ভালো থেকো
ভালো থেকো
অরূপের ভিতর টা যে ভাবে রক্তাক্ত হচ্ছিলো তাতে অরূপ দেখতে পারছিলো সেই রক্তে তৃপ্তি তার চুল ভিজিয়ে নতুনের পথে নতুন মানুষকে আলিঙ্গন করছে।
বুড়ো তো কি হয়েছে বুড়োদের ভালোবেসে লাভ আছে। মেলায় অরূপ আর তৃপ্তি ঘুরছিলো। হটাৎ একটি সুন্দরী মেয়ে আর এক অতি বয়স্ক লোক কে খুব অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দেখে অরূপ তৃপ্তিকে বলে ফেলল দেখো সোনা কত অল্প বয়েসের একটি মেয়ে এই বুড়োটার সাথে প্রেম করছে। তখন তৃপ্তির এমন উত্তরে অরূপ প্রথোম সন্দেহ করে। তাহলে তৃপ্তির মনে কি শুধু লাভের চিন্তা ?
ভালোবাসা কি শুধু লাভের উপর দাঁড়িয়ে হয় ? তৃপ্তিকে অরূপ পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু ইদানিং তৃপ্তির কথা বা আচার আচরণ দৃষ্টিভঙ্গি অরূপকে ভীষণ ভাবায়। সব সময় অরূপের তৃপ্তিকে হারিয়ে ফেলার একটা ভয়। আর এই ভয় টা অরূপকে শিখিয়েছে তৃপ্তিকে আরো বেশি ভালোবাসতে। ও কিছুতেই তৃপ্তিকে হারাতে পারবে না। অরূপের জীবন শেষ হয়ে যাবে।
তৃপ্তির ফেইসবুক একাউন্ট অরূপ খুলে দিয়েছিলো দীর্ঘ বছর সেই একাউন্টের ID পাসওয়ার্ড অরূপের কাছেও ছিল তাই তৃপ্তি কখন কার সাথে কি কথা বলছে কে তৃপ্তিকে কি বলছে অরূপ সব জানতো। চিন্তার কারণ নেই তবুও ভয় পিছন ছাড়ছে না।
তৃপ্তির সব কিছু অরূপের হাতে ওর ড্রেস ওর গয়না ওর অসুখ বিসুখ ব্যাঙ্ক একাউন্ট সব। আসলে তৃপ্তির ব্যাংকে ১ টাকাও জমা হলে অরূপের থেকেই হয়। ওর কোনো ড্রেস অরূপের চোখে ভালো লাগলে অরূপ তৃপ্তির বারণ শুনবে না সেটা কিনেই ছাড়বে। কোথাও কোনো গয়না চোখে পড়লে অরূপ তৃপ্তির জন্য আগে কিনবে। তৃপ্তি ই অরূপের সবকিছু। অরূপ বেঁচে থাকে শুধু তৃপ্তির অনুভূতিতে।
হটাৎ একদিন বাইকে পিছন থেকে তৃপ্তি বলে ফেললো আমার ফেইসবুক একাউন্ট টা তো আমার একাউন্ট ওটার ID পাসওয়ার্ড তোমার কাছে থাকবে কেন ? অরূপ বলে এতো গুলো বছর তো আছে কোনো সমস্যা হয়েছে কি দিব্যি তো আছো। তৃপ্তি একটু রেগে গিয়েই বললো না ওটা তোমার কাছে থাকবে না
অরূপ বললো তুমি চেঞ্জ করে নিও সমস্যা কোথায়। আমার কাছে আছে বলে তোমার সমস্যা হলে চেঞ্জ করে নাও। সেদিন রাতেই ID পাসওয়ার্ড চেঞ্জ হয়ে গেলো। অরূপ বুঝলো আমার ভালোবাসা শেষ হবার এটাই প্রথম ধাপ। দীর্ঘ বছর আমি আগলে রেখেছি অনেক যত্ন করে যাকে তার অনেক কিছু চেঞ্জ হয়েছে এবার আর আমি ধরে রাখতে পারবো না।
সত্যি ই তাই অরূপ যাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতো অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো তার সব কিছু কেমন যেন পাল্টে গেছে। অনেক ম্যাসেজ অনেক কথা বলে সব সময় তৃপ্তিকে বোঝাতে বোঝাতে অরূপ ক্লান্ত। ওপাশ থেকে যে রিপ্লায় গুলো আসে তাতে অরূপ বুঝতে পারে কাকে কি বলছি বলে কোনো লাভ নেই। তৃপ্তি যা বলতো অরূপ তাই বিশ্বাস করতো। একদিন বন্ধু দের সাথে সিনেমায় গেলে অরূপ সারাদিনে ফোন করে দেখতো না সত্যি কি সে তার বন্ধুর সাথে সিনেমায় গেল না কি অন্য কোনো বয়ফ্রেইন্ড নিয়ে গেলো ? কারণ দরকার হতো না তৃপ্তি যেটা বলতো সেটাই সত্যি। এতটা বিশ্বাস ও স্বাধীনতায় তৃপ্তি কে আগলে রেখে ভালোবেসে যাওয়া অরূপ আজ ক্লান্ত শুধু মাত্র হারানোর ভয়।
একদিন অরূপ হটাৎ দেখে তৃপ্তির খুব কাছের বান্ধবী একটা স্টেটাস দিয়েছে রাস্তার ধরে তৃপ্তি আর ওর বান্ধবী বসে আছে। সদ্য তোলা ছবি আর স্টেটাস পোস্ট দেখে অরূপ তৃপ্তি কে ফোন করে জিজ্ঞেস করে তুমি কোথায় ? তৃপ্তি বললো ঘরে শুয়ে আছি। অরূপ রাস্তার গাড়ির শব্দ ও শুনতে পায়। কিন্তু কিছু না বলে বিশ্বাস করে যে তৃপ্তি ঘরে শুয়ে।
একদিন অরূপ একটা ফেইসবুক গ্ৰুপে এক দাদা তার ভাইদের নিয়ে জমিয়ে আড্ডার পোস্ট দেখতে পায়। সেই পোস্ট এর সমস্ত কমেন্টস পরে দেখতে পায় তৃপ্তিও সেখানে আছে। আর সেই দাদা কে জড়িয়ে তৃপ্তি কে নিয়ে ভাই দেড় গল্প আলাপ জমিয়ে চলছে। ঠিক কিছু আগেই অরূপ তৃপ্তির জন্য দুটো ডায়মন্ড এর গয়না অর্ডার করেছে অনলাইন থেকে।
অরূপ বুঝতে পারছে না কি চলছে তার পিছনে। অরূপ ফোন করে তৃপ্তিকে জানায় গয়নার কথা। জানিয়ে দিলো যে অনলাইন অর্ডার করেছি তোমার বাড়িতেই যাবে তোমার বাড়ির এড্রেসে অর্ডার করেছি। তৃপ্তি বললো ঠিক আছে আমি এখন ব্যাস্ত পরে কথা বলছি। অরূপ ফোন রেখে দেয়।
সংগীতা নামের একটা প্রোফাইল বানিয়ে সেই দাদার এক গ্রুপ বন্ধু ভাইকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় অরূপ। রিকোয়েস্ট টা গ্রহণ হয়ে গেলে তার সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিতে শুরু করে অরূপ। দু দিনে সেই দাদার ভাই যে সদ্য বিয়ে করেছে সে সংগীতার প্রেমে পরে যায়। বলতে শুরু করে আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে তুমি আমার বন্ধু হবে। বন্ধু মানে বুঝতে সংগীতার মানে অরূপের বুঝতে দেরি হয় না।
সাথে সাথে অরূপ মানে সংগীতা বলে ফেলে তোমার আমাকে ভালো লাগে কিন্তু তুমি কি জানো আমি তোমার সাথে কেন বন্ধুত্ব করেছি ? সে জিজ্ঞেস করে কেন। তৃপ্তি বলে আমার তোমার ওই দাদা কে ভালো লাগে আমি ওনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি কিন্তু আমায় বন্ধু করেন নি। তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছি।
সাথে সাথে সেই সেই ভাই বলে দিলো ওনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে লাভ নেই উনি তৃপ্তি মামনির প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছে। দুজনে চুটিয়ে প্রেম করছে অনেক দিন। ওনার পাত্তা তুমি পাবে না।
অরূপের মাথায় বাঁজ পড়লো। ভীষণ আর্তনাদে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে বাড়ির ছাদে চলে গেলো। বাড়ির ছাদে গড়িয়ে শুয়ে ভীষণ কাঁদতে লাগলো। অরূপের সেই বুক ফাটা কান্নায় হয়তো অরূপের সারা পাড়া কেঁপে উঠেছিল কিন্তু তৃপ্তির মনে একটুও তার অনুভূতি স্পর্শ করেনি
অরূপ তৃপ্তি কে ফোন করে ব্যাপার টা জানায়। তৃপ্তি বলে সব মিথ্যে কথা তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছে। এমন কিছু ব্যাপার নেই। দাড়াও আমি ওকে ধরছি এতো বারো মিথ্যে কি করে বললো আমি জিজ্ঞেস করবো।
অরূপ বিশ্বাস করলো কারণ ও যে তৃপ্তিকেই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে তাই অরূপ শান্ত হলো। আর বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আবার ভাবতে লাগলো না এটা হতে পারে না। এমন হতেই পারে না। ছেলেটা মিথ্যে বলছে।
তৃপ্তি ছেলেটাকে ফোন করে বিষয় টা নিয়ে অনেক বকা বকি করে। সেই গ্রুপের সবাইকে জানিয়ে দিলো গ্রুপের সেই দাদা জানতে চাইলো আমাকে নিয়ে প্রশ্ন উনি করলেন কেন ? আমার কথা বলতে হবে। পরের দিন তৃপ্তি অরুপকে ফোন করে বললো ওই দাদা তোমার সাথে কথা বলবে সবাই কনফারেন্স কল এ থাকবে তুমি কিন্তু কোনো বাজে কথা বলবে না। তৃপ্তি শিখিয়ে দিলো অরুপকে কি বলতে হবে।
ফোন কল এলো। সেই দাদা জিজ্ঞেস করলো তৃপ্তি আপনার ক হয়। অরূপ বললো ওর সাথে আমার অনেক দিনের ব্যাবসায়ীক সম্পর্ক। আমি ই ওর সব কিছু। ওর প্রোফাইল এ আপনাকে দেখেছি কিছু কমেন্টস আমার মনে সন্দেহ এনেছে তাই। সেই দাদা বললো আপনি সন্দেহ করার কে ?
তৃপ্তির সাথে আমার কি সম্পর্ক আপনি জানার কে ? অরূপ বলে এতো গুলো বছর আমি যাকে আগলে রেখেছি তারা ভালো মন্দ আমি দেখবো না।
সেই দাদা বললো না। আপনি ওর সব কিছু মানে , এই তৃপ্তি উনি কি বলছে উনি কে ? তৃপ্তি ওপাশ থেকে বললো উনি সত্যি বলছেন আমার সব কিছু উনি এতো দিন দেখে এসেছে। সেই দাদা আর তার ভাইদের দল তো অরূপ কে এই মারে কি সেই মারে সবাই রেগে আগুন। অরূপ নির্বাক। ফোন টা কাট হয়ে গেলো। তৃপ্তির ফোন এলো অরুপকে বললো, দিলে তো আমাকে বদনাম করে সবাই কি বাজে ভাবলো। আর দাদা ও আমাকে আনফ্রেইন্ড করে দিলো।
অরূপ তৃপ্তিকে কি বোঝাবে সে নিজেই সব নাটক বুঝে আসল সত্যি টা বুঝে ফেলেছে। তাও বিশ্বাস ছাড়তে পারছে না। পরের দিন তৃপ্তির সাথে দেখা করে বুঝলো তৃপ্তি পুরো চেঞ্জ ওর ভিতর অনেক আনন্দ। খোলা মাঠে আপন মনে নাচ করছে। অরূপ যা বলছে সব ধুর বলে উড়িয়ে দিচ্ছে
মানে কিছুই হয় নি সব ঠিক আছে। আসলে ওর ভিতর টা সেই দাদার প্রেমে এতটাই মেতে যে ওর শরীরে তখন শুধু নৃত্য। অরূপ সব বুঝে নিয়েও
নিজেকে বিশ্বাসের ভরসায় সুখে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অরূপ একবার বলে উঠলো আমার মতন তোমাকে কেউ ভালোবাসবে না। তৃপ্তি নাচতে নাচতে বললো ওটাই আমার একবার খুব দেখার ইচ্ছে যে আমাকে অন্য কেউ ভালোবাসে কি না। অরূপের ভিতর টা যে ভাবে রক্তাক্ত হচ্ছিলো তাতে অরূপ দেখতে পারছিলো সেই রক্তে তৃপ্তি তার চুল ভিজিয়ে নতুনের পথে নতুন মানুষকে আলিঙ্গন করছে।
তৃপ্তির ডায়মন্ড এর গয়না গুলো নিয়ে কুরিয়ার বয় বাড়িতে এসে তৃপ্তিকে পায় নি। সেকেন্ড নম্বর টা অরূপের দেওয়া ছিল। কুরিয়ার বয় অরুপকে ফোন করে। জানায় ম্যাডাম বাড়িতে নেই। অরূপ বলে দাঁড়ান আমি ফোন করে দেখছি। অরূপ তৃপ্তিকে ফোন করে। বুঝতে পারলো তৃপ্তি সেই দাদার সাথেই আছে রাস্তায়। তৃপ্তি বলে আমি বাড়ি ফিরছি ফিরে নিচ্ছি। অরূপ কুরিয়ার বই কে বলে দিলো একটু দাঁড়ান ও বাড়ি আসছে
তার কিছু দিন বাদে সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলে ফেইসবুকে অনেক গুলো নোটিফিকেশন দেখে ফেইসবুক টা ওপেন করে দেখে একটি মেয়ে অরূপের পোস্টে এসে কমেন্টস করেছে আপনার মাথার উপর কালো মেঘ। আপনার গার্লফ্রেইন্ড আপনার নেই আপনি সেটা জানেন ? ...অরূপ সেই মেয়েটার ইনবক্স এ গিয়ে কথা বলে। সে তার কথা বিশ্বাস করতে চায় না।
অরূপ তৃপ্তি কে ফোন করে সব জানায়। তৃপ্তি বলে তুমি আজ আমার সাথে দেখ কারো তো আজ এটার একটা শেষ ঘটাবো। অরূপ দেখা করলো। তৃপ্তি জানিয়ে দিলো তোমার সাথে আজ থেকে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। দীর্ঘ বছর পর মনে হয়েছে অরূপের সাথে সম্পর্ক টা অবৈধ। সবাই জানে অরূপ তৃপ্তির অফিস এর বস। তাই একজন বস এর সাথে সম্পর্ক রাখা টা ঠিক নয়। এতো গুলো বছর এটা মনে হয় নি আজ মনে হলো ?
অরূপ বুক ফাটা কান্নায় জিজ্ঞেস করলো আজ থেকে তুমি অন্যের হয়ে যাবে। তৃপ্তির স্পষ্ট উত্তর হা আমি অন্যের হয়ে গেছি। আমাকে দিয়ে আসলে দিয়ে এস না হলে তুমি চলে যাও আমি একা বাড়ি চলে যাবো। অরূপ তৃপ্তি কে দিয়ে আসে। একবার রাস্তায় ভাবে বাইক টা কোনো ট্রাকের সাথে ধাক্কা মেরে জীবন টা শেষ করে দিতে। কিছু ক্ষণ সেই রাস্তায় বসে থাকে। তার পর ভাবে ও সুখে থাকবে ও ভালো থাকবে এটাই তো আমি চেয়েছিলাম। ও যখন ভালো থাকবে ওর ভালো টা বেঁচে থেকে দেখি না।
দু বছর কি এক বছর অরূপের জানা নেই শুনেছে সেই দাদা নাকি অনেক করেছে এতো করেছে যে দীর্ঘ বহু বছরে অরূপ করতে পারে নি। তবে এতো করে লক্ষাধিক টাকা তৃপ্তির একাউন্ট থেকে লনে নিয়ে কেটে পড়েছে। আজ তৃপ্তি একা। অরূপ ও একা। অরূপ আজো তৃপ্তিকে ভালোবাসে তৃপ্তির অনুভূতিতে বাঁচে। সবার ভিতর তৃপ্তিকে দেখতে পায়। সব কিছুর মাঝে তৃপ্তিকে দেখতে পায়। প্রতিটা মুহূর্ত তৃপ্তি তার মনে রক্তে নিঃস্বাসে নিঃস্বাসে। আর তৃপ্তি নতুন মানুষ খোঁজে। অরূপ চায় এমন একটা মানুষ আসুক তৃপ্তির কাছে যে সে তৃপ্তিকে তার মতন ভালোবাসবে।
কিন্তু অরূপের মতো কেউ কি ভালোবাসতে পারবে ? যদি পারে অরূপ ভীষণ সুখী হবে।

