STORYMIRROR

Swagata Pathak

Drama Romance

3  

Swagata Pathak

Drama Romance

রং তুলি

রং তুলি

4 mins
862


- বুঝলি মিঠী তোকে নিয়ে পালিয়ে যাবো দূরে কোথায় আর একটা ছোটো স্বপ্নের আশিয়ান বানাবো সেখানে ।

রুদ্র চারুলতার ( মিঠী ) ফোলা ফোলা ফর্সা গাল টা হাল্কা চেপে দিয়ে কথাটা বললো ।

- কিন্তু রুদ্র দা আমরা কোথায় যাবো?

মিঠী আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে ।

রুদ্র মিঠীর কপালে উড়ে আশা চুল সরিয়ে দিয়ে বললো,

- যেখানে তুই যেতে চাইবি?

মিঠী রুদ্র র কাঁধে মাথা এলিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিলো ।

- আমার তো পাহাড় ভালো লাগে রুদ্র দা । নীল আকাশের নিচে একটা সবুজ পাহাড় । একটা ছোটো কাঠ বাংলো , অনেক প্রজাপতি আর ঝর্ণা ।

আদরে করে মিঠীর মাথায় হাত বুলিয়ে রুদ্র বললো।

- ঠিক আছে খুব তাড়াতাড়ি তোকে নিয়ে যাবো সেখানে ।

- সত্যি বলছো রুদ্র দা?

খুশিতে চমক দিয়ে ওঠে মিঠীর দুই চোখ ।

রুদ্র কে জড়িয়ে ধরে মিঠী বলে ।

- তুমি আর আমি সেখানে থাকবো আর কেউ যেনো না থাকে । এই আমি বলে রাখলাম ।

- আর কে থাকবে শুনি ?

- ওই যে তোমার ঐ ন্যাকা ছাত্রী টা যেনো না আসে ।

- কে ? ব্রততী?

রুদ্র হো হো করে হেসে ওঠে ... মিঠীর কথা শুনে ।

ঠোঁটে বেঁকিয়ে মিঠী বলে,

- হাসছো কেনো তুমি ? আমার ওকে একদম পোষায় না । কেমন যেনো গায়ে পরা মেয়ে একটা ।

- এই পাগলী তুই এত হিংসুটে কবে থেকে হলি রে ?

মিঠীর মাথায় একটা চাটি মেরে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো ।

রুদ্র র গলা জড়িয়ে মিঠী নিজের লাল লিপস্টিক ওর গালে ছেপে দিয়ে বললো,

- যেদিন থেকে তুমি আমার হলে ।

- তাই বুঝি ?

- হ্যাঁ একদমই তাই ।

- আমার মিষ্টি মিঠী ।

ছোটো অবাধ্য মিষ্টি প্রেমিকার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বললো রুদ্র ।

রুদ্র আর মিঠীর বয়েসের ব্যবধান টা অনেক । প্রায় তেইশ বছরের । রুদ্র একজন চিত্র শিল্পী দেশ বিদেশ কতো জায়গায় সে ঘুরেছে সারাজীবন । নিজের তুলির টানে ফুটিয়ে তুলেছে তার অনন্য সব সৃষ্টি । জীবনে বিয়ে থা করে নি রুদ্র । সে মনে করতো বিয়ে, সম্পর্ক এই সবের মাঝে আটকে পরলে ওর শিল্পী সত্তা মারা পড়বে। নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো মেলে দিয়েছিলো সে জীবন আকাশে।

বন্ধু বান্ধব পরিবার সকলের হাজার বোঝানো তে জল ঢেলে সে ব্যাচেলর জীবন টাই বেঁছে নিয়েছিলো । কিন্তু ওই যে কথায় আছে না । ভাগ্যের লিখন খন্ডন করা সহজ নয় ।

সারাজীবনের রঙ তুলির পিপাসা নিয়ে ছুটে বেড়িয়ে জীবনে অনেক অর্থ উপার্জন করেছে রুদ্র মোহন। কিন্তু কোথাও একটা থামার প্রয়োজন বোধ করছিলো । তাই সব ছেড়ে মাধব পুরে নিজের পৈতৃক ভিটেতে ফিরে এসে সে সিদ্ধান্ত নিলো বাকি জীবন টা এইখানেই কাটিয়ে দেবে একজন আঁকার শিক্ষক হিসেবে। কে আর আছে তার ওই এক মাত্র বুড়ি মা ছাড়া । কিন্তু বয়েসের ভারে যখন বসন্ত রং হারাচ্ছিলো রুদ্রর জীবন থেকে ঠিক তখনই বিকেলের পশ্চিমী হওয়ার মতো ওর জীবনে মিঠী ওরফে চারুলতা এসে হাজির হলো । এই গ্রামেরই মেয়ে চারুলতা । সকলের খুব প্রিয় । দেখতে ভারী সুন্দর মায়ায় ভরা মুখ তার । আর সব থেকে যেটা সকল কে বেশি আকর্ষণ করে সেটা হলো ওর দুটো গভীর কালো সুন্দর চোখ । কি জীবন্ত । মনে হয় মানুষের হৃদয়ের গভীর অবধি ছুঁয়ে যায় ।

কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস মেয়েটি অন্ধ । জন্ম থেকেই সে জানে না রং কি জিনিষ । প্রকৃত র কোনো রং তার মস্তিষ্ক আজ অবধি চেনে না । তবুও রুদ্রর প্রেমের রঙের ছোঁয়াতে সেও রঙিন হয়ে উঠলো দিন দিন । রুদ্র তার প্রেয়সী কে কোনোদিন দেখাতে পারবে না তার আঁকা ছবি । তবে রুদ্রর হাত ধরেই চারুতলা চিনছে পৃথিবীর সব রঙ ।

মিঠী আজ সব রং জানে। আকাশের রং ঠিক তার রুদ্র দার মতো নীল । গাছের পাতা তার প্রেমিকের অভিমানের মতো সবুজ । ফুলের রং তার চিত্র শিল্পী হবু বড় এর ক্যানভাসের মতো রঙিন ।

প্রজাপতি সেও তো ঠিক ওদের প্রেমের মতো ঝলমলে রং নিয়ে উড়ে বেড়ায় ।

রুদ্রর সাথে মিঠীর বিয়েতে আপত্তি ছিলো সকলের বিশেষ করে মিঠী র মা বাবার । সেটাই স্বাভাবিক । একটা উনিশ বছরের মেয়ের সাথে একজন বিয়াল্লিশ বছরের মানুষের কখনই মিল হতে পারে না ।

তবে মাঝে মাঝে বইয়ের পাতায় লেখা কথা গুলো কেমন যেনো জীবন্ত হয়ে ওঠে ।

"এইজ ইজ জাস্ট এ নাম্বার ।" সব ঝামেলার অবসান ঘটিয়ে মিঠী বেঁকে বসলো সে রুদ্র দা কে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না । তখন মা বাবাকে মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে ই হলো ।

রুদ্র মিঠীর হাত ধরে খুব সাবধানে ঠাকুর দালানের সিঁড়ি থেকে নামছে।

মিঠী শক্ত করে রুদ্রর হাত টা ধরে বললো,

- রুদ্র দা তুমিই আমার শক্তি, তুমিই আমার অনুপ্রেরণা । এই ভাবেই পাশে থেকো সব সময় ।

রুদ্র আরও শক্ত করে মিঠীর আঙুল গুলো আঁকড়ে ধরে ওর কানের কাছে মুখ এনে বললো।

- আর তুই আমার রং তুলি ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama