রহস্য ☠️(পর্ব ১)
রহস্য ☠️(পর্ব ১)
গল্পটি শুরু হয় আলোকে দেখানোর মাধ্যমে ।
আলো বিছানায় শুয়ে রয়েছে , বিছানার পাশের টেবিলে রাখা এলার্ম ঘড়িটি বেজে চলেছে । দরজার ওপাশ থেকে একটি আওয়াজ ভেসে আসছে," আলো , আলো , এই আলো , দরজাটা খোল , আর কতো ঘুমাবি নয়টাতো বেজে গেলো এবার ওঠ । "
আলোর মা সাথী বেগমের ডাকাডাকি এবং এলার্মের শব্দে হঠাৎই আলোর ঘুম ভেঙে যায় । ঘুম ভাঙতেই আলো এলার্ম ঘড়িটি হাতে নিয়ে দেখে নয়টা দশ বেজে গেছে , এদিকে সাড়ে নয়টায় আলোকে তার ল ফার্ম " The Legal Circle " - এ পৌঁছতে হবে । মিশুক স্বভাবের এই সুদর্শন ও লম্বা মেয়েটি পেশায় একজন উকিল , সে গর্ব করে নিজেকে উকিল বলে কারণ তার মতে উকিলরা ন্যায়ের জন্য লড়াই করে এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় উকিলদের ভূমিকায় সর্বাধিক ।
আলো " The Legal Circle " নামের এই ল ফার্মে একজন সহযোগী উকিল হিসেবে কাজ করে ।
বিছানা থেকে উঠে রেডি হয়েই সকালের নাস্তা না করে আলো বেরিয়ে পড়ে তার গন্তব্যস্থলের দিকে । অফিসে পৌঁছে আলো শুনতে পায় আজ নাকি একটি খুব আজব কেস এসেছে এখানে ।
" কী কেস এসেছে আজ ? "
এটা ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে হেটে যাচ্ছিল আলো । হাটতে হাটতে হঠাৎই তার সামনে লক্ষ্য করে সিয়ামকে । সুন্দর চেহারার ও উজ্জ্বল গায়ের রংয়ের এই উঁচু-লম্বা ছেলেটি হলো আলোর সিনিয়র উকিল । সিয়ামের আন্ডারেই আলো সহযোগী উকিল হিসেবে কাজ করে ।
সিয়াম আলোকে দেখে জিজ্ঞেস করে, " কী ব্যাপার আলো তুমি আজ পুরো বিষ মিনিট লেট । "
আলো : স্যার আসলে আমি কাল রাতে একটু দেরি করে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিল ।
সিয়াম : ঘুম থেকে ওঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই লেট হয়েছে ?
আলো কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, " হ্যাঁ "
সিয়াম একটু রাগী স্বরে বলে, " যদি তুমি এই রকমই থাকো তাহলে কোনো দিন একজন ভালো উকিল হতে পারবেনা । "
এই বলে সিয়াম চলে গেল আর আলো সিয়ামের দিকে রাগের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ।
এরপর আলোকে দেখা যায় সিয়ামের অফিসে । একটা নতুন কেস নিয়ে সিয়াম এবং আরও কয়েকজন সিনিয়র উকিলেরা আলোচনা করছে । আলো বলে," এটা আবার কেমন কেস ? পাদ দেওয়া কি কোনো অপরাধ নাকি ? কারো পাদের কারনে কিভাবে একজন মানুষ মরে যেতে পারে ? "
সিয়াম আলোর কথাকে সমর্থন করে এবং এই কেসটি নিতে চায় না। তবে উপরমহলের জড়াজড়িতে সিয়ামকে এই কেসটি নিতে হয় । একরকম বাধ্য হয়েই সে এই কেসটি নিয়েছে বলা যায় ।
কেসটি হলো একজন বড় ব্যবসায়ী আনোয়ার উদ্দীনের খুনের কেস । আনোয়ার উদ্দিন তার একমাত্র নাতি জাকিরের জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে,তার পুরো পরিবারের সাথে খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিলেন তখন তাদের বাসার এক মধ্যবয়স্ক কাজের লোক পাদ দিলে আনোয়ার উদ্দীন হাসতে থাকেন, হাসতে হাসতে হঠাৎই তার বুকে ব্যথা শুরু হয় আর তিনি চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে যান । পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানা যায় তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন । আনোয়ার উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছোট ছেলে ওই মধ্যবয়স্ক কাজের লোকের নামে আনোয়ার উদ্দিনের খুনের কেস করে কারণ রিয়াজ অর্থাৎ আনোয়ার উদ্দিনের ছোট ছেলের মতে তার বাবার মৃত্যুর জন্য ওই কাজের লোকই দাই । সে মনে করে ওই কাজের লোকের পাদ দেওয়ার কারণেই তার বাবার মৃত্যু হয়েছে ।
" স্যার আপনি এই আজব কেসটা কেন নিলেন , একটা পাদ কিভাবে একজনের মৃত্যুর কারণ হতে পারে , পাদ দেওয়ার কারণেতো কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না , পাদ দেওয়াতো আর কোনো অপরাধ না । "
আলো সিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেই চলেছে সিয়ামকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। হঠাৎই সিয়াম তার হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে আলোর ঠোঁট চেপে ধরে তার মুখ বন্ধ করে দেয় । আলো অবাক হয়ে সিয়ামের দিকে চেয়ে থাকে । তারপর সিয়াম আলোকে বলে, " তুমি অনেক বেশি কথা বল । একজন উকিলকে তার অপরপক্ষের কথাও ভালোভাবে শুনতে হয় । আমি এই কেসটি নিয়েছি যেন বাদীকে ( যে ব্যক্তি কেস করেছে ) বুঝিয়ে কেসটি উঠিয়ে নিতে পারি । "
এই বলে সিয়াম আলোর ঠোট থেকে তার আঙ্গুল দুটি সরিয়ে নিলো এবং আলোর সাথে আর কোনো কথা না বলে তার সামনে রাখা কেস ফাইলটি দেখা শুরু করলো ।
মনে মনে আলো ভাবতে থাকে "এই কথা গুলোতো স্বাভাবিকভাবেও বলা যেতে পারতো আমার ঠোঁট ধরে রাখার দরকার কি ছিল । আমি কি অনেক বেশি বক বক করি ? "
এইসব ভাবতে ভাবতেই আলো তাদের অফিসের ক্যান্টিনে চলে যায় ।
"সকাল থেকে কিছু খাইনি এখন প্রায় দুপুর হয়ে গেল, খুদায় আমার জীবন চলে যাচ্ছে । "
এইসব ভাবতে ভাবতেই আলো ক্যান্টিন থেকে একটি পাউরুটি নিয়ে পাউরুটিটা খাওয়া শুরু করে দেয় । খেতে খেতে হঠাৎই তার গলায় খাবার আটকে যায় । কাশতে কাশতে সামনে থাকা পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে দেখে গ্লাসে পানি নেই, এরমধ্যেই একজন লোক তার সামনে পানির গ্লাস নিয়ে এলে আলো পানির গ্লাসটি ঐ লোকের হাত থেকে নিয়ে পানি পান করে । পানি খাওয়া শেষ হলে আলো সামনে তাকিয়ে দেখে ওই লোকটি আর কেউ নয় তারই ল ফার্মের আরেকজন সিনিয়র উকিল ইকবাল । ইকবালকে দেখেই আলো ইকবালকে ধন্যবাদ জানায় তাকে পানি দেওয়ার জন্য । ইকবাল আলোর সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে তাকে বলে , " এত তাড়াহুড়ো না করে একটু ধীরেসুস্থেও তো খেতে পারো । "
এই বলে ইকবাল আলোকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে চলে যায় ।
ইকবাল কে চলে যেতে দেখে আলো ভাবতে থাকে " ইকবাল স্যার কত ভালো, আমার সাথে কত ভালো ব্যবহার করেন দেখতেও কত সুন্দর আর অন্যদিকে আমার স্যার সারাক্ষণ কেমন যেন খিটখিটে হয়ে থাকেন অবশ্য দেখতে সিয়াম স্যার,ইকবাল স্যার এর থেকে কোনো অংশে কম নন । "
এরপর আলো ও সিয়ামকে দেখা যায় রিয়াজের সাথে তারা সিয়ামের অফিসে বসে কথা বলছে । সিয়াম রিয়াজকে বলছে, " এই যে তোমার বাবার post mortem report এইখানে স্পষ্ট দেওয়া আছে তোমার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন । তোমার বাবার মৃত্যুতে ইউসুফ আলী অর্থাৎ তোমাদের কাজের লোকের কোনো দোষ নেই । তুমিই ভেবে দেখ ... "
সিয়ামের কথার মাঝখানেই তার ফোনটা বেজে ওঠে এবং সিয়াম সাইডে গিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগে তখন আলো রিয়াজকে বলে, " রিয়াজ আমি বুঝতে পারছি তুমি তোমার বাবার মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছো। তোমার বাবার মৃত্যু মেনে নিতে না পেরেই হয়তো তুমি ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে কেস করেছো কিন্তু তোমার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে এতে ইউসুফ আলীর কোনো দোষ নেই । "
আলোর কথা শুনে রিয়াজ বলে ওঠে " আমার বাবার মৃত্যুটা যে স্বাভাবিক হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে তা আপনি কি করে জানলেন ? "
আলো ভ্রু কুঁচকে বলে," আমি কী করে জানলাম মানে ? এটাতো post mortem report-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে ।
রিয়াজ গম্ভীর কন্ঠে বলে , " অনেক সময় স্বাভাবিক বিষয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকে অস্বাভাবিক কিছু রহস্য ।
আলো অবাক হয়ে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কী বলতে চাইছে রিয়াজ ?
অনেক সময় স্বাভাবিক বিষয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকে অস্বাভাবিক কিছু রহস্য এই কথাটি দ্বারা রিয়াজ আলোকে কি বুঝাতে চাইছে ? তবে কী আনোয়ার উদ্দিনের মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো রহস্য ?
