্রেইন্ড আছে আমার নেই। আদি বললো কেন নেই ? আর নেই তো খুব ভালো। এখন এসবে জড়িও না। জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। রিমি বললো আমি কিন্তু আমার বন্ধুদের জানিয়ে দিয়েছি আমার বয়ফ্রেইন্ড আছে। আদি বললো কেন মিথ্যে বললে ? রিমি বললো মিথ্যে কোথায় বললাম আমি তো তোমার কথা বলেছি। আদির মাথায় বাজ পড়লো। আদি বিবাহিত, রিমিকে জানানো দরকার। কিন্তু পাপ বা কর্মীক কোনো সম্পর্কের কারণে হয়তো আদি সেই পাপ টা করেই বসলো। আদি জানাতে পারলো না ও বিবাহিত। আদিকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না ও বিবাহিত। এতো অল্প বয়সে কোনো ছেলের বিয়ে হয় না। নিজে বিবাহিত বলতে না পেরে ফোন টা কেটে দিলো। তার পর রিমি অনেক বার কল করেছে আদি ফোনটা ধরেনি। পরের দিন কালীপুজো। সকালে রিমির আবার ফোন। রিমির ফোনটা ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে ফোনটা ধরেই ফেললো। ওপাশে রিমির প্রশ্ন কাল ফোন টা কেটে দিলে কেন ? আর তার পর আর ফোন করলে না কেন ? আদি আবারো একটা মিথ্যে কথা বললো , মা এসে গেছিলো। আমার মা ভীষণ রাগী। আমাকে সব সময় নজরে নজরে রাখে। রিমি বললো ও বুঝলাম। রিমি বললো আচ্ছা আমি একটা আবদার করবো আজ, রাখবে ? আদি জানতে চাইলো কি বলো। রিমি বললো আজ বিকেলে দেখা করবে ? সত্যি বলছি আমার তোমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। আদি কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার পাপ করে ফেললো। ও বললো ঠিক আছে তাই হবে। কিন্তু কথায় কখন আর তোমার কাছে মোবাইল না থাকলে খুঁজে পাবো কি ভাবে ?রিমি সব ডিটেইল দিয়ে দিলো। ওর অনেক লম্বা চুল, চুল খোলা থাকবে, ক্রিম কালার এর সালোয়ার পড়া থাকবে, ঠিক ব্যারাকপুরের কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে। তখন আদি সবে গাড়ি কিনেছে। আর একদম নতুন হাত, ড্রাইভিং সবে শেখা । ঠিক সন্ধ্যে ৬ টার সময় গাড়ির চাবিটা নিয়ে। বেরিয়ে পড়লো। জাগা মতন পৌঁছতেই আদি রিমিকে দেখতে পেলো। আদি রিমি কে দেখে তো অবাক। এতো সুন্দর দেখতে ? আর ও তো ভীষণ ছোটো একটা মেয়ে। রিমি ও আদিকে দেখে এমন ভাবে তাকালো যে মনে হলো রিমিও আদিকে দেখে বেজায় খুশি। রিমি বললো অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছি। আদি বললো আমি বেড়িয়েছি অনেক আগে রেলগেটে এতো জ্যাম ছিল যে দেরি হয়ে গেলো। রিমি বললো দেখেছো নম্বর বানিয়ে কি ভাবে একটা মানুষ খুঁজে বার করেছি। আদি বললো কিন্তু লাভ ? রিমি বললো লাভ লোকসান জানি না। তুমি কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না কি আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে ? তোমার গাড়ি ও আছে বলো নি তো। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বাসে আসছো। আদি বললো গাড়ি আছে এটা বলার কি আছে ? আছে তাই নিয়ে চলে এলাম। এস বলে রিমিকে দরজা খুলে গাড়িতে বসতে দিলো। গাড়িতে যেতে যেতে রিমিকে দেখে ভীষণ ভালো লাগছিলো আদির। গল্প শুরু হলো রিমির পড়াশুনো স্কুল বন্ধু এই সব নিয়ে। বাড়িতে কে কে আছে এর আগে কোনো ছেলের সাথে রিমির যোগ যোগ হয়েছে কি না। কেউ ওকে I LOVE YOU বলেছে এই সব। প্রথম দিন বেশি ঘোরা ঘুরি না করে আদি ওকে খড়দা ছেড়ে দিয়ে এলো। বাড়ি ফিরে আদি ভাবছে ওর জীবনে এটা কি ঘটতে চলেছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। এটা বেশি দূর এগোলে ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে আদির চোখে জল গড়িয়ে এলো। একটা শিশু মন এই সময়টা মেয়েদের মন খুব সংবেদনসীল হয়। কি করবে আদি। আদি যে রিমির চোখে প্রেম দেখেছে সেই প্রেম কে কি করে উপেক্ষা করবে?ঈশ্বরের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর চাইছে এটা তোমার কেমন খেলা ? তাহলে কি ঈশ্বর মেয়েটাকে বিপদে ফেলতে এই যোগ যোগ না কি ওর ভালো, নিজের ভালো, কোনটা ? এই সব ভাবতে ভাবতে আদির ঘুম হয় না রাতে। পরের দিন ঠিক বিকেল ৫ টায় রিমির ফোন। রিমির প্রথম প্রশ্ন আমাকে তোমার ভালো লাগে নি ? আদি : কে বললো ভালো লাগেনি ? তুমি তো অসাধারণ সুন্দর আমি তোমার কাছে কিছুই না। রিমি বললো তাহলে বললে না তো কবে আবার দেখা করবে। আদি একটু থমকে কি উত্তর দেবে ভাবতে ভাবতে বলে ফেললো তুমি ডাকলেই চলে যাবো। কথা হলো তিনদিন পর ও আবার দেখা করতে চায়। তবে আদি যেখানে ওকে নাবিয়ে দিয়ে এসেছিল সেখানে ও থাকবে। শুরু হলো এই দেখা করা ঘোরা ঘুরির এক চূড়ান্ত আকর্ষণ। সেদিন আদি গিয়ে রিমিকে একটা দামি মোবাইল কিনে দিয়ে বললো আজ থেকে এটা তোমার ফোন আমাদের কথা বলতে সুবিধে হবে। শুরু হলো প্রতি দিন ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করা। সামনে রিমির BIRTH DAY ও অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে ওই দিনটা ও আদির সাথে কাটাবে। ওরা দেখা করলো কিন্তু আদি কোনো গিফট নিয়ে যায় নি, কিছু না। রিমির সাথে দেখা করার পর আদি বললো এই যে BIRTH DAY গার্ল আমি যে তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসি নি। রিমি বললো তুমিই আমার সব থেকে বড় গিফট। আদি পিছন ফিরে ঘুরে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললো। আর ভাবতে লাগলো এটা ও কি করছে। এই মেয়েটা কে ঠকাচ্ছে কেন। হটাৎ রিমি সামনে এসে বললো একি তুমি কাঁদছো কেন। কি হয়েছে। হাত দিয়ে আদির চোখের জল মুছিয়ে দিলো রিমি। আদি ঠিক সেই সময় ঠিক করে নিলো এই সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে যে ভাবেই হোক। আদি রিমিকে গাড়িতে বসিয়ে একটা ভালো সোনার দোকান খুঁজতে লাগলো। দোকানে গিয়ে রিমিকে একটা রিং কিনে পরিয়ে দিয়ে বললো এটা কোনো দিন আঙ্গুল থেকে খুলবে না। রিমি বললো এটা কি এনগেজমেন্ট রিং ? আদি বললো না এটা আমার দেওয়া BIRTH DAY গিফট। আদি রিমিকে ছেড়ে বাড়ি ফিরে এলো এসে ভাবতে লাগলো কিছু একটা উপায় বার করে ওর পাশ থেকে সরে আসতে হবে। কি করবে কি ভাবে করবে। এর পর ও অনেক বার ওরা দেখা করেছে। মঙ্গলপান্ডে ঘাটে, রেস্ট্রুরেন্টে, অনেক জাগায় ঘুরেছে খাওয়া দাওয়া করেছে আর রিমিকে শুধু পড়াশুনো ঠিক করে করতে হবে, নিজের পায় দাঁড়াতে হবে, এই সব নিয়ে শুধু রিমিকে প্রেরণা দেওয়া ছাড়া আদির আর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু মাথায় শুধু একমাত্র চিন্তা এই শিশু মনের মেয়েটার এই অবুঝ প্রেমের হাত থেকে নিজেকে সরাবে কি ভাবে ? কি বলে ? ও তো খুব কষ্ট পাবে আর ওর কষ্টের পাপ ঘুরে অদিকেই শেষ করে ফেলবে। সামনে সরস্বতী পুজো, ওই দিন রিমি খুব সাজবে আর আমার সাথে সারাদিন ঘুরবে বায়না ধরে বসলো। সরস্বতী পুজোর দিন রিমি ওর সাজগোজ করতে গিয়ে আসতে দেরি করে ফেললো। আদি একটা ছুতো পেলো শুরু করলো ঝামেলা অশান্তি। রিমি কেঁদে ফেললো। আদির বুকের ভিতর টা চিরে গেলো। তার পর ওকে জানালো যে ওর মাথা খারাপ আছে কারণ ওর মা ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে আর মায়ের কথার বাইরে আদি বেরোতে পারবে না। মা ভীষণ রাগী। রিমি হেসে বললো ও এই ব্যাপার তাই এতো রাগ তোমার। তাতে কি হয়েছে আমাদের বিয়ে করতেই হবে তার কি মানে আছে। বলে আদির গালে একটা কিস করে দিলো। বললো আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে হবে তবেই ভালোবাসা থাকবে এটা তোমায় কে বললো ?ক্লাস ৯ এ পড়া একটা মেয়ের মুখে এই কথা শুনে আদি তো অবাক। এবার কি করবে আদি। রিমি বললো আর রাগা রাগী কোরো না। আজ দিনটা ভালো ভাবে কাটুক না হলে আমার এই সাজের মানে কি ? রিমি আদিকে সেই মেয়ের নাম জিজ্ঞেস করলো যার সাথে আদির বিয়ে ঠিক হয়েছে। আদি একটা নাম বলেছিলো আজ সেই নাম টা আদির মনে নেই। কারণ সেটা এতটাই অপ্রাসঙ্গিক যে সেই নাম আদি আজ ভুলেই গেছে। হয়তো রিমির মনে আছে এর পর আদি আবারো দুদিন দেখা করেছে রিমির সাথে তাও রিমির ইচ্ছেতে তবে এবার রিমির ভিতর সেই প্রেমের চোখ আদি দেখতে পায় নি। রিমি এই দুদিন শুধু সেই মেয়ে কে নিয়ে প্রশ্নের বান ছুঁড়েছে আর আদি অসংখ মিথ্যে বলে বলে পাপ করেই গেছে। এর কর্মফল তো আদিকে পেতেই হবে। আসতে আসতে রিমির ফোন আসা বন্ধ হয়ে যায়। আদি একসময় রিমিকে ফোন করেও আর রিমিকে পায় নি। এদিকে আদির বিষয় রিমির বাড়িতে সব জানানো হয়ে গেছিলো মনে হয় বাড়ির সবার কথা শুনেই রিমি আদির সাথে যোগ যোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো। আদিও ঠিক করলো ফোন নম্বরটা চেঞ্জ করে ফেলবে। তাই করলো। এর পর আদির অনেক বড় জব অফার আসে। সেখানে চলে যায় আদি বাড়ির অশান্তি থামবার কোনো রকম পরিস্থিতি ছিল না। তিক্ত রক্তাক্ত জীবন এক সময় সুইসাইড এর ভাবনা আসে মনে। দাম্পত্য বিবাহিত জীবন তো ২১ বছরেই শেষ। আদি ঠিক করলো একজন জীবন সঙ্গী বা ভালো বন্ধু খুঁজে বার করবে যার জীবন আদির মতো নরক আর না হলে সুসাইড করবে। ২০০২ থেকে ২০১০ অবধি সময় লেগে গেলো এমন কাউকে খুঁজে পেতে। এর মাঝে অনেকেই আদির জীবনে এসেছে কিন্তু আদি কাউকে তার জীবনে জাগা দেয় নি। ২০১০ এ যে মানুষ টা এলো সে বিবাহিতা সুন্দর কিন্তু তার স্বভাব সঠিক নয়। আদি জানতো তার একাধিক পুরুষ মানুষের সাথে যোগাযোগ মেলা মেশা। তবুও ঈশ্বরের কোনো একটা আশীর্বাদ মনে করে ঠিক করলো এক সাথে পথ চলবো। আমিও বাঁচবো, তাকেও সুন্দর ভাবে বাঁচিয়ে রাখবো। আদি কথা দিয়েছিলো সে বেঁচে থাকতে তার কোনো সমস্যা হতে দেবে না। সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে পথ চলা শুরু। একটাই দাবি ছিল পুরোনো সব কিছু কে বর্জন করে ভালো মানুষ হয়ে থাকতে হবে সঠিক ভাবে সংসারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে নিজের পায় দাঁড়াতে হবে। নিজের স্বাধীনতায় কাউকে হাত দিতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে সংসারে টাকা দিতে হবে। নিজের সেভিংস করতে হবে। নিজের টাকা ফালতু খরচ না করে জমাতে হবে। দরকার হলে নিজের একটা ফ্লাট কিনতে হবে। আর এর সব কিছুর পিছনে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো। আমি পাশে থাকবো যত দিন বেঁচে থাকবো। সেই মতো পথ চলা শুরু। আদির কথা মতন হয়তো ৪ বছর সব ঠিক ঠাক ছিল। কিন্তু কুকুরের গু খাওয়া স্বভাব কি যায় ? আদির পিছনে সেই গু খাওয়া আবার শুরু। আদি বিশ্বাস করতো খুব। তাই কখনো ফোন বা কোনো কিছু ঘেটে না দেখলেও বুঝতে পারতো সব কিছু। ঝামেলা হতো বারণ করতো, ভালো রাখতে চেষ্টা করতো। খুব বোঝাতো, আর যত বাঁধা দিতো এসব করতে তার কাছে ধীরে ধীরে আদি একটা টক্সিক মানুষ হয়ে উঠতে লাগলো। ঠিক তাই দিন গড়াতে গড়াতে ২০১৭ তে আদি অনেক কিছু বুঝতে পারে ২০১৯ এ পুরো পুরি বুঝতে পারে। ২০২১ এ আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি। সব কিছু আদির সামনে পরিষ্কার এক চোর, মাথায় চুল নেই, দাঁত নকল, ভূয়া ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, এর প্রেমে জড়িয়ে আদিকে লাথি মেরে বেরিয়ে গেলো। যত দিন আদির সাথে সম্পর্ক ছিল সংসার পরিবার সন্তান সব ঠিক ছিল কিন্তু যখন আদির থেকে বেরিয়ে গেলো আদি তো কষ্ট পেলোই সাথে তার পরিবার সব বুঝতে পেরে সংসারে এমন পরিস্থিতি তৈরী হলো যে তাকেও বাধ্য হয়ে সংসার সন্তান সব ছেড়ে কোর্টে দৌড়োতে হলো ডিভোর্স এর জন্য। সেখানেও খরচের টাকা জোগাড় করতে আদির দেওয়া হীরের উপহার বিক্রি করতে হয়েছে কি অদ্ভুত তাই না ? আর সেই প্রেমিক বেশ কিছু দিন তাকে ব্যবহার করে তার ক্রেডিট কার্ড থেকে ২ লাখের বেশি লোন তুলে কেটে পড়লো। আসলে আদি থাকা কালীন ওরা দুজনে মিলে যে ব্যবসা করতো তাতে আদির ক্রেডিট কার্ড আর তার ক্রেডিট কার্ড দুটোই ব্যবহার হতো। আদি সময় মতো সব EMI মেটাতো সিভিল স্কোর অনেক হাই ছিল। ব্যাঙ্ক থেকে বড় বড় লোন এর অফার আসতো। আর তার প্রেমিক সেই অফার কেই কাজে লাগিয়ে টাকা তুলে নিয়ে কেটে পড়ে। যাই হোক কেটে গেলো অনেক গুলো বছর ২০২১ থেকে আদি আবার নতুন ভাবে নিজেকে তৈরী করলো। কিন্তু ভালোবাসা হীন, বিশ্বাস হীন, একটা নতুন মানুষ। ২০২৩ তে সে আবার আদিকে সেই মুরগি ভেবে আবার যোগাযোগ করে। আদি ফিরিয়ে দেয় নি আবারো ভাবলো এবার মনে হয় নিজেকে চেঞ্জ করে ফিরে এসেছে তাই সে আবারো চেয়েছিলো পাশে থাকতে । কিন্তু আদি যেটা বুঝলো সে আগের থেকে আরো অনেক বেশি পুরুষ মানুষের সাথে যুক্ত। আর সেই সব কিছুর একটা ভদ্র সামাজিক নাম দিয়ে আদিকে অপসন হিসেবে ব্যাবহার সেই আগের গেম খেলবে। কিন্তু আদি আগে মূর্খ ছিল আজ আর মূর্খ নেই। তাই ২০২৫ এর আগে আবার সেই আগের মতো বারণ করতে গিয়ে ঝামেলা। আর এবার আদি নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু রিমির কি হলো সে কি আদিকে ভালোবাসে সে কি আদিকে ভুলে গেলো ? না ২০২৩ এ আদির BIRTH DAY তে আদির মোবাইলে একটা ম্যাসেজ ঢোকে হ্যাপি BIRTH DAY ভালো থেকো। আদি ভেবেছিলো এটা আবার কে ? ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষনের মধ্যে ফোন এলো। ওপাশে রিমির সেই মিষ্টি শব্দ। কেমন আছো BIRTH DAY বয় ? " মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দা ডে "। আদি তো অবাক। জিজ্ঞেস করলো আমার নম্বর পেলে কোথায় ? তুমি কেমন আছো ? রিমি উত্তর দিলো আমি এখন এক সন্তানের মা। হাসব্যান্ডের কথা জানালো আর একটা থ্যাংকস দিয়ে বললো তুমি আমার প্রথম প্রেম তোমাকে কি ভোলা যায় ? আমি তোমাকে প্রতিটা দিন মনে রেখেছি আজ এই সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়াতে ইন্টারনেট এর দুনিয়াতে তোমার নম্বর খুঁজে পাওয়াটা খুব কঠিন কি ? তবে তোমাকে মনে রেখেছি কেন জানো ?তুমি ইচ্ছে করলে আমার অনেক ক্ষতি করতে পারতে। আমাকে নষ্ট করতে পারতে। কিন্তু তুমি শিখিয়েছো নিজের পায় দাঁড়াতে। মন দিয়ে পড়াশুনো করতে। তোমার ভালোবাসায় আমি খুব ভালো রেজাল্ট করেছি। নিজের পায় দাঁড়িয়েছি তোমার সব কথা মতন নিজেকে গড়ে তুলেছি। আমি ভালো আছি গো তুমি আমার মনে আছো। কিন্তু মনেই থেকে যাবে, যোগ যোগ থাকবে না। কারণ আজ আমার সংসার, স্বামী, সন্তান আছে। আদি জিজ্ঞেস করলো আমার দেওয়া রিং টা আঙুলে আছে ? রিমি বললো না। ওটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। তাই বিয়ের সময় খুলে মাকে দিয়ে বলেছি মা এটা খুব যত্ন করে রেখো। রিমির এই কথা গুলো আদির জীবনে পাওয়া অনেক বড় প্রাপ্তি। কিন্তু তবুও ,পাপ বাপকেও ছাড়ে না। রিমির কাছে যাওয়া ওকে সব লুকিয়ে কিছুদিন ওর সাথে কাটানো সময় ওর বুক ফাটা কষ্ট তার কর্মফল তো পেতেই হবে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা কষ্ট আদি কেন পাবে না ? কর্মফল যাবে কোথায় ?


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama