রাগে_অনুরাগে_৭
রাগে_অনুরাগে_৭
(হঠাৎ মিশকা কে কোলে তুলে নিয়ে উজান ছাদে যায়।মিশকা বেঞ্চে বসিয়ে দেয়।নিজেও পাশে বসে।)
মিশকা:দাদাভাই তোমার চোখে জল!!তুমি হিয়া দির জন্য কাদঁছো!!!
উজান:না কাঁদছি না তো চোখে কি যেন পড়েছে..!!
মিশকা:ডক্টর উজান চ্যাটার্জী ও আজকাল মিথ্যে বলছে..?তুমি যদি নাই কাঁদো তাহলে তোমার আলমারি তে নতুন প্যাকেটে শাড়ি ডায়মন্ড রিং এসব কি করছে কার জন্য এনেছে..নিশ্চই হিয়া দির জন্য এনেছো তাই না দাদাভাই।
মিশকা:কি হলো দাদাভাই চুপ করে আছো কেন...নাকি সত্যিটা থেকে মুখ লুকোচ্ছ তাই চুপ করে আছো?
উজান:আমার বলার মতো কিছুই নেই কারণ আমি কখনোই হিয়ার কাছে স্বীকার করতে পারবো না যে ওকে আমি ভালোবাসি♥।
মিশকা:ভালোবাসো যখন তাহলে স্বীকার করতে বাঁধা কোথায় দাদাভাই?
উজান:মিশকা তুই কিন্তু বড্ড পেকেছি..!
মিশকা:হুম...পেকেছি তো কি হয়েছে তোমার থেকে শিখেই পেকেছি।
উজান:মিশকা
মিশকা:দাদাভাই তোমার ফোনটা দাও তো?
উজান:কেন!
মিশকা:হিয়া দি কে ফোন দিয়ে তোমার সব গুণকীর্তন বলে দেবো।
উজান:একদমই না তাহলে তো কখনোই ফোন পাবি না।
মিশকা:আচ্ছা বলবো না..তাহলে তুমি ফোন দিয়ে বলো যে আমার রাতের মেডিসিন খুঁজে পাচ্ছো না কোথায় রেখেছে এসে যেন খুঁজে দিয়ে যায়!!
উজান:কেন আমি তো জানি তোর মেডিসিন কোথায় থাকে।
মিশকা:উফ বেশি বোঝো যা বলেছি তাই করো যদি না করো আমি সিঁড়ি বেয়ে দিয়ে নিচে ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করছি।যদি পড়ে যায় তাহলে আমাকে কিছু বলতে আসবে না হু।
উজান:না একদম একা যাবি না তোর তো সিঁড়িতে ওঠা নামা করা নিষেধ।
মিশকা:ঠিক আছে যাবো না...তাহলে ফোনটা করো।
উজান:করছি।
অগত্যা মিশকার জেদের কাছে হার মেনে উজান হিয়া কে ফোন করে।মিশকা যা যা বলতে বলেছিল সব বলে।
মিশকা:কি বললো হিয়া দি?
উজান:২০মিনিটে আসছে।
মিশকা:ওকে তাহলে দাদাভাই নিচের ঘরে থেকে আমার ড্রাইং বক্সটা নিয়ে আসো ওখানে বেলুন আর মোমবাতি আছে!
উজান:কি করবি?
মিশকা:ডেকোরেশন করবো..তুমি আজ তোমার মিস মিত্রকে অফিসিয়ালি প্রোপোজ করবে তো তাই।
উজান:অ্যা!
মিশকা:অ্যা নয় হ্যাঁ
মিশকা:এখানে হতুম পেঁচার মতো দাড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি নিচে যাও..আমার ড্রইং বক্স আনার সময় নিচে বাগান থেকে রেড রোজ আর অ্যাডেনিয়াম এবং তোমার আলমারি থেকে ওই শাড়ির প্যাকেট আর ডায়মন্ড রিং এর বক্সটা ও নিয়ে আসবে...কি হলো যাও তাড়াতাড়ি যেকোনো হিয়া দি চলে আসবে আর আসার সময় মেইন ডোর খুলে রেখে আসবে।
উজান:যাচ্ছি...কি দিনকাল আসলো ড.উজান চ্যাটার্জী আজ একটা পুচকে মেয়ের কথামতো সব করছে..rediculous।
উজান নিচে চলে যায়।কিছুক্ষণের মাঝেই বেলুন,মোমবাতি,ফুল ডেকোরেশনের সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে উপরে আসে।
মিশকা:দাদাভাই বেলুনগুলো ফুলিয়ে সাইডটা সাজিয়ে ফেলো আর আমি বসে বসে ফুলগুলো সাজিয়ে ফেলি।
উজান বেলুন গুলো ফুলিয়ে সাজিয়ে ফেলে।মিশকা ফুলগুলো আর মোমবাতি টেবিল সাজিয়ে ফেলে।এর মাঝেই উজানের ফোন বেজে ওঠে।
উজান:মিস মিত্র অাপনি ছাদে আসুন আমরা ছাদে।
মিশকা:হিয়া দি কি বলল আসছে ছাদে?
উজান:হুম আসছে।
মিশকা আর উজানের কথার মাঝেই হিয়া ছাদে এসে উপস্থিত হয়।
হিয়া:উজান স্যার মিশকার ঔষধ তো ওর মেডিসিন বক্সেই আছে।
মিশকা:দাদাভাই তোমাকে একটা কথা বলবে বলে ডেকেছে।
হিয়া:কি বলবেন স্যার?
উজান:না কিছু না...ওই এমনি...!
মিশকা:দাদাভাই তুমি বলবে নাকি বলব
উজান:না একদমই বলবি না...ওসব কথা।
মিশকা:না আমি বলব...হিয়া দি দাদাভাই না তোমাকে...!
উজান:মিশকা চুপ করবি।
মিশকা:না আমি বলব বলব বলব...তোমার দ্বারা কিছুই হবে তাই আমি বলব।
হিয়া:এসব কি হচ্ছে স্যার আপন
ারা আমাকে দাড়িয়ে রেখে দুজনে মিলে ঝগড়া করছেন...ঠিক আছে আপনারা ঝগড়া করুন আমি চললাম।
উজান:মিস মিত্র আমি আপনাকে যেতে বলি নি...আপনি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন।
হিয়া:মানে আমার তো কাল সকালে ট্রেন আছে...তাই আমাকে হোস্টেলে গিয়ে ঘুমোতে হবে।আপনারা যা ইচ্ছে তাই করুন....!
উজান:না আপনার কোথাও যাওয়া চলবে না...!
হিয়া:কেন?
উজান:মিস মিত্র আপনি কি সারাজীবনের জন্য আমার অফিসিয়ালি OT assistent হবেন?
হিয়া:মানে?
মিশকা:হে ভগবান...এটা আবার কোন ধরনের প্রোপোজ।আরে হিয়া দি দাদাভাই তোমাকে নিজের ইউনিক স্টাইলে প্রোপজ করলো।
হিয়া:উজান স্যার আপনাকে দিয়ে শুধু ডাক্তারিটাই সম্ভব...অন্যকিছু আপনাকে দিয়ে সম্ভব নয়..!
উজান:অন্য সব কিছু সম্ভব করার জন্য তো আপনি আছেন...এতবছর আমার মুখ থেকে যে কথাটা শুনতে চেয়েছিলেন আজ শুনলেন...এবার খুশি তো?
হিয়া:হুম...খুশি..স্যার আমি কি জানতে পারি এতদিন আপনি কেন নিজের মনের কথা বলেন নি?
উজান:আমার মনে হয়েছিল দুজনের পৃথিবী পুরোটাই আলাদা...আর স্টুডেন্ট টিচারের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক মানতে আমার মনে দোটানা ছিলো তাই বলি নি....?
হিয়া:তা হঠাৎ আজ কেন নিজের মনের কথা আমার কাছে স্বীকার করলেন?
উজান:এ ক বছরে আপনি যে কখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন...আর এই অভ্যাসটা যে ভালোবাসায় রুপান্তর এ ব্যাপারটা বুঝতে পারি আপনার জন্মদিনের দিন।কিন্তু স্বীকার করতে পারতাম না নিজের Male Ego র কারণে..কিন্তু আজ আর সেই ব্যাপারটা আর নেই।আর আরেকটা কারণ মিশকা ও যদি জোর না করতো হয়তো আমি এ কথা গুলো আপনাকে বলার সাহস পেতাম না।
মিশকা:হিয়া দি এই নাও তোমার শাড়ি আর ডায়মন্ড রিং...এগুলো দাদাভাই কিনে নিজের আলমারিতে রেখেছিল..দাদাভাই যে কবে তোমায় দিতো..তাই আমি তোমায় দিয়ে দিলাম behalf on dr.ujaan chattarjee এর হয়ে।
হিয়া:দাদা-বোন দুটোই পাগল...আর দুটো পাগলই আমার কপালে এসেছে জুটেছে।
উজান:idoit...।
মিশকা:দাদাভাই তুমি অন্তত একটা রোজ হিয়া দি কে দাও...আমি একটু photo click করে রাখি।
উজান-হিয়া কে একটা রেড রোজ দেয়...মিশকা সেই মুহুর্তটা ক্যামেরা বন্দী রাখে সারাজীবনের স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য।
মিশকা:দাদাভাই আমি বাহিরে ঘুরতে যাবো।
উজান:রাত ২টো বাজে এতরাতে কোথায় যাবি?
মিশকা:রাতের তিলোত্তমা দর্শনে যাব..প্লিজ নিয়ে চলো না দাদাভাই...প্লিজ..প্লিজ..প্লিজ...!
উজান:না রাতে তোর তিলোত্তমা দর্শনে যেতে হবে না..নিচে গিয়ে ঘুমোবি।
মিশকা:।
হিয়া:উজান স্যার মিশকা যখন এত করে বলছে একবার ওকে নিয়ে ঘুরে আসুন।
মিশকা:গেলে আমরা তিনজন যাবো...তুমিও যাবে আমাদের সাথে হিয়া দি।
হিয়া:কিন্তু কাল তো বাড়ি যাব..সকালে ট্রেন আছে.!
উজান:ফোন দিয়ে টিকিট করুন...আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।
হিয়া:কিন্তু বাবার সাথে দেখা করতে হতো তাই কাল যাব...দুদিন থেকে চলে আসব।
উজান:অন্যদিন যাবেন কাল নয়...আর এখন আমাদের সাথে রাতের কলকাতা ঘুরতে যাবেন...আমি মিশকা নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসছি আপনি ছাদ থেকে গেস্ট রুমটা লক করে আসুন।
হিয়া:হুম।
অগত্যা উজানের কথা মেনে নেয় হিয়া।উজান মিশকা কে কোলে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে যায়।পার্কিং এ গিয়ে মিশকাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।হিয়া নিজেও গেস্টরুম লক করে এসে গাড়িতে বসে... উজান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় রাতের মোহময়ী তিলোত্তমা দর্শনে...।
সমাপ্ত.....
এভাবেই শুরু হয় আমার বাস্তব জীবনের উজান হিয়ার নতুন জীবনের পথচলা।দুজনের সেই নতুন পথচলার একমাত্র সাক্ষী মিশকা মানে...আমি।এই ২০২০ তে প্যানডেমিক না হলে ১৮জুন তাদের বিয়ে হয়ে যেতো।কিন্তু তাদের কর্মক্ষেত্রটাই এমন নিজেদের কথা ভাবলে চলে না।হয়তো এখন তারা ওয়ার্ডে পেশেন্ট দেখতে ব্যস্ত...।