"বেখেয়ালী কলম"

Romance Classics

4  

"বেখেয়ালী কলম"

Romance Classics

"অনুরক্তি"

"অনুরক্তি"

5 mins
362


পর্ব_৪


হিয়া বেরিয়ে যাবার পর মি: সোলাঙ্কি আবার বোর্ডরুমে আসেন۔۔ শহরের সেরা ছ'টা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানিজশন নিজের নিজের প্রেজেন্টেশন দিয়ে গেছে۔۔ এবার সেটা ফাইনালাইজ করার পালা, আর অবশ্যই সেটা করবেন চ্যাটার্জী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের বর্তমান এম.ডি মি: উজান চ্যাটার্জী۔۔ বয়সটা খুব বেশি নাহলেও কোম্পানি চালাতে পারদর্শী উজান۔۔ সব থেকে বড় কথা, কোম্পানীর এমপ্লয়ীরা খুব খুশি, কারন তাদের প্রতি কোম্পানীর মালিকরা বেশ সহানুভূতিশীল۔۔۔ 


মালিক বলতে উজান আর বাসবী۔۔ স্টেক হোল্ডারস কিছু থাকলেও তার পরিমান খুব কম۔۔ এই কোম্পানী শুরু করেন উজানের পিতামহ۔۔ তিনি বিশেষ কিছু করতে পারেননি ঠিকই কিন্তু কোম্পানীকে যোগ্য উত্তরাধিকারী দিয়ে যান তার একমাত্র পুত্র হিসেবে۔۔ বাসবী আর সমরেশের যৌথ প্রয়াসে চ্যাটার্জী ইন্ডাস্ট্রিজ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, তারপর বাকিটা আজ ইতিহাস۔۔ অনেক গুলো ডিভিশন খুলে চ্যাটার্জী ইন্ডাস্ট্রিজ সগৌরবে চ্যাটার্জী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজে পরিনিত হয়۔۔ তারপর এই কোম্পানীতে পা রাখে উজান۔۔ মালিক হয়েও উজান একজন ট্রেনি হিসেবে জয়েন করে কোম্পানীতে۔۔ সমরেশের বক্তব্য ছিলো কাজ শিখতে হয় একদম গোঁড়া থেকে, তবেই সবটা ভালো করে বোঝা যায়۔۔ ফ্যাক্টরীতে ঘাম না ঝরালে বুঝবে কি করে ওখানকার লেবাররা ঠিক কি করে, তাদের সমস্যা কি? আবার অফিসের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে কাজ না করলে বুঝবে কি করে যে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টকে কিভাবে যুঝতে হয় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে টিকে থাকার জন্য۔۔ সমরেশের এই শিক্ষা অবশ্য তার বাবার থেকে পাওয়া۔۔ সমরেশকেও এইভাবেই তৈরী করেছিলেন তিনি۔۔ এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উজান যখন থেকে কোম্পানীর হাল ধরে তখন থেকেই চ্যাটার্জী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের স্বর্ণযুগ শুরু হয়۔۔ সমরেশ, বাসবী আর উজান মিলে এই নতুন যুগের সুচনা করে۔۔ 


তারপর হঠাৎই একদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সমরেশের মৃত্যুর পর উজানের জীবনটা কেমন যেন পাল্টে যেতে থাকে۔۔ সমস্ত দায়িত্ব হঠাৎ করেই উজানের কাঁধে এসে পড়ে۔۔ উজানের ধীর গতিতে পরিবর্তন উজান নিজে অনুভব না করলেও ওর আসেপাশের মানুষজন সেটা ভালোভাবেই অনুভব করেছিল۔۔ দিনরাত কাজ নিয়ে পরে থাকতে থাকতে সুক্ষ অনুভূতিগুলো কেমন যেন হারিয়ে যেতে থাকে উজানের মধ্যে থেকে۔۔ বরাবর কম কথার মানুষ উজান রাগী, জেদী, গোমড়ামুখোতে পরিনত হয়۔۔ সবাই আজও বিশ্বাস করে কোনো এক জীয়ন কাঠির ছোঁয়ায় এই ঘুমন্ত রাজকুমারের ঘুম একদিন ঠিক ভাঙবে۔۔ সবাই প্রার্থনা করে উজানের জন্য, কারন এই মানুষটাকে সবাই অন্তর থেকে ভালোবাসে۔۔


উজান বোর্ডরুমে উপস্থিত হতেই আলোচনা শুরু হয়۔۔ বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয় কোটেশন একটু বেশি হলেও টিউলিপই সব দিক দিয়ে এই কাজের জন্য উপযুক্ত۔۔ ফিনান্স হেডকে টিউলিপের ডিরেক্টরের সাথে কথা বলে বাকিটা ফাইনালাইজ করার কথা বলে, উজান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সেদিনের মতো۔۔ বাসবী জানিয়েছে ময়ূখ ফিরেছে শিকাগো থেকে۔۔ আজ দু'বছর পর ওর এই লক্ষ্মণ ভ্রাতাটিকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে উজানের মন۔۔


হিয়া যখন রবীন্দ্রসদন পৌঁছোয় তখন বাঁশরীর পারফর্মেন্স সবেমাত্র শুরু হয়েছে۔۔ পারফর্মেন্সের শেষে পুরো হল হাততালিতে ফেটে পড়ে۔۔ হিয়া ব্যাক স্টেজে চলে যায় বাঁশরীর সাথে দেখা করতে۔۔ ওকে দেখে বাঁশরী জড়িয়ে ধরে۔۔ কিছুক্ষন পর আলিঙ্গনমুক্ত হলে বাঁশরী জিজ্ঞাসা করে۔۔۔۔


বাঁশরী: কেমন ছিলো?


হিয়া হেসে: as usual, দুর্দান্ত۔۔


বাঁশরী: মনে হচ্ছে তোর প্রেজেন্টেশনও দুর্দান্ত হয়েছে۔۔


হিয়া: কি করে বুঝলি??


বাঁশরী: বোন হই তোর, আর এটুকু বুঝবোনা? তোকে দেখামাত্র বুঝে গেছি۔۔ আমি খুব টেনশনে ছিলাম, তু্ই আদেও প্রেজেন্টেশন দিতে পারবি কিনা ভেবে۔۔


হিয়া: পারতাম না۔۔ ক্যাব বুক না হওয়ায় সব বেড়িয়েই গিয়েছিলো হাত থেকে۔۔


বাঁশরী: আরে এই ক্যাব কোম্পানীগুলো তাদের কিসব দাবী ছিলো সরকারের কাছে۔۔ সেই সব দাবীর সপক্ষে তারা আজ সারাদিন নিজের পরিষেবা বন্ধ রেখেছিলো۔۔ আমি জানতাম না۔۔ আমার জন্য তো প্রোগ্রাম টিম গাড়ির এরেঞ্জমেন্ট করেছিল۔۔ এখানে এসে জানতে পারি۔۔ দাঁড়া, সব শুনবো۔۔ আগে ফর্মালিটি গুলো শেষ করে আসি, তারপর গাড়িতে যেতে যেতে সবটা শুনবো۔۔


বাঁশরী চলে যায় বাকি ফর্মালিটি গুলো শেষ করতে۔۔


উজান আজ অনেকদিন পর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে ময়ূখের সম্মানার্থে۔۔ বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে সময় গড়িয়ে চলে۔۔ ডিনার টেবিলে একসময় বাসবী ইভেন্ট নিয়ে কথা তোলে۔۔


বাসবী: হ্যাঁ রে উজান ইভেন্ট ফাইনালাইজ হয়ে গেছে?


উজান: না মা۔۔ আজ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী ফাইনালাইজ করলাম۔۔ এরপর পি.আর.ও বাকিটা ওদের সাথে ফাইনাল করে নেবে۔۔


বাসবী: নাম কি কোম্পানী টার?


উজান: টিউলিপ۔۔


বাসবী সবে জলের গ্লাসে চুমুক দিয়েছিলো۔۔ টিউলিপের নামে জোর বিষম খায়۔۔ উজান আর ময়ূখ দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে۔۔ কিছুক্ষনের মধ্যেই বাসবী নিজেকে সামলে নেয়۔۔ উজান ধমকে ওঠে۔۔


উজান: এই জন্য বলি খাবার সময় এতো কথা বোলো না۔۔


বাসবী কাশতে কাশতে বলে: আর কখন বলবো? সারাদিন তো দেখতেই পাইনা۔۔ কাজ নিয়েই তো পড়ে থাকিস۔۔ ডিনার টেবিলেই যা একটু দেখা হয়۔۔ খাবার পরেও যে আমার সাথে একটু গল্প করবি তা না, সোজা নিজের রুমে ঢুকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়বি۔۔ কথাটা বলবো কখন?


বাসবীর কথায় একরাশ অভিমান ঝরে পরে۔۔ ময়ূখ পরিস্থিতি অন্যদিকে যেতে দেখে প্রসঙ্গ ঘোরায়۔۔


ময়ূখ: ওহ হো, তোমরা পরে এইসব মান-অভিমান মিটিও۔۔ আগে বলো কিসের ইভেন্ট?


উজান: চ্যাটার্জী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন۔۔


ময়ূখ: ওয়াও۔۔


উজান: হাতে মাত্র মাস তিনেক সময়, প্রিসাইজলি এগারো সপ্তাহ۔۔ এতো বড় ইভেন্ট, এতো কাজ, আর মা যদি এইভাবে বাচ্চাদের মতো অভিযোগ করে۔۔۔۔۔۔আমি কি করে সামলাই বলতো?


বাসবী: এখন বলে না, তু্ই সব সময় এরকম করিস۔۔


ময়ূখ: আচ্ছা আচ্ছা, মাসি থামো এবার۔۔ তুমি ভুলে গেছো যে তোমার প্রেসার বেড়েছে۔۔


মুখ ফস্কে কথাটা বলেই ময়ূখ জিভ কেটে অসহায়ের মতো বাসবীর দিকে তাকায়۔۔ দেখে বাসবী রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে۔۔ ময়ূখ নিঃশব্দে ক্ষমা চায়, কিন্তু ততক্ষনে যা হবার হয়ে গেছে۔۔


উজান চিন্তিত সুরে বাসবীকে বলে: কি? প্রেসার বেড়েছে? বলোনি তো আমাকে?


বাসবী: কি করবি জেনে? গত পাঁচ দিনে আমার সাথে কথা বলেছিস "গুড মর্নিং", "গুড নাইট", "টেক কেয়ার" বাদে?


উজান চুপ করে যায়۔۔ সত্যিই তো এই কয়েকদিন ও বাসবীর বিশেষ কোনো খোঁজ রাখেনি কাজের চরম ব্যস্ততার মধ্যে۔۔ বোঝে বাসবীর আজ একটু বেশিই অভিমান হয়েছে, যেটা ভীষণরকম স্বাভাবিক۔۔ না পরিস্থিতি জটিল হতে দেওয়া যাবেনা, তার আগেই সামলাতে হবে۔۔ উজান বাসবীর হাতের উপর হাত রাখে۔۔


উজান: সরি মা۔۔


বাসবীর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে۔۔ উজান সেটা লক্ষ্য করে সযত্নে মুছিয়ে দিয়ে বাসবীকে জড়িয়ে ধরে۔۔


উজান: আচ্ছা বেশ, কেঁদো না۔۔ ভুল হয়ে গেছে, আর হবেনা۔۔ বলো কিভাবে কম্পেনসেট করতে পারি? বিয়ের প্রসঙ্গ বাদে যা বলবে সব শুনতে রাজি আমি۔۔


বাসবী একটু চিন্তা করে বলে: আমি একটা পার্টি অর্গানাইজ করছি পরশু, তোকে থাকতে হবে۔۔ থাকবি?


উজান সরু চোখে তাকায়: পার্টিটা আবার আমাকে মেয়ে দেখানোর প্রচেষ্টা নয় তো?


বাসবী: নাহ۔۔ আর আমি তোকে বিয়ের ব্যাপারে কোনোদিন কিছু বলবোনা۔۔ বিয়ে যখন করবিনা বলেই দিয়েছিস, তখন সেই নিয়ে কথা বলা অর্থহীন۔۔ তবে পার্টিতে কিছু মেয়েরা তো থাকবেই, কিন্তু তাদের সাথে তোকে কথা বলতে হবেনা۔۔


উজান: অকেশনটা কি?


বাসবী: ময়ূখ এতদিন পর ফিরলো۔۔ ইচ্ছে ছিল সবাই মিলে কোথাও বেড়িয়ে আসার۔۔ কিন্তু তু্ই তো এখন ইভেন্ট ফেলে নড়বিনা, তাই আপাতত পার্টি দিয়েই সেলিব্রেট করি۔۔


উজান: Ok...Done...


বাসবীর মুখে এতক্ষনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে۔۔!!

 

দেখা যাক এর পর কি ঘটতে চলছে উজানের জীবনে!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance