Debdutta Banerjee

Drama Horror

5.0  

Debdutta Banerjee

Drama Horror

শাস্তি

শাস্তি

3 mins
1.9K


বুড়ো বট গাছটা বেশ কিছু ঝুড়ি ও ডালপালা বিছিয়ে তিন রাস্তার মোড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজ বহুবছর। জায়গাটা দিনের বেলাতেও অন্ধকার হয়ে থাকে। মোটা মোটা ঝুড়ি গুলো ভেদ করে সূর্যের আলো পৌঁঁছয় না সব সময়। বাপি, পটল আর ধনার ঠেক ঐ গাছের নিচেই। গাছটার নিচে একটা বড় কোটর রয়েছে, ওখানেই ওদের রাজত্ব। মদ গাঁজা ছাড়াও নানারকম নেশা চলে সন্ধ‍্যা থেকেই। 

বুড়ো বটগাছটা ওদের অনেক অপকর্মের সাক্ষী। অনেক মেয়ের চোখের জল ও রক্তে ভিজে গাছের শিকড় পোক্ত হয়েছে। কিন্তু ডালপালা নেড়ে প্রতিবাদ করা ছাড়া বটগাছের আর কিছুই করার নেই। 

স্টেশন থেকে টাউনে ঢুকতে গেলে এ পথে যেতেই হবে। সন্ধ‍্যার পর একা কেউ এ পথে যেতে চায় না। মিত্তিরদের ছোট মেয়েটার মুখে আ্যসিড আ্যটাক হয়েছিল এখানেই। দত্তবাড়ির মেজ বৌ, পাল বাড়ির বড় মেয়ে, নান্টু ঘোষের বোনের মেয়ের ক্ষতবিক্ষত শরীর ঐ পাশের পচা ডোবায় পাওয়া গেছিল বিভিন্ন সময়। 

বাপির বাবা এলাকার এমএলএ। আর মামা পুলিশের বড় কর্তা। তাই কেস গুলো সুন্দর ভাবে ধামা চাপা পড়ে যায় প্রতিবার। কিছু মেয়ে চরম সর্বনাশের পরেও চুপ করে থেকেছে এই কারণে। 

পরেশ মন্ডলের ভাগ্নি কলেজের ছুটিতে ঘু্রতে এসেছিল মামাবাড়ি। বিকেলে স্টেশনের দিকে গেছিল ঘু্রতে। সন্ধ‍্যার প্রবল জল ঝড়ে আটকে গেছিল মেয়েটা। একটাও রিক্সা না পেয়ে হেঁটেই ফিরছিল, পনেরো মিনিটের হাঁটা পথ। বটতলায় এসে গা টা একটু ছমছম করে উঠেছিল । পরদিন ওর লাসটা পাওয়া যায় বটতলা পাশের মাঠটায়। বাজ পড়ে ঝলসে গেছিল ওর সুন্দর মুখটা আর অর্ধেক শরীর। কিন্তু পোর্স্ট মর্টমে ধরা পড়েছিল আসল সত‍্যটা। তবুও দুর্ঘটনা বলেই কেসটা বন্ধ করেছিল পুলিশ। 


আজ সন্ধ‍্যা থেকেই ঝড়ো হাওয়া দিচ্ছে। ফণী নামক এক ভয়ানক ঝড় ধেয়ে আসছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। এলাকার লোকজন তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে গেছে। ট্রেন চলাচল ও বন্ধ। বাপি আর পটল গাছের কোটরে জমিয়ে বসেছে। ধনাটা আজ আসেনি। মাঝে মাঝেই বিদ‍্যুতের চমক জায়গাটাকে আলোকিত করে তুলছে। সিগারেটটা ধরাতে গিয়ে দু পকেট হাতরে লাইটারটা পায় না বাপি। পটলের কাছেও আগুন নেই। 

-''ধুর শালা, মেজাজটাই বিগরে গেল। একটু আগুন রাখিস না কেনো বাল? ''

-''গুরু, দু মিনিট ওয়েট করো। ছুটে যাবো আর এনে দেবো। '' এসব তেল পটল ভালোই দিতে পারে। ঝড়ো হাওয়া উপেক্ষা করে ও ছুটল স্টেশনের দিকে। কিন্তু এই ওয়েদারে সব দোকান বন্ধ। রেল লাইনের ওধারে একটা বস্তি আছে। মালতী রাণীর চোলাইয়ের ঠেক ওখানেই। সেদিকে পা বাড়ায় পটল। 

পনেরো মিনিটেও পটল ফেরে না। এদিকে বিরক্ত বাপি ঝুড়ির আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে আসে। একটা সাইকেল আসছে মনে হয়। দূর থেকে কমলা রঙের বিন্দুটা দেখা যাচ্ছে, ওটা ঠিক কি? বোঝার চেষ্টায় আরেকটু এগিয়ে আসে বাপি। আরে, কেউ বিড়ি বা সিগারেট ফুঁঁকছে মনে হয়। যাক, আগুনের ব‍্যবস্থা হবে অন্তত মালটা এলে। পথের ধারে এসে দাঁড়ায় বাপি। একটা জোরে বিদ‍্যুতের চমকের সাথে দিনের আলোর মত ঝকমকিয়ে ওঠে চারপাল।

' আবে শালা। মালটা সিগারেট ও টানে। জমে যাবেতো রাতটা। ' আপন মনেই বলে বাপি। গোলাপি চুরিদারের ওড়নাটা কান মাথা জড়ানো। মুখে জলন্ত সিগারেট, মেয়েটা এ এলাকারই, ঝড়ের জন‍্য রাত করে ফিরছে হয়তো। লকলকে জিহ্ব দিয়ে ঠোঁটটা চেটে একটা চুকচুক শব্দ করে লম্পটটা। পটলটা আসার আগেই মেয়েটাকে একা একটু চেখে দেখতে হবে। তারপর আজ বেশ মস্তি হবে মাইরি। 

ওর সামনে এসেই সাইকেলটা থেমে যায়, এক পা মাটিতে ঠেকিয়ে দাঁড়ায় মেয়েটা। মুখ থেকে সিগারেটটা হাতে নিয়ে এক রাশ ধোঁঁয়া ছাড়ে। মেঘের আড়ালে ভাঙা চাঁদের আলোয় মুখটা পরিস্কার দেখা যায় না। তবে আজকাল অনেক মেয়েই সিগারেট খায়। কলেজের ভাঙা পাঁচিলের পাশে মেয়েদের অনেক নেশাই করতে দেখেছে বাপি। 

কিন্তু মেয়েটা ওকে দেখে ভয় পায়নি এটাই অবাক লাগে। এলাকার সবাই ওকে চেনে। ধক আছে মালটার। নাহলে এমন দিনে এত রাতে সাইকেল চালিয়ে এই বটতলা পার হয় কেউ!!

নিজের সিগারেটটা ঠোঁটে গুঁজে হাতটা বাড়িয়ে দেয় বাপি। মেয়েটা যেন জানত ও আগুন চাইবে। নিজেরটা এগিয়ে দেয়। 

হাওয়া বাঁচিয়ে এক হাতে নিজেরটা ধরে অন‍্য হাতে জলন্ত সিগারেটটা ঠোঁটে ঠেকাতেই ভীষণ জোরে একটা বিস্ফোরণ, হাত দুটো জ্বলে যাচ্ছে যেন। ঠিক তখনি আকাশের বুক চিড়ে বিদ‍্যুৎ ঝলসে ওঠে। গোলাপি ওড়নাটা উড়ে যায় হাওয়ার টানে।এক ঝলক বিভৎস পোড়া মুখটা দেখেই চমকে ওঠে বাপি । দুই জলন্ত হাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করে ওঠে এলাকার ত্রাস শয়তানটা। 


সকালে পুলিশ যখন দেহটা দেখতে পায় খুব অবাক হয়, বাজ পড়ে শুধু হাত দুটো সাংঘাতিক ঝলসে গেছে।কিন্তু মৃত‍্যু হয়েছে হার্ট এটাকে। 

পাশে একটা গোলাপি ওড়না পাওয়া গেলেও কার জানা যায়নি। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama