STORYMIRROR

"বেখেয়ালী কলম"

Drama Romance

3  

"বেখেয়ালী কলম"

Drama Romance

"অনুরক্তি"

"অনুরক্তি"

4 mins
175


    পর্ব_১


আজকের দিনটা অন্য বাকিদের ক্ষেত্রে তেমন আলাদা না হলেও হিয়ার কাছে আলাদা۔۔ আজ থেকে একুশ বছর আগে আজকের দিনে ওর জীবনটা তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল, যখন রোড এক্সিডেন্টে হিয়া ওর পরিবারকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছিলো۔۔ হয়তো ওকেও প্রানে বাঁচানো যেতোনা, যদিনা ওর বাবার বাল্যবন্ধু ডা: হরিশঙ্কর নাইয়ার বন্ধুকন্যাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপাত না করতেন۔۔ ডা: নাইয়ারের চেষ্টায় হিয়া সেবার শুধুমাত্র প্রাণেই বাঁচেনি, সব হারানোর পরও একটা সুস্থ,স্বাভাবিক, সুন্দর জীবন সে পেয়েছিলো۔۔ হসপিটাল থেকে ফেরার পর ডা: নাইয়ার আর তার স্ত্রী কাদম্বরী সেদিন হিয়াকে তাদের পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন۔۔ হিয়া মিত্র বাঙালি সন্তান সেদিন থেকেই কেরালীয়ান পরিবারে বেড়ে উঠতে থাকে۔۔ তাকে স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে মি: এন্ড মিসেস নাইয়ার সাথে সাথে যে হাত বাড়িয়েছিল সে হলো নাইয়ার পরিবারের একমাত্র কন্যা বাঁশরী নাইয়ার۔۔


বাঁশরী নামটা মুলত হিয়ার মা রেখেছিলেন۔۔ কাদম্বরীর খুব ইচ্ছে ছিলো বাঙালি নাম রাখেন মেয়ের۔۔ হিয়ার থেকে দেড় বছরের বড় বাঁশরী হিয়াকে ছোট বোনের মতো আগলে রাখতে শুরু করে۔۔ পুতুল খেলা ফেলে বাঁশরী দায়িত্বশীল বড় দিদি হয়ে ওঠে۔۔ সেই থেকে আজও হিয়া বাঁশরীর তত্ত্বাবধানেই আছে۔۔ হিয়ার বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর হিয়াকে সেই ট্রমা থেকে বার করে আনার জন্য মুম্বাই ছেড়ে কলকাতায় আস্তানা গড়েন নাইয়ার পরিবার۔۔ ভেবেছিলেন বাঙালি মেয়ে কলকাতায় থাকলে, অন্য আত্মীয়দের সহচার্য্য পেলে, দ্রুত বাবা-মাকে হারানোর ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে۔۔ যদিও এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হতে মুহুর্তও লাগেনি۔۔ অনাথ, সহায় সম্বলহীন, নিঃস্ব একটি ছোটো মেয়ের দায়িত্ব নিতে হতে পারে ভেবেই হিয়ার তথাকথিত আত্মীয়রা পলায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন۔۔ শুধুমাত্র হিয়ার এক পিসি যোগাযোগ রেখেছিলেন۔۔ তিনি তার ভাইজির দায়িত্বও অস্বীকার করেননি, যদিও হিয়াকে কারোর হাতে তুলে দিতে নারাজ ছিলেন নাইয়ার পরিবার۔۔ হিয়া ততদিনে এই পরিবারের একটা অঙ্গ হয়ে উঠেছিল۔۔ ডা: নাইয়ার, কাদম্বরী আর বাঁশরীকে দেখে হিয়া বুঝেছিলো ভগবান আজও এইভাবেই কিছু মানুষের মধ্যে বাস করেন۔۔ হিয়া এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি ও ভাগ্যহীনা না ভাগ্যবতী, ঠিক কি ভাবা উচিৎ নিজের সম্পর্কে۔۔ যতবারই ভেবেছে ততবারই যুক্তির লড়াই মাঝপথে থেমেছে۔۔ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে ও আজও পারেনি, হয়তো বা কোনোদিনও পারবেনা۔۔


হিয়া ব্যালকনি থেকে সোজা কিচেনে যায় চা বানাতে۔۔ চা নিয়ে যখন বাঁশরীর রুমে আসে, বাঁশরী তখন নিজের বিছানায় বসে নিউজ পেপারে মুখ গুঁজে শব্দছকের পাজেল সল্ভ করতে ব্যস্ত۔۔ হিয়া সেটা দেখে কপট রাগের সাথে বলে۔۔


হিয়া: এইসব অকাজ না করে তো চা টা বানালেও পারতিস۔۔


হিয়ার অভিযোগে বিস্ফারিত চোখে বাঁশরী উত্তর দেয়۔۔


বাঁশরী: অকাজ? কোনটা অকাজ শুনি?


হিয়া ইশারায় নিউজ পেপারটা দেখিয়ে বলে: এই যে যেটা করছিস۔۔


বাঁশরী এবার হাতের নিউজ পেপারটা একপাশে সরিয়ে রেখে, চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে সুখে চোখ বন্ধ করে উত্তর দেয়۔۔


বাঁশরী: তু্ই তো জানিস এটা আমার সেই ছোট্টবেলার অভ্যেস۔۔ বোধহয় আর বদলানো যাবেনা۔۔ আর রইলো চা, সেটা আমি বানাতেই পারতাম۔۔ কিন্তু সকালে তোর হাতের চা টা নাহলে আমি ঠিক এনার্জি পাইনা۔۔ বিশেষতঃ সেইদিন গুলোতে আমি কোনো রিস্কই নিতে চাইনা যেদিন আমার পারফর্মেন্স থাকে۔۔ বুঝলেন মাই ডিয়ারেস্ট সিস্টার?


হিয়া ব্যঙ্গাত্মক সুরে : হ্যাঁ, এক কাজ করিস۔۔ যখন তোর বিয়ের কথাবার্তা চলবে, তখন তোর হবু বরকে বলে রাখিস যে পণে তু্ই আমাকে নিয়ে যাবি চা বানানোর জন্য۔۔


বাঁশরী: না۔۔ ভেবে রেখেছি, সকালে তোর বাড়িতে চলে আসবো চা খেতে মিঞা-বিবি দুজনে (বাঁশরী হাসে)


হিয়া: ও۔۔۔۔۔۔۔তখন মিঞা-বিবি হয়ে গেলো?


বাঁশরী কৌতুকের গলায় বলে: আরে আমি আমার কথা থোরাই ভাবছি۔۔ আমি তো ভাবছি তোর বরের কথা۔۔ আমার সাথে থাকতে দিতে রাজি হবে নাকি?


হিয়া হতাশ হয়ে তর্কে হার স্বীকার করে: তোকে নিয়ে আর পারা গেলো না۔۔ আচ্ছা তোর প্রোগ্রাম ক'টায় যেন?


বাঁশরী: বিকেল চারটে থেকে প্রোগ্রাম শুরু۔۔ আমার পারফর্মেন্স বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হবে۔۔ চলে আসিস কিন্তু۔۔ তোর তো আবার আজ একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে۔۔ 


হিয়া চিন্তিত গলায় বলে: হুম۔۔ আসলে আমাদের কাজে শুধু কোটেশন দিলেই কাজ হয়না, প্রেজেন্টেশনটাই মেনলি ম্যাটার করে۔۔ কাজটা বেশ বড়, তাই আমাকেই ডিল করতে হবে এটা۔۔


বাঁশরী দুঃখী দুঃখী মুখে বলে: আসতে পারবিনা না? তু্ই না থাকলে কেমন যেন কনফিডেন্স পাইনা۔۔


হিয়া এবার বাঁশরীর হাতের উপর হাত রেখে বলে: আমরা এক অপরের সাথে বাই হার্ট কানেক্টেড۔۔ যেখানেই থাকি, মনে মনে জানি আমরা একসাথেই আছি۔۔ এই যেমন মিটিং এ আমি যখন প্রেজেন্টেশন দেব, জানবো তু্ই আছিস আমার সাথে۔۔ যদিও আমি চলে আসবো, কিন্তু তু্ই ওসব নিয়ে চিন্তা না করে পারফর্মেন্সে মন দিবি۔۔ কেমন?


বাঁশরী হিয়াকে জড়িয়ে ধরে۔۔ এতো বছরেও ওদের সম্পর্কের টান একটুও ক্ষীণ হয়নি, বরং উত্তরোত্তর আরো গভীর হয়েছে۔۔ ডা: নাইয়ার কাজ থেকে বিরতি নিয়ে কাদম্বরী সহ কোভালমের পৈতৃক বাড়িতে বসবাস শুরু করছেন, জীবনের শেষ দিনগুলো একটু নিজের নিকট আত্মীয়দের সাথে কাটানোর সদিচ্ছায়۔۔ বাঁশরী আর হিয়া কলকাতাতেই থেকে গেছে۔۔ বাঁশরী একজন ভরতনাট্যম ডান্সার আর হিয়া একটা বড় ইভেন্ট মেনেজমেন্ট কোম্পানির একটি বড় পোস্ট হোল্ড করে۔۔ নাইয়ার পরিবারের এই দুই সন্তানই নিজের নিজের জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত, কিন্তু তাও কাদম্বরীর শান্তি নেই۔۔ তার বিবাহযোগ্য দুই মেয়েই বিয়ের কথা কানে তুলতে চায়না۔۔ সম্বন্ধ কম আসেনা۔۔ কাদম্বরী বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গেছেন۔۔ কিন্তু বাঁশরী আর হিয়া দুজনেই এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলে۔۔ কাদম্বরীর সব থেকে বেশি দুঃখ তার স্বামীও কাদম্বরীর থেকে মেয়েদের মতামতকেই বেশি প্রাধান্য দেন۔۔ দিনরাত ভগবানের কাছে রোজ এই এক ব্যাপারে নালিশ ঠোঁকেন মিসেস নাইয়ার۔۔۔۔


দেখা যাক দুই বোনের অাত্নার সম্পর্কের মধুরতা কেমন হয়!!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama