Shubhranil Chakraborty

Inspirational

2  

Shubhranil Chakraborty

Inspirational

রুবিকা

রুবিকা

8 mins
606


“যা মাল পেয়েছি না আজকে,পুরো ডাঁসা।“ নিমুর চোখ চকচকিয়ে ওঠে।

“কোথায় পেলে গুরু?আর মালটা কই?” নিতাই বলল।

“সব বলব,সব বলব।কিন্তু তার আগে বল,কাশেম আর আবদুল্লা কোথায়?ওদেরকে খবর দিয়েছিস?”

“হ্যাঁ নিমুদা।আসছে ওরা,পথেই আছে হয়ত।“

“গুড।আর হরিশ?”

“ও ব্যাটাকে তো ফোন করে যাচ্ছি,তুলছে না তো।দেখো গিয়ে হয়তো কোথাও গাঁজা খেয়ে লটকে পড়ে আছে।“

“অপদার্থ একটা।“ নিমু দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে।

বাইরে একটা মোটরবাইক থামার আওয়াজ এল।নিতাই বাইরে বেরিয়ে দেখে,কাশেম আবদুল্লা আর হরিশ তিনজনে বাইক থেকে নামছে।নিতাইকে দেখেই কাশেম চেঁচিয়ে উঠল,”কিরে নিতাই,আজ হঠাত এমন জরুরি তলব কেন?তাও আবার এইখানে?”

“আমিও তো তাইই ভাবছি।নিমুদা ডেকে পাঠাল যে।“

হরিশ টলছিল,আব্দুল্লার কাঁধে ভর দিয়ে সে পিছন পিছন আসছিল।আগে ঘরে ঢুকল কাশেম।ঢুকেই সে বলল,”কি ব্যাপার বলত নিমুদা,হঠাত আজ আমাদের এই পুরনো ঘাঁটিতে ডেকে পাঠালে কেন?তাও আবার এত আর্জেন্ট? যে কারণে এই ভরসন্ধে বেলা ছুটে আসতে হল?”

“এমনি এমনি তো আর ডেকে পাঠাইনি।মাল পেয়েছি মাল,বুঝলি কচি মাল।দুধে আলতা গায়ের রং,গাল দুটো পুরো কাশ্মীরি আপেল।উফ,কার মুখ দেখে আজ ঘুম থেকে উঠেছিলাম কে জানে মাইরি।“

“বল কি গো?তা কোন বাগানের আপেল?”

“অতশত জানবো কি করে?দেখতে পেলাম,চুপিসারে গিয়ে তুলে আনলাম,ব্যাস।“

“কোথায় পেলে?”

“আরে তোরা জানিসই তো,শিবু চক্কোত্তি লেনের পশ্চিম দিকটা কতটা নির্জন। সন্ধে পড়তে না পড়তেই পুরো ফাঁকা।আগে লোকে শর্টকাট নিয়ে মেন রোডে যাবার জন্য ও রাস্তা ব্যাবহার করত,কিন্তু গত দুবছরে চুরি ডাকাতি আর কিডন্যাপিং এর উপদ্রব বাড়ায় এখন আর কেউ চট করে ওদিকে যায় না।সে যাই হোক,আমাদের তো এককালে আনাগোনা ছিলই,তাই আজো মাঝেমধ্যে ওখানে গিয়ে খোঁজ লাগাই, যদি ভাল মাল পাওয়া যায়।ওই যে,নজরুল না রবি কে যেন বলে গেছে,”যেখানে দেখিবে ছাই,পাইবে অমূল্য রতন না কি যেন?”

“তা সেরকমই আজ ঘাপটি মেরে বসে ছিলাম,আর মশার কামড় খাচ্ছিলাম।হঠাত দেখলাম মেয়েটাকে।দেখে মনে হল ক্লাস ফাইভ সিক্সে পড়ে,ওইদিকে কোথাও টিউশন পড়তে গিয়েছিল হয়তো।দেরি হয়ে গেছে বলে শর্টকাট নিয়েছে।তো আমিও ঘাঘু মাল।চুপচাপ ফলো করে গেলাম,যাতে মেয়েটা কোনভাবেই টের না পায়। উদ্দেশ্য এই যে কোনভাবে মেন রোডে পড়ার খানিক আগেই অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে ঠিক পেড়ে ফেলব মালটাকে।“

“কিন্তু চালে একটু ভুল হয়ে গেছিল।মেয়েটা কিভাবে যেন বুঝতে পেরে গেল যে আমি ওর পিছু নিয়েছি।একঝলক দেখেই হঠাত দৌড় মারল।পালাবে ভেবেছিল, কিন্তু শালি আমার সঙ্গে পারবে কেন?হাওয়ার মতন ছুটে গিয়ে পিছন থেকে জাপটে ধরে রুমাল চেপে ধরলাম।ব্যাস লটকে পড়ল।“

নিতাই বলল,”বল কি গো?চিল্লামেল্লি করেনি একটুও?”

“না রে।সেই নিয়েই তো ভয় লাগছিল আমার একটু।একা একা গেছি,নিখুঁত ভাবে সবকিছু ম্যানেজ করতে হবে,একচুল ভুল হলেই পুরো কেস।আর যতই নির্জন হোক,দূরে দূরে বাড়ি তো একটা দুটো আছেই,বাই চান্স কোন বাওয়াল হলে আর কি হবে বলা যায় না।কিন্তু সেরকম কোন ঝক্কিই পোয়াতে হল না।চুপচাপ মেয়েটাকে গিয়ে কব্জা করে নিলাম।একটু হাত পা ছুঁড়েছিল ঠিকই,কিন্তু ও তেমন প্রব্লেম হয়নি হ্যান্ডেল করতে।“

কাশেম একটু রাগ রাগ গলায় বলল,”যতই যাই হোক দাদা,তুমি কিন্তু মস্ত ভুল করেছ।আমাদের একবার ইনফরম করতে পারতে,তাহলে আমরা হেল্প করতে পারতাম।একা একা এত রিস্ক নেওয়ার কি দরকার ছিল?”

“আরে বাবা বললাম তো ওখানে আর এখন কেউ সহজে যায় টায় না।আর আমি থোড়াই প্ল্যান করে ওই মেয়েটাকে ধরতে গিয়েছিলাম।বলতে পারিস ওই ভাগ্যের ভরসায়,যদি কিছু পাওয়া যায়।আর এমন তো নয় আজ প্রথম গেলাম ওখানে।মাঝেমধ্যেই আমি একা যাই,নিরাশ হয়ে ফিরে আসি।সেইজন্যই তোদেরকে আর কিছু বলিনি,বেকার পণ্ডশ্রম হবে এতগুলো লোকের।আজ নেহাত ভাগ্য ভাল ছিল,তাই ভাবলাম এ সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না।ওরে এইটুকু কাজও যদি একা না করতে পারি তাহলে তোদের সর্দার হয়েছি কি করতে?ইয়ে ছিঁড়তে?”

“বাহ বেশ করেছ।তারপর আনলে কি করে মেয়েটাকে এতদূর?”

“ভ্যানটা নিয়ে গিয়েছিলাম।অজ্ঞান করে চাদর মুড়িয়ে খুব সাবধানে নিয়ে এসেছি।এখন পাশের ঘরটায় আছে,হাত পা বেঁধে রেখেছি।বোধহয় এখনো জ্ঞান ফেরেনি।“

নিতাই বলল,”একবার দেখা যেতে পারে মালটাকে?”

“বিলক্ষণ।চল সবাই।“

নিমুর সাথে সাথে নিতাই কাশেম আবদুল্লা পাশের ঘরে ঢুকল।ঘুপচি মতন ঘর, খুব টিমটিমে একটা আলো জ্বলছে।আসবাব সেরকম নেই বললেই চলে,একেবারে কোণের দিক করে একটা চেয়ারের সাথে একটা সুন্দর ফ্রক পড়া ডল্পুতুলের মত মেয়ে দড়ি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ।

“ঐ দেখ।“

চার রাক্ষসের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। আবদুল্লা বলল,”বাপরে এতো দেখেই জিভে জল আসছে।যেমন গায়ের রঙ তেমনি বাড়ন্ত শরীর।এতদিন উপোসী থাকার পর এতো রাজভোগ।“

নিমু বলল,”তবে?শালা কাঁহাতক আর এই ছুটকো ছাটকা ইধার কা মাল উধারের কাজ ভাল লাগে।মাঝে মধ্যে ফুর্তি টুরতির ও তো দরকার আছে।তাও নয় নয় করে তো আর কম দিন হল না।কবে লাস্ট এরকম মাল পেয়েছি মনে আছে রে তোদের?”

“চার পাঁচ বছর তো হবেই।“

“হুম।তাহলে চল,আজকের রাতটা স্মরণীয় করে রাখতে হবে তো।তুই আর নিতাই যা,ভাল দেখে মাংস নিয়ে আয় চরণের দোকান থেকে,ভাল করে খেয়ে দেয়ে..বুঝলি তো?”নিমু সহর্ষে বলল।

কাশেম অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।এবার সে বলল,”আচ্ছা,নিমুদা মেয়েটার কি জ্ঞান ফিরে এসেছে?”

নিমু মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেল।তারপর ঝুঁকে ভাল করে দেখে বলল,”না মনে হচ্ছে।কেন কি হল?”

“না আসলে এক্টু...ওই দেখ নিমুদা আবার চোখ মেলল।“

কাশেম চেঁচিয়ে উঠল।এবার নিতাইও দেখেছে।সেও বলল,”হ্যা নিমুদা,মেয়েটার মনে হয় জ্ঞান ফিরে এসেছে।“

এবার নিমুও দেখল।হ্যা মেয়েটা চোখ মেলে তাকিয়েছে মনে হল।কিন্তু শুধু তাকিয়েই রইল,তার কোন কিছু বলার আগ্রহ আছে বলে মনে হল না।

“দেখেছ কাণ্ড।কখন জ্ঞান ফিরে এসেছে জানতেই পারিনি।ডোজ টা তাহলে কম হয়ে গিয়েছিল ক্লোরোফরমের।“

আবদুল্লা সন্দেহের গলায় বলল,”এ কেমন মেয়ে গো নিমুদা,জ্ঞান ফিরে এসেছে তাও একটুও ছটফট করছে না,চিতকার করার চেষ্টাও করছে না,শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা মনে হয় সত্যিই বোবা।“

কাশেম বলল,”কিংবা এমনও হতে পারে ও বুঝতেই পারছে না ও কোথায় এসেছে,ওর সাথে কি হতে চলেছে।ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।বেচারী মেয়ে।“

নিতাই খ্যা খ্যা করে হেসে বলল,”আজকাল বাবা মায়েরাও কি কেয়ারলেস,এমন ডিফেক্টিভ মেয়েকেও একা একা টিউশন পড়তে পাঠিয়ে দেয়।“

নিমু খিঁচিয়ে বলল,”হয়েছে,তোকে আর ওর বাবা মার দোষ দেখতে হবে না।ভালই তো,জ্ঞান ফিরে এসেছে,এখন চিল্লামিল্লি করলে সামলানোই তো দায় হয়ে পড়ত।চুপচাপ আছে থাক না,এত গা জ্বালা কিসের তোদের।যা এখন মাংস টা নিয়ে আয়।সাথে পাশের ঠেক টা থেকে দেশি মদ ও নিয়ে আসিস।জমবে ভাল।মুড আসবে,যা তুই আর আবদুল্লা বেরিয়ে পড়।দেরি করিসনা।রাত হয়ে গেল।“

নিতাই আর আব্দুল্লা বেরিয়ে গেল।নিমু কাশেমকে বলল,”হরিশ ব্যাটা কি এখনো লটকে আছে নাকি রে?”

“হ্যা বোধহয়।আর বোলোনা,ওকে যে কিভাবে নিয়ে এসেছি কল্পনা করতে পারবে না।মাঠে বসে ঝিমোচ্ছিল ব্যাটা।বাইকে যখন বসিয়ে আনছিলাম মনে হচ্ছিল মড়া পাচার করে নিয়ে যাচ্ছি।“

“চল দেখে আসি,ওর জ্ঞান কতদূর ফেরানো যায়।“

নিমু আর কাশেম ঘরে ঢুকতেই দেখে হরিশ ঘরের একটা ভাঙ্গা চৌকির একধার করে শুয়ে আছে।মুখটা হাসি হাসি।

নিমু সঙ্গে সঙ্গে হরিশের পেছনে এক লাথি মারল।হরিশ মাটিতে পড়েই হাউমাউ করে উঠল।

নিমু তার চুলের মুঠি ধরে বলল,”ওরে গর্দভ,গাঁজা খেয়ে থাকলে চলবে?আরো ভাল ভাল খাবার এসেছে,সেগুলো খেতে হবে না?”

হরিশের চোখ গুলো লাল লাল হয়ে ছিল।দু একবার এদিক সেদিক তাকিয়ে সে বলল,”খাবার?আরো খাবার এসেছে?তবে দেরি করছিস কেন,নিয়ে আয়।টুক করে এক টিপ মেরে শুয়ে পড়ি।স্বপ্ন টা পুরো দেখ হলনা তো।“

নিমু রেগে গিয়ে বলল,”খাবার খাওয়াচ্ছি তোমায়।এই কাশেম,এক বালতি জল নিয়ে আয় তো।“

কাশেম সঙ্গে সঙ্গে জল নিয়ে এল।সেটা থেকে মগে করে হরিশের মাথায় জল ঢেলে দিতে দিতে নিমু বলল,”এই গাঁজাখোর গুলোকে নিয়ে সব জায়গায় সমস্যা।চাবকে দল থেকে বার করে দিতে হয়।“

জল দেওয়াতে হরিশের হুঁশ ফিরল।আকুপাকু করে সে বলে উঠল,”কি হয়েছে,কি হয়েছে?”

কাশেম তাকে সংক্ষেপে পুরো ঘটনাটা বলল।শুনে হরিশের চোখ চকচক করে উঠল।বলল,

“আজকে তো তাহলে দারুণ দিন সর্দার। তা মালটি কই?”

“ঐ ঘরে আছে।“

“বাহ,তাহলে তো সেরা।খেলা শুরু হবে কখন গুরু?”

“তুমি নিজেই যা খেল দেখালে আজ,তোমার আর আলাদা করে খেল দেখানোর দরকার নেই।গাঁজা নিয়েই থাকো তুমি।কিরে কাশেম,ওদের কতদূর?”

“চলে আসবে।এই তো গেল।“

খানিক পর নিতাই আর আবদুল্লা মাংস আর মদ নিয়ে এসে হাজির হল।নিমু ঘড়ি দেখে বলল,”এগারোটা বাজল,এবার রান্না বান্না শুরু করে দিতে হবে।নে তোরা সব হাতে হাতে লেগে পড়।মাংসটা করতেও তো সময় লাগবে।“

রান্না হয়ে গেলে সবাই মিলে মেয়েটার ঘরে হেরিকেন জ্বালিয়ে খেতে বসল।হরিশ বলল,”এ কি ঘুমোচ্ছে নাকি এখনো?”

কাশেম বলল,”না না জ্ঞান আছে।দেখছিস না চোখ খোলা।“

“সে কি।তবে নড়ে চড়ে না কেন?মরে টরে যায়নি তো?”

নিমু ধমক দিয়ে বলল,”মরবে কেন?একটু আগে দেখে এসেছি,চোখ পিটপিট করছিল,দেখে মনে হল হাত টা ছাড়ানোরও চেষ্টা করছে।আসলে কি বলতো এত শক্ত করে বেঁধেছি যে ওর নড়ার শক্তি পাচ্ছে না।তবে চিন্তা নেই খানিক পর তো বাধন খুলেই দেব,আর তারপর...”

পাঁচটা নেকড়ে বাঘের গলায় অট্টহাসি শোনা গেল।

নিতাই বলল,”কাজ হয়ে গেলে কি করবে ঠিক করেছ?”

“হ্যা,ওকে বিস্কুট লজেন্স আর কেক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেব।“নিমু কিড়মিড়িয়ে বলল,”মাথায় কি গোবরপোড়া আছে?এখানে মেয়েটার একটা সুতোও পড়ে থাকলে চলবে না।আজ রাতের মধ্যে সব শেষ করে এখান থেকে অনেক দূরে গা ঢাকা দিতে হবে।তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর।“

খাওয়ার পর নিমু বাকিদের বলল,”চল এবার মেয়েটার বাঁধন আলগা করা যাক।“

পাঁচজনের মুখ চকচকিয়ে উঠল।ঘরে ঢুকে আব্দুল্লা আর হরিশ মিলে বাঁধন খুলতে গেল।মেয়েটা তখনো একইভাবে বড় বড় অসহায় চোখ মেলে দেখছিল।কাশেম সেদিকে তাকিয়ে হঠাত থমকে দাঁড়িয়ে বলল,”নিমুদা দেখ মেয়েটা মনে হয় কিছু বলতে চায় আমাদের।“

নিমু বলল,”অ্যাঁ?কিছু বললি?”

কাশেম বলল,”মেয়েটার দিকে একবার দেখ নিমুদা।“

নিমু মেয়েটার দিকে তাকাল।কিছু পরিবর্তন হয়েছে কি মেয়েটার মধ্যে?মুখের অভিব্যাক্তি টা কি একটু অস্বাভাবিক নয়?চোখ দুটো কি একটু বেশিই বড় আর উজ্জ্বল?গায়ের রংটাও কেমন যেন...”

কিন্তু ওসবকে পাত্তা দেয় কে?নিমু বলল,”দেখলাম।কি হয়েছে?”

কাশেম বলল,”একটু কেমন যেন লাগছে না?”

“মানে?”

এবারে নিতাই বলল,”নিমুদা একটা কথা বলব?তখন থেকে আমার মনের মধ্যে খচখচ করছে,একে আগে কোথাও যেন দেখেছি।কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না।“

আব্দুল্লা বলল,”মেয়েটা অস্বাভাবিক সুন্দর।“

নিমু প্রবল অট্টহাস্য করে উঠল।

“ও আচ্ছা এবারে বুঝেছি।তোদের একে দেখে খুব দরদ উথলে উঠছে তাই না?নিজেদের বোন মেয়ের কথা মনে পড়ছে,তাই তো?”

বলে নিতাই আর আব্দুল্লার থুতনি দুটো চেপে ধরল নিমু।

“কিন্তু আমার সেসব মনে পড়লে চলবে না।আমি চাইলে নিজের মেয়ের সাথেও লীলাখেলা করতে পারি বুঝেছিস?এসব কাজ করার হিম্মত যদি না থাকে,তাহলে আর কোনদিন নিমু সর্দারের চেলা বলে পরিচয় দিবি না,জেনে রাখ।আর এরপর কেউ যদি ভুল্ভাল বকে আমার কাজে বাধা দিয়েছে,তাকে এখানেই শেষ করে রেখে দেব।সরে যা হরিশ,আমি এর বাঁধন খুলব।“

নিতাই আর আব্দুল্লাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল নিমু।লোভ আর হিংস্রতা তার চোখে মুখে জ্বলজ্বল করছে।ক্ষুধার্ত বাঘের মতন সে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার বাঁধন খুলতে গেল।আর ঠিক তখনই মেয়েটার চোখ বেশ কয়েকবার পিটপিট করে উঠল।

তারপরেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। নিমেষের মধ্যে ইট বার করা পুরনো বাড়িটা ধূলিসাৎ হয়ে গেল।কোথাও আর কারুর চিহ্ন পাওয়া গেল না।

***

কি বোর্ডে এন্টার প্রেস করার সাথে সাথে একটা বিশ্রী আওয়াজ করে কম্পিউটার স্ক্রিনটা কালো হয়ে গেল।ক্লান্তভাবে চেয়ারের উপর নিজেকে এলিয়ে দিলেন ইয়ং সায়েন্টিস্ট রৌণক ঘোষ।মনটা অনেক হালকা লাগছে তার।খানিকক্ষণ আচ্ছন্নের মত বসে রইলেন তিনি।

টেবিলের উপর একটা বারো চোদ্দ বছরের মেয়ের ছবি রাখা আছে।আস্তে আস্তে রৌণক ছবিটাকে হাতের তেলোর উপর নিয়ে স্নেহের সঙ্গে বোলাতে শুরু করল।চোখের কোণ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে এল তাঁর। ছ বছর আগে টিউশন থেকে ফেরার পথে একটা নির্জন গলি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল তার বোন রুবিকা ঘোষ, যার ছবি এই মুহূর্তে তার হাতে।পরে তার ছিন্নভিন্ন লাশটা উদ্ধার করা হয় জঙ্গলের ভিতর থেকে।মজার ব্যাপার হল,দোষীদের কোন শাস্তিই হয়নি।কয়েকদিন হইচই হয়,তারপর সব চাপা পড়ে গিয়েছিল।

রৌণক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কম্পিউটার টেবিলের উপর রাখা আছে তার জীবনের মহামূল্যবান প্রোজেক্ট Programmable Robot Bomb-Rubika 2.0 এর ফরমুলার কাগজপত্র।নামটা সে দিয়েছিল বোনের নামেই,চেহারাটাও হুবহু গড়ে তুলেছিল তার আদলেই। দেখলে বা ছুঁলে কেউ ধারণাই করতে পারবে না এটা মানুষ নয় রোবট। চোখ দুটোর জায়গাতে আর ঘাড়ের পিছন দিকে বসানো থাকত ক্যামেরা যার সাহায্যে টার্গেটের উপর নজর রাখা যায়।কিন্তু এর মূল ভূমিকা হল এর বিধ্বংসী শক্তি। এর সর্বনাশা শক্তির সাহায্যে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন ব্রিজ প্রভৃতিকে নিমেষের মধ্যে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।রৌণক আগেই অনুমান করেছিল যে শয়তান সেই জায়গায় বারবার ফিরে আসে,যেখানে সে অতীতে কোন অপরাধ সংঘটিত করেছিল।সেই হাঞ্চের উপর ভিত্তি করেই সে খুব সুপরিকল্পিত ভাবে সে ঐ স্থানে Rubika 2.0 কে নামায়,যেখান থেকে তার বোন একদিন নিরুদ্দেশ হয়েছিল।

রৌণক একটা লাইটার জ্বেলে ফরমুলার কাগজ গুলোয় আগুন লাগিয়ে দিল।নাঃ সে চায় না এই ফরমুলার কোন ভুল প্রয়োগ হোক।তার প্রতিশোধ নেওয়ার ছিল,সে নিয়েছে।আর এর কোন প্রয়োজন নেই।

কাগজ গুলো মাটিতে জ্বলছিল।সেদিকে তাকিয়ে সে এক অপরিসীম তৃপ্তি লাভ করল।তারপর রুবিকার ছবিটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,”পেরেছি রে বনু।যারা তোকে সেদিন বাঁচতে দেয়নি,আজ তাদের সমুচিত শিক্ষা আমি দিতে পেরেছি।“


(পুনশ্চ-প্রিয় পাঠকগণ,আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল দয়া করে কেউ এই লেখায় ধর্মের গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করবেন না।চরিত্রের যে নাম ব্যাবহার করা হয়েছে,তা কোন ধর্মকে কটাক্ষ করার জন্য নয়।কারণ আপনাদের মত আমিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি,ধর্ষকের কোন ধর্ম হয় না।তার একটাই পরিচয়,সে ধর্ষক।)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational