সাবজেক্ট মিলি
সাবজেক্ট মিলি
টেবিল ঘড়িতে অ্যালার্ট ধ্বনি বেজে ওঠে।
//////////////////////////////
নিখিল সকালে ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে যায়।
বেড এর ঠিক পাশে গরম চা রাখা।...ঘরটা সুন্দর করে গোছানো।.... জানালার পর্দা গুলো পরিপাটি করে একদিকে সরিয়ে রাখা।...
নিখিল মনে মনে ভাবে," আজ মিলির হলো কি?"
নিখিল মিলির বিয়ে ৩বছর হয়ে গেছে।
বিয়ের পর প্রথম প্রথম দুজনে খুব সুন্দর করে ঘর গুছিয়ে পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখতো। আসতে আসতে সবেতেই কেমন একটা একঘেয়েমী এসে গেছে।
তাই আজ সকালে হটাৎ এত আয়োজন থেকে নিখিল একটু ঘাবড়েই যায়।
একটু পরেই মিলি ঘরে ঢোকে।..মিলিকে যেন আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগে ওর।
৫ বছর আগে মিলির সাথে প্রথম দেখার সময়ও বুঝি এত সুন্দর লাগেনি। নিখিল ঘুম চোখে মিলিকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে।....মিলি নিখিলের আদরে গলে যায়। এক মিষ্টি হাসিতে ঘরটা ভরিয়ে তোলে।
নিখিলের অনকেদিন পর নিজেকে খুব চনমনে মনে হয়।
আজ অফিস যেতে একটু লেট হয়ে যায়। মিলির স্বচ্ছ নীলাভ কাঁচের মত চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।আজ মিলির বানানো চা-টাও যেন খুব মিষ্টি মনে হয়।
নিখিল খুশি খুশি মুখ করে অফিস এসে পৌঁছায়।
অফিসে আসার পর প্রতিদিনকার মতো মিলি ফোন করে। ফোনে নিখিল ,মিলির সাথে পুরনো দিনের প্রসঙ্গে কথা তুললে মিলি কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
.....কাজের কথা বলে রেখে দেয় ফোনটা।
নিখিল দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় টিফিন বক্স খুলে একটু অবাক হয়।
মিলি জানে নিখিলের বেগুনে অ্যালার্জি আছে। তাও মিলি আজ ওকে বেগুনের তরকারি দিয়েছে।
নিখিল অফিস থেকে ফিরে এসে এই নিয়ে মিলিকে কিছু বলে না। ও ঘরে ঢুকে দেখে মিলি টিভি দেখছে। ও জানে মিলি ভৌতিক সিনেমা পছন্দ করে না। কিন্তু ও অবাক হয়ে দেখে, মিলি খুব আনন্দের সাথে একটুও ভয় না পেয়ে একটা হরর মুভি দেখছে।..
নিখিলকে দেখে মিলি দ্রুত টিভি বন্ধ করে আবার সকালের মত মিষ্টি হেসে বলে যে, ও এক্ষুনি চা এনে দিচ্ছে।
নিখিল বড়ো বড়ো চোখে তাকায় ওর দিকে। মিলি খুব ভালো করে জানে গত ৩ বছরে নিখিল অফিস থেকে এসে একদিনও চা খায় নি। তাহলে মিলি আজ এরকম কেন করছে?
নিখিল কেমন ধোঁয়াশার মধ্যে পড়ে যায়। এরই মধ্যে মিলি চা এনে দেয়।
নিখিল ধীরে ধীরে চা-টা ঠোঁটে ছোঁয়ায়। চা-টা সকালের মতই খুব মিষ্টি। নিখিলের বেশ ভালো লাগে। ও আবার মিল
ির দিকে তাকিয়ে বলে তুমি আজকাল খুব সুন্দর চা বানাচ্ছ দেখছি।
মিলির কালো চোখে যেন আবার একটা নীলচে আভা ফুটে ওঠে।
হটাৎ করেই নিখিলের খাওয়া থেমে যায়। ও একটা দরকারি কাজ আছে বলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
////////////////////////////////////
বাড়ি থেকে একটু দূরে গিয়ে পাগলের মত সিগারেট টানতে থাকে নিখিল। ধোঁয়াতে চারিদিক ভরে যায়।
...সেই আচ্ছন্নতার মধ্যেই নিখিলের মাথায় সব ব্যাপার গুলো ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে।
এ মিলি তার ৩ বছরের বিবাহিত মিলি না। ওর মিলি সবসময় নিখিলকে চিনি ছাড়া চা দিত।....মিলি জানত নিখিলের বেগুনে অ্যালার্জি।...মিলির চোখে কোনো নীলচে আভা সে আগে দেখেনি।..... আর মিলি ওর আদর খেতে খেতে কখনোই এরকম ভাবে হাসেনি।....😰
নিখিল জ্বলন্ত সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
ও চরম পরীক্ষাটা করে এরপর।..
মিলিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ তোমার মা ফোন করে ছিল। আমি বললাম সবাই ভালো আছি।”
মিলি দুমিনিট চুপ করে থাকে।কি বলবে ভাবে হয়ত!!
তারপর আবার ওই একইরকম সুরে হেঁসে বলে.. “ঠিকই তো বলেছো।”
মিলির কথা শুনে নিখিলের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়।
..... মিলির মা ২ বছর আগে মারা গেছেন।
*************
নিজের শরীরেই বন্দী মিলি ....ভিতর ভিতর লড়াই করতে থাকে। ও নানা ভাবে নিখিলের কাছে খবর পাঠানোর চেষ্টা করে যে, যাকে নিখিল দেখছে সে আসল মিলি না।😰
***************
নিখিল বেরিয়ে গেলে মিলি একটা ছোট্ট যন্ত্র বের করে কানে ধরে।
মিলি যান্ত্রিক ভাবে বলে, “সাবজেক্ট মাঝে মাঝেই সমস্যা করছে।মানুষের অনুভূতি বুঝতে এখনো সময় লাগবে। তবে আমার উপস্থিতি এরা কেউ বুঝতে পারেনি।”
কথা বন্ধ হয়ে যায়।
***************
পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসা একটি ভিনগ্রহী মহাকাশযানে দীর্ঘ বৈঠক বসে ঠিক কি ভাবে পৃথিবীতে তাদের আধিপত্য বিস্তার করা হবে সেই নিয়ে।
তাদের পর্দায় ফুটে ওঠে একটি বিধস্ত মিলির ছবি। যে বারবার তার চারপাশে তৈরি হওয়া কালো অন্ধকারকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে।
***********