Rituparna Rudra

Comedy

3.2  

Rituparna Rudra

Comedy

রাগে অনুরাগে

রাগে অনুরাগে

5 mins
20K


ক্রীং ক্রীং

মৌ :    হ্যালো কে বলছেন?

পিয়াল:  ইয়ে আমি রে, পিয়াল

মৌ :   মানে? তুই কোন নাম্বার থেকে ফোন করছিস? এসবের মানে কি?

পিয়াল: কি করবো বল, নিজের নাম্বার থেকে ফোন মেসেজ সবই তো করে চলেছি, তুই দেখছিসও না ধরছিসও না,তাই এক বন্ধুর নাম্বার থেকে করলাম….

মৌ : দেখছি না, ধরছি না কারণ আমি আর কথা বলতে চাই না৷ এটা তোর মাথায় ঢোকেনি?

পিয়াল: তোর তো কথা না বললেও চলে কিন্তু আমার যে বিশেষ দরকার, তাই বাধ্য হয়ে..

মৌ :  তা কথাটা কি? শোন তুই তো ভালোই জানিস, চাকরি নিয়ে, নিজের নাচ নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত৷ মা এর সাথে থাকতেই আমি ভালোবাসি, বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই আমার ছিলো না৷ এসব ভূত তোর মাথায় ঢুকেছিলো, চল না মৌ বিয়ে করি, একসাথে থাকবো, বাচ্চা হবে, গুষ্টির পিন্ডি হবে! এইসব তোর আইডিয়া ছিলো, আমি রাজি হয়েছিলাম আর তারপরে.. উফফ।

পিয়াল: এত রাগ করিস কেন রে?

মৌ : রাগ করার কারণ নেই বলছিস? বিয়ের ঠিক হোল মার্চ মাসে তারপরে বললি ভীষণ গরম তখন, তার থেকে জুলাই মাসে হোক আমিও রাজি হলাম তোর কথায়। শেষে কি দাঁড়ালো?

পিয়াল: কি করি, বাড়ির সবাই বললো ওইসময়ে যখন তখন বৃষ্টি নামে, ইয়ে মানে পিসি আসবে বিদেশ থেকে, খুব শখ ওপেন এয়ারে বুফে সিস্টেমে খাওয়া হবে, চারদিকে গাছ, আলো দিয়ে সাজানো। সেইসময়ে যদি বৃষ্টি নামে, তাহলে বুঝলি তো সব কেলো, দামি শাড়ি টাড়ি সব কাদা লেগে, তারপরে ধর কেউ পিছলে পড়ে গেলো, সেই সব ভেবে।

মৌ : হুম আমি আর মা এদিকে বাঁদর নাচ নাচছি, জুলাই ভেবে মা ছুটি কিভাবে নেবে সেটাও ঠিক করে নিয়েছে। কেন বিয়ে বাড়ি ভাড়া নেওয়া যায় না? তোদের বাড়িতেই তো হতে পারতো, তা নয় ওপেন এয়ার নিকুচি করেছে। পরিষ্কার জানিস আমার ভালো লাগে না এসব। রেজিস্ট্রি করে একটা অনাথ আশ্রমে আর একটা বৃদ্ধাশ্রমে সবাইকে লাঞ্চ খাওয়াতাম সেটাই আমার প্ল্যান ছিলো। তা তোদের বাড়ির পিসি, মাসি সবার চার রকমের আবদার আছে, সাজ-গোজ গুচ্ছের লোক খাওয়ানো, ওপেন এয়ার, বিউটি পার্লার এসব একদম ভালো লাগেনা আমার।

পিয়াল: সে ঠিক আছে, হুঁহুঁ, আমিও সবাইকে বলে দিয়েছি মৌ অন্যরকম মেয়ে খুব আদর্শ মেনে চলে, কেবল রেজিস্ট্রি হবে ওদের বাড়িতে, আর চা বিস্কুট খাওয়াবে, আর সব খাওয়া অনাথ আশ্রমে আর বৃদ্ধাশ্রমে। তা শুনে সবাই বললো ওরা ওদের মত করুক না কিন্তু, পিয়াল তুই যে আমাদের বাড়ির একমাত্র ছোট ছেলে মানে এটাই এই জেনারেশনের শেষ কাজ আমরা একটু ধুমধাম করতে চাই। মণিমাসি বললো প্রচুর শাড়ি রেখেছে তোর জন্য আর নিজেও অনেক সাজবে ভেবেছে। বাবা আর মেসোরা কি কি খাওয়াবে সব প্ল্যান রেডি করেছে। এরা কেউ শুনতে চাইলো না, আমি কি অসহায় সেটা ভাববি তো।

মৌ : তুই একটা যা তা, একটা জঘন্য তোকে মেরেই ফেলবো।

পিয়াল: সে তো কবে থেকেই শুনে আসছি, নতুন কি হোল?

মৌ : তোর এত সাহস! বললি কিনা কেবল চা আর বিস্কুট খাওয়াবো, এটা কবে বলেছিলাম শুনি? মা কত রকম মেনু ভাবছে তার ঠিক নেই।

পিয়াল : দেখলি সবাই লোক জনকে খাওয়াতে চায় তুই খালি আমার দোষ দেখিস।

মৌ : খাওয়া না, সবাইকে খাওয়া। বৃষ্টি হবে, কাদা হবে এই সব বলে জুলাই থেকে ডিসেম্বরে আনলি আর কাল বললি ডিসেম্বরেও হবে না আবার ডেট চেঞ্জ। আমি আর এর মধ্যে নেই, আর শোন অফিসে কাজ আছে আমার, ফোন রাখছি।

পিয়াল : মৌ প্লিজ প্লিজ, তোর লাঞ্চ টাইম এখন, তাই তো ফোন করলাম। তুই এর মধ্যে থাকবি না এটার মানে কি? কাকে বিয়ে করবো তবে?

মৌ : যাকে ইচ্ছে কর, আমাকে জ্বালাবি না, একটা নেকু পুষুকে কর যে যখন বলবি বিয়ে করবে, তোর সব কথা শুনবে। ওই তো আছে তো তোদের নাটকের দলের, তোর সব ছবিতে লাইক করে আর গদগদ কমেন্ট দেয়, কি যেন নাম মিলিতা না কি, ওকেই করে ফেল। বাই দ্য ওয়ে, তুই কার ফোন থেকে ফোন করছিস বলতো।

পিয়াল: ইয়ে মানে মিলিতার ফোন থেকে।

মৌ : হাউ ডেয়ার ইউ, ওই ন্যাকা পেত্নীর ফোন থেকে তুই আমায় ফোন করছিস! আর ও এইসব শুনছে? জীবনে আর তোর সাথে যদি কথা বলি।

ভাঁড়ে যা তুই।

মা: মৌ এসে গেছিস, পিয়ালের সাথে কথা হয়েছে তো? সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো, সত্যি।

মৌ : কি ঠিকঠাক হবে মা? পিয়ালের নাম আমার সামনে বলবে না। সব ক্যান্সেল।

মা: কি ক্যান্সেল? কি বলছিস কিছুই তো বুঝতে পারছিনা মা। এই নে চা।

মৌ : ভাবতে পারো এখন বলছে ডিসেম্বরেও ওদের অসুবিধা, পরে হবে। ইয়ার্কি? আমিও বলে দিয়েছি বিয়েই করবো না। করুক যাকে খুশি।

মা: কি পাগল মেয়ে রে তুই। আজই সকালে ওর মা ফোন করেছিলেন। দুপুরে সবাই এলেন তো, পাকা কথা বলে গেলেন। ডিসেম্বারেই হবে। পিয়ালও তো ছিলো। ও তোকে ফোনও তো করলো ওই ঘরে গিয়ে,আমায় এসে বললো তুই খুব খুশি আর বলেছিস বিয়ের সময়ে শাড়ি পরতেও তুই নাকি রাজি।

মৌ : পাজি, বদমাশ, ছুঁচো। ও কার ফোন থেকে ফোন করেছিলো মা? অন্য নাম্বার দেখলাম।

মা: ও তোর ছোটমামার ফোন থেকে, বললো ওর নিজের ফোন গণ্ডগোল করছে? কেন তোর কাছে সুনুর নম্বর নেই?

মৌ : না। এই ফোনে নেই, তাই আমার সাথে ধোঁকাবাজি করেছে। দাঁড়াও না দেখাচ্ছি মজা। বিয়েই করবো না।

মা: কি যে ছেলেমানুষি করিস না, তুই ও রাগিস, পিয়ালও তোকে রাগিয়ে আনন্দ পায়। একটু বড় হ। ওদের খুব ভালো লেগেছে তোর আইডিয়া। একটা অনাথ আশ্রমে আর বৃদ্ধাশ্রমে খাওয়ানো হবে। খরচ তোরা ভাগ করে দিবি।

মৌ : আর ও কি বলেছে আমি শাড়ি পরবো বলেছি? এরকম কিচ্ছু বলিনি। শাড়ি ফাড়ি মোটেই পরবো না। করুক না বিয়ে মিলিতাকে।

মা: মিলিতা এলো কোথা থেকে? সব কিছুতে ছেলেমানুষি মানায় না মৌ। বিয়ের দিনে শাড়ি পরবে, সেটাই সভ্যতা। আমি বলছি আর কোন কথা নয়। আর এখন দয়া করে পিয়ালের সাথে কথা বলে নাও।

মৌ :   হ্যালো।

পিয়াল: বলুন মহারাণী, ফাঁসির হুকুম রদ হয়েছে দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।

মৌ: মিথ্যেবাদী, ছোটলোক, ওটা মিলিতার নম্বর?

পিয়াল: হাহাহা, কেমন দিলাম? তোকে রাগানোর একটা সুযোগও ছাড়তে মন চায় না রে। আর নিজের ছোটমামার নম্বর জানিস না সেটা আমার দোষ নাকি!

মৌ: হুম, জানিস তো আমি রেগে যাই, আর মাকে বলেছিস আমি শাড়ি পরবো বলেছি?

পিয়াল : হুম পরবি তো, রোজ যে তোকে স্বপ্নে দেখি বেনারসি শাড়ি পরা। পরবি না?

মৌ : হুম পরবো তো।

পিয়াল : পাগলি এমনই থাকিস, এমনই বকিস আমায় সারাজীবন, কেমন?শুধু ছেড়ে যাসনা।

মৌ: আমি খুব খুশি হয়েছি, অনাথ আশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমের খাওয়া ফাইনাল তাই।

পিয়াল: ওরে বাবা কার ঘাড়ে কটা মাথা তোর প্ল্যান ফাইনাল করবে না? আমি তো বলে দিয়েছি বুফেতে যা মেনু ওখানেও তাই হবে। তারপরে যদি বুড়ো বুড়িদের পেট খারাপ হয়, কুছ পরোয়া নেহি, পরের দুদিন স্যালাইনের বোতল, এন্টেরোকুইনল নিয়ে আমরা হাজির থাকবো।

মৌ : খালি ঠাট্টা আর বাজে কথা, না? পাজি, কথাই বলবো না তোর সাথে

পিয়াল : হাহাহাহা,  পাগলি একটা।

#Love


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy