"বেখেয়ালী কলম"

Drama Romance

3  

"বেখেয়ালী কলম"

Drama Romance

''অনুরক্তি''

''অনুরক্তি''

6 mins
194


 

  পর্ব_৩


ফ্ল্যাটে ঢুকেই বাড়ির কেয়ারটেকার, কাম বাসবীর ডান হাত দীনুর উদ্দেশ্যে বাসবী বলে۔۔


বাসবী: দীনু, আমার ওষুধের বক্সটা আর এক গ্লাস জল দিয়ে যা তো۔۔


কিন্তু দীনু আসার আগেই অন্য একজন বাসবীর কাছে উপস্থিত হয়۔۔ বাসবী চমকে উঠে বলে۔۔۔


বাসবী: ময়ূখ?


ময়ূখ জড়িয়ে ধরে বাসবীকে۔۔ একটু পরে ছেড়ে দিয়ে বলে۔۔


ময়ূখ: কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো?


বাসবী অভিমানে মুখ ফোলায়: You are very bad....very very very bad...


ময়ূখ: যাহ, বলে দিলে আবার সারপ্রাইজ দেওয়া যায় নাকি?


বাসবী: কবে এলি শিকাগো থেকে?


ময়ূখ: আজ۔۔ এয়ারপোর্ট থেকে ডাইরেক্ট এখানে চলে এলাম۔۔ আর আমার কে আছে বলো তুমি আর দাদাভাই ছাড়া۔۔ মা চলে যাবার পর ওই বাড়িটা কেমন যেন খাঁ খাঁ করে۔۔


বাসবী ময়ূখের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে: তু্ই এখানেই থেকে যা না? উজানটা তো বাড়িতে থাকলেও মনে হয় নেই۔۔ আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমিই ওর মা তো? আমার কি কোনো গুনই পেতে নেই ওকে?


ময়ূখ: পেয়েছে না? দাদাভাইয়ের মতো ইন্টেলিজেন্ট, সৎ, দায়িত্বিশীল মানুষ কটা হয় মাসি?


বাসবী কপট রাগ দেখিয়ে বলে: বাকি গুনগুলোও বল۔۔ গোমড়া, জেদী, রাগী, একগুঁয়ে۔۔۔۔۔۔۔এগুলো কে বলবে?


ময়ূখ হেসে বলে: আমার দায় পড়েছে নিজের দাদার সম্পর্কে এসব বলতে۔۔ তবে আমিও ভেবেছি এখন কয়েকটা দিন এখানেই থাকবো তোমার আর দাদাভাইয়ের সাথে۔۔ তারপর যেদিন ইচ্ছে করবে সেদিন না হয় নিজের ফ্ল্যাটে ফেরা যাবে۔۔


বাসবী খুশি হয়: খুব ভালো ভেবেছিস۔۔۔ এখান থেকে তোর হসপিটালও কাছে۔۔ যাহ্, তোকে তো জিজ্ঞাসা করতেই ভুলে গেছি۔۔ হ্যাঁ রে ওখানে সব ঠিক ছিলো তো?


ময়ূখ: হ্যাঁ মাসি۔۔۔ দুটো বছর দেখতে দেখতে কেটে গেলো۔۔ নামের পাশে আরো একটা কোয়ালিফিকেশন বসলো۔۔ আমাদের ডাক্তারদের কাছে এই কোয়ালিফিকেশন গুলো মারাত্মক ইম্পরট্যান্ট۔۔ পড়তে গিয়ে কত নতুন নতুন জিনিস শেখা যায়۔۔


এরই মাঝে দীনু এসে সেন্টার টেবিলে ওষুধের বক্স আর এক গ্লাস জল রেখে যায়۔۔


বাসবী: যাক তু্ই ফিরে এসেছিস, আমি খুশি۔۔۔ আমার তো মনে হতো তু্ই আবার ওখানেই না ডেরা বাঁধিস۔۔۔


ময়ূখ: ওসব কথা পরে হবে۔۔ আগে বলতো বাড়ি ঢুকতে ঢুকতেই ওষুধ চাইলে কেন? শরীর খারাপ করেছে তো?


বাসবী: তেমন কিছু না রে۔۔ প্রেসারটা একটু বেড়েছে, এই আর কি?


ময়ূখ: প্রেসার বেড়েছে আর এই অবস্থায় তুমি একা বেরিয়েছ, তাও গাড়ি ছাড়া? দাদাভাই জানলে তোমাকে ঘরে তালা মেরে রেখে দেবে۔۔


বলতে বলতে ময়ূখ বাসবীর পালস রেট চেক করতে শুরু করে۔۔


বাসবী একটু নীচু গলায় বলে: ওকে বলবে টা কে? আমি বলবোনা, দীনুও বলবেনা, আর তু্ই নিশ্চয় আমার দলেই থাকবি?


বাসবীর পালস চেক করা হয়ে গেলে ময়ূখ বলে: তোমার কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হবে ভেবে দেখেছো? 


বাসবীর গলায় অভিমানের সুর: তোদের দুজনেরই কিছুই এসে যায়না, জানি আমি۔۔۔


ময়ূখ অবাক হয়ে বলে: মানে?


বাসবী: তোরা আমার কথা শুনিস যে আমাকে তোদের কথা শুনতে হবে?


ময়ূখ: তোমার কোন কথাটা কে শুনলনা বলো তো?


বাসবী: কবে থেকে বলছি বিয়েটা কর এবার, দুজনের কেউ শুনছিস সেকথা?


ময়ূখ এবার বাসবীর অভিমানের কারন বুঝতে পারে۔۔


ময়ূখ হেসে বলে: আরে আমি কবে বললাম যে বিয়ে করবোনা? তখন একটু ব্যস্ত ছিলাম ক্যারিয়ার নিয়ে তাই তখন করিনি۔۔ এখন তো আর বাধা নেই۔۔ তুমি যেদিন বলবে সেইদিনই ছাতনাতলায় বসবে তোমার এই ছেলে, হুম۔۔ কিন্তু মাসি দাদাভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে আমি কি করতে পারি?


বাসবী ময়ূখের হাত ধরে বলে: উজানকে একটু বোঝা না۔۔


ময়ূখ ঢোক গিলে বলে: কে, আ۔আমি? দাদাভাইকে? বিয়ে? রক্ষে করো মাসি۔۔ ও দায়িত্বটা তুমি নিজেই নাও۔۔


বাসবী হাত ছেড়ে দিয়ে বলে: চেষ্টা কি আর কম করেছি? বলছে ও নাকি বিয়েই করবেনা۔۔ ভাব একবার? 


ময়ূখ অবাক হয়ে বলে: মানে? সারা জীবন চিরকুমার হয়ে বসে থাকবে?


বিরক্তি ঝলসে ওঠে বাসবীর গলায়: থাকাচ্ছি۔۔


ময়ূখ: এই তো আমার মাসির মতো কথা۔۔ তুমি ফিল্ডে নামো, আমি তোমার সাথে আছি۔۔


বাসবী: নেমে আমি অনেক আগেই পড়েছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত গোলটা দিতে পারিনি۔۔ এতগুলো সম্বন্ধ আনলাম, একবারের জন্যও একজনের সাথে দেখা করলোনা জানিস?


বাসবীকে উত্তেজিত হতে দেখে ময়ূখ এক গ্লাস জল এগিয়ে দেয় বাসবীকে۔۔


ময়ূখ: মাসি তোমার প্রেসারটা কিন্তু একটু ওপরের দিকে, এতো চাপ নিও না۔۔ দাদাভাই বিয়ে করবে, কিন্তু ওর যোগ্য মেয়েও তো পেতে হবে۔۔


বাসবী তেড়ে ফুঁড়ে ওঠে: কি বলতে চাইছিস? এতোগুলো মেয়ে সব অযোগ্য? তোর দাদাভাই কোথাকার কে রে?


ময়ূখ হেসে বলে: দেখো যোগ্য, অযোগ্য বিচারটা বড্ডো আপেক্ষিক۔۔ আমার জন্য যে রকম মেয়ে উপযুক্ত সে দাদাভাইয়ের জন্য নাও হতে পারে۔۔ আবার উল্টো ঘটনাটাও সত্যি۔۔ তুমি সেই মেয়েগুলোকে কি ঠিকমতো চিনতে, যার জন্য মনে হলো তারা প্রত্যেকে দাদাভাইয়ের উপযুক্ত? শিক্ষাদীক্ষা, অর্থ, সামাজিক প্রতিষ্ঠাই কিন্তু সবাইকে সবার যোগ্য করে না۔۔


ময়ূখের কথাটা ভাবতে বাধ্য করে বাসবীকে۔۔ সে চুপ করে ভাবে۔۔ সত্যিই তো, উজানের জন্য ওদের সোসাইটি থেকে তথাকথিত অনেক ভালো ভালো সম্বন্ধ এসেছে۔۔ বাসবীর সেই সমস্ত বাবা-মায়েদের সাথে আলাপ থাকলেও, সন্তানদের সাথে সেরকম আলাপ নেই۔۔ ময়ূখের কথা ফেলে দেবার মতো না۔۔ তাহলে ও এখন কোথায় খুঁজবে ওর উজানের উপযুক্ত বৌ? হঠাৎই একটা হালকা আলোর রেখা যেন দেখতে পায় বাসবী۔۔ তাই তো۔۔۔۔۔۔


ময়ূখ: আমি বলি কি, দাদাভাইয়ের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ না করে লাভ ম্যারেজ করলেই বরং ভালো۔۔


বাসবী চমকে ওঠে: অ্যাঁ? লাভ ম্যারেজ? উজান? পাগল হলি?


ময়ূখ: একেবারেই না মাসি۔۔ দাদাভাই নিজে পছন্দ করে বিয়ে করলে তবেই ভালো থাকবে۔۔ অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের কথা ভাবলে, তুমি পাত্রী খুঁজেই যাবে আর দাদাভাই না দেখেই রিজেক্ট করেই যাবে۔۔


বাসবী একটু ভেবে নিয়ে বলে: তোর কি মনে হয়? তোর দাদাভাইয়ের জন্য কিরকম মেয়ে উপযুক্ত? আমি তোর মতামত জানতে চাইছি۔۔


ময়ূখ: এমন কেউ যে অনেস্ট, ইন্টেলিজেন্ট, কাইন্ড হার্টেড হবে۔۔ যে তোমাকে দেখবে۔۔ এই বাড়ির মান আর ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারবে, এবং সর্বপরি দা উজান চ্যাটার্জীকে সামলানোর ক্ষমতা রাখবে۔۔।।


বাসবী: তোর বাকি পয়েন্ট গুলো মেনে নিলাম, কিন্তু বাড়ির মান, ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারবে কিনা সেটা কেউ বলতে পারবেনা۔۔ বাড়ির ছেলে মেয়েরা অনেকসময় নিজেরাই সেটা করে উঠতে পারেনা, তাহলে অন্য আরেকজন যে সম্পূর্ণ নতুন তার উপর দায়িত্ব দেওয়া কেন? তাকে তো পরিবারটা আপন করতে দিতে হবে আগে, তবে না তার মান রক্ষা করতে পারবে۔


ময়ূখ: তা ঠিক۔۔


বাসবী: তু্ই বরং একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মিস করে গেলি۔۔ হাসিমুখী বৌমা চাই আমার۔۔ গোমড়া ছেলের সাথে যদি গোমড়া বৌমা জোটে তাহলে আমার কাশিবাসি হওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা۔۔


ময়ূখ জোরে হেসে ওঠে: একটা কিন্তু সত্যি ভ্যালিড পয়েন্ট মাসি۔۔۔ সরি, মিস করে যাবার জন্যে۔۔


হিয়া যখন চ্যাটার্জী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজে প্রবেশ করে তখন ও শিডিউল্ড টাইমের থেকে পুরো দেড় ঘন্টা লেট۔۔ বাকিরা তাদের প্রেজেন্টেশন দিয়ে চলেও গেছে۔۔ হিয়া যখন কোম্পানি সেক্রেটারিয়েট যশরাজ সোলাঙ্কির কেবিনে যায় তখন ভদ্রলোকের মুখ দেখেই ও আন্দাজ করে নেয় যে কি হতে চলেছে۔۔ হিয়াকে বসতে বলে মি: সোলাঙ্কি সবেমাত্র কথা শুরু করতে যাবেন, এমন সময় ওনার ফোনে রিং হয়۔۔


মি: সোলাঙ্কি: Yes Sir.......Sure Sir......not a problem at all... Yes Sir...


ফোন রাখার পরই মি: সোলাঙ্কির হাবভাবে হঠাৎই পরিবর্তন লক্ষ্য করে হিয়া۔۔


মি: সোলাঙ্কি: মিস মিত্র আপনি নিশ্চয় তৈরী হয়েই এসেছেন? প্রেজেন্টেশনটা তাহলে শুরু করুন۔۔


আচমকা অবস্থার পরিবর্তনে হিয়া কয়েকমুহূর্তের জন্য হকচকিয়ে যায়, তারপর নিজেকে দ্রুত সামলে বলে۔۔


হিয়া: Yes of course..


মি: সোলাঙ্কি: আর হ্যাঁ মিস মিত্র, ভবিষ্যতে লেট হবেন না۔۔ এক ভুলের কিন্তু বার বার ক্ষমা হয়না۔۔ আমাদের এম.ডি স্যার এমনি খুব ভালো মানুষ, কিন্তু অনুশাসনের ব্যাপারে ভীষণ কড়া۔۔


হিয়া মাথা নামিয়ে বলে: সরি, আর কক্ষনো হবেনা۔۔


মি: সোলাঙ্কি হেসে বলে: I trust you.. আসুন বোর্ডরুমে۔۔


হিয়া মি: সোলাঙ্কির সাথে বোর্ডরুমে পৌঁছে দেখে সেখানে আরো দুজন উপস্থিত۔۔ হিয়া নিজের প্রেজেন্টেশন দিতে শুরু করে۔۔ হিয়া জানে ও একবার প্রেজেন্টেশন দেবার সুযোগ পেলে এই ডিলটা টিউলিপকে পাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা۔۔ এই কথাটা অবশ্য টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও জানে, সেই জন্য হিয়ার অনুপস্থিতি তাদের অনেকটা আশস্ত করেছিল۔۔ হিয়ার পাবলিক ডিলিংস দুর্দান্ত۔۔ তাই এতো বড় কাজ টিউলিপের ডিরেক্টর নিশ্চিন্তে হিয়ার উপর ছেড়ে দিয়েছে۔۔ একটু আগে প্রেজেন্টেশন না দিতে পারায় এই কথাগুলোই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো ওকে۔۔ এখন হিয়া আবার ওর আগের ফর্মে ফিরে গেছে۔۔ এই হিয়া ভীষণ প্রফেশনাল, মেপে কথা বলে, যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করে۔۔


বোর্ডরুম থেকে যখন হিয়া বেড়োলো, তখন ও বুঝে গেছে যে এই যুদ্ধটা ও জিতে গেছে۔۔ মি: সোলাঙ্কি যদিও কেতাদুরুস্ত কায়দায় বললেন যে ওনারা জানিয়ে দেবেন টিউলিপ ইভেন্টটা পাচ্ছে কিনা, কিন্তু হিয়া জানে যে সেটা পেতে আর কোনো অসুবিধা নেই۔۔۔ হিয়া হেসে কিছু নিয়মমাফিক কথাবার্তা বলে বেড়িয়ে আসে চ্যাটার্জী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের বিলাসবহুল অফিস থেকে۔۔ ঘড়িতে তখন ইতিমধ্যে পাঁচটা বেজে গেছে۔۔ এবারে আর ও ক্যাবের চেষ্টা না করে ট্যাক্সিতে উঠে বসে۔۔ এই চত্বরটায় ট্যাক্সি পাওয়া কঠিন নয়۔۔ হিয়ার ট্যাক্সি ছুটে চলে রবীন্দ্রসদনের উদ্দেশ্যে۔۔।।


দেখা যাক এর পর কি ঘটনা ঘটে হিয়ার জীবনে!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama