Adhiraj Biswas

Horror

4.1  

Adhiraj Biswas

Horror

শাস্তি

শাস্তি

3 mins
564


নিজের চেম্বারে এতক্ষণ বিমর্ষ হয়ে বসেছিলেন ডক্টর সেন, ওরফে ডক্টর হিমাদ্রী সেন। কলকাতার নামকরা একজন সার্জেন তিনি। আজ বিকালের পর থেকে একটার পর একটা অপারেশন করে গেছেন। সবকটাই সফল শুধু শেষের অপারেশনটা ছাড়া। অপারেশন টেবিলেই মারা গেছেন পেশেন্ট, যে কিনা তাঁর খুব কাছের বন্ধু কিঞ্জলের স্ত্রী। সেই কারণেই আরো বেশী ভেঙে পড়েছেন ডক্টর সেন। 

এমনসময় ডক্টর সেনের চেম্বারের দরজায় একটা টোকা পরলো।

-- কাম ইন

চেম্বারের দরজা খুলে একজন নার্স প্রবেশ করলেন ভিতরে। চেম্বারের ভিতরে আসার পর ডক্টর সেনকে উদ্দেশ্য করে সে প্রশ্ন করলো,

-- স্যার বাড়ি যাবেন না? অনেক রাত হয়েগেছে।

-- হ্যাঁ, এই যাবো। মনটা আজ ভালো নেই। কি থেকে কি হয়ে গেলো। বন্ধুর কাছে কি করে মুখ দেখাই।


কথাটা বলেই চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন ডক্টর সেন। নিজের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে চেম্বার থেকে বাইরে বেরোতেই তিনি দেখলেন ডক্টর রায় এগিয়ে আসছেন তাঁর চেম্বারের দিকে। ডক্টর রায় তাঁর থেকে বয়সে অনেক বড়। ডক্টর সেনকে দেখেই তিনি বলে উঠলেন,

-- তুমি বাড়ি যাও, এদিকটা আমি সামলে নিচ্ছি।

-- কিন্তু আমি যে!

-- ডক্টর সেন তুমি এক নামকরা সার্জেন, এই ভাবে ভেঙে পড়া তোমাকে মানায় না। পেশেন্ট এর অবস্থা এমনিতেও ভালো ছিলো না। বললাম তো তুমি যাও, আমি সামলে নেবো।


ডক্টর সেন আর কথা বাড়ালেন না, আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলেন লিফটের দিকে। লিফটে উঠে "G" বাটনটা চাপ দেওয়ার সাথে সাথেই ডক্টর সেনের মুখের ভাব পাল্টে গেলো। বিমর্ষ ভাবটা কেটে গিয়ে একটা ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো তাঁর মুখের কোনায়। নিজেই নিজেকে বাহবা দিলেন এতোক্ষণ এতো সুন্দর অভিনয় চালিয়ে যাবার জন্য। আসলে এতোদিন ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলো সে আর তাঁর বন্ধু কিঞ্জল।অনেকদিন থেকেই ডক্টর সেন আর কিঞ্জল অঙ্গ পাচার চক্রের সাথে জড়িত ছিলো। পিয়ালী যে দিন প্রথম জানতে পেরেছিলো সেটা, সেদিনই তাঁরা ঠিক করে ফেলেছিলো ওকে শেষ করে দেবে। তাঁরা দুজনেই চেয়েছিলো কাজটা এমনভাবে করতে, যাতে কেউ সন্দেহ না করে তাদের। তাই এরপর কয়েকদিন টানা পিয়ালীর সামনে অভিনয় করে গেছিলো কিঞ্জল, কাজেই চট করে কিঞ্জলকে বিশ্বাসও করে ফেলে পিয়ালী। কিন্তু তারপর থেকে এতোদিন ধরে পিয়ালীর শরীরে একটু একটু করে বিষ প্রয়োগ করে গেছে কিঞ্জল। কখনো খাবারের সাথে, কখনো জলের সাথে মিশিয়ে দিতো সেই বিষ। আস্তে আস্তে পিয়ালী অসুস্থ হতে শুরু করে, ব্যাস তারপর বাকি কাজটা শেষ করলো ডক্টর সেন। কেউ সন্দেহ করবে না ওদের, পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য ডক্টর সেনের ডাক্তারি বিদ্যাই যথেষ্ট। কথাগুলো চিন্তা করেই একটা শয়তানের হাসি হেঁসে উঠলো ডক্টর সেন।


ঠিক এমন সময় একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেলো লিফটটা। লিফটের ভিতরে জ্বলতে থাকা আলোটাও দপ দপ করতে করতে নিভে গেলো। ডক্টর সেন চিৎকার করে উঠলেন,

-- হেল্প! সিকিউরিটি হেল্প।


ডক্টর সেনের চিৎকার সেই বদ্ধ লিফটের ভিতরেই বদ্ধ হয়ে রইলো। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালাতেই চমকে উঠলো ডক্টর সেন। এ কাকে দেখছে সে? এতো পিয়ালী, ঠিক তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। অপারেশনের সময়ে যে পোশাক পরানো হয়েছিল পিয়ালীকে, সেই পোশাক পরেই দাঁড়িয়ে আছে সে। তাঁর চোখগুলোতে ভয়ঙ্কর এক প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। ডক্টর সেন ভয়ে পিছিয়ে গেলেন। লিফটের এক কোনায় গিয়ে চিৎকার করে উঠলেন,

-- এ হতে পারেনা, কিছুতেই হতে পারেনা। আ.. আ.. আমি নিজের হাতে....

কথা শেষ করতে পারলো না ডক্টর সেন, তার আগেই পিয়ালী চেপে ধরেছে তাঁর গলা। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ছটফট করছে ডক্টর সেন, তাও পিয়ালী ছাড়ছে না তাঁকে, পিয়ালীর হাত দুটো ক্রমশ আরো শক্ত হয়ে চেপে বসছে তাঁর গলায়। 


আস্তে আস্তে ছটফটানি থেমে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ডক্টর সেনের নিথর শরীরটা। আর মিলিয়ে গেলো পিয়ালীর আত্মা। ঠিক সেই সময়েই আবার লিফটটা চলতে শুরু করলো, আর সাথে সাথেই লিফটের আলোটা দপ করে জ্বলে উঠলো।


গ্রাউন্ড ফ্লোরে লিফট এসে দাড়ানোর সাথে সাথে লিফটের দরজাটা খুলে গেলো, আর ঠিক তখনই সকলে দেখলো, লিফটের মেঝেতে পরে আছেন ডক্টর সেন, বলা ভালো ডক্টর সেনের বিকৃত মৃতদেহ। ডক্টর সেনের মুখটা হাঁ করা, আর চোখগুলো বিস্ফারিত হয়ে আছে লিফটের ছাদের দিকে।


পাওয়ার কাট হয়ে যাওয়াতে সিসিটিভি কাজ করেনি, আর যেহেতু লিফটে তখন ডক্টর সেন ছাড়া আর কেউ ছিলো না, তাই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আর জানতে পারা গেলো না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায়, দম বন্ধ হয়েই ডক্টর সেনের মৃত্যু হয়েছে।


এই ঘটনার ঠিক দু'দিন পর কিঞ্জলের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় কিঞ্জলের ঝুলন্ত মৃতদেহ। সকলেই বলাবলি করেছিলো বউ আর বন্ধুর মৃত্যুতে পাগল হয়ে গিয়ে ছেলেটা আত্মহত্যা করে বসলো। কিন্তু এর পেছনের আসল সত্যিটা আজও সবার কাছে রহস্য।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror