ধরো যদি হটাৎ সন্ধ্যে
ধরো যদি হটাৎ সন্ধ্যে
বাস স্ট্যান্ডের কাছেই একটা ছোটো চায়ের দোকানে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো সৃজা । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হয়েই চলেছে সকাল থেকে তাই আকাশেরও মুখ ভার । সন্ধ্যে নেমেছে বেশ খানিকক্ষণ হলো ।
- আরে আস্তে ! দেখে শুনে পার হবে তো !
একজন পুরুষ কণ্ঠ যেনো কাউকে বেশ কড়া ভাবে নির্দেশ দিয়ে সাবধান করছে।
স্বাভাবিক ভাবেই সৃজা ও আসে পাশের দুই একজনের নজর টা পরল সেইদিকে ।
আজ প্রায় বছর পাঁচেক পর ঠিক সেই চেনা রাস্তার মোড়ে তার খুব পরিচিত মানুষ টিকে হঠাৎ দেখতে পাবে সৃজা কল্পনাও করে নি । রঞ্জন ওর প্রাক্তন প্রেমিক । মুহূর্তের জন্য চোখ আটকে গিয়েছিলো ওই খুব চেনা মানুষটির মুখের উপর ।
কিন্তু ওর সাথে ও কে ? খুব সাবধানে জল বাঁচিয়ে মাথায় ছাতা ধরে একজন অন্তঃসত্বা মহিলাকে সেডের নীচে দাড় করালো রঞ্জন। বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে ওঠে সৃজার। রঞ্জন বিয়ে করেছে । ভাবতেই সৃজার চোখের কোন টা জলে ভরে ওঠে ।
ওর থেকে হাত পাঁচেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে ওরা । কিন্তু বৃষ্টির সন্ধ্যের অন্ধকারে ঝিমিয়ে পরা বাল্ব এর আলোতে সৃজা কে দেখতে পায়নি রঞ্জন। কারণ তার দায়িত্ববান চোখ দুটো এখন তার অন্তঃসত্বা স্ত্রী কে ঘিরে ব্যস্ত।
বৃষ্টির বেগ টা বেড়েছে । খালি চায়ের ভাঁড়টা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে চায়ের দাম মিটিয়ে সৃজা ছাতা টা খুলে উঠে দাড়ালো । পরিচিত চায়ের দোকানী বললো ,
- ও দিদি কোথায় যাচ্ছো এই বৃষ্টিতে। বৃষ্টি টা একটু ধরুক তারপর যেও ।
দোকানির ফ্যাস ফ্যাসে গলার স্বর লক্ষ্য করে এবার রঞ্জনের চোখটাও পরলো সৃজারা উপর, না সৃজা আর একবারও ফিরে তাকায় নি ওর দিকে । বৃষ্টির বেগ, দোকানির বাধা উপেক্ষা করে সৃজা নেমে পরেছে রাস্তায়। হেঁটে চলেছে সামনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। তার মনে পরে যাচ্ছে সেই গোলাপী অতীতের স্মৃতি গুলো। কতো বৃষ্টির সন্ধ্যে ওরা হেঁটে গেছে এই চেনা পথে ধরে একটা ছাতায় ভাগাভাগি করে ভিজে । আজ ছাতা দুটো , গল্পও দুটো। শুধু ভালোবাসা আর বুকের ভেতর মৃদু যন্ত্রণাটা একরকম । বড্ড একরকম! ঠিক সেই মুহূর্তেই হঠাৎ কার যেনো ফোনের রিং টোনে গান টা বেজে উঠলো ।
" ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে ... তোমার দেখা আমার সঙ্গে ... মুখো মুখি আমরা দুজন.... মাঝ খানে অনেক বারণ.... "