Rituparna Rudra

Inspirational Others

3  

Rituparna Rudra

Inspirational Others

বন্ধন(শেষ পর্ব)

বন্ধন(শেষ পর্ব)

3 mins
7.8K


চলে গেছে কয়েকটি দিন, সাক্ষীর সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি, বাড়ির লোকের কথা মত ও হয়তো চাকরি ছেড়ে বাড়িতে থাকবে এরকম বলছিল একদিন। সেদিন ওদের বস্ অফিসে নেই, ওদের হাতে কাজও কম, কলির মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। 

"সাক্ষী, তোর কাছে অভিজিতের অফিসের ফোন নম্বর আছে?"

"আমার ফোন ডায়েরিতে লেখা আছে, ব্যাগেই তো রাখি। কেন রে?"

"ফোন কর তো ওকে অফিসের নম্বর থেকে।"

"ফোন করবো!" সাক্ষী হতচকিত।

হ্যাঁ কর, দেখ তোর অভিজিত এতদিনে ভুলে গেছে তোকে আর তুই ওর জন্যই বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছিস। করনা, একবার কথা বললে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। 

অনেকবার বলার পরে রাজি হয় সাক্ষী, কাঁপা কাঁপা হাতে নম্বরটা বার করে দেয়। ফোনটা স্পিকার মোডে দিয়ে কলিই নম্বর ডায়াল করে.. রিঙ হচ্ছে। একটু বাদে বাদে ভারি পুরুষ কন্ঠ শোনা যায়

"হেলো অভিজিত চৌধুরি স্পিকিং"

কলির খোঁচাতে সম্বিত ফেরে সাক্ষীর, বলে হেলো..

"কে বলছেন?"

কাঁপা গলায় সাক্ষী আবার বলে হেলো...

ওপ্রান্তে চুপচাপ, তারপর আওয়াজ ভেসে আসে " সাক্ষী কেমন আছো?"

কলি তাকিয়ে দেখে সাক্ষী আর কিছু বলার অবস্থায় নেই শুধু চোখ থেকে জল পড়ছে হু হু করে।

সেদিন কলিই বাধ্য হয়ে ফোন নামিয়ে রেখেছিল কারন দু প্রান্তে কেউ আর কথা বলতে পারে নি। একজন মানুষ তিন বছর বাদে অচেনা ফোনে শুধু হেলোটুকু শুনে তার গলা চিনে নেয় এই আবেগ সাক্ষীকে নাড়িয়ে দিয়েছে আরো। কলি এবার বোঝায় সাক্ষীকে, বলে এত ভালবাসা হেলায় হারাস না, তুই ফোন কর ওকে আর কথা বল, বাড়িতেও বাবার সাথে কথা বল দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই এত ভয় পাস না। কলির দেওয়া সাহসে পরের দিন আবার ফোন করে সাক্ষী। অভিজিত অপেক্ষায় ছিল হয়তো, প্রায় আধ ঘন্টা কথা বলল দুজনে, কিন্তু অফিসের ফোন তো এতক্ষণ বন্ধ করা যায় না তাই ছাড়তেই হোল। পরদিন অফিস ছুটির সময়ে অভিজিত এসে হাজির। এতদিনের জোর করে বন্ধ রাখা আবেগের আগল খুলে দুজনেই যেন ভেসে যাচ্ছিল। অফিসে ততদিনে সবাই জেনে গেছে। প্রায় নতুন জামাই এর মত আপ্যায়ন পেল অভিজিত। চা মিষ্টি সব দেওয়া হোল। কিন্তু চিন্তা একটাই সাক্ষীর বাড়িতে কি হবে।

কলি পরদিন ভেবে চিনতে ফোন করল সাক্ষীর বাড়িতে আন্টিজির সাথে তার প্রায়ই কথা হয়। 

"হেলো আন্টি "

'কে কলি হ্যাঁ বলো বেটা।' আন্টি বেশ ভাল বাংলা জানেন।

"আপনি সাক্ষীর বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তা করছেন তাই না?"

"তা তো করছি, কেন বলো তো?

"আন্টি আমার পরিচিত খুব ভাল একজন ছেলে আছে, কলকাতায় থাকে, অনেক বড় চাকরি করে, খুব ভাল বাড়ির ছেলে, শিক্ষিত, আমাদের অফিসে সাক্ষীকে দেখে পছন্দ হয়েছে ওখানে বিয়ে দেবেন?"

এত ভাল ছেলে, কিন্তু আমাদের কাস্টের হবে তো, আমরা গোয়েল জান তো, আর দহেজ্ কি নেবে ওরা?

"আন্টি দহেজ্ কিছু লাগবে না কিন্তু ছেলে বাঙালি"।

"বলো কি তুমি, ওর দাদাজী কিছুতেই রাজী হবেন না"।

'রাজি করানো আপনার কাজ আন্টি, একটাই তো মেয়ে আপনার, কতো দূরে দূরে সম্বন্ধ খুঁজছেন, এখানে মেয়ে কলকাতায় থাকবে, বাঙালি বাড়িতে ও সুখে থাকবে আপনি জানেন তো সেটা?'

"সে সব তো জানি, কলি কিন্তু"

"কোনো কিন্তু নয়, আপনি আঙ্কেল কে নিয়ে দাদাজীর সাথে কথা বলুন। ছেলে চাটার্ড আকাউন্টেট চাইলে ব্যাবসাও ভাল বুঝে নেবে। আজ সাক্ষী ফিরলে আপনি ছেলের বাড়ির নম্বর নিয়ে নিন। সব খোঁজ খবর নিয়ে তারপর দাদাজী কে বোঝান। ফোন রাখছি এখন। "

কলির যুক্তিজাল শুনে সাক্ষী প্রায় অজ্ঞান হয় আর কি।

ঘটনা এরপর তাড়াতাড়ি ঘটল। দাদাজী প্রাচীন পন্থী হলেও বুদ্ধিমান মানুষ, পাত্রর কোনো চাহিদা নেই শুনে আর চাকরি দেখে বিশেষ আপত্তি করলেন না। শুধু মেয়ের বৌভাতে তাদের পরিবারের লোককে সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবার পরিবেশন করতে হবে বলে জানালেন, যদিও প্রথা অনুযায়ী তিনি এবং সাক্ষীর বাবা মা মেয়ের বাড়িতে জলও খাবেন না। অভিজিত কোনো কিছুতেই আপত্তি জানায়নি। 

বিয়ের দিন কলিকে জড়িয়ে ধরে সাক্ষী বলল, কলি তোকে দেখে আমি শিখলাম যে জীবনে অনেক বড় বাধাও অতিক্রম করা যায় যদি মনের জোর করে এগিয়ে যাওয়া যায়, আসলে ভয়টাই আমাদের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational